ছবি: সংগৃহীত
চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন সাবেক বিডিআরের চাকরিচ্যুত সদস্যরা। তাদের এই অবরোধের কারণে শাহবাগ ও এর আশপাশ এলাকায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সোমবার (২৩ জুন) দুপুর ১টা ১০ মিনিটে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
এর আগে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকা থেকে মিছিল বের করেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। পরে মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) হয়ে শাহবাগে এসে জড়ো হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের দাবিগুলো হলো-
১. পিলখানাসহ দেশের সব বিডিআর ইউনিটগুলোয় বিশেষ আদালত এবং মহাপরিচালক ও অধিনায়কের সামারি কোর্টের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত (৭৬ ব্যাচসহ) সব বিডিআর সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে। সেই সঙ্গে তাদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাসহ পূর্ণ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
২. পিলখানা হত্যাকাণ্ডে গঠিত শর্তযুক্ত তদন্ত কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন তদন্ত কমিশনে রূপান্তরের লক্ষ্যে এর সার্বিক পূর্ণ কার্যকারিতা বাধাগ্রস্ত করছে এমন সব বিধিনিষেধ, বিশেষ করে এর প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত ‘ব্যতীত’ শব্দ এবং কার্যপরিধি ২ এর (ঙ) ধারাটি বাতিল করে কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মিথ্যা সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দণ্ডিত হয়ে প্রায় ১৬ বছর ধরে কারাবন্দি নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
৩. যেসব ন্যায়পরায়ণ ও দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের ২০০৯ সালে পিলখানায় সৃষ্ট ঘটনায় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে, তাদের সবাইকে পুনর্বাসন করতে হবে। সেই সঙ্গে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধারণকারী সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী ‘বাংলাদেশ রাইফেলস’ তথা ‘বিডিআর’ নাম পুনরায় স্থাপন করতে হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর নানা ইস্যুতে ঢাকা ও নয়াদিল্লির সম্পর্কে সৃষ্ট বরফ অবশেষে গলতে শুরু করেছে। কিছু ইস্যুতে বাদানুবাদ ও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার পর উভয়পক্ষ সুর নরম করেছে। গতকাল শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘উপযুক্ত পরিবেশে’ বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়েই আলোচনা করতে প্রস্তুত ভারত। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তোহিদ হোসেন বলেন, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্ক ছিল, সেটির বদলে এখন সম্পর্ক ‘পুনর্বিন্যাসের’ পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ‘শীতল’ নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এই দুই কূটনীতিকের বক্তব্যে সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।এছাড়া ভারতের পার্লামেন্টে পররাষ্ট্রবিষয়ক স্থায়ী কমিটি ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ’ নিয়ে আলোচনার জন্য ৪ জন বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গতকাল দিল্লিতে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক পদ্ধতি আছে, যার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব দিক মোকাবিলা করা যায়।বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচার, সমমর্যাদা এবং পারস্পরিক চাওয়ার ভিত্তিতেই ভারতে সংশোধিত বাণিজ্যিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা এসব বিষয়ের সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে ভারত। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আগেও বহুবার গঠনমূলক বৈঠকে আলোচনা করেছি, এমনকি সচিব পর্যায়েও। বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনার জন্য আমরা প্রস্তুত, যদি তা পারস্পরিক উপকারে উপযোগী পরিবেশে হয়।১৯ জুন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। চীনের কুনমিংয়ে ‘নবম চায়না-সাউথ এশিয়ান এক্সপজিশন অ্যান্ড দ্যা সিক্সথ চায়না-সাউথ এশিয়া কো-অপারেশন’ শীর্ষক বৈঠকের সাইডলাইনে তিন দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আশপাশের অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহে আমরা সবসময় নজর রাখি। কারণ এগুলো আমাদের স্বার্থ ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত। প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, তা আলাদা আলাদা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।ভারতের সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দু জানিয়েছে, ভারতীয় সংসদীয় কমিটির বাংলাদেশবিষয়ক বিশেষ আলোচনার প্রাথমিক প্রস্তুতিপত্র অনুযায়ী, আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে যে বিষয়গুলোতে মতামত চাওয়া হবে তা হলোÑ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ধর্মীয় উগ্রপন্থার উত্থান, বাংলাদেশের অস্থিরতা থেকে ভারতের নিরাপত্তা হুমকি এবং ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ-চীনের ‘কৌশলগত সখ্যতা’ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ।ভারতের পার্লামেন্টে আমন্ত্রিত যারা : ভারতের পার্লামেন্টে পররাষ্ট্রবিষয়ক স্থায়ী কমিটি ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ’ নিয়ে আলোচনার জন্য ৪ জন বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম হাশনাইন, ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিতাভ মাত্তু।যা বলছেন তৌহিদ হোসেন : ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারতের যে সম্পর্ক ছিল, সেটির বদলে এখন সম্পর্ক ‘পুনর্বিন্যাসের’ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ‘শীতল’ নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিফ্রিংয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল আমি বলতে চাই না। আমি বলতেছি যে, এটা একটা রিঅ্যাডজাস্টমেন্টের (পুনর্বিন্যাস) পর্যায়ে আছে। আমরা এটাকে এভাবে দেখি। রিঅ্যাডজাস্টমেন্টের পর্যায়ে আছে এবং এ ব্যাপারে আমাদের স্বদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। এটুকু বলে আমি এখানে থামব।পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা সত্যটাকে বরং স্বীকার করি যে, পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের যে রকম ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল, ভারত যে রকম সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছিল, আমাদের সঙ্গে বর্তমান সম্পর্কটা ঠিক ওই রকম নাই। কাজেই এটাকে আমি রিঅ্যাডজাস্টমেন্ট বলছি।রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কিংবা যোগাযোগ- কোন ধরনের সম্পর্ক পুনর্বিন্যাসের পর্যায়ে রয়েছে- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সম্পর্কতো সবকিছু মিলিয়েই। মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সংঘাত নাই, কিছুই নাই একমাত্র রোহিঙ্গা সমস্যা ছাড়া। রোহিঙ্গা ইস্যুর একমাত্র সমাধান হচ্ছে, তাদের দেশে ফিরে যাওয়া, নিরাপদে থাকবে, স্বাভাবিক জীবন কাটাবে, সেখানে কেউ বাধা দেবে না, অত্যাচার অবিচার করবে না। এটুকু বিশ্ব সম্প্রদায় মোটাদাগে স্বীকার করে। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারছি না। এবং নানা চেষ্টা-তদবির চলছে। বাস্তবতাটি মেনে নিই যে, আমরা তাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে কিছু করতে পারিনি। আশা করি, আগামী দিনগুলোতে আমরা সেটা করতে পারব।প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার টানা ১৬ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছায়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ অনেক নেতা ভারতে আশ্রয় নেন। বাংলাদেশ নানা সময় শেখ হাসিনাকে ফেরত চায় বাংলাদেশ; কিন্তু ভারত তাকে ফেরত দেয়নি। দেশটির অনেক নেতা বাংলাদেশ নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশেও ভারতবিরোধী মনোভাব জোরালো হয়েছে। কয়েকটি দল ভারতীয় পণ্য বর্জনেরও ডাক দেয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী তার ভারতীয় চাদর এবং স্ত্রীর ভারতীয় শাড়িতে আগুন দেন। কলকাতা, ত্রিপুরা ও মহারাষ্ট্রে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশেও ভারতের হাইকমিশন অভিমুখে বিক্ষোভ হয়।ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল : গত ৮ এপ্রিল তৃতীয় দেশে রপ্তানি পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করেছে ভারত। এর মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে স্থলপথে ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারে পণ্য রপ্তানির সুযোগ বাতিল হয় বাংলাদেশের।ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড (সিবিআইসি) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, ২০২০ সালের ২৯ জুন দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট-সংক্রান্ত আদেশটি বাতিল করা হয়েছে। আদেশ অনুযায়ী তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের একটি শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে অন্য কোনো বন্দর বা বিমানবন্দর ব্যবহার করার সুযোগ পেত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ কয়েকটি ভারতীয় বিমানবন্দর ব্যবহার করা হতো।ভারতীয় অবকাঠামো ব্যবহার করে ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমারের মতো দেশে অন্যান্য পণ্য রপ্তানির প্রক্রিয়াও ব্যাহত হবে এই সিদ্ধান্তের ফলে। ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা এতদিন পণ্য পরিবহনের সময় ও খরচ কমাতে সাহায্য করেছে। ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতি (এইপিসি) দীর্ঘদিন ধরেই এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল।যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা : সাবেক রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। সম্পর্ক অনেক সময়েই ওঠানামা করেছে এবং দুই পক্ষই সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেছে। এই সম্পর্কের একাধিক বহুমুখী দিক রয়েছে। বাংলাদেশের কাছে ভারত বড় একটি উন্নয়ন অংশীদার। আবার ভারতের কাছে বাংলাদেশ বড় একটি বাজার। সব ছাপিয়ে দুই পক্ষের সম্পর্ক এখন সহযোগিতার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক পথের দিকে এগুচ্ছে।আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। মূলত ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে অতি মাত্রায় প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করাতেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি। সামনে বাংলাদেশের নির্বাচন। নির্বাচন শেষে রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসবে। ভারত নিজেদের স্বার্থেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেবে। সে জন্যই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে এখন সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায়; যার মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে যাবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
মাদকসেবনের টাকা না দেওয়ায় যশোরের চৌগাছা উপজেলায় ছেলে রমিম ইসলামের হাতে বাবা হত্যার শিকার হন শরিফুল ইসলাম। মাদকের টাকা জোগাতে দেড় মাসের নিজ সন্তানকে বিক্রি করেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুর গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহীম হাওলাদার। নরসিংদীর শিবপুরে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন শামসুন্নাহার (৭০) নামের এক নারী। এভাবে দেশজুড়ে আজ মাদকাসক্তি এক ভয়াবহ মরণব্যাধি।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেড়েছে মাদকের ভয়াল থাবা। দিন দিন মাদকের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। নিষিদ্ধ জগতে অস্ত্রের পর মাদকই সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। বর্তমানে দেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মাদকের কেনাবেচা হয় না। শহর থেকে শুরু করে গ্রামেও এটি সহজলভ্য। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মা-বাবা মাদকাসক্ত ছেলেকে হত্যা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ছেলে জনি সরকার (২৫) মাদকাসক্ত। প্রায়ই টাকার জন্য বাড়িতে জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন। টাকা না দিলে মা-বাবাকে মারধর করতেন। দীর্ঘদিন ধরে ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাবা করুণা সরকার তার একমাত্র ছেলেকে ঘুমের মধ্যে মাথায় রুটি বানানোর বেলন দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। হত্যার পর ছেলের মরদেহ বস্তাবন্দি করে নালায় ফেলে দেন।গত ১৯ জুন দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান। মাদকসেবনের টাকা না দেওয়ায় যশোরের চৌগাছা উপজেলায় ছেলে রমিম ইসলামের হাতে বাবা হত্যার শিকার হন শরিফুল ইসলাম। ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলে রমিম ইসলামকে (২৩) আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে মাদকসেবনের টাকা না দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন।গত ২১ জুন যশোরের চৌগাছা আমলি আদালতে হাজির করলে রমিম ইসলাম বিচারকের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মাদকের টাকা জোগাতে দেড় মাস বয়সী নিজের শিশুপুত্রকে প্রতিবেশীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন এক বাবা। গত ২৩ জুন দুপুরে শরীয়তপুর সদর উপজেলার চরপালং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ রাতে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার দাদা-দাদির জিম্মায় দেয়।শিশুটির বাবার নাম ইব্রাহীম হাওলাদার। তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ফতেজঙ্গপুর গ্রামের বাসিন্দা শওকত হাওলাদারের ছেলে। পরিবার নিয়ে শহরের চরপালং এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। এভাবে সমাজের সর্বত্র মাদকের ভয়াল থাবা পড়েছে। দেশে এখন মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ৮৩ লাখ। মাদকাসক্তদের বেশির ভাগ পুরুষ। নারী ও শিশুদের মধ্যেও মাদকাসক্তি রয়েছে বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।দেশে ৮৩ লাখ মাদকাসক্ত দেশে এখন মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা ৮৩ লাখ। মাদকাসক্তদের বেশির ভাগ পুরুষ। নারী ও শিশুদের মধ্যেও মাদকাসক্তি রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এক সমীক্ষায় মাদকাসক্ত জনসংখ্যার এই প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ধরনের সমীক্ষা এই প্রথম করেছে ডিএনসি। এর আগে ২০১৮ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট একটি সমীক্ষা করেছিল, সেখানে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ৩৬ লাখ।মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা যদি ৮৩ লাখে পৌঁছে যায়, তবে সেটি দেশের মাদক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি নির্দেশ করে। এটা প্রমাণ করে, দেশে মাদক একেবারেই নিয়ন্ত্রণে নেই।তিনি মনে করেন, মাদক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমীক্ষাটি শিগগিরই প্রকাশিত হবে। অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সমীক্ষায় দেশের আট বিভাগের ১৬টি জেলা থেকে ৫ হাজারের বেশি মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে মাদকাসক্তির হিসাব তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গবেষকরা স্বীকৃত গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।গবেষণার ফলাফলের অংশে বলা হয়, দেশে প্রাক্কলিত মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৮৩ লাখ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। জনসংখ্যা ধরা হয়েছে সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা শুমারি অনুযায়ী ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ৩০ হাজার। মাদকবিষয়ক প্রতিবেদনে দেশের চারটি অঞ্চলের ১০৪টি ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের ৮ জেলার ৪৩টি, পূর্বাঞ্চলের ৪ জেলার ২১টি, উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলার ২১টি এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলা কক্সবাজারের ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে।কোন মাদকে কত আসক্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমীক্ষা অনুযায়ী, মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষ ৭৭ লাখ ৬০ হাজার এবং নারী ২ লাখ ৮৫ হাজার। এর বাইরে ২ লাখ ৫৫ হাজার শিশু-কিশোর মাদকে আসক্ত। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৬১ লাখ গাঁজায় (প্রায় ৫২ শতাংশ), ২৩ লাখ ইয়াবায় (প্রায় ২০ শতাংশ) ও ২০ লাখ ২৪ হাজার মদ্যপানে (১৭ শতাংশ) আসক্ত। ৩ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ ফেনসিডিল ও সমজাতীয় মাদকে এবং ৩ লাখ ২০ হাজার মানুষ হেরোইনে আসক্ত। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বলছে, তিন লাখের মতো মানুষ ঘুমের ওষুধ মাদক হিসেবে গ্রহণ করেন। ড্যান্ডির মতো আঠাকে মাদক হিসেবে ব্যবহার করেন ১ লাখ ৬০ হাজারের মতো মানুষ। শিরায় মাদক গ্রহণ করেন প্রায় ৩৯ হাজার মানুষ। সব মিলিয়ে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ১ কোটি ১৭ লাখের মতো। তবে একই ব্যক্তি একাধিক মাদকে আসক্ত। সেটা বিবেচনায় নিয়ে এই হিসাব তৈরি করা হয়েছে। ফলে মোট মাদকাসক্ত দাঁড়িয়েছে ৮৩ লাখ।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) হাসান মারুফ বলেন, ২০১৮ সালে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপের পর অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই এই সময়ে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে এবং মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে।তিনি বলেন, অধিদপ্তরের সীমিত সম্পদ ও সুবিধা দিয়েই মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে বলে জানান মহাপরিচালক।নিয়ন্ত্রণে নেই মাদকসেবন মাদক নিয়ে প্রতিবছরের প্রতিবেদনেই এমন কথা বলা হয়। কিন্তু মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গত শতাব্দীর আশির দশকের শুরু থেকে দেশে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে ফেনসিডিল আসা শুরু হয়। পরে ফেনসিডিলের জায়গা নেয় ইয়াবা। মিয়ানমার থেকে এখনো প্রচুর ইয়াবা আসে। পাশাপাশি নতুন করে আসা শুরু হয়েছে ক্রিস্টাল মেথ, যা মূলত ইয়াবার মূল উপাদান। দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ড মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। তবে অভিযোগ রয়েছে, মাদকের ছোট ব্যবসায়ী, বিক্রেতা ও মাদকসেবীদের বেশি ধরা হয়। আড়ালে থেকে যান বড় মাদক ব্যবসায়ীরা। আবার মাদক মামলার তদন্ত ও সাক্ষ্যদান ঠিকমতো হয় না বলে বড় অংশের মামলায় আসামি খালাস পেয়ে যান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৬৯৮টি মাদক মামলার রায় হয়েছে, তার মধ্যে ৫৫ শতাংশ মামলায় সব আসামি খালাস পেয়েছেন।গত বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দুটি জিনিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এক, মাদক; দুই, দুর্নীতি। তবে আগের চেয়ে মাদকের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের বেশি ধরা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শুধু মাদক বহনকারীদের ধরা হয়; গডফাদারদের ধরা হচ্ছে না।মাদকে সর্বনাশবিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকের বিস্তারের ফলে তরুণদের একাংশের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। পরিবারে অশান্তি বাড়ে। মাদকাসক্তরা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তারা নানা রোগে আক্রান্ত হন। মাদকাসক্তি ও রোগের চিকিৎসায় বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। মাদক চোরাচালানে দেশ থেকে বিপুল অর্থ পাচার হয়। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতিবছর পাচার হয়ে যায় ৪৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার (৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা)। আর মাদক কেনাবেচা করে অর্থ পাচারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রয়োজন। তবে দেশে পর্যাপ্ত চিকিৎসাকেন্দ্র নেই। ঢাকার কেন্দ্রীয় মাদক নিরাময়কেন্দ্রসহ চার বিভাগীয় শহরের চারটিতে একসঙ্গে মাত্র ১৯৯ জন রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব।এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় মানসিক হাসপাতালে ৫০টি শয্যা এবং পাবনা মানসিক হাসপাতালে ৩০টি শয্যা রাখা হয়েছে মাদকাসক্তিজনিত বিষয়ে মানসিক রোগীর জন্য। অর্থাৎ সরকারি পর্যায়ে মাত্র ২৭৯ জন রোগীকে ভর্তি করে একসঙ্গে সেবা দেওয়া যায়। অবশ্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশে বেসরকারি পর্যায়ে ৩৮৭টি মাদক নিরাময়কেন্দ্র রয়েছে। নতুন করে সরকারিভাবে ঢাকায় ২৫০ শয্যার এবং দেশের বাকি ৭টি বিভাগে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট আরও ৭ পূর্ণাঙ্গ মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।মনোরোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আহমেদ হেলাল বলেন, যারা মাদকাসক্ত; তাদের মধ্যে বড় অংশই তরুণ-যুবক। ফলে চিকিৎসার মাধ্যমে এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা জরুরি। সারাদেশে মাদক নিরাময়কেন্দ্র এবং পুনর্বাসনকেন্দ্র তৈরি করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের যদি পুনর্বাসন করা না যায়, তবে তারা সমাজের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াবেন।মাদকের জন্য জনস্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনীতি হুমকির মুখে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টামাদকের অবৈধ পাচার ও অপব্যবহারের কারণে জনস্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা ও দেশের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের কারণে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেকোনো দেশের উন্নতির প্রধান নিয়ামক হলো কর্মক্ষম বিপুল যুবশক্তি। আধুনিক ও প্রযুক্তিগত শিক্ষায় শিক্ষিত ও দক্ষ যুবশক্তিই পারে দেশকে চরম শিখরে নিয়ে যেতে। ভবিষ্যতে উন্নত এবং সফল রাষ্ট্রের কাতারে উপনীত হতে হলে আমাদের এই তরুণসমাজকে মাদক থেকে অবশ্যই মুক্ত রাখতে হবে।’দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষই নানাভাবে অবৈধ মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দেশে মাদক চোরাচালানের একটি ভয়াবহ বিষয় হল নারী, শিশু ও কিশোরদের এই গর্হিত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।’দেশকে মাদকমুক্ত করতে অপ্রতুল ও সীমিত জনবল নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কাজ করছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রায় ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে বর্তমানে নিয়োজিত রয়েছে ২ হাজার ৯৪৩ জন। এর মধ্যে এনফোর্সমেন্টে (আইন প্রয়োগে) নিয়োজিত রয়েছেন ১ হাজার ৬২২ জন। অপরাধ দমনে কাজ করে এমন অন্যান্য সংস্থার জনবলের সঙ্গে তুলনা করলে এ সংখ্যা সীমিত।এছাড়া যানবাহন স্বল্পতাসহ অপরাধ দমনে ও অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উন্নত উপকরণের অভাব রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চলমান প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’মাদকাসক্তদের জন্য সরকারের বিভাগীয় পর্যায়ে আলাদা কারাগার ও মাদকাসক্ত নিরাময়কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বাংলাদেশ থেকে পাট, সুতা ও বোনা কাপড়জাত পণ্য আমদানিতে স্থলবন্দর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা শুক্রবার (২৭ জুন) প্রকাশ করে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর। এ খবর জানিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে এসব পণ্য এখন থেকে শুধু ভারতের নাহভা শেভা সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা যাবে। স্থলপথে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে এসব পণ্য প্রবেশের অনুমতি থাকবে না।নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা পণ্যের মধ্যে রয়েছে—পাটজাত পণ্য, একাধিক ভাঁজের বোনা কাপড়, একক শণ সুতা, পাটের একক সুতা এবং ব্লিচ না করা বোনা পাট কাপড়।এর আগে, গত মে মাসেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ভারত। তখনও শুধুমাত্র নাহভা শেভা ও কলকাতা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য প্রবেশের সুযোগ রাখে দেশটি। উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে ভারতে।তবে ভারতীয় বাণিজ্য বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া এসব পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। তবে এসব পণ্য অন্য কোনো দেশে পুনরায় রপ্তানিও করা যাবে না। ভোরের আকাশ/হ.র
আগামী ছয় মাসের মধ্যে কমপক্ষে ২০ হাজার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে এসব মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘদিনের হয়রানি ও কলঙ্ক থেকে মুক্তি পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানান, “সরকার সাহসিকতার সঙ্গে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১২ হাজার মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে, যা প্রায় তিন লাখ মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি এখন পর্যন্ত ১৬টি বৈঠক করেছে এবং তাতে ১১ হাজার ৪৪৮টি মামলা প্রত্যাহারের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। জেলা পর্যায়ের কমিটি, সলিসিটর শাখা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রাপ্ত নথিপত্র যাচাই করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।সরকারি সূত্র আরও জানায়, এই প্রক্রিয়াকে বেগবান করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক মামলার তালিকা, এফআইআর ও চার্জশিটসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দ্রুত পাঠাতে বলা হয়েছে।ড. আসিফ নজরুল জানান, বিএনপি চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারির মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার মামলার তালিকা, এবং জামায়াতে ইসলামী ২৭ এপ্রিলের মধ্যে ১ হাজার ২০০ মামলার তালিকা দিয়েছে। তবে তালিকার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নথি (এফআইআর ও চার্জশিট) না পাঠানোয় কিছু ক্ষেত্রে মামলা যাচাই ও নিষ্পত্তি বিলম্বিত হচ্ছে।তিনি বলেন, “কমিটি নিজ উদ্যোগেও মামলা যাচাই করে এরই মধ্যে প্রায় অর্ধেক মামলার বিষয়ে সুপারিশ করেছে।”অন্যদিকে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ২০ মে তারিখে ৪৪টি মামলার তালিকা জমা দিয়েছে, যার নথিপত্র পর্যালোচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।আইন মন্ত্রণালয় পুনরায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন দ্রুত মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে প্রয়োজনীয় নথি ও তালিকা জমা দেয়। ভোরের আকাশ/হ.র