ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৫ ০৯:৪৫ পিএম
সংগৃহীত ছবি
দেশে বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
সারাদেশে অব্যাহত নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ ও নিপীড়ন বন্ধে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান উপদেষ্টা।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন একটি প্যান্ডামিক (মহামারি) পর্যায়ে। আমি এ জিনিসটা নিয়ে কাজ করছি গত ৪০ বছর ধরে। সরকার এসেছে সরকার গেছে, কেউ কিন্তু এটা সামাল দিতে পারেনি। এর একটা বড় কারণ হচ্ছে রাজনীতি, একটা বড় কারণ হচ্ছে মাদক। আর একটা বড় কারণ হচ্ছে আমরা আমাদের তরুণ, বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের ঠিকমতো মানুষ করতে পারছি না।
উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন এসেছে এ মোবাইল এবং পর্নোগ্রাফি। কিছুদিন আগে আমার কাছে একটা অভিযোগ এসেছে, অভিযোগ শুনে আমি হাত পা ছেড়ে দিয়ে ভাবছি আমি এটা নিয়ে কি করবো! ১০ বছরের একটি বাচ্চা আড়াই বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। এটাকে আমি কি করে ধর্ষণ বলি? এটা আমি কোন ভাষায় তোমাদের কাছে ব্যাখ্যা করবো? এ বাচ্চা ছেলেটাকে যখন আনা হলো সে তো বুঝেই না। সে কি দেখে? সে দেখে বড়রা যা দেখে। তার যে মানসিক বিকৃতি ঘটছে, আমরা যারা দায়িত্বশীল তারা কি করছি? আমরা এ শিশুদের প্রোটেকশন দিতে পারছি না।’
‘আমাদের তো একজনকে মেডিকেল ট্রিট করতে হচ্ছে। অন্য বাচ্চাটাকে কাউন্সেলিং, একটা ১০ বছরের বাচ্চা কাউন্সেলিং কতটুকু বোঝে আমি জানি না। তাকে তো সেরকম কিছু একটা করতে হবে। এগুলো হচ্ছে জটিল সামাজিক সমস্যা। কিন্তু সমস্যা বলে তো আমি এগুলো কার্পেটের নিচে লুকিয়ে রাখতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘এ সহিংসতাগুলো এতই ব্যাপক যে এগুলোর ব্যাপারে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর কতগুলো আইনি দাবি তুলতে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ। সারা বিশ্ব যদি পর্নোগ্রাফির নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আমার দেশ কেন পারবে না! একটি বয়সের নিচে এর অ্যাক্সেসই (প্রবেশের সুযোগ) থাকবে না। এ দাবিটা আমি তোমাদের সামনে করছি, আমি আমার জায়গা থেকে সরকারে বসে যতটুকু সম্ভব এটা নিয়ে যুদ্ধ করবো। আমাদের বাচ্চাদের হাতে এটা (পর্নোগ্রাফি) তুলে দেওয়া যাবে না।’
নারী ও শিশুনির্যাতন প্রতিরোধে উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এর কাঠামো চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ২০ থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত ২৪টি ধর্ষণ হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি হচ্ছে ছয় বছরের শিশু। আমরা তো খুব উঁচু গলায় বলি, আমরা ধর্মভীরু জাতি। ৬০ বছরের বুড়ো কি করে একটি ছয় বছরের মেয়ের গায়ে হাত দিতে পারে!’
‘আমাদের ১০ মাস আমরা যে পুরোটা পাল্টে ফেলতে পারবো তা নয়। কিন্তু আমরা কতগুলো মৌলিক কাজ করে যেতে পারবো। মৌলিক কাঠামো তৈরি করে যেতে পারবো। কতগুলো মৌলিক গবেষণা করে যেতে পারবো।’
নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৫ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘৭০ শতাংশ মেয়ে এবং ৩০ শতাংশ ছেলেকে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষিত এ ছেলে-মেয়েরা মাঠ পর্যায়ে কুইক রেসপন্স টিমের সঙ্গে কাজ করবে বলে জানান উপদেষ্টা।
ভোরের আকাশ/জাআ