বিদেশি কূটনীতিকদের আনাগোনা বেড়েছে

বিদেশি কূটনীতিকদের আনাগোনা বেড়েছে

নিখিল মানখিন

প্রকাশ : ১ দিন আগে

আপডেট : ২১ মিনিট আগে

বিদেশি কূটনীতিকদের আনাগোনা বেড়েছে

বিদেশি কূটনীতিকদের আনাগোনা বেড়েছে

বাংলাদেশে বিদেশি কূটনীতিকদের আনাগোনা ও আলাপচারিতা বেড়েছে। ভূ-রাজনীতিতে বিশ্ব মোড়লদের কাছে বাংলাদেশের বিশেষ গুরুত্ব এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রহণযোগ্যতার কারণেই এমনটি হচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক মহল। বিশ্বের সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘সব রাষ্ট্রের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বের সম্পর্ক’ রেখে, পারস্পরিক ‘আস্থা ও সহযোগিতার’ পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চলবে বাংলাদেশ।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের শক্তিশালী অবস্থান বিদেশিদের সঙ্গে আন্তঃযোগাযোগ তৈরি করেছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গত আট মাস ধরে অন্তর্বর্তী সরকার জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে আগমনের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বিদেশি কূটনীতিকরাও। ফলে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি বা কূটনীতিকদের ঘন ঘন ঢাকায় আগমন ঘটছে।

গত বুধবার তিন দিনের সফরে আগামী ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই দিনে ঢাকায় এসেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। গত আটমাসে উচ্চপর্যায়ের ২০টিরও বেশি বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দলের আগমন ঘটেছে বাংলাদেশে। ঢাকায় এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫টির বেশি কূটনৈতিক বৈঠক হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রসমূহ জানিয়েছে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের মহামারি এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপে অস্থির হয়ে উঠেছে বিশ্ব। এই শুল্ক নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। শুল্কের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র সমালোচনায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পাশাপাশি বিশ্ব ভূ-রাজনীতির হিসেব-নিকেষ কষতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পালা-বদল ঘটেছে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর ক্ষমতাসীন হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। আর এই সরকার সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিশ্ব মোড়লদের বিবাদ ও মতবিরোধে বিপাকে অন্তর্বর্তী সরকার।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপড়েন রয়েই গেছে। এর বিপরিতে গত কয়েক মাস ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ইতিবাচক উন্নতি ঘটেছে। পাকিস্তান প্রতিনিধি বা কূটনীতিকদের বাংলাদেশে ঘন ঘন আগমন ঘটছে। এমন সংবাদে নড়েচড়ে বসছে ভারত। নানা ইস্যূ তৈরি করে কূটনীতিক পাঠিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তারাও।

এদিকে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতবিরোধ প্রায় ৭৬ বছরের পুরনো। ভূ-রাজনীতি ও অর্থনীতিকেন্দ্রিক বিশ্বে বড় দু’টি ব্লক তৈরি করে রেখেছে পরাক্রমশালী এই দু’টি দেশ। বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়নের বন্ধু চীন। বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রকেও এড়িয়ে যাওয়ার  সুযোগ নেই দেশটির।

গত বছর ৮ আগস্টের পর থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে জোরালো যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে চীন। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের চীন সফর ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারই অংশ হিসেবে 
গত বুধবার তিন দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় এসেছেন বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র- এই দু’টি রাষ্ট্রের অঘোষিত ব্লকের অন্তর্ভূক্ত এক দেশের প্রতিনিধিদের আগমন ঘটলে অন্য ব্লকের দেশের প্রতিনিধিরাও বাংলাদেশে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। তাছাড়া সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার কারণে বাংলাদেশে বিদেশি কূটনীতিকদের ঘন ঘন আগমন ঘটছে। 
 

গত আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত উচ্চপর্যায়ের ২০টিরও বেশি বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। গত ৪ অক্টোবর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঢাকা সফর করেন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটিই ছিল কোনো বিদেশি সরকারপ্রধানের প্রথম ঢাকা সফর। তিনি দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তার পাশাপাশি দেশের সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপরও গুরুত্ব দেন। একই মাসে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্গের নেতৃত্বে আসা একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে গুরুত্ব দেয়। 

চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য রূপা হক এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে এসে নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে কথা বলে গেছেন। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল অ্যান চুলিক ও তার সফরসঙ্গীরা। তাদের সফরের মূল এজেন্ডা নির্বাচন ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করা। প্রতিনিধি দলটি এরই মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বেলুচের নেতৃত্বে আসা একটি প্রতিনিধি দলও অবস্থান করছে ঢাকায়।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা যত এগোবে, বিদেশি কূটনৈতিক তৎপরতাও তত বাড়বে। নির্বাচন কীভাবে হবে, কারা অংশ নেবে কিংবা নির্বাচনের পরে কী হবে- এসব নিয়ে ধারণা নিতে বিদেশি কূটনীতিকদের দৌড়ঝাপ চলছে। তাই সব পক্ষের সঙ্গেই বসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। এর বাইরে বিদেশি মিশনের রাষ্ট্রদূত ও পলিটিক্যাল কাউন্সিলররা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় বসছেন, যেখানে নির্বাচনের রোডম্যাপ, সংস্কার এবং ক্ষমতায় এলে তাদের দেশ পরিচালনার রূপরেখা কেমন হবে-তা নিয়ে কথা হচ্ছে। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে নানা ইস্যুতে আলোচনা করছেন বিদেশি মিশনের কূটনীতিকরা।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘যারা আসছে তারা স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন চাইবে। অনেকেই দেশে আসছেন, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন; কিন্তু বিনিয়োগ করছেন না। কারণ, নির্বাচন না হলে কেউ বিনিয়োগ করবে না। ব্যবসায়ীরা তাদের মূলধন নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না।’

তিনি বলেন, ‘এই সরকারের সময়ে এর আগে যারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে সফরে এসেছেন, তারা ছিলেন ডেমোক্র্যাট। এই প্রথম দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারা এসেছেন তারা ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান। ডেমোক্র্যাটরা থাকলে একটু ফ্লেক্সিবল সিচুয়েশন হতেও পারত, কারণ ডেমোক্র্যাটদের অনেকের সঙ্গেই প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। তবে রিপাবলিকানদের বেলায় একটু ভিন্ন। রিপাবলিকানরা এখন নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এখন সংখ্যালঘু ইস্যুতেও কথা বলবে। আমেরিকা জানতে চাইবে সংখ্যালঘু ইস্যুতে কী করা হচ্ছে। যতক্ষণ দেশে নির্বাচনের রোডম্যাপ না আসবে, ততদিন বিদেশিরা নির্বাচন নিয়ে কথা বলবেই।’

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-

সংশ্লিষ্ট

ঢাকায় নিষিদ্ধ সংগঠনের ঝটিকা মিছিল নিয়ে যা বললো ডিএমপি

ঢাকায় নিষিদ্ধ সংগঠনের ঝটিকা মিছিল নিয়ে যা বললো ডিএমপি

‘পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে তৈরি বস্ত্রের প্রসারে কাজ করতে হবে’

‘পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে তৈরি বস্ত্রের প্রসারে কাজ করতে হবে’

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরাকান আর্মিই বড় সমস্যা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আরাকান আর্মিই বড় সমস্যা: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

মন্তব্য করুন