জুলাই আন্দোলন দমনে সারা দেশে ছোড়া হয়েছিল ৩ লাখ ৫ হাজার রাউন্ড গুলি: তদন্ত কর্মকর্তা
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন দমনে সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের মারণাস্ত্র ব্যবহার করে মোট তিন লাখ পাঁচ হাজার ৩১১ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছিল। শুধু ঢাকায় এই সময় ব্যবহার করা হয়েছিল ৯৫ হাজার ৩১৩ রাউন্ড।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এই তথ্য জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। তিনি এই মামলায় ৫৪ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলাটি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার শীর্ষ দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, “পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত ২১৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এলএমজি, এসএমজি, চায়নিজ রাইফেল, শটগান, রিভলভার, পিস্তলসহ বিভিন্ন মারণাস্ত্র ব্যবহার করে ঢাকাসহ সারা দেশে এ বিপুল পরিমাণ গুলি ছোড়া হয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, তদন্তকালে সংগৃহীত আলামত, পত্রপত্রিকা, ভিডিও ফুটেজ, অডিও ক্লিপ, বই, বিশেষজ্ঞ মতামত, শহীদ পরিবার, আহত ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের জবানবন্দি এবং আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনায় উঠে এসেছে যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন পরিকল্পিতভাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছিলেন।
মো. আলমগীর জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে নিরীহ, নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ ছাত্র-জনতার ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত ও আহত হন, হাজারো মানুষ জখম ও অঙ্গহানির শিকার হন। এছাড়া নির্বিচারে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, মিথ্যা মামলা, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ পরিবর্তন, আহতদের ওপর পুনরায় হামলা এবং আন্দোলনরত ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের মতো ভয়াবহ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
ভোরের আকাশ // হ.র
সংশ্লিষ্ট
প্রাকৃতিক স্বর্গরাজ্য আর বহুমাত্রিক সংস্কৃতির মেলবন্ধন পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা-খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে অঘটন ঘটানোর মাধ্যেমে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচাল করার যে দেশ-বিদেশি ষড়যন্ত্র, তার ধারাবাহিকতায় তিন পার্বত্য জেলায় নাশকতামূল কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। বিছিন্নতাবাদী সংগঠনের চাঁদাবাজি, বাঙালি বনাম পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে অবিশ্বাস, রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনা, প্রশাসনিক অদক্ষতা, ভিন্ন রাষ্ট্রের উস্কানিসহ ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়াকে কাজে লাগাচ্ছে একটি কুচক্রিমহল। বিশৃঙ্খলার পেছনে এসবই মূল কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।অনুসন্ধানে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলায় মারমা সম্প্রদায়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ওই চক্রটি রীতিমতো রাষ্ট্রঘাতি অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে। তারা পাহাড়ি জনপদে রক্তাক্ত সংঘাতের চক্রান্ত করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ, বাড়ি ঘরে হামলা, ভাঙচুরের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধে লিপ্ত হয়েছে তারা। পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের উত্তেজনার মধ্যে রোববার খাগড়াছড়ির গুইমারায় ১৪৪ ধারা ভেঙে সহিংসতা ছড়িয়ে পরে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষে অন্তত ৩ জন নিহত হন। এই ঘটনায় একজন মেজরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন।গতকাল সোমবার সচিবলয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, খাগড়াছড়ির বর্তমান পরিস্থিতি সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। খাগড়াছড়িতে একটা মহল পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব চলছে। এই উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু একটা মহল চেষ্টা করছে এই উৎসবটা যেন ভালোভাবে না হয়। একটা মহলই খাগড়াছড়িতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পাহাড়ে অস্ত্র-অর্থ যোগান দেওয়া হচ্ছে কীনা এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ভারত ও ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনে পাহাড়ে যেন কোনো ধরনের ঘটনা না ঘটতে পারে এজন্য আমরা সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিচ্ছি। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা ঘটনাস্থলে রয়েছেন, তিনি সার্বিক বিষয় দেখছেন। তিনি বলেন, কিছু সন্ত্রাসী পাহাড়ের ওপর থেকে ফায়ার (গুলি) করছে। এ হাতিয়ারগুলো (অস্ত্র) অনেক সময় বাইরে থেকে আসছে। আমি অবশ্য সেই দেশের নাম বলতে চাই না।জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নানা বিভাজন, অশান্তি জিইয়ে রেখে একটি পক্ষ বারবার সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা আর দ্বিতীয় পক্ষকে সুবিধা নিতে দেব না। আমাদের মধ্যে যদি সমস্যা থাকে, আমরা নিজেরাই সুরাহা করব। এ জন্য আপনাদের-আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।খাগড়াছড়ির ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকে: গত মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খাগড়াছড়ি জেলায় মারমা সম্প্রদায়ের একজন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী প্রাইভেট পড়া শেষে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন দুর্বৃত্তের হাতে অপহরণের শিকার হয়ে ধর্ষিত হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ওই স্কুল ছাত্রীকে মেডিকেল পরীক্ষা করলে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এই জঘন্য ঘটনায় জড়িত মূল আসামি শয়ন শীলকে বৃহস্পতিবার সকালে সেনাবাহিনীর সদর জোনের সহযোগিতায় পুলিশ গ্রেফতার করে। আদালতে হাজির করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। বাকি অপরাধীদের ধরতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই দ্রুত পদক্ষেপ জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় সেনাবাহিনীর অগ্রণী ভূমিকার প্রমাণ বহন করে।রোববার ধর্ষণের প্রতিবাদে ‘জুম্ম-ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে অবরোধ চলাকালে খাগড়াছড়ির গুইমারা বাজার এবং এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক তান্ডব চালায় ভারতের প্রশিক্ষিত পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। এ সময় ২০ থেকে ২৫টি দোকান, বেশ কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল এবং শান্তিপ্রিয় বাঙালি-পাহাড়িদের বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।এ সময় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে এবং প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করে। এ সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশের একাধিক সদস্য আহত হন। সম্প্রতি সময়ে পাহাড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় পাহাড়ে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প বৃদ্ধি ও সেনা সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন শান্তিপ্রিয় বাঙালি-পাহাড়িরা। ভারতের প্রশিক্ষিত উপজাতি সন্ত্রাসীরাই পাহাড়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে এবং পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।উদ্ভূত পরিস্থিতি ও উস্কানি: এই ঘটনার পর ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) গ্রুপের উস্কানিতে উখ্যানু মারমার নেতৃত্বে ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’ ব্যানারে তিন পার্বত্য জেলায় বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ও মহাসমাবেশের ডাক দেয়া হয়। নিরাপত্তা বাহিনী নিশ্চিত হয় উখ্যানু মারমা ইউপিডিএফের প্ররোচনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও পাহাড়ের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এই প্রেক্ষিতে উখ্যানু মারমাকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয় যাতে অরাজকতা বা নৈরাজ্য সৃষ্টি করা না হয়।এদিকে, রাঙামাটি চাকমা সার্কেলের চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের দ্বিতীয় স্ত্রী ইয়ান ইয়ান রাখাইন তার ফেসবুক আইডি থেকে উস্কানিমূলক পোস্ট প্রচার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেন। একইভাবে, কানাডা প্রবাসী প্রজ্ঞা তাপস চাকমা সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ঘেরাও করার মতো চরম উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে জনগণকে উত্তেজিত করার প্রয়াস চালান।সহিংসতা ও নাশকতা : ২৬ সেপ্টেম্বর খাগড়াাছড়ি জেলায় ‘জুম্ম ছাত্র জনতা’র ব্যানারে মহাসমাবেশের সময় উখ্যানু মারমার নেতৃত্বে এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো মিথ্যা গুজবের প্রভাবে একটি সেনাবাহিনীর টহল দলের উপর হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এতে তিনজন সেনাসদস্য আহত হন। পরদিন ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধের সময় ইউপিডিএফের গুলিতে একটি টমটম গাড়ির চালক আহত হন।এছাড়া, আলুটিলা পুনর্বাসন এলাকায় একটি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করা হয়। জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। দিন গড়াতে খাগড়াছড়ি পৌরসভার বিভিন্ন পয়েন্টে বাঙালি সম্প্রদায়ের উপর অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালানো হয়। এতে একটি মসজিদে হামলা এবং ১৬-১৭ জন বাঙালি আহত হন, যারা বর্তমানে খাগড়াাছড়ি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বরনির্ভর বাজারে বাঙালি ব্যবসায়ীদের অন্তত ১০টি দোকান লুটপাট ও ভাঙচুরের শিকার হয়, যার ফলে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন।ইউপিডিএফের উদ্দেশ্য : ইউপিডিএফ কথিত ধর্ষণের এই ঘটনাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অংশ হিসেবে উপজাতীয় সম্প্রদায়ের একটি অংশকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে। সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা ও উস্কানিমূলক স্লোগান যেমন ‘পাহাড় থেকে সেনা হটাও’ প্রচার করে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও পাহাড়ের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।প্রশাসনের পদক্ষেপ : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা থেকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেন। তবে এরপরও জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবর্ষণ ও ইউপিডিএফের প্ররোচনায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এবং গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সদস্যরা খাগড়াছড়ি কলেজগেট, পৌরসভা, মহাজন পাড়াা, চেঙ্গী স্কয়ার, স্বরনির্ভর, টেকনিক্যাল ও নারানখাইয়া এলাকায় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে নাশকতার চেষ্টা করে।খাগড়াছড়ি বিজিবি ব্যাটালিয়নের সিও লে. কর্ণেল কামরান কবীর উদ্দিন বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে, সেখানে ইস্যু তৈরির বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। এর নেপথ্যে বাইরের কোন শক্তি জড়িত রয়েছে কিনা তা তদন্ত না করে বলা সম্ভব নয়। আমরা নেপথ্যের কারন অনুসন্ধ্যান করছি।সামরিক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোস্তফা কামাল বলেন, খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি মেয়ে ধর্ষণের ঘটনায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও রাস্তা অবরোধের যে প্রতিক্রিয়া পাহাড়িরা দেখাচ্ছেন এর নেপথ্যে রয়েছে ভারতের ইন্ধন। স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালীর মধ্যে সম্পর্ক অস্থিতিশীল করার জন্য উস্কানিমূলক কার্যক্রম ইৎসাহিত করছে। ভারতের ইন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোন অপরাধ সংঘটিত হলে পাহাড়িরা আইন হাতে তুলে নিয়ে বড় ধরনের বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে। অথচ দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন কোন অপরাধ ঘটার পর গুরুত্ব দিয়েই অপরাধীকে আইনের আওতায় আনছে বা আনার চেষ্টা করছে।এদিকে, পাহাড়ে প্রায় দু’যুগের বেশি সময় ধরে সশস্ত্র আন্দোলন চলার পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি। পার্বত্য শান্তি চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে ইতিমধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে এবং ৯টি ধারার বাস্তবায়ন চলমান আছে। কিন্তু শুধুমাত্র একটি শান্তি চুক্তি না মেনে জেএসএম মূল সহ পাহাড়ে চার সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ পার্বত্যাঞ্চলকে জুম্মুল্যান্ড করার পায়রাতা করছে। চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও খুন-খারাবি। স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশের এই অংশকে দখল করার। এ কারণে দেশি-বিদেশী লবিস্টও তারা অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ করেছে। সশস্ত্র গ্রুপের শীর্ষ নেতারা চাঁদার টাকায় বিলাস বহুল জীবনযাপন করেন। বিদেশেও বাড়ি আছে অনেকে। তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা এদেশে থাকেন না, বিদেশে পড়াশুনা করেন। আর এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের উস্কানি দেয় কতিপয় শিক্ষিত গ্রুপ।সূত্র জানিয়েছে, গত ১৭ মে চট্রগ্রামের একটি পোশাক কারখানা থেকে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন ‘কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) এর অর্ডাও করা ২০ হাজার ৩০০ পিস পোশাক (ইউনিফর্ম) উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারা পাহাড়কে জুমল্যান্ড নামের নতুন একটা দেশ বানানোর পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষে তারা ১০ হাজার সদস্য বিশিষ্ট সশস্ত্র আর্মফোর্স বাহীনি ও ৪০ হাজার সাধারণ যোদ্ধা তৈরি করেছে। পাশের একটি দেশ তাতে সহায়তা করেছে। তারা ৪ ভাগে বিভক্ত ইউপিডিএফকে এক করতে কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে তারা। বিনিময়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের চাঁদার টাকার ভাগ পান তারা।এদিকে চাঁদাবাজির পাশাপাশি পাহাড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো নারী নির্যাতনও করে। এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুললে হত্যা করা হয়। পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্তে মিয়ানমার ও মিজোরাম অবস্হিত। সীমান্তে প্রায় ১০১ কিলোমিটার এলাকা অরক্ষিত। হাঁটা ছাড়া সেখানে যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। পার্বত্য সীমান্তের ওপারে রয়েছে শান্তি চুক্তিবিরোধী উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের ৭টি আস্তানা। সেখান থেকে অবাধে আসছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ। আর এসব মাদক ও অত্যাধুনিক অস্ত্র তারা ব্যবহার করছে এবং সেখান থেকে সারাদেশে উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাসীদের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে।পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের কাছে এলএমজি, এসএমজি/একে৪৭, ৭.৬২ মি.মি. রাইফেল, এম-১৬ রাইফেল, জি-৩ রাইফেল, ০.২২ রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, পিস্তল, মর্টার, দেশীয় পিস্তল, দেশীয় বন্দুক, হ্যান্ড গ্রেনেডসহ রকেট লাউঞ্চারও রয়েছে। একই সঙ্গে ইয়াবা, আইসসহ ভয়ঙ্কর সব মাদকও দেশে আসছে। ৩ পার্বত্য জেলায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ করেও উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা ওই সাত আস্তানায় গিয়ে নিরাপদে আশ্রয়ে থাকেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
নিজেদের ঘাড় থেকে আশ্রিত ১৩ লাখ ‘রোহিঙ্গার বোঝা’ নামাতে মরিয়া বাংলাদেশ। বাংলাদেশে আশ্রিত বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে প্রত্যাবসনে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রতিফলন হিসেবে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে আজ মঙ্গলবার ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর পরিস্থিতি’ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসহ অংশীজন, দাতা সংস্থার প্রতিনিধিদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন।জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশগ্রহণরত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস উচ্চ পর্যায়ের এই বিশেষ ‘রোহিঙ্গা অধিবেশন’-এ বক্তব্য রাখবেন। তিনি তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি সহযোগতা ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাবেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে। আর এই অধিবেশনে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিও থাকবেন। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের উদ্যোগে সাধারণ পরিষদে এ ধরনের একটি উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশন আয়োজন এই প্রথম।সূত্র জানায়, গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রধান উপদেষ্টা প্রথমবারের মতো সব অংশীদারের অংশগ্রহণে জাতিসংঘের উদ্যোগে এমন একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা আয়োজনের প্রস্তাব করেন। প্রধান উপদেষ্টার ওই প্রস্তাব বিশ্বব্যাপী দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সর্বসম্মতিক্রমে একটি রেজুলেশনের মাধ্যমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের এবারের সভাটি আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক থেকে যেন রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধানে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, সেজন্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গত ২৪-২৬ আগস্ট কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো অংশীদারদের জন্য একটি সংলাপের আয়োজনও করা হয়।জানা গেছে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরবেন। এছাড়া কক্সবাজারে রোহিঙ্গাবিষয়ক সম্মেলনে সংকট সমাধানে যে সাতটি প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন, সেটিও পুনরায় বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন তিনি। এই বৈঠক থেকে রোহিঙ্গা-সংকট সমাধানের একটা রাস্তা তৈরি হবে বলে আশা করছে সরকার।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আজ জাতিসংঘে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আহ্বান করেছেন সাধারণ পরিষদের সভাপতি। ওই সভার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক সহযোগিতা একত্রিত করা, রোহিঙ্গা সংকটের দিকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি ফেরানো, পুরো সংকট নিয়ে পর্যালোচনা ও সংকটের মূল কারণ খুঁজে বের করা। একইসঙ্গে সভায় এ অঞ্চলের মানবিক সংকট, সংকটের একটি টেকসই, দীর্ঘমেয়াদি ও উদ্ভাবনী পরিকল্পনা খুঁজে বের করার চেষ্টাও করা হবে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছায় নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ নিজ বাসভূমে প্রত্যাবাসনে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার বিষয়েও আলোচনা হবে।পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে একটা দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী পদক্ষেপ প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা।এ সমস্যা সমাধানে জাতিসংঝের রোহিঙ্গা অধিবেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আশা পকাশ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ যাতে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীর চাপমুক্ত হতে পারে, সে বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এই সমস্যা একা সমাধান করতে পারবে না। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। জাতিসংঘের বিশেষ অধিবেশনে এ ব্যাপারে বড় অগ্রগতি হবে বলে আশা করছে সরকার।উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার আদেশে দেশটির রাখাইন প্রদেশে ২০১৭ সাল থেকে হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন-লুটপাটের স্বীকার ও বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৩ লাখ মানুষ এখন বাংলাদেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আট বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করলেও তাদের নিজ বাসভুমে প্রত্যাবসন এখনও অনিশ্চিত। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশকে আর্থিক, সামজিক, পরিবেশ, নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আশ্রিত রেহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ অবস্থার অবসানে বাংলাদেশ সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে রেহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানামুখী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।অন্যদিকে, মিয়ানমারের সামরিক সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী চাতুরতা, গৃহযুদ্ধ এবং ‘আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলো’র খেলার বলি হয়ে গেছে ভাগ্যবিড়ম্বিত, দেশহারা মিয়ামারের জনগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষ। আর এর বিষফল ভোগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। একদিকে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষ বিদেশভূমের ক্যাম্পে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। আর এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে মানবিক দৃষ্টিতে নিজদেশে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশও দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিল সমস্যার মুখে নিপতিত। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে-রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষ এবং তাদের আশ্রয়দাতা বাংলাদেশ এখন অনেকটা বিশে^র তিন পরাশক্তি-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন এবং আঞ্চলিক শক্তি ভারতের ‘ভু-রাজনীতি’র খেলার শিকারে পরিণত হয়েছে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রলায়সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে আশ্রিত ও নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে।ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, সীমান্ত পেরিয়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আরো প্রায় সোয়া লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এরপর রোহিঙ্গারা সবচেয়ে বেশি এসেছেন ২০২৫ সালে। গত ৮ মাসে ৯৬টি নৌকায় প্রায় ৪ হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যা গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এদিকে, রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ কমে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে নতুন সংকট।ইউএনএইচসিআর বলছে, চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১০ কোটি ৪৩ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা এসেছে বাংলাদেশে। তবে এখনও ঘাটতি আছে ১৫ কোটি ১২ লাখ ডলার। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজন মোট ২৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জাতিসংঘে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আহ্বান করেছেন সাধারণ পরিষদের সভাপতি। ওই সভার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক সহযোগিতা একত্রিত করা, রোহিঙ্গা সংকটের দিকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি ফেরানো, পুরো সংকট নিয়ে পর্যালোচনা ও সংকটের মূল কারণ খুঁজে বের করা। একইসঙ্গে সভায় এ অঞ্চলের মানবিক সংকট, সংকটের একটি টেকসই, দীর্ঘমেয়াদি ও উদ্ভাবনী পরিকল্পনা খুঁজে বের করার চেষ্টাও করা হবে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছায় নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ নিজ বাসভূমে প্রত্যাবাসনে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করার বিষয়েও আলোচনা হবে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখবেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি আনালেনা বেয়ারবক, জাতিসংঘের মহাসচিবের পক্ষে মহাসচিবের কার্যনির্বাহী কার্যালয়ের চিফ দ্য ক্যাবিনেট আর্ল কোর্টেনে রাত্রে, উইমেনস পিস নেটওয়ার্ক-মিয়ানমারের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ওয়াই ওয়াই নু, মিয়ানমার বিষয়ক আসিয়ান চেয়ারের বিশেষ দূত ওসমান হাশিম, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপ, আরাকান ইয়ুথ পিস নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা রফিক হুসন, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি, রিফিউজি উইমেন ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক লাকি করিম, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভোলকার টার্ক এবং রোহিঙ্গা স্টুডেন্টস নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা মং সাওয়্যেদুল্লাহ।এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, রোহিাঙ্গাদের নিজ দেশে সন্মনজনক প্রত্যাবসনে বাংলাদেশ তার দায়িত্বের চেয়েও বেশি করেছে। এখন অর্থায়ন, দায়বদ্ধতা ও দায়িত্ব ভাগাভাগির মাধ্যমে বিশ্বকে পদক্ষেপ নিতে হবে বাংলাদেশ এ সমমস্যার আশু সমাধান প্রত্যাশা করছে। এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।বিশেষজ্ঞদের মতে, বাস্তব অবস্থা হচ্ছে-রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষ এবং তাদের আশ্রয়দাতা বাংলাদেশ এখন এই ইস্যুতে বিশে^র তিন পরাশক্তি-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন এবং আঞ্চলিক শক্তি ভারতের ‘ভু-রাজনীতি’র খেলার শিকার। আর বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের তাদের নিজদেশে প্রত্যাবসনের নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও বিষয়টি এখনও সমাধানের পথ পায়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সমন্বিত উদ্যোগ ও আন্তরিকতা বেশি জরুরি। আর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এককভাবে এ সমস্যার সমাধান প্রায় অসম্ভব। বিষয়টি নিয়ে ভারতসহ পরাশক্তিগুলোর ‘ভু-রাজনীতি’র খেলা ছাড়াও মিয়ামনারের রাখাইন রাজ্যসহ দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের বিষয়ে জটিলতা দিন দিন আরো বাড়ছে।এর পেছনে ‘ভূ-রাজনৈতিক’ জটিলতার পাশাপাশি নিজেদের স্বার্থে মিয়ানমারের প্রতি দুই বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ-ভারত ও চীনের রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত পক্ষপাতও। আমেরিকা-ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা বিশ্ব যখন মিয়ানমারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, তখন চীন তাকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে পাশে দাঁড়ায়। ভারতও তাদের নিজেদের স্বার্থে এ সংকট নিরসনে বাংলাদেশকে প্রত্যাশিত সহায়তা করেনি। এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতীয় ঐকমত্যও অপরিহার্য।আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও টেকসই সমাধান জরুরি বলেও মনে করেন তারা। তাদের মতে, রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ায় বাংলাদেশের নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হচ্ছে, দিন দিন আন্তসীমান্ত নিরাপত্তা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটছে। রাখাইনের গৃহযুদ্ধে আরাকান আর্মির পক্ষে কুকি চীন আর্মি সদস্যদের অংশগ্রহণ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান, রাাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার এলাকার জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকিও সৃষ্টি করেছে। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টির আশু সুরাহা প্রয়োজন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠেীর তাদের নিজদেশে প্রত্যাবসন প্রসঙ্গে অন্তবর্তীকালীন সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রলায়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক ই আজম ভোরের আকাশ’কে বলেন, রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে প্রত্যাবসনের বিষয়টি নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার আন্তরিকভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে জাতিসংঘ এই ‘বিশেষ রোহিঙ্গা অধিবেশন’-এর আয়োজন করেছে।তিনি বলেন, বিষয়টির স্থায়ী সমাধানে এবং মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন ত্বরান্বিত করতে জাতিসংঘের এই অধিবেশনে একটা স্থায়ী সমাধান হবে বলে আশা করছে সরকার।প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ অধিবেশন আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন উল্লেখ করেন তিনি। জাতিসংঘের রোহিঙ্গা বিষয়ক এই বিশেষ অধিবেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিজ দেশে প্রত্যাবসনের সুযোগ পাবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন বাধা মোকাবিলা করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বর্তমান সরকার রেহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন জোরালো কূটনৈতিক পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে।তিনি বলেন, আমাদের সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা হচ্ছে-রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। এজন্য আমরা ‘বিশ^ জনমত’ গড়ে তোলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা গণহত্যা এবং মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উচ্ছেদের আট বছর ইতোমধ্যে পার হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল, লেবানন-ইসরায়েল, সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধসহ সাম্প্রতিক ইরান-ইসরাইল এবং মার্কিন-চীন-ভারত শুল্ক-বাণিজ্য যুদ্ধসহ বৈশ্বিক অন্যান্য সংঘাতের ডামাডোলের পাশাপাশি বাংলাদেশে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন ইস্যু অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছিল।তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস গত রমজান মাসে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে তাদের নিজদেশে প্রত্যাবসনে উদ্যোগও নিয়েছেন। ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ সমস্যা সমাধানে আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতকিছুর পরেও রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমিতে ফেরার বিষয়টি এখনও অনিশ্চিতই রয়ে গেছে।রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর একদিকে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামাজিক পরিবেশ ও প্রতিবেশও এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্নস্থানে। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার এ সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত তৎপর রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন এবং এ সমস্যার সমাধানে জাতিসংঘের মহাসচিবকে এ সমাধানে এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করেন।সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিভাবে গ্রহণযোগ্য সরকার ক্ষমতায় থাকায় দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা এ বিষয়টি সমাধানের দিকে নেওয়া সম্ভব। আর রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ অঞ্চল ভাগ্যবিড়ম্বিত মুসলিম এই জনগোষ্ঠীর অনিশ্চিত, অনিরাপদ, আশাহীন জীবনের অবসান ঘটানোর পাশাপাশি তা বাংলাদেশের জন্য এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও গুরুত্বপুর্ণ।এক্ষেত্রে নিজদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যাতে সহিংসতা ও নিপীড়ন-নির্যাতনমুক্ত থাকে এবং তাদের নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি জাতিসংঘের অধীনে রোহিঙ্গাদের নিজদেশে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের ব্যবস্থার নিশ্চয়তা দিতে হবে মিয়ানমারকে।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন এবং জান-মালের নিরাপত্তায় বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ জরুরি। এজন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে এ বিষয়ে মিয়ানমারকে রাজি করাতে এই বিশেষ অধিবেশন অতি গুরুত্বপুর্ণ। জানা গেছে, সবমিলিয়ে এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো-পশ্চিমা বিশ্ব তথা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে স্বীকৃতি আদায়ের ব্যবস্থা করা। যথাযথ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিষয়টি জাতিসংঘে প্রস্তাব আকারে তুলে এবং তা পাস করানোর মাধ্যমে বাস্তবায়ন সম্ভব হতে পারে। আর জটিল এ বিষয়টি সমাধানে মিয়ানমারের রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এবং দেশটিতে চলমান গৃহযুদ্ধ, আঞ্চলিক ভূ-কৌশলগত জটিলতা, নিরাপত্তাজনিত প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি দেশটির সরকারের বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ঢুকতে না দেওয়ার মানসিকতা থেকে মুক্ত করতে ব্যাপক ‘আন্তর্জাতিক চাপ’ এবং কূটনৈতিক জোরালো উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে।উল্লেখ্য, আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কারণে বাংলাদেশের কক্সবাজার, চট্টগ্রাম এলাকায় ইতোমধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সমস্যার মুখে রয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে মাদক ও অস্ত্রের রমরমা ব্যবসা চলছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী ঘিরে মিয়ানমারের কয়েকটি সন্ত্রাসী সংগঠন সশস্ত্র তৎপরতা চালাচ্ছে। এছাড়া মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ‘আদার পিপল’ বা ‘বেঙ্গলি মুসলিম’ হিসেবেই চিহ্নিত করে থাকে। অথচ দেশটির স্বাধীনতা সংগ্রামেও রেহিঙ্গাদের রয়েছে বিশাল অবদান। ১৯৬২ সালে মিয়ানমারে সেনাশাসন শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত অন্যান্য সম্প্রদায়ের মতো রোহিঙ্গারাও নাগরিক হিসেবে বসবাস করছে। অথচ কালের পরিক্রমায় রোহিঙ্গারা এখন নিজ দেশেই পরবাসী এবং বিতাড়িত।ভোরের আকাশ/এসএইচ
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং তাদের আশ্রয়দাতা কক্সবাজারের স্থানীয়দের মৌলিক অবকাঠামো ও জরুরি সেবা উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির মধ্যে ৫৮.৬ মিলিয়ন ডলারের এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (এডিএফ) অনুদান এবং ২৮.১ মিলিয়ন ডলারের স্বল্পসুদে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ে ইউন জিয়ং নিজ নিজ পক্ষ থেকে চুক্তিতে সই করেন।এডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগণের স্থিতিশীলতা ও জীবিকা নির্বাহে সহায়তা করার পাশাপাশি সামাজিক সংহতি বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৮ সাল থেকে এডিবি এ পর্যন্ত মোট ১৭১.৪ মিলিয়ন ডলারের অনুদান ও ঋণ প্রদান করেছে।‘ইন্টিগ্রেটেড সার্ভিসেস অ্যান্ড লাইভলিহুড ফর ডিসপ্লেসড পিপল ফ্রম মিয়ানমার অ্যান্ড হোস্ট কমিউনিটিজ ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা, সড়ক, ড্রেনেজ, খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ এবং দুর্যোগ সহনশীলতা উন্নয়নে কাজ করা হবে।প্রকল্পের অংশ হিসেবে কক্সবাজারে সোলার স্ট্রিটলাইট স্থাপন, ভাসানচরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা পুনর্গঠন, রান্নার জন্য বায়োগ্যাস উৎপাদন ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এছাড়া ড্রেনেজ খাল পুনঃস্থাপন, খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র নির্মাণ এবং নারী-শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানো হবে।কক্সবাজারের নয়টি উপজেলায় পাইপলাইনভিত্তিক পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হবে। টেকনাফে পানি সংকট মোকাবিলায় ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি শোধনাগার ও ট্রান্সমিশন পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে হাতিয়ায় বহুমুখী সাইক্লোন শেল্টার স্থাপন করা হবে।বর্তমানে কক্সবাজারের ৩৩টি শিবিরে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে, যাদের প্রায় ৭৫ শতাংশ নারী ও শিশু। এছাড়া নোয়াখালীর ভাসানচরে ৩৬ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা স্থানান্তরিত হয়েছেন।ভোরের আকাশ // হ.র
জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে তৈরি বিতর্কের মধ্যে চূড়ান্ত অবস্থান জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।সম্প্রতি গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেওয়া সাকিবের ওই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করে।রবিবার রাত ১০টার দিকে আসিফ মাহমুদ নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি দিয়েছেন আপনারা আমাকে। বাট আই ওয়াজ রাইট। এন্ড অব দ্য ডিসকাশন।’ যদিও সরাসরি কোনো নাম উল্লেখ করেননি, তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর ইঙ্গিত সাকিব আল হাসানের দিকে ধরা হয়েছে।এদিকে সোমবার সকালে আরেকটি ফেসবুক পোস্টে ক্রীড়া উপদেষ্টা সাকিবকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘যার হাত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। বোর্ডের কর্তারা একাধিকবার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে বললেও তা না করে বরং খুনিদের এনডোর্স করা ছাড়াও শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, মানি লন্ডারিং, ফিন্যানশিয়াল ফ্রড করা কাউকে শুধু ভালো ক্রিকেটার বলেই পুনর্বাসন কেন করা হবে? আইন সবার জন্য সমান, আইনকে মোকাবেলা করুন।’সাকিব আল হাসানও এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাংলাদেশ সময় রাত ১১:২০ মিনিটে নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যাক শেষমেশ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন যে তাঁর জন্য আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেওয়া হলো না, বাংলাদেশের জন্য খেলতে পারলাম না! ফিরব হয়তো কোনো দিন আপন মাতৃভূমিতে, ভালোবাসি বাংলাদেশ।’এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত বার্তাগুলোতে স্পষ্ট হয়েছে যে সাকিব আল হাসানের পুনর্বাসন এবং জাতীয় দলের অংশ হিসেবে তার অবস্থান নিয়েই সরকারের কর্মকর্তারা ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বিস্তারিত অবস্থান প্রকাশ করেছেন।ভোরের আকাশ // হ.র