ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ০১:০৬ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে সবজির বাজার দিন দিন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছে। দেশের কাঁচবাজারগুলোতে মাছ ও মাংসের দাম লাগামছাড়া বেড়ে চলেছে। পেঁপে, আলু, কুমড়া, বেগুনসহ কয়েকটি সবজি একসময় নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা ছিল, সেগুলোর দামও এখন নাগালের বাইরে।
এতে সবচেয়ে বেশি ভুগছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। দাম বাড়ার কারণে অনেক পরিবার এখন নিয়মিত মাছ-মাংস খাওয়া বাদ দিচ্ছে বা কমিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে পুষ্টির ঘাটতি তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে শিশু ও গর্ভবতী নারীদের মধ্যে।
সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। এই দাম আবার সপ্তাহের ব্যবধানে ওঠানামা করে। বর্তমানে বাজারে ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য চরম হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার, ঝিগাতলা কাঁচা বাজার এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি পেঁপে ৮০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি, লাউ, বেগুন, সিম, বরবটি, টমেটো ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সবজির দাম নিয়ে ক্রেতাদের মাঝেও ব্যাপক ক্ষোভ দেখা গেছে। ক্রেতারা বলছেন, আমরা মাছ-মাংস খাওয়া বাদ দিয়েছি বেশি দাম দেখে। কিন্তু এখন দেখি সবজি খাওয়াও বাদ দিতে হবে।
এদিকে গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগির দাম ওঠানামা করলেও এখন ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কক ও সোনালী মুরগি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। লাল ডিমের ডজন ১৩০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে প্রতি হালি ডিমের দাম রাখছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বর্তমানে সব ধরনের সবজি ও মাছের দাম তুলনামূলক বেশি। এ কারণে ডিমের চাহিদা বেড়েছে। তাই দাম কিছুটা বাড়তি। প্রতি ডজনে ৫ টাকা বেড়ে এখন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকায়। আর প্রতি ডজন সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়।
এছাড়া বাজারে চাষের রুই-কাতল মাছ ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, শিং মাছ ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, সিলভার কার্প-গ্রাস কার্প ২৮০ থেকে ৩৩০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের কই, তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস ২৫০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, বাইন, বাইল মাছ ৭০০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি বোয়াল ৮০০-১০০০ টাকা, কোরাল ৮৫০-৯০০ টাকা, আইড় ৭০০-৮০০ টাকা, চাষের রুই ৩০০-৪৫০ টাকা ও কাতল ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া তেলাপিয়া ১৮০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ টাকা, চাষের ট্যাংরা ৬০০ টাকা, এবং পাবদা ও শিং ৪০০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়, খাসি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, আর বকরি ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। দাম অপরিবর্তিত থাকলেও ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য পণ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিলিয়ে এখন এসবও ‘বিলাসিতা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নূর মোহাম্মদ নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা আমাদের দাদা-দাদীর কাছে শুনেছি। যুদ্ধের পর বাংলাদেশে অভাব দেখা দিয়েছিল। যে অভাবের ফলে মানুষ রাস্তার পাশে থাকা কচু গাছ তুলে লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে খেয়েছে। বর্তমান বাজারের যে পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের হয়তো এবার ঘাস, লতা-পাতা সিদ্ধ করে খেতে হবে।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত প্রোটিন না খেলে শরীরে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সসহ নানা উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। এতে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয় এবং গর্ভবতী নারীদের জটিলতা বাড়ে।
জাতীয় পুষ্টি ইনস্টিটিউটের এক কর্মকর্তা জানান, দাম বাড়ার কারণে অনেক পরিবার সপ্তাহে এক-দু’দিনও মাংস খেতে পারছে না। এই প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে জাতির সার্বিক পুষ্টি অবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সরকারকে স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর জন্য প্রোটিন খাদ্যে সহায়তা বাড়াতে হবে, নইলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পুষ্টিহীনতায় ভুগবে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.