ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ২০তম দিন পালন করছেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের কর্মীরা। গত এপ্রিল মাসের ২৭ তারিখ থেকে তারা দুই দফা দাবিতে এই কর্মসূচি শুরু করেন। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলবে।
রোববার (১৫ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দেখা যায় নিজেদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২০তম দিনের অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের দুই দফা দাবি হলোÑ পদ সৃজন পূর্বক কর্মরত সব জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা; এবং কর্তনকৃত বেতন ও অন্যান্য ভাতাসমূহ ফেরত দেওয়া।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের (তথ্য আপা কর্মী) সঙ্গে কোনোরকমের যোগাযোগ করার চেষ্টা করে নাই। গত ১৫-২০ বছর ধরে হাজারটা প্রকল্পে কেউ আওয়ামী লীগ আখ্যা না পেলেও ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পকে উপদেষ্টা স্বয়ং আওয়ামী লীগের আবর্জনা বলে বিদায় করতে চাচ্ছে; যার কোনোই সুযোগ নেই। কারণ কোনো সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী কখনোই দলীয় হতে পারে না।
তারা বলেন, ডিপিপিতে উল্লেখ থাকার পরেও, অর্থ মন্ত্রণালয় ও মহিলা শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকার পরেও তারা পদ সৃজন সম্পর্কিত কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কিন্তু আমাদের মেয়েদের প্রতিনিয়ত রাজস্বের আশ্বাস দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়েছে। এমনকি আমাদের বেতন থেকে প্রতিমাসে অবৈধভাবে অর্থ কর্তন করা হয়েছে; তার ব্যাখ্যা দিয়েছে যে, পরবর্তী সময়ে রাজস্ব নিতে সুবিধা হবে।
তারা আরও বলেন, তথ্য আপা প্রকল্পের ২য় পর্যায়ের ৯০ শতাংশ সফলতার ওপরে ভিত্তি করে ৩য় পর্যায়ে আউটসোর্সিং হিসেবে আনার পাঁয়তারা করছে মন্ত্রণালয় ও প্রধান কার্যালয়। কারণ, এখানে বিশাল নিয়োগ বাণিজ্য হবে। এসময় তারা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলেও জানান।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশের ৪৯২টি উপজেলায় মোট ১ হাজার ৯৬৮ জন কর্মী মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। এর মধ্যে প্রতিটি তথ্যকেন্দ্রে একজন তথ্যসেবা কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড), দুজন সহকারী (১৬তম গ্রেড) এবং একজন অফিস সহায়ক (২০তম গ্রেড) নিয়োজিত রয়েছেন। এই কর্মীরা তৃণমূল নারীদের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, আইন, জেন্ডার, ব্যবসা, পরিবার পরিকল্পনা ও সাইবার সুরক্ষা- এই আটটি বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শসেবা দিয়ে আসছেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অর্থনৈতিক খাতের যেসব নীতিমালা ও আইন কোনো কাজে আসছে না সেগুলো পরিবর্তন করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ বের করতে হবে। বুধবার (৩০ জুলাই) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের প্রস্তুতিবিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।আগামী দুই মাসের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য করণীয় নিয়ে পরবর্তী বৈঠক আয়োজনের নির্দেশনা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিজেদের স্বার্থে, নিজেদের অর্থনীতির স্বার্থে এই কাজগুলো করে যেতে হবে। যেসব নীতিমালা-আইন কোনো কাজে আসছে না সেগুলো পরিবর্তন করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ বের করতে হবে। এগুলো মৌলিক বিষয়। নিজেদের উত্তরণের জন্যই এ কাজগুলো আমাদের করে যেতে হবে। এ ছাড়া চামড়া শিল্পের সংকট সমাধানে করণীয় সম্পর্কিত একটি পৃথক বৈঠক আয়োজনের জন্য নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের চামড়া শিল্পের ব্যাপারে আমরা অপরাধ করেছি, এটার সঠিক মূল্যায়ন করিনি। এই শিল্প দিয়ে আমাদের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটা হয়নি।প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় ১৬টি সিদ্ধান্তের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চারটি, শিল্প মন্ত্রণালয় তিনটি, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ দুটি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিনটি ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় চারটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করছে। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান জানান, এনবিআর ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো-এর পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে। ইতোমধ্যে ১৯টি সংস্থা যুক্ত হয়েছে। আরও সংস্থাকে যুক্ত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, ট্যারিফ পলিসি ২০২৩-এর বাস্তবায়ন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন তিনি।সভায় তৈরি পোশাক শিল্পের ন্যায় অন্যান্য রপ্তানি খাতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও প্রণোদনা প্রদান এবং ম্যান মেইড ফাইবার সম্পর্কিত কাঁচামাল ও এ শিল্পের মেশিনারিজ আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সাভারে অবস্থিত ট্যানারি ভিলেজে স্থাপিত ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) পূর্ণমাত্রায় চালু করা, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় বাস্তবায়নাধীন এপিআই পার্ক পূর্ণমাত্রায় চালু করা ও ২০২২ সালে প্রণীত শিল্প নীতি হালনাগাদকরণে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে আজকের সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, নৌ-পরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ।ভোরের আকাশ/এসএইচ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কিছুদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ডেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। গত শনিরবার কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে শিগগিরই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ও রোডম্যাপ ঘোষণার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। ওইদিন বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফরের) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেছেন, আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস। মূলত তার এই বক্তব্যের পরই নির্বাচন নিয়ে সরগরম রাজনৈতিক অঙ্গন।বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে-তা নিয়ে যখন সবার প্রশ্ন, আলোচনা-সমালোচনা ঠিক তখনই স্বস্তির বার্তা এলো নির্বাচন নিয়ে। প্রতিদিনই বিএনপি নেতারা কোনো না কোন কর্মসূচি কিংবা সভা-সমাবেশে বক্তৃতায় উঠে আসছে নির্বাচন প্রসঙ্গ। দলটি দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চাইছে। অপরদিকে জামায়াত ইসলামী ও গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এনসিপি বিচার ও সংস্কারের পর নির্বাচন চাইছে। নির্বাচন নিয়ে যখন রাজনৈতিক দলগুলো দুই প্ল্যাটফরমে বিভক্ত ঠিক তখনই যমুনায় ১৩টি দল ও একটি জোটের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পর নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণার বার্তা এলো।এই নির্বাচন সামনে রেখে বিদেশি পর্যবেক্ষক এবং দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা দিতে কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো হলেও গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে পুরনো নীতিমালার বেশিরভাগ বিষয়ই বহাল রাখার অভিযোগ তুলেছেন সাংবাদিক ও বিশ্লেষকরা। নতুন নীতিমালা দেওয়ার ক্ষেত্রে মূল অংশীজন অর্থাৎ গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা না করারও অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচনের সময় কেন্দ্রে তথ্য সংগ্রহ এবং ছবি ও ভিডিও ধারণের ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করা এবং ভোট কেন্দ্রে সাংবাদিকদের উপস্থিতির সময় নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন তারা।নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসির ক্ষমতা আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। তবে গণমাধ্যমের কাজ করার ক্ষেত্রে নীতিমালায় কিছু বিষয়ে আরও স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন ছিল। এছাড়া নতুন নীতিমালার কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাবের প্রতিফলন থাকলেও অনেক প্রস্তাবই গ্রহণ করা হয়নি। অবশ্য জারি করা নীতিমালার কোনো বিষয় নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলছেন, ‘যেসব জায়গায় মনে হয়েছে আগেরটাতে অসুবিধা নাই, সবকিছু তো পরিবর্তন প্রাসঙ্গিক নয়।’আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের জন্য নির্বাচন কমিশনের জারি করা নতুন নীতিমালায় নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে এবার নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। অতীতে এই বিষয়ে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ থাকলেও নতুন নীতিমালায় নির্বাচন কমিশনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলিম বলেন, ‘এটা আগে সরকার যেটা করতো সেটাই হতো। এখন তাদেরকে ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্তটি দেবে নির্বাচন কমিশন। কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে জানাবে এবং ফরেন মিনিস্ট্রি ভিসা দেবে। তবে একজন পর্যবেক্ষক সারাদিন একটি কেন্দ্রে থাকবে, সংস্কার কমিশনের দেওয়া এই প্রস্তাব গ্রহন করা হয়নি।’নতুন নীতিমালায় যা আছে : আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভোটগ্রহণের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ইসি সচিবের কাছে ই-মেইল বা হার্ডকপির মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি বা সংগঠন হিসেবে পর্যবেক্ষক হতে হলে সুশাসন, নির্বাচন, গণতন্ত্র, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রতিটি পর্যবেক্ষক সংস্থা ভোট গণনা বা ফলাফল একত্রিকরণের সময় কেবল একজনকে মনোনীত করতে পারবে। স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জন্য প্রযোজ্য নীতিমালা আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং পর্যবেক্ষক সংস্থার জন্যও প্রযোজ্য হবে।নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করতে সংবিধান, নির্বাচন-সম্পর্কিত আইন ও বিধিমালা মেনে চলবেন পর্যবেক্ষকরা। তারা নির্বাচন-সম্পর্কিত কর্মকর্তাদের কাজে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকবেন। পর্যবেক্ষকরা এমন কোনো আচরণ করবেন না, যাতে তাদের আচরণকে কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করে বা নিরপেক্ষ না হয়। নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ পাবেন বিদেশি পর্যবেক্ষকরা। তবে এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক আরোপিত যেকোনো বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। তবে, তারা বেশিক্ষণ ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকতে পারবেন না। ভোটের আগে, ভোটগ্রহণের দিন এবং ভোট পরবর্তী পরিস্থিতির তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনগুলো তৈরি করতে হবে। প্রত্যেক নির্বাচন পর্যবেক্ষক অথবা সংস্থা পর্যবেক্ষণের সময় নির্বাচনী অনিয়ম যদি থাকে, সে সম্পর্কিত সুপারিশসহ কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে।দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্যও নীতিমালা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। নীতিমালা অনুযায়ী, বিদেশি গণমাধ্যমকেও অনুমতি নেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতো একই পন্থা অনুসরণ করতে হবে। সংবাদ প্রকাশ বা প্রচারের জন্য দেশি গণমাধ্যম বা সংবাদকর্মীদের জন্য ধার্য নিয়মগুলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কর্মীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।এছাড়া আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং বিদেশি সাংবাদিকদের অভ্যর্থনা এবং সহায়তার জন্য ভোটগ্রহণের তারিখের ১০ দিন আগে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি সহায়তা ডেস্ক স্থাপন করবে। বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো জেলা বা নির্বাচনী এলাকায় যেতে চাইলে তাদেরকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইসি সচিবালয় অনুরোধ জানাবে বলেও নীতিমালায় বলা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের সই করা দেশি সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে, নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে আবেদনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের সাংবাদিক পাস কার্ড, গাড়ি ও মোটরসাইকেলের স্টিকার দেবে ইসি সচিবালয় ও রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড প্রাপ্তি এবং নির্বাচন ঘিরে গণমাধ্যমকর্মীরা কি করতে পারবেন কিংবা পারবেন না সে বিষয়গুলোও উল্লেখ করা হয়েছে।নীতিমালায় বলা হয়েছে, ভোটের সময় বৈধ কার্ডধারী সাংবাদিকরা সরাসরি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে তথ্য, ছবি ও ভিডিও নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসারকে জানাতে হবে। একসঙ্গে দুইয়ের অধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না। ১০ মিনিটের বেশি ভোটকক্ষে অবস্থান না করা এবং সেখানে কারো সাক্ষাৎকার না নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।জানানো হয়, ভোট গণনার সময় সাংবাদিকরা থাকতে পারবেন এবং ছবিও তোলা যাবে। কিন্তু সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই নীতিমালা জারি করা হলেও স্থানীয় সরকারের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এই একই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ আছে।যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনানির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংবাদিক বা গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নতুন নীতিমালায় আগের নীতিমালা থেকে খুব বেশি পরিবর্তন আনা হয়নি বলেই মনে করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। নির্বাচন কমিশন নিয়ে নিয়মিত কাজ করেন এমন সাংবাদিকরা বলছেন, মোটরসাইকেল ব্যবহারের সুযোগ রাখাসহ দুই একটি জায়গায় পরিবর্তন এনে আগের নীতিমালাই পুনরায় জারি করা হয়েছে।নির্বাচন কমিশন নিয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ‘রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি, আরএফইডি’র সভাপতি কাজী জেবেল বলেন, ‘নতুন নীতিমালায় ইতিবাচক কিছু দিক রয়েছে। তবে অনেক বিষয়ে আমরা মনে করছি আমাদের পেশাগত কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’প্রিজাইজিং কর্মকর্তাকে অবহিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটা ভোটকেন্দ্রের গেটে থাকে পুলিশ, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা থাকেন অনেক দূরে, এখন একজন সাংবাদিক কিভাবে তাকে অবহিত করবেন, সে তো গেট থেকেই ঢুকতে পারবে না। এছাড়া নির্বাচন কমিশন থেকে যখন কার্ড দেওয়া হচ্ছে- এটাই তো একটা অনুমতি। অতীত নির্বাচনে ভোট কারচুপিতে অনেক ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও উঠেছে। এক্ষেত্রে কোনো সাংবাদিক যদি তাকে অবহিত করে তাহলে কী হবে।’কাজী জেবেল বলেন, ‘বিগত নির্বাচনে আমাকেও অনেক কেন্দ্রে পুলিশ ঢুকতে দেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আমি কার কাছে প্রতিকার চাইবো, এখানে সেই প্রতিকারের বিষয়টি রাখা হয়নি। এছাড়া ভোটের দিন নির্বাচন কর্মকর্তাকে রিচ করাও তো কঠিন।’ভোটকক্ষে প্রবেশ ও অবস্থানের সময় নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। তারা বলছেন, ‘একজন সাংবাদিক দশ মিনিটের বেশি কক্ষে অবস্থান করতে পারবেন না। এই দশ মিনিট কেনো? ওইখানে যদি কারচুপি হয়, আমি দশ মিনিট থাকবো কারচুপি হবে না পরে আবার হবে, এটা কি সেই সুযোগ করে দেওয়া? এই নীতিমালা করার আগে অংশীজন অর্থাৎ সাংবাদিকদের সঙ্গে এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো আলোচনা করেনি বলেও দাবি করেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা না করার বিষয়টি স্বীকার করেছে নির্বাচন কমিশনও। তারা বলছে, নীতিমালা নিয়ে কোনো প্রস্তাব বা পরামর্শ থাকলে কমিশনের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।নীতিমালায় পরিবর্তনের বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘যেসব জায়গায় মনে হয়েছে আগেরটাতে অসুবিধা নাই, সবকিছু তো পরিবর্তন প্রসঙ্গিক নয়। এটার একটা কাঠামো আছে একসেপ্টেবল রেঞ্জ (গ্রহণযোগ্য মাত্রা) এর মধ্যে থাকে তাহলে তো অসুবিধা নাই বলেই আমার ধারণা। আলোচনা, সমালোচনা, পরিবর্তন, পরিবর্ধন এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। কোনো জিনিসই তো স্থায়ী না। এটাতে পরিবর্তন হতেই পারে।’নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য আব্দুল আলীম বলছেন, নতুন নীতিমালায় স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের যোগ্যতা এবং বয়স কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে অতীতে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ থাকলেও নতুন নীতিমালায় ইসির ওপরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে গণমাধ্যমের কাজের ক্ষেত্রে কেন্দ্রে প্রবেশ, প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করার বিষয়সহ নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের দেয়া অনেক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি উল্লেখ কওে আব্দুল আলীম বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যদি অনিয়ম হতেই থাকে তাহলে তো অবহিত করার সুযোগ নেই, সাংবাদিকরাতো যাবেই।’গণমাধ্যম কর্মীদের কেন্দ্রে অবস্থানের বিষটিকে অপশনাল রাখার কথা বলছেন সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জেসমিন টুলি। তিনি বলছেন, ‘যেখানে সমস্যা হবে সেখানে তো বেশি সময় থাকার প্রয়োজন হতেই পারে। সাংবাদিক নাম নিয়ে কেউ নির্বাচন বিঘ্ন করতে পারেন আবার সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং কর্মকর্তাও অনিয়ম করতে পারেন; বিষয়টি বেশ জটিল। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।’ভোরের আকাশ/এসএইচ
গুরুতর অনিয়ম এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পুলিশের পাঁচ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বুধবার (৩০ জুলাই) পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন— রাজশাহীর সাবেক ডিআইজি আনিসুর রহমান, রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক ডিসি মোহাম্মদ শিবলী কায়সার, র্যাবের অতিরিক্ত এসপি জুয়েল চাকমা, ডিএমপির সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগের সাবেক এডিসি (এসপি পদে সুপার নিউমারারারি পদোন্নতি পাওয়া) রাজীব দাস ও বরিশাল আরআরএফের এএসপি আফজাল হোসেন।এদের মধ্যে এসপি শিবলী কায়সারকে বরখাস্ত করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করতে আসা ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগে।অতিরিক্ত এসপি জুয়েল চাকমা বরখাস্ত হয়েছেন দুই বছর আগে মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে পাঁচ চিকিৎসককে গ্রেফতার করে নির্যাতন ও তাদের যথাসময়ে আদালতে হাজির না করার অভিযোগে।কনস্টেবলের প্রথম স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া, কুপরামর্শ ও তার সংসার ভাঙার চেষ্টার অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন এএসপি আফজাল।ডিআইজি আনিসুর রহমান ও এডিসি রাজীব দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় ‘পলায়নের’ অভিযোগে।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে তারা খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।ভোরের আকাশ/এসএইচ
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগেই ব্যালট বাক্সে ৫০ শতাংশ ব্যালট রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী—এমন বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের দেওয়া জবানবন্দিতে।চলতি বছরের ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি মামলায় দেওয়া পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে তিনি এ তথ্য তুলে ধরেন।জবানবন্দিতে মামুন দাবি করেন, গুম, নির্যাতন এবং ক্রসফায়ারের মতো স্পর্শকাতর ও গুরুতর নির্দেশনা সরাসরি আসত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিতেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিকি।তিনি বলেন, “আমি পুলিশের সর্বোচ্চ পদে থাকলেও এসব কার্যক্রম সম্পর্কে আমাকে অনেক সময় অবহিত করা হতো না। সামরিক উপদেষ্টা সরাসরি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এসব পরিচালনা করতেন।”জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেন, ব্যারিস্টার আরমানকে টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স (টিএফআই) সেলে আটকে রাখার বিষয়টিও ছিল ওই গোপন কার্যক্রমের অংশ।সাবেক আইজিপি মামুন আরও দাবি করেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ‘জিন’ নামে ডাকতেন। কারণ, তাকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অত্যন্ত কার্যকর ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হতো।জবানবন্দিতে মামুন অভিযোগ করেন, “জুলাই আন্দোলন দমনে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ব্যবহৃত হয় মারণাস্ত্র এবং হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো হয়।” এসব নির্দেশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করতেন বলে জানান তিনি।তিনি বলেন, “আন্দোলন দমন নিয়ে প্রতিরাতে চলত বৈঠক। সেখানেই নির্ধারিত হতো কে কোথায় যাবে, কীভাবে ব্যবস্থা নেবে।”প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ২৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়।তার জবানবন্দিতে উঠে আসা এই তথ্যগুলো দেশের প্রশাসন, রাজনীতি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিষয়টি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।ভোরের আকাশ//হ.র