নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫ ১২:১১ এএম
জুলাই আন্দোলনে ৪১ জেলায় ৪৩৪ স্পটে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে: তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দি
জুলাই ২০২৪-এর গণআন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সশস্ত্র ক্যাডাররা কমপক্ষে ৪১ জেলায় ৪৩৪টি স্থানে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত জবানবন্দিতে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। তিনি বলেন, অন্তত ৫০টিরও বেশি জেলায় আন্দোলনকারীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-১-এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার শুনানিতে এ তথ্য তুলে ধরেন তিনি। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী মোনাওয়ার হোসাইন তামীম, তানভীর হাসান জোহা ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান। আসামিপক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর বলেন, তাঁর অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, আন্দোলনের সময় হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, নির্যাতনসহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয় ক্ষমতায় টিকে থাকার উদ্দেশ্যে। সাধারণ ছাত্র-জনতা ও নিরস্ত্র মানুষই ছিল এই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। এ জন্য গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের শনাক্ত করা হয় এবং মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তার, হত্যা ও নিপীড়নের শিকার করা হয়।
তিনি আরও জানান, আন্দোলন দমনে পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছিল। জবানবন্দির অংশ হিসেবে তিনি বিবিসি বাংলা ও আল জাজিরার প্রচারিত দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। বিবিসির প্রতিবেদনে আশুলিয়ায় পুলিশের গাড়িতে লাশ পোড়ানো, রংপুরে কাছ থেকে গুলি করে হত্যার দৃশ্যসহ একাধিক প্রমাণ দেখানো হয়। অন্যদিকে আল জাজিরার প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে বিতর্কিত মন্তব্য, ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে কথোপকথন এবং আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর দৃশ্য উপস্থাপিত হয়।
প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামীম সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর জবানবন্দি শেষ করেছেন এবং আসামিপক্ষের জেরা শুরু হয়েছে। আগামী সোমবার পরবর্তী জেরা চলবে। তদন্তকালে আলমগীর মোট ৯২টি নথি, ৩৭টি বস্তুপ্রমাণ এবং প্রায় ১৪ হাজার পৃষ্ঠার প্রমাণ আদালতে জমা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণের দুটি উপাদান হলো ব্যাপকতা ও পদ্ধতিগতভাবে সংঘটন। এ মামলায় ৫০টির বেশি জেলায় আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ ও নির্যাতন হয়েছে, ৪১ জেলায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। একই গোষ্ঠীর মানুষকে লক্ষ্য করে পদ্ধতিগতভাবে আক্রমণ চালানো হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণিত হয়, জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত অপরাধগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই এই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে সাবেক আইজিপি মামুনের রাজসাক্ষীর আবেদন মঞ্জুর করা হয়। মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন উপপরিচালক জানে আলম খান। পরবর্তীতে উপপরিচালক মো. আলমগীর তদন্ত করে এ বছরের ১২ মে প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং পরবর্তীতে সম্পূরক অভিযোগ জমা দেন।
ভোরের আকাশ // হ.র