ফাইল ছবি
পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের কোরবানির পশুর হাট সংলগ্ন এলাকায় মঙ্গলবার (৩ জুন) থেকে ঈদের আগের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যাংকের শাখা খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কোরবানির পশু ব্যবসায়ীদের ব্যাংকিং লেনদেনের সুবিধার্থে এ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে বলা হয়, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনায় যথাক্রমে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশুর হাট পরিচালিত হবে।
এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হাট হলো- উত্তরা দিয়াবাড়ি ১৬ ও ১৮ নং সেক্টর-সংলগ্ন বউ বাজার এলাকার খালি জায়গা, ভাটারা সুতিভোলা খাল সংলগ্ন খালি জায়গা (ভাটারা সুতিভোলা), ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে ১০নং সেক্টর রানাভোলা স্লুইসগেট পর্যন্ত এলাকা, খিলক্ষেত থানাধীন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্ট সংলগ্ন পশ্চিম পাড়া এলাকা, মোহাম্মদপুর বছিলাস্থিত ৪০ ফুট রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর গাবতলী গবাদি পশুর হাট, মিরপুর সেকশন-৬, ওয়ার্ড নং-৬ (ইস্টার্ন হাউজিং) এর খালি জায়গা, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক এলাকা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন খালি জায়গা।
এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হাটগুলো হলো- ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশ এলাকা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের এলাকা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পশ্চিম পার্শ্বে নদীর পাড় এলাকা, দনিয়া কলেজের পূর্ব পার্শ্বে ও সনটেক মহিলা মাদরাসার পূর্ব পশ্চিম এলাকা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বের খালি জায়গা ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল, রহমতগঞ্জ ক্লাব-সংলগ্ন এলাকা, শ্যামপুর কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকা, কমলাপুর সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের পূর্ব পাশ এলাকা ও আমুলিয়া আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পূর্ব পাশ এলাকা। আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন হাট হলো সাগরিকা।
এসব হাটে অধিক সংখ্যক ক্রেতা ও ব্যবসায়ীর সমাগম এবং বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের লেনদেন সংঘটিত হওয়ায় ক্রেতা ও ব্যবসায়ী উভয়ের আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তা বিধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোরবানির পশুর হাট-সংলগ্ন বা নিকটবর্তী ব্যাংক শাখা বা উপশাখা এবং সংশ্লিষ্ট পশুর হাটে স্থাপিত অস্থায়ী বুথ ব্যবহার করে কোরবানির পশুর ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা যেন তাদের পশু ক্রয়-বিক্রির অর্থ সহজে লেনদেন করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং সহায়তা প্রদান জরুরি।
এ পরিস্থিতিতে আগামী ৩ জুন থেকে ঈদুল আজহার আগের দিন পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কোরবানির পশুর হাটের কাছাকাছি ব্যাংক শাখা বা উপশাখা স্বীয় বিবেচনায় নির্বাচন করে বিশেষ ব্যবস্থায় খোলা রাখতে হবে।
সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কোরবানির পশুর হাটে স্বীয় বিবেচনায় অস্থায়ী বুথ স্থাপনের মাধ্যমে অর্থ জমা নেওয়া, উত্তোলন ও নতুন হিসাব খোলার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখা, উপশাখা ও বুথগুলোতে অতিরিক্ত সময়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে বিশেষ ভাতা দিতে হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
বাড়তি শুল্ক আরোপ নিয়ে অবশেষে চূড়ান্ত আলোচনায় বসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ। এই মার্কিন শুল্কারোপ নিয়ে চরম উদ্বেগে রয়েছে দেশের ব্যবসায়ী সমাজ ও অন্তর্বর্তী সরকার। আর বাড়তি শুল্কারোপের বোঝা সামাল দেয়ার সম্ভাব্য দুর্যোগ নিয়ে আতঙ্কে সাধারণ মানুষ। এমন শঙ্কার মাঝে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রধান বাণিজ্য আলোচনাকারী সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) বাংলাদেশকে আগামী ২৯ জুলাই তৃতীয় ও চূড়ান্ত শুল্ক আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।তিনি জানান, এর আগে বাংলাদেশ ২২ জুলাই ইউএসটিআরের কাছে নিজেদের অবস্থানপত্র পাঠায় এবং ২৬ জুলাই চূড়ান্ত দফার আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দেয়।সচিব জানান, তবে ইউএসটিআর ২৯ জুলাই দিন ধার্য করেছে এবং ওই দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে তাদের অফিসে আলোচনা শুরু হবে। বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন।সাক্ষাতে আলোচনা হলে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ২৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। তবে আলোচনা ভার্চুয়াল হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানান তিনি।সচিব আরও বলেন, এই দফায় বেসরকারি খাতের কয়েকজন রপ্তানিকারক বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকতে পারেন, তবে তারা সরকারি পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেবেন না।তিনি আশা প্রকাশ করেন, আলোচনার ফলস্বরূপ ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য বিদ্যমান ৩৫ শতাংশ শুল্ক হার হ্রাস করবে। কারণ, ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের জন্য ১৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ১৯%, ভিয়েতনামের জন্য ২০ শতাংশ এবং ফিলিপাইনের জন্য ১৯ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে। সচিব বলেন, ইউএসটিআর-এর সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা এখন পর্যন্ত ভালোভাবে এগিয়েছে, তাই বাংলাদেশও উল্লেখযোগ্য শুল্ক ছাড় পেতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মার্কিন পণ্য যেমন তুলা, গম, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), বিমান ও অন্যান্য কৃষিপণ্য শুল্কমুক্ত আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে বাংলাদেশ ২০ জুলাই মার্কিন গম সরবরাহকারীদের সঙ্গে সাত লাখ টন গম আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি পূরণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যে ১ অগাস্ট থেকে বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এ শুল্ক কমাতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে একাধিক বৈঠক করেছে। প্রতিনিধি দলে সরকারের উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রতিনিধি ছিলেন। শেষ মুহূর্তে আরেক দফা ওয়াশিংটনে গিয়ে আলোচনার ভাবনার কথা বলা হচ্ছিল সরকারের।এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ, এখন নতুন করে আরও ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে এটি দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। শুল্কের এ খড়্গে থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশ চাইছে- যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা। তার অংশ হিসেবে বছরে সাত লাখ টন গম আমদানির জন্য গত ২৯ জুলাই সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ। দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে যুক্তরাষ্ট্রকে সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে সোশাল মিডিয়ায় গুঞ্জন রয়েছে।এ বিষয়ে এক সাংবাদিক দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারণার ভিত্তিতে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া প্রশ্ন করবে- এটা আমার কাছে রিয়েলিস্টিক মনে হচ্ছে না। আপনার মতো আমিও একজন বাংলাদেশি। বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে আমরা কেন কাজ করব? তাহলে তো আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিংয়ের দরকার হয় না। কিছু জিনিস মেনে নিয়ে কাজটা করে ফেললেই তো হয়ে যায়।’যুক্তরাষ্টের শুল্ক প্রয়োগের সময় তো ঘনিয়ে আসছে-এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনার মতো আমিও এ বিষয়ে উৎসুক এবং আগ্রহী। আজকের ভেতরে হয়তো একটা অনলাইন মিটিংয়ের শিডিউল পাচ্ছি। অনলাইন মিটিং করার পরে পরবর্তী কর্মকাণ্ড ঠিক করা হবে।’সম্পূরক শুল্কের মতো আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেন শেখ বশির। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সামনে এনে এই পদক্ষেপগুলো নিয়েছে। যেই কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে ঘটনাগুলো ঘটছে, এখানে লবিস্টদের কিছু করার আছে কি না আমি ঠিক জানি না। আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। সেই পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশ সরকার ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারবে না। এখানে অনেকগুলো আন্তঃমন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। যেই প্রক্রিয়াগুলো একজন লবিস্টের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় বলে আমার ধারণা।’মার্কিন শুল্ক নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ১৫ দিন ধরে আমাদের সরকারের সব মন্ত্রণালয় একসাথে কাজ করেছি। এখন আমরা উনাদের আমন্ত্রণ পেলে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরব।’এদিকে পাল্টা শুল্কের হার কমানোর বিষয়ে সরকার ইউএসটিআরের সঙ্গে দুই দফায় আনুষ্ঠানিক বৈঠক করলেও মাঝখানে কিছু সময় নষ্ট করেছে বলে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা অভিযোগ করেছেন। সরকার পুরো বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যা চুক্তি করার কাছাকাছি এবং শতভাগের কাছাকাছি বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে।অবস্থানপত্রে কী আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘তা এখনই বলা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া ও এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান-এই নিয়ে এখন আলোচনা হবে।’ একই ধরনের আলোচনা গত ১৭ জুন এক দফায় এবং ৯ থেকে ১১ জুলাই আরেক দফায় করা হলেও উভয় পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি।প্রথম দফার আলোচনার আগে গত ১২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নন ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) করে বাংলাদেশ, যে কারণে সরকার কারও মতামত না নিয়ে একা একা এগোতে থাকে। আবার এ বিষয়ে আলোচনা করতে দুই দফায় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা লুৎফে সিদ্দিকী ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে যুক্ত করে।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, আলোচনার মূল দপ্তর হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চুক্তি হলেও এ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেই হবে। মাঝখানে লুৎফে সিদ্দিকী ও খলিলুর রহমান আগ বাড়িয়ে আলোচনা করতে যান। এতে অহেতুক কিছু সময় নষ্ট হয়েছে। যদিও চলতি মাসের ৩ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে শুল্কবিষয়ক আলোচনায় কার্যকরভাবে যুক্ত হন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেষ বশিরউদ্দীন। এখন অবশ্য তার নেতৃত্বেই সব চলছে।পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দর-কষাকষিটা চালু রাখতে আমরা লবিস্ট নিয়োগ করতে চাই। লবিস্ট নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে সাত দিন লেগে যেতে পারে। দেশ থেকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।’বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী লবিস্ট নিয়োগের ব্যাপারে ভরসা না পাওয়ার কথা জানালেন। তিনি বলেন, লবিস্ট কোনো সংগঠনের জন্য কাজ করবে না, করবে দেশের জন্য। লবিস্ট নিয়োগ করতে গেলে সরকারের অনুমোদন লাগবে। আর এনডিএ থাকার কারণে সরকার তা চাইবে না। ফলে এ ব্যাপারে আশা কম।বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের দরকষাকষির অভিজ্ঞতা নেই। পাল্টা শুল্ক বিষয়ে অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দরকষাকষি হতাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে তাতে বোঝা যায়, তারা ডব্লিউটিও’র নিয়ম খুব একটা মেনে চলছে না।সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাল্টা শুল্ক নিয়ে সরকার ভেবেছিল, আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করে ফেলবে। এ নিয়ে সরকারের এক ধরনের কৃতিত্ব নেওয়ার মানসিকতা ছিল। দর-কষাকষির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ভেবেছিলেন, পাল্টা শুল্ককে ১০ শতাংশ বা শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনতে পারবেন। সরকারি পর্যায়ে এমন আত্মবিশ্বাস ও অতি আত্মবিশ্বাসের খেসারত দিচ্ছি।তিনি বলেন, আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো শুল্ক আলোচনায় কোন অবস্থায় থাকছে, সেটি আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি অশুল্ক বাধা ও ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের নানা ইস্যু আছে। সেখানে আমাদের সার্বভৌমত্ব, অন্য দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক-এসব আমরা কতটুকু করতে পারব, কতটুকু পারব না, তা-ও বিবেচনায় আনতে হবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক (ট্যারিফ) বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ১৯৮৬ সালের পর এই প্রথমবারের মতো বড় ধরনের ট্যারিফ পরিবর্তন আনা হলো।শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিদর্শনে গিয়ে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম শাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, “বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার পরেই ট্যারিফ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে রাজস্ব বাড়বে, যদিও আমদানি-রপ্তানিতে খরচ কিছুটা বাড়বে।”চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগের কথাও জানান তিনি। তবে এ নিয়ে কোনো ধরনের ‘প্রোপাগান্ডা’ চালানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “বিদেশি অপারেটর দায়িত্বে থাকলেও সার্বিক নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতেই থাকবে।”উল্লেখ্য, চলতি বছরের ৭ জুলাই থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে থাকা চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড। আগের অপারেটর সাইপ পাওয়ার টেক-এর পরিবর্তে এ দায়িত্ব হস্তান্তরের পর থেকেই কার্যক্রমে গতি এসেছে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।নৌ উপদেষ্টা জানান, “ড্রাই ডক পরিচালিত এনসিটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ। প্রতিদিন গড়ে ৩,২০০ থেকে ৩,২৫০ টিইইউএস (২০ ফুট সমতুল্য কনটেইনার) হ্যান্ডলিং হচ্ছে।”নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী বলেন, “৭ থেকে ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে মোট ৩০টি জাহাজে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগে যেখানে ১০ ঘণ্টা বেশি সময় লাগত, এখন তা কমিয়ে আনা হয়েছে।”তিনি আরও জানান, বর্তমানে এনসিটির ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর জেটিতে একযোগে চারটি জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ চলছে, যা বন্দরের কার্যক্রমে নতুন গতি এনেছে।নৌ উপদেষ্টা জানান, সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যাতে এটি দক্ষিণ এশিয়ার একটি অন্যতম আধুনিক ও গতিশীল বন্দর হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।ভোরের আকাশ//হ.র
টানা দুই দফায় দাম বাড়ার পর এবার দেশের বাজারে সোনার মূল্য কমানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, ভরিপ্রতি সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৭৪ টাকা পর্যন্ত দাম কমানো হয়েছে।ঘোষণা অনুযায়ী, আগামীকাল শুক্রবার (২৫ জুলাই) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।নতুন দাম অনুযায়ী, ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬০১ টাকা। যা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার ১৭৫ টাকা।বাজুস জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) দাম কমায় সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে।নতুন দাম অনুযায়ী ভরিপ্রতি সোনার দাম হবে:২২ ক্যারেট: ১,৭১,৬০১ টাকা২১ ক্যারেট: ১,৬৩,৭৯৮ টাকা১৮ ক্যারেট: ১,৪০,৪০০ টাকাসনাতন পদ্ধতি: ১,১৬,১২৭ টাকাতবে সোনার দামে পরিবর্তন এলেও রুপার দামে কোনো হেরফের হয়নি।বর্তমানে রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে:২২ ক্যারেট: ২,৮১১ টাকা২১ ক্যারেট: ২,৬৮৩ টাকা১৮ ক্যারেট: ২,২৯৮ টাকাসনাতন পদ্ধতি: ১,৭২৬ টাকাউল্লেখ্য, এর আগে গত ২২ ও ২৩ জুলাই দুই দফায় সোনার দাম বাড়িয়েছিল বাজুস। সর্বশেষ নির্ধারিত সেই দাম ২৪ জুলাই পর্যন্ত কার্যকর ছিল।ভোরের আকাশ//হ.র
সমালোচনার মুখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোশাক পরার নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কর্মক্ষেত্রে পোশাক পরিধান নিয়ে আলোচনা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়নি এবং কোনো সার্কুলার জারি করেনি বলে জানিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি একটি অভ্যন্তরীণ আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি খসড়া নির্দেশনাকে ‘পরামর্শমূলক’ হিসেবে উল্লেখ করে তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বয়সের তারতম্যের কারণে পোশাকের রুচি ও বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়, যা নারী-নারী ও পুরুষ-পুরুষ সহকর্মীদের মাঝে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারে। সেই প্রেক্ষাপটে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও পেশাদার পরিবেশ গড়ে তুলতেই একটি পরামর্শমূলক সার্কুলার খসড়া আকারে তৈরি হয়েছিল, যাতে কারুকার্যপূর্ণ পোশাক নিরুৎসাহিত করা হয়।বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নারী সহকর্মীদের বোরকা বা হিজাব পরিধানে কোনো বাধ্যবাধকতা বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। সার্কুলারটি এমনভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিল যাতে কারও পোশাক পরিধানের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন না হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, বিষয়টি এখনো নীতিগতভাবে অনুমোদিত নয় এবং এই সংক্রান্ত কোনো চূড়ান্ত সার্কুলারটি জারি হয়নি। শুধুমাত্র বিভাগীয় পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে এবং তা থেকে সাময়িকভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং নির্দেশ দেন বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করতে। তার নির্দেশনা অনুযায়ী এই পোশাকবিধি সংক্রান্ত পদক্ষেপ প্রত্যাহার করা হয়েছে।এদিকে জানা গেছে, গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ (বেনিফিটস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন উইং) থেকে অনুষ্ঠিত একটি মাসিক বিভাগীয় সভার কার্যবিবরণীতে পোশাকসহ আচরণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার এবং দাপ্তরিক শিষ্টাচার বিষয়ে বেশ কিছু পরামর্শমূলক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় নারী কর্মীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না এবং পুরুষের জন্য ফরমাল শার্ট-প্যান্ট নির্ধারণ, লেগিংস, শর্ট স্লিভ ড্রেস, জিনস ও গ্যাবার্ডিন পরিহার সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি দাপ্তরিক শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি অনুসরণ, সময়ানুবর্তিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চিত করেছে যে, সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে পেশাদার ও মার্জিত পোশাক পরার বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই এবং সম্মানজনক কর্মপরিবেশ বজায় রাখাই তাদের মূল লক্ষ্য।এর আগে ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী পোশাক পরতে হবে, তা ঠিক করে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ নির্দেশনা জারি করে। গতকাল বুধবার রাতে তা প্রথম আলোতে প্রকাশের পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু করে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অনেকে। নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না এবং অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস, অর্থাৎ ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যর পোশাক ও লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। ওই নির্দেশনায় ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেড স্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে। পুরুষের পোশাকের ক্ষেত্রে লম্বা বা হাফ হাতার ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট ও ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। পরিহার করতে বলা হয়েছে জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট। নির্দেশনা না মানলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।এ নির্দেশনার বিষয়ে গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, এক প্রতিষ্ঠানে সবাই এক ধরনের পোশাক পরবে, সেই লক্ষ্য থেকেই এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২১ জুলাই থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে।তিনি বলেন, পোশাক নিয়ে যেন সাম্য ও ঐক্য থাকে, কোনো ধরনের মানসিক বৈষম্য না থাকে। আর শালীন পোশাক যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নারী-পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক। নারীদের ক্ষেত্রে শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস ও লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। কাউকে হিজাব পরতে বাধ্য করা হয়নি। তবে যারা পরবেন, তাদের সাদামাটা রঙের হিজাব পরতে হবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ