আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৫ ১১:৫২ পিএম
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: ‘তেহরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি চালু করতে দেওয়া হবে না’
ইরান এখনো তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে আন্তর্জাতিক পরিদর্শন মেনে নেয়নি এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রেখেছে—এমন অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “তেহরানকে কখনোই পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় চালু করতে দেওয়া হবে না।”
শুক্রবার (৪ জুলাই) আল জাজিরা-তে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প মনে করেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি স্থায়ীভাবে পিছিয়ে গেছে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, “তারা অন্য কোথাও এ কর্মসূচি নতুন করে শুরু করতে পারে,” যা হলে তা হবে “বড় সমস্যা।”
তিনি জানান, আসছে সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার বৈঠকে ইরান ইস্যু শীর্ষ আলোচ্য বিষয় হবে। পাশাপাশি গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাও আলোচনায় আসবে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, তারা ইরানে তাদের পরিদর্শক দল প্রত্যাহার করেছে। সংস্থাটির দাবি, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ইরান জানিয়েছে, তারা শুধুই শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল অভিযোগ করছে, তেহরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো এবং গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষকদের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে।
IAEA-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি বলেন, “ইরানের সঙ্গে পরিদর্শন পুনরায় শুরুর আলোচনার এখনই সময়। দেরি হলে আস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।”
এর আগে, গত মাসে ইরানের পার্লামেন্ট IAEA-এর সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিত করে একটি বিল পাস করে। পরে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ঘোষণা দেন। তবে IAEA জানিয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে ইরান এখনো তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি।
প্রসঙ্গত, গত ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে বিমান হামলা চালায়। এর আগে, ১২ জুন থেকে ইসরায়েল পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা শুরু করে। ওই হামলার আগের দিনই IAEA ইরানের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস করে, যেখানে তেহরানকে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে অভিযুক্ত করা হয়।
হামলার পর থেকে আন্তর্জাতিক পরিদর্শকরা আর ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় প্রবেশ করতে পারছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী, হামলার ফলে ইরানের তিনটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনও প্রায় ৯ টনের বেশি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের অস্তিত্ব ও অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম রয়েছে যা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ—যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ মাত্রার কাছাকাছি।
যদিও এ ইউরেনিয়াম এখনো ‘অস্ত্র-মান’ নয়, তবুও বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ফের উত্তেজনার চূড়ায় পৌঁছেছে। IAEA-এর সঙ্গে সম্পর্ক স্থগিত এবং পরিদর্শকদের প্রত্যাহার পারমাণবিক স্বচ্ছতার প্রশ্নে বড় ধাক্কা। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক হামলার পর ইরানের সম্ভাব্য পাল্টা প্রতিক্রিয়া মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে।
ভোরের আকাশ//হ.র