নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:১৪ এএম
প্রথমবারের মতো পৃথক ফৌজদারি ও পারিবারিক আদালত গঠন করল সরকার
দেশে বিচার ব্যবস্থার গতি বাড়াতে এবং মামলার জট নিরসনে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। প্রথমবারের মতো পৃথক দায়রা (ফৌজদারি) ও পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ৭৩৩টি নতুন বিচারক পদ সৃজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০৩টি অতিরিক্ত দায়রা আদালতের জন্য, ৩৬৭টি যুগ্ম দায়রা আদালতের জন্য এবং ১৬৩টি পারিবারিক আদালতের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
বর্তমানে দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪৫ লাখের বেশি, অথচ বিচারক রয়েছেন মাত্র ২ হাজারের মতো। প্রয়োজনের তুলনায় এই সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় বিচার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত একই বিচারককে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় মামলার পাশাপাশি বিশেষ ট্রাইব্যুনালের কাজও সামলাতে হতো। ফলে মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা বেড়ে যাচ্ছিল। নতুন আদালত চালু হলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে এবং ন্যায়বিচার দ্রুত নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
‘দ্য সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট, ১৮৮৭’ এবং ‘ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড, ১৮৯৮’ অনুযায়ী দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার জন্য পৃথক আদালত প্রতিষ্ঠার বিধান থাকলেও বাস্তবে এতদিন একই বিচারক উভয় ধরণের মামলা পরিচালনা করছিলেন। একইভাবে ‘পারিবারিক আদালত আইন, ২০২৩’-এ প্রতিটি জেলায় পৃথক পারিবারিক আদালতের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এতদিন তা কার্যকর হয়নি। ফলে সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালতগুলো অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পারিবারিক মামলাও নিষ্পত্তি করে আসছিল। এর ফলে দেওয়ানি ও পারিবারিক মামলার বিচার উভয় ক্ষেত্রেই বিলম্ব হচ্ছিল।
আইন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, শুধু অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বর্তমানে ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রয়েছে আরও সাড়ে পাঁচ লাখ মামলা। অন্যদিকে, সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ৯ লাখেরও বেশি দেওয়ানি এবং প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার পারিবারিক মামলা বিচারাধীন। ফলে দেশের আদালতগুলোতে মামলার চাপ সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
চলতি বছরের ২১ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন আইন মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি পাঠায়, যেখানে মামলার জট কমাতে পৃথক আদালত গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়। প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা এবং বর্তমান আইন উপদেষ্টার সক্রিয় ভূমিকার ফলে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত আসে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রতি ৮০০ মামলার বিপরীতে একজন বিচারক নিয়োগের সুপারিশও এই পদক্ষেপে প্রভাব ফেলেছে।
অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ড. শাহজাহান সাজু বলেন, “পৃথক ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালত এবং পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠা দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। সরকারের এই উদ্যোগ বিচার বিভাগ সংস্কারে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। এতে মামলার গতি বাড়বে, বিচারপ্রার্থীর ভোগান্তি কমবে এবং ন্যায়বিচার আরও নিশ্চিত হবে।”
ভোরের আকাশ//হ.র