সংগৃহীত ছবি
রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে দগ্ধ হোন স্কুলের কো-অর্ডিনেটর মাহরিন চৌধুরী (৪২)। শিশুদের বাঁচাতে গিয়ে শরীরের ১০০ শতাংশই দগ্ধ হয়েছিল তার। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তাকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এরপর ওইদিন (সোমবার) রাতেই তার মৃত্যু হয়। তবে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে স্বামী মনছুর হেলালের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল মাহরিন চৌধুরীর।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঠিক যেদিক দিয়ে বাচ্চারা বের হবে, ওখানেই বিমানটি ক্রাশ করছে, তারপরে এক্সপ্লোশন হয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। মাহরিন বাচ্চাদের বাঁচাতে যায় এবং কিছু বাচ্চাকে সে বের করে নিয়েও আসে।
আইসিউতে মাহরীনের সঙ্গে শেষ কথা প্রসঙ্গে মনছুর হেলাল বলেন, আমি তাকে বললাম, তুমি কেন এ কাজ করতে গেলে? সে আমাকে বলে- বাচ্চারা আমার সামনে সব পুইড়া মারা যাচ্ছে, আমি এটা কীভাবে সহ্য করি। ও (মাহরীন) সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে, কিছু বাচ্চা বের করছে, আরও কিছু বাচ্চা বের করার চেষ্টায় ছিল। ঠিক এমন সময় বিকট শব্দে আরেকটি বিস্ফোরণ হয়। আর তাতেই মাহরীনের পুরো শরীর পুড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, মাহরীনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব পুড়ে শেষ। শুধু বেঁচে ছিল, একটু কথা বলতে পারছে। আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে বলল, আমার ডান হাতটা শক্ত করে ধরো। হাত ধরা যায় না, সব পুড়ে শেষ। ও বলল, তোমার সাথে আর দেখা হবে না।
স্বামীর হাত ধরে মাহরীন তখন বলছিলেন, আমার বাচ্চাদের দেখো।
জবাবে মনছুর বলেন, তোমার বাচ্চাদের এতিম করে গেলা। মাহরীন তখন বলেন, কী করব, ওরাও তো (মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীরা) আমার বাচ্চা, সবাই পুড়ে মারা যাচ্ছে, আমি কীভাবে সহ্য করব?
মনছুর হেলাল সাংবাদিকের বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সবাই সহযোগিতা করেছে, কিন্তু তাকে বাঁচাইতে পারলাম না। ও (মাহরীন) আমাকে বলে আমার খুব খিদা লাগছে আমারে কিছু খাওয়াও, আমি তিন ফোঁটা পানি ছাড়া কিচ্ছু দিতে পারি নাই। ডাক্তার বলে, শক্ত কিছু দিলেই বুকে আটকায়ে মারা যাবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
শ্রম আইন, শ্রমিক অধিকার এবং দেশে চলমান সংস্কার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে কূটনীতিক, জাতিসংঘ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এ সময় শ্রম সংস্কার ও পোশাক শিল্পে টেকসই প্রবৃদ্ধির অঙ্গীকার জানিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা।বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের নৈশভোজে রাজনৈতিক নেতারা অংশ নিয়ে এসব অঙ্গীকার করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে বৃহৎ পরিসরে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে শ্রম সংস্কারের গুরুত্ব অপরিসীম। ফেব্রুয়ারিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় আইএলওর মহাপরিচালক এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন প্রতিনিধিরা অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং আন্তর্জাতিক অবস্থানের উপর শ্রম সংস্কারের বিস্তৃত প্রভাব সম্পর্কে কথা বলেন।বাংলাদেশের তিনটি প্রধান দলের রাজনৈতিক নেতা তাদের বক্তব্যে পোশাক শিল্পের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে অব্যাহত শ্রম খাত সংস্কারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পোশাক শিল্পকে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের যেকোনো সরকারকে এর প্রবৃদ্ধি এবং টেকসইতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শ্রম সংস্কার এবং আইএলও প্রতিশ্রুতি এগিয়ে নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন তিনি।জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জামায়াতের বহু নেতাকর্মীর পোশাক শিল্পে সরাসরি অভিজ্ঞতা রয়েছে। যা এই খাতকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করতে সহায়ক করবে। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার এজেন্ডাকে সমর্থন করেন। নির্বাচিত হলে তা এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির বলেন, বর্তমান শ্রম উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এগুলো শুধু অব্যাহত রাখাই নয়, ভবিষ্যৎ প্রশাসনের অধীনে আরও সম্প্রসারিত হওয়া উচিত।এনসিপির সিনিয়র নেত্রী ড. তাসনিম জারা তার রাজনৈতিক যাত্রার সংজ্ঞায়িত মুহূর্ত হিসেবে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। একজন মেডিকেল ছাত্রী হিসেবে আহতদের সেবা দেওয়ার অভিজ্ঞতা তাকে অনিরাপদ শ্রম অনুশীলনের মানবিক মূল্য উপলব্ধি করিয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস অর্থবহ এবং স্থায়ী সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য সরকারের দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেন।ভোরের আকাশ/মো.আ.
এক দশকেরও বেশি আগে নেওয়া প্রকল্প পাঁচ বছর আগে শেষ হওয়ার সময়সীমা থাকলেও ব্যয় দ্বিগুণ এবং ১১ বছরেও শেষ হয়নি। অথচ প্রকল্প শেষ করার জন্য ব্যয় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদও বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ বছরে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে। আর এ অবস্থায় দেশের তথা জনগণের অর্থের যথেচ্ছ ব্যবহার-দুর্নীতি ও অপচয় হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ প্রকল্প কেন এত দীর্ঘ সময়েও শেষ হচ্ছে না সেটা একটি বড় প্রশ্ন তাদের। এদিকে, প্রকল্পের পরিচালক ওয়াহিদ ইসলাম মুরাদ জানিয়েছেন, প্রকল্পটির পরিচালক পরিবর্তন হয়েছে ৬ বার আর প্রকল্পটি ৩ বার সংশোধন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীবাসীর বিশুদ্ধ পানি সংকট নিরসনে ২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে ঢাকা ওয়াসার অধীনে বাস্তবায়নের জন্য ‘ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই’ প্রকল্প গ্রহণ করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। প্রকল্পটি ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৫ সালে এসে আবার ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ ৬ বছরের শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পটির মেয়াদকাল বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ বছরে। এছাড়া ২০১৪ সালে ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়সম্পন্ন প্রকল্পটি ৩য় সংশোধনীর পর ১০ হাজার ৯৭৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভোরের আকাশকে জানান, বারবার সময় ও বরাদ্দ বাড়লেও বর্ধিত সময়েও অর্থাৎ ২০২৭ সালের মধ্যেও প্রকল্পটি শেষ হবে কিনা-তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তিনি বলেন, কারণ ইতিমধ্যে প্রকল্পটি ৩ বার সংশোধন করা হয়েছে।এদিকে, গত ১৭ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৩য় বারের মতো সংশোধনী দিয়ে প্রকল্প উপস্থাপন করা হয় এবং বৈঠকে অনুমোদিত হয়। তৃতীয় সংশোধনীতে আরও ২ হাজার ৮২৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকা মহানগরীর মতিঝিল, পল্টন, ফকিরাপুল, উত্তরা, গুলশান, বনানী, নিকুঞ্জ, খিলক্ষেত, বাড্ডা এবং সমগ্র মিরপুর ও আশপাশ এলাকায় ২৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু প্রকল্পটি অনুমোদনের পর থেকেই বিভিন্ন জটিলতায় বাস্তবায়ন কাজ কয়েক দফা পিছিয়েছে। জমি অধিগ্রহণ, ঠিকাদার চূড়ান্তকরণ, বিলম্বিত দরপত্র ও অনুদান সংস্থার অর্থছাড়ের দীর্ঘসূত্রতায় প্রকল্পটির দীর্ঘসত্রিতা বাড়ায়।প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদ বারংবার বাড়ানোর ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রকল্পের কাজ শুরুর পর আমরা ‘রোড কাটিং’ এর অনুমোদন পাইনি। ডিএনসিসি এখনো অনুমোদন দিচ্ছে না।তিনি বলেন, কোথাও অনুমোদন পেলে তবেই কাজ করি, এ জন্যই দেরি হচ্ছে। আমরা এখন প্রগতি সরণিতে কাজ করছি, তবে এজন্য রোড কাটিং এর অনুমোদন যথাসময়ে পাইনি। আর অনেক জায়গায় জমির মালিকানা ও ক্ষতিপুরণ জটিলতা নিয়েও ঝামেলা পোহাতে হয়। এছাড়া ভূমি অধিগ্রহণে বাড়তি সময়ক্ষেপন এবং জটিলতাও অনেকাংশে দায়ী বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, এর আগে এই প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে ৬ জন দায়িত্ব পালন করেছেন, আমি এ প্রকল্পের ৭ম প্রকল্প পরিচালক। তবে বিদ্যমান বিভিন্ন জটিলতা নিরসনে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিন্তু যথাসময়ে অনুমোদন না পাওয়ায় বিলম্ব হয়েছে।বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণত ওয়াসার কোনো প্রকল্পই একাধিকবার সংশোধন না করে শেষ করার নজির নেই বললেই চলে। আর প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব মানেই অনিয়ম-দুর্নীতির ছড়াছড়ি। এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ওয়াসার এমডি তাকসিম আহমেদ খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্বীয় পরিচয়ে ব্যাপক দুর্ণীতি অনিয়মে জড়িত ছিলেন। আর তার অনুগত ওয়াসার অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ, যার প্রমাণও দুদকের হাতে রয়েছে।জানা গেছে, এ প্রকল্পটির ৩য় সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে-মেঘনা নদী থেকে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি পরিশোধন করে রাজধানীতে সরবরাহের জন্য নেওয়া প্রকল্পটি ‘গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্প’ নামে পরিচিত। একাধিক প্যাকেজের মাধ্যমে ভূ-উপরস্থ পানি পরিশোধনে নেওয়া প্রকল্পটির বাস্তবায়ন এলাকা ঢাকা ছাড়াও পাশ্ববর্তী আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদের প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় । এরপর ২০২১ সালে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী আনা হয় এবং মেয়াদ আরো দেড় বছর বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত ২ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। আর ওই বছরের সেপ্টেম্বরে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাইপ লাইন নির্মাণে চুক্তি করে ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু এরপরও কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২৪ সালে দ্বিতীয় সংশোধনী আনা হয়। এই সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ আবার এক বছর বৃদ্ধি অর্থাৎ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ও ব্যয় ৯৫১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বাড়ানো হয়। অর্থাৎ তিন দফা মেয়াদ বৃদ্ধি করেও কাজ শেষ করতে না পারায় এবার ৩য় সংশোধনীর মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধিতে ঢাকা ওয়াসার প্রস্তাবের অনুমোদন দেয় সরকার।পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির অর্থায়নে মোট ব্যয়ের মধ্যে ৪ হাজার ২১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার এবং ২২ কোটি টাকা ওয়াসার নিজস্ব তহবিল থেকে প্রদান করা হবে। অবশিষ্ট ব্যয়ের মধ্যে ৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), এজেন্সি ফ্রাঁসেজ ডি ডেভেলপমেন্ট (এএফডি) এবং ইউরোপীয় ইনভেস্ট ব্যাংক (ইআইবি) থেকে ঋণ ও অনুদান নেওয়া হবে।পরিকল্পনা কমিশনের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এ প্রকল্পের মেয়াদ আর ব্যয় এতবার বাড়ানো নিয়ে সভায় জানতে চাওয়া হয়েছে। সভায় বিষয়গুলো ওয়াসাকে ঠিক করে ডিপিপি দিতে বলা হয়েছে।সূত্র জানায়, প্রকল্পের মেয়াদ ও বরাদ্দ বাড়লেই নানারকম অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয়। অতীতে ওয়াসার অনেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ওয়াসা’র সাবেক এমডি তাকসিম আহমেদ খানের বিরুদ্ধে তদন্তও করছে। অন্যদিকে, পিইসি সভায় প্রকল্পটির মেয়াদ বারবার বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে ওয়াসার পক্ষে বলা হয়, ডলারের দরবৃদ্ধিতে ব্যয় ১ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা বেড়েছে। এছাড়া ইউলিটি শিফটিং, পাইপলাইনের রুট ও ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে ৭০৭ কোটি টাকা বৃদ্ধি, বিলম্বিত সুদ পেমেন্ট ৪২৩ কোটি টাকা। ভ্যাট, ট্যাক্স ও আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ৩৭০ কোটি এবং সড়ক খনন চার্জ, ওয়াটার ইনটেক ও পানি শোধনাগারের বিদ্যুৎ সংযোগে নতুনভাবে সোলার প্যানেল স্থাপনে ১৪১ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ইআইবি থেকে অর্থছাড়ে জটিলতা, জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণও উল্লেখ করা হয়েছে। ওয়াসার এই প্রকল্পের কাজ প্রায় এক যুগেও কেন শেষ হয়নি। এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত হয়েছে কিনা-সে ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্পে কাজের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। দিনের বেলা কাজ করা যায় না, শুধু রাতের বেলা কাজ করতে হয়। তাছাড়া রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির ক্ষেত্রে ডিএনসিসির অনুমোদনের বিষয়ও আছে। এসব কারণে প্রকল্পের কাজে ধীরগতি বলে আমাদের বলা হয়েছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের গ্রামীণ কৃষকদের জন্য হিমাগার স্থাপনে নেদারল্যান্ডসের সহায়তা চেয়েছেন।বৃহস্পতিবার(২৫ সেপ্টেম্বর)জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে নিউইয়র্কে ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ অনুরোধ জানান।অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ফসল কাটার মৌসুমে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বেড়ে গেলে দামের পতনের কারণে ক্ষুদ্র কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েন। গ্রামে স্বল্পমেয়াদি হিমাগার সুবিধার অভাবে সংরক্ষণ না করতে পারায় প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টন ফল ও সবজি নষ্ট হয়।“নেদারল্যান্ডস কৃষি ও খাদ্যসংরক্ষণ প্রযুক্তিতে বিশ্বনেতা। বাংলাদেশের কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে আপনারা গবেষক ও বিজ্ঞানীদের পাঠাতে পারেন,” বলেন ইউনূস।তিনি উল্লেখ করেন, আম, কাঁঠাল ও পেয়ারার মতো ফলের প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। কিন্তু রপ্তানি বাড়াতে আধুনিক সংরক্ষণ প্রযুক্তি অপরিহার্য। পাশাপাশি বন্যা ও নদী ব্যবস্থাপনা এবং সামুদ্রিক প্রযুক্তিতেও ডাচ সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।জবাবে প্রধানমন্ত্রী স্কুফ বলেন, উত্থাপিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে এবং টেক্সটাইল খাতেও সহযোগিতার সুযোগ খোঁজা হবে।বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণ ও ভুয়া তথ্যের হুমকি নিয়ে আলোচনা করেন।অধ্যাপক ইউনূস ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে ভুয়া তথ্য মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, “১৫ বছরের স্বৈরশাসনে প্রকৃত নির্বাচন হয়নি। এখনো প্রাক্তন শাসকদের সহযোগীরা বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালাচ্ছে।”তিনি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।ডাচ প্রধানমন্ত্রীও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার ও ভুয়া তথ্যের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন, “এটি বৈশ্বিক গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি। আমরা একসাথে কাজ করতে পারি।”বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ এবং পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। ভোরের আকাশ/হ.র
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে অর্থ উপার্জন করা সহজ এবং সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তবে এই দৃষ্টিভঙ্গি স্বাস্থ্যসেবাকে ব্যাহত করে। তাই স্বাস্থ্যসেবা কেবল অর্থ উপার্জনকারীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ‘উচ্চ পর্যায়ের কর্ম অধিবেশন: প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা রূপান্তর—বাংলাদেশের পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমি বলছি না যে অর্থ উপার্জনকারীরা খারাপ মানুষ। তবে স্বাস্থ্যসেবা কেবল তাদের ওপর ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়।”কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন টিকা বিতরণের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “টিকা বিতরণে বড় ভুল হয়েছিল। বিশ্বের ১০টি দেশ টিকা উৎপাদনের প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রহণ করেছিল।”তিনি বিশ্বজুড়ে সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য স্বাস্থ্য খাতে সামাজিক ব্যবসার প্রভাব বাড়ানোর পক্ষেও মত দিয়েছেন।অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, এনসিপি নেতা ডা. তাসনিম জারা এবং ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. আসিফ সালেহ। ভোরের আকাশ/হ.র