সংগৃহীত ছবি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেছেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কোনো ব্যক্তিগত লক্ষ্য বা স্বার্থ নয়, বরং দেশের জন্য একটি ভালো কাজ করে যেতে চাই। আমার লক্ষ্য একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া। এটি শুধু আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়- এজন্য আমি দেশবাসীর সার্বিক সহযোগিতা এবং দোয়া কামনা করছি।
আজ শুক্রবার যশোর কালেক্টরেট মসজিদে জুমার নামাজের আগে মুসল্লিদের উদ্দেশে এক সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জানা যায়, খুলনায় যাওয়ার পথে যশোরে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির সময় কালেক্টরেট মসজিদে তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমি দীর্ঘ সরকারি চাকরি জীবনে অনেক দায়িত্ব পালন করেছি, অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। কিন্তু এই মুহূর্তে যে গুরুদায়িত্ব আমার কাঁধে এসেছে- তা দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই। এ লক্ষ্য অর্জনে সবার আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
এ সময় তিনি রাজধানীর উত্তরায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের জন্য মসজিদে উপস্থিত সবার কাছে দোয়া কামনা করেন। একইসঙ্গে মাইলস্টোন স্কুলের দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং শোক প্রকাশ করেন।
এসময় নাসির উদ্দীনের সঙ্গে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম, স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
ভোরের আকাশ/জাআ
সংশ্লিষ্ট
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি-বদলি তদবিরের লাগাম টানছে সরকার৷ পদোন্নতি বা অন্য কোনো বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে অপ্রয়োজনীয় তদবির থেকে বিরত থাকতে পুলিশ কর্মকর্তাদের জরুরি নির্দেশনাও দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে৷ এতে সই করেছেন উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান।বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত কতিপয় সদস্য অফিস চলাকালীন সময়ে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কর্মস্থল ত্যাগ করে মন্ত্রণালয়ে হাজির হয়ে বিভিন্ন ধরনের তদবির করে থাকেন; যা বর্তমানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। তাদের এরূপ তদবিরের কারণে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিব্রত হচ্ছেন এবং দৈনন্দিন সরকারি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তাদের এরূপ কার্যকলাপ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, পুলিশ অধিদপ্তর থেকে কতিপয় বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তে পত্র প্রেরণ করা হয় এবং উক্তপত্রের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ করে থাকেন। এতে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো কোনো সময় জটিলতা তৈরি হয়। অধিকন্তু পুলিশ অধিদপ্তর থেকে প্রেরিত বিভিন্ন পত্রে অসম্পূর্ণ প্রস্তাব লক্ষ্য করা যায়। আবার কিছু ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়কে এড়িয়ে অন্য বিভাগ/মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি পত্র যোগাযোগ করা হয়ে থাকে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় অবহিত না থাকায় পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে নানা ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি হয়৷ এমতাবস্থায় নিম্নোক্ত জরুরি নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালন করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো—ক) নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে না।খ) পদোন্নতি বা অন্য কোনো বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে অপ্রয়োজনীয় তদবির থেকে বিরত থাকতে হবে।গ) যথাসময়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব প্রেরণ করতে হবে।ঘ) বহিঃবাংলাদেশ ছুটির ক্ষেত্রে এতদসংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যথাযথভাবে যাচাইপূর্বক প্রেরণ করতে হবে।ঙ) চিকিৎসাজনিত বহিঃবাংলাদেশ ছুটির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডের প্রত্যয়ন ও চিকিৎসা প্রতিবেদন যাচাইপূর্বক প্রেরণ করতে হবে।চ) আন্তঃমন্ত্রণালয় যোগাযোগ/পত্র প্রেরণের ক্ষেত্রে ‘রুলস অব বিজনেস’ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।ছ) প্রত্যেক কর্মকর্তা কর্তৃক নিজ নিজ জেমস (GEMS) আইডিতে লগইনপূর্বক তথ্য হালনাগাদ রাখতে হবে।এতে আরও বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালন এবং এ বিষয়ে সদয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।ভোরের আকাশ/এসএইচ
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় একের পর এক দুঃসংবাদ পাচ্ছেন দগ্ধদের স্বজনরা। আজ সকালে দগ্ধ আরেক শিক্ষার্থী জারিফের (১৩) মৃত্যু হয়েছে।শনিবার (২৬ জুলাই) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান। তিনি জানান, জারিফের শ্বাসনালীসহ শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল। ক্রিটিকাল অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে ছিল সে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।তিনি বলেন, এনিয়ে ঘটনাটিতে ইনস্টিটিউটে ১৬ জনের মৃত্যু হলো। এখন ভর্তি আছে ৩৯ জন। যাদের মধ্যে ৪ জন এখনও আইসিইউতে ক্রিটিকাল অবস্থায় আছে।মৃত জারিফের বাবা মো. হাবিবুর রহমান জানান, মাইলস্টোন স্কুলের ৭ম শ্রেণিতে ইংলিশ ভার্সনে পড়ত জারিফ। তাদের বাড়ি রাজবাড়ীর সদর উপজেলার শ্রীপুর এলাকায়। তার ২ ছেলেমেয়ের মধ্যে জারিফ ছিল ছোট।এর আগে, সোমবার (২১ জুলাই) বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজেআই বিমানটি দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়নের ১২ মিনিটের মাথায় ১টা ১৮ মিনিটে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়।ভোরের আকাশ/এসএইচ
জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ে এক দেশের বিরুদ্ধে এখন থেকে মামলা করতে পারবে অন্য দেশ। এই যুগান্তকারী রায় দিয়েছে জাতিসংঘের একটি শীর্ষ আদালত। কিন্তু জলবায়ুবিষয়ক রায়কে ঘিরে বাংলাদেশে আশার চেয়ে সংশয়ই বেশি। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতারা মনে করছেন, এই রায়ের বাস্তব প্রভাব বাংলাদেশের জন্য খুব একটা সুফল বয়ে আনবে না, বরং বড় দেশগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।জলাবায়ু বিশেষজ্ঞরা জানান, জাতিসংঘের জলবায়ু তহবিল যে নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে তা হলো, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী দেশগুলোর দায়িত্ব বেশি। কারণ শিল্প বিপ্লবের পর থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের মাধ্যমে বিশ্বকে উষ্ণ করে তোলার ক্ষেত্রে তাদের বড় ভূমিকা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ঐতিহাসিক কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। কিন্তু এখন দূষণ সৃষ্টির নিরিখে বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ হলো চীন। এভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো আরও অনেক বিশ্ব মোড়ল বেশি মাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশের তালিকায় রয়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অপেক্ষাকৃত বেশি কার্বন নির্গমন করা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই হিতে বিপরীত হতে পারে। ধনী দেশগুলোর এমন নিষ্পেষণমূলক আচরণের ক্ষেত্রে মামলা-মোকদ্দমা করে আন্তর্জাতিক আদালতে খুব একটা সুবিধা পাওয়া যাবে না। বড় লড়াইয়ে নামলে তারা অপেক্ষাকৃত ছোট ও অনুন্নত দেশগুলোর ওপর নানা ধরনের বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে পারে, যা ছোট দেশগুলোর পক্ষে বহন করা কঠিন। এর বদলে বিশ্বের সব দেশকে মিলিত হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যুক্তিযুক্ত। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা ও পরিচালনা করা সময়সাপেক্ষ ও অর্থসাপেক্ষ একটি প্রক্রিয়া। বড় দেশগুলো এই প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত হলেও ছোট দেশগুলো এ ক্ষেত্রে খুব সুবিধা করতে পারে না।এই ঐতিহাসিক রায়ে আসলে বাংলাদেশের কোনো সুবিধা হবে কিনা বা অসুবিধা হবে কিনা জানতে চাইলে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, এর ফলে বাংলাদেশের কোনো পরিবর্তন হবে না। এতে বাংলাদেশের কোনো সুফলও আসবে না। কারণ মামলার যে সিদ্ধান্ত তা বাস্তবায়ন করার পেছনে কোনো শক্তি নেই। ফলে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে কে? কেউ মামলা করলে অন্য দেশ যদি বলে আমরা এই সিদ্ধান্ত মানি না। তাহলে আর সেটি কার্যকর থাকে না। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এটি কোন শক্তি দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে তা আলোচনায় নেই।তিন বলেন, দীর্ঘ দিন ধরেই এই বিষয়ে আলোচনা চলছে কিন্তু এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত এলেও উৎফুল্ল হওয়ার কিছু নেই।ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়কারী শরীফ জামিল বলেন, কোনো সরকার যদি মামলা করতো তাহলে তো সে ফসিল-ফুয়েল দিয়ে জ্বালানি উৎপাদনের কাজই করতো না। কোনো দেশের সরকার নিজেই যদি ফসিল-ফুয়েল দিয়ে জ্বালানি উৎপাদনের কাজ করে তাহলে তার পক্ষে মামলা করা সম্ভাবনা কম।তিনি বলেন, এটি একটি নৈতিক বিষয়। ভবিষ্যতে যারা ফসিল-ফুয়েলে বিনিয়োগ করতে চাইবে তাদের জন্য এটি একটি নিরুৎসাহিত করার মতো বিষয় হতে পারে। এটি একটি ভালো দিক।তিনি আরও বলেন, এই মামলা করার সিদ্ধান্তের কারণে ফসিল-ফুয়েল নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সরকারের পলিসির ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। সরকার যদি নিজেই ফসিল-ফুয়েল নিয়ে কাজ করতে শুরু করে তাহলে তার পক্ষে তো মামলা করা সম্ভব নয়।এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো)-এর প্রধান নির্বাহী সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, আসলে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে বাংলাদেশের মতো ছোট দেশগুলো তেমন কোনো সুবিধা পাবে না। এশিয়ার দেশগুলো যেমন- বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানের মতো ছোট দেশগুলো বড় দেশগুলোর বিরুদ্ধে মামলা এমনিতেই করতে পারবে না অর্থনৈতিক কারণেই। তারপরও বড় রাষ্ট্রগুলো ফসিল-ফুয়েল নিয়েই বেশ কাজ করছে। এক্ষেত্রে এই মামলা করার সিদ্ধান্ত খুব বেশি কাজে লাগবে না। তবে মামলা তারা করতেই পারে, তবে সুফল পাবে না। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করলেও নতুন কোনো উদ্যোগ বা পরিবর্তন হচ্ছিল না সে ক্ষেত্রে যে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বলে আমি মনে করি।প্রসঙ্গত, গত ২৩ জুলাই নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত পরামর্শমূলক রায়ে জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো আন্তর্জাতিক আইনে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে। এই রায় বাধ্যতামূলক না হলেও জলবায়ু-ন্যায়ের ক্ষেত্রে এটি যুগান্তকারী নির্দেশনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই মামলার সূচনা হয়েছিল ভানুয়াতুসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তরুণদের উদ্যোগে। তারা দাবি তুলেছিল, দূষণকারী বড় দেশগুলো ইতিহাসের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। ভানুয়াতুর নেতৃত্বে ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ জাতিসংঘে এই আদেশের জন্য আবেদন করে এবং ১৩২টি দেশ, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে, এর পক্ষে ভোট দেয়। তবে বাস্তবায়নের কাঠামো না থাকায় এই রায়ের প্রভাব বাংলাদেশসহ ছোট দেশগুলোর জন্য সীমিতই থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।জলবায়ুকর্মী এবং আইনজীবীরা আশা করছেন, এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত সেই দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের পথ সহজ করবে যারা সবচেয়ে বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য ঐতিহাসিকভাবে দায়ী। বাড়তে থাকা সমস্যা মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছিল তারা। যে হতাশা থেকে অনেক দরিদ্র দেশও এই মামলাটি সমর্থন করেছিল।ভোরের আকাশ/এসএইচ
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধদের বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। দেশের চিকিৎসক, নার্স ও সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি চীন, সিঙ্গাপুর ও ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে এসেছে সরকার। গতকাল শুক্রবারও অব্যাহত থাকে দগ্ধদের আর্তনাদ এবং স্বজনদের আহাজারি। আর সর্বোচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসাসেবা প্রদানের পরও গতকাল শুক্রবার সাড়ে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৪০ এবং পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক।গতকাল শুক্রবার মারা যাওয়া দুই শিশুর একজনের নাম মুসাব্বির মাকিন (১৩)। চার দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে বেলা একটা পাঁচ মিনিটে রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। এ নিয়ে এই ঘটনায় বার্ন ইনস্টিটিউটে ১৫ জন মারা গেল।বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বলেন, মুসাব্বিরের শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। মুসাব্বির মাইলস্টোন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। তার বাবার নাম মো. মহসিন। তিনি পেশায় স্যানিটারি ব্যবসায়ী। গ্রামের বাড়ি গাজীপুর। দুই ভাইয়ের মধ্যে মুসাব্বির ছোট ছিল।এর আগে শুক্রবার সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তাসনিম আফরোজ আইমান (১০)। তার শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। সে মাইলস্টোন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে মা-বাবার সঙ্গে উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে থাকত। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। বাবার নাম ইসমাইল হোসেন। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় মারা গেছে ৩২ জন। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৫১ জন। যদিও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল। এরপর সেদিন রাতে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান। যে কারণে তখন গণমাধ্যমে নিহত হওয়ার সংখ্যা ৩২ উল্লেখ করা হয়েছিল। এদিকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের তথ্যের ভিত্তিতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২০ শিক্ষার্থী, ২ জন শিক্ষক ও ২ জন অভিভাবক নিহত হয়েছেন।বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৪০, পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক : বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এখনও পর্যন্ত ভর্তি আছেন ৪০ জন। তাদের মধ্যে ক্রিটিক্যাল রোগী আছেন পাঁচজন। গতকাল শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫টায় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।পরিচালক বলেন, ‘এই মুহূর্তে বার্ন ইনস্টিটিউটে পাঁচজন ক্রিটিক্যাল রোগীর পাশাপাশি সিভিয়ার গ্রুপে আছে ১০ জন। আর ইন্টারমেডিয়েট পর্যায়ে আছে ২৫ জন। ২৫ জনের মধ্যে ১৫ জনকে আমরা কেবিনে শিফট করেছি। একটি ভালো খবর হলো, যারা ভেন্টিলেশনে আছেন তাদের মধ্যে দুজন সজাগ আছেন এবং নিজেরা নিঃশ্বাস নিতে পারছেন। যদিও আমরা দুজনকে হারিয়েছি, কিন্তু কাল থেকে আজকের মধ্যে এই উন্নতির জায়গাটা আমরা পেয়েছি।’তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটা ভালো মতো দেখে শনিবার আমাদের প্ল্যান আছে যে, চার থেকে পাঁচজন রোগীকে আমরা ছুটি দিয়ে দিবো। পরবর্তী সময়ে আরও কিছু সংখ্যক রোগীকে ছুটি দিতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।’হতাহতের সর্বশেষ তথ্য জানাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় : মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে। এছাড়া দগ্ধ হয়ে রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫০ জন। গতকাল শুক্রবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় শুক্রবার বিকাল সোয়া ৪টা পর্যন্ত মোট ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৫০ জন।এতে জানানো হয়, হতাহতদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটউটে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৫ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন, লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ১ জন ও ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জনসহ মোট ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটউটে ভর্তি রয়েছেন ৪০ জন। এছাড়া, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৮ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জন ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালে ১ জনসহ মোট ৫০ জন ভর্তি রয়েছেন।দগ্ধদের চিকিৎসাসেবা শুরু করল চীনা বিশেষজ্ঞ দল : বিমান দুর্ঘটনায় চিকিৎসা সহায়তা দিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসেছেন পাঁচ সদস্যের এক চীনা চিকিৎসক দল। এরই মধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছেন তারা।গতকাল সকাল ৯টায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছেন চীনা বিশেষজ্ঞ দল। আহত ও দগ্ধদের পর্যবেক্ষণ শেষে, চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন তারা। সিঙ্গাপুর ও ভারতীয় দলের সঙ্গে দেবেন সমন্বিত চিকিৎসা। পরে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফিংও করতে পারেন।এদিকে হাসপাতাল চত্বরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিমান বাহিনী রাখছে কড়া নজরদারি। বার্ন ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে কোনো ব্লাড বা স্কিন ডোনারের প্রয়োজন নেই। আহতদের চিকিৎসার সব খরচ বহন করবে সরকার।এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা এসে পৌঁছায় চীনা বিশেষজ্ঞ দল। বিমানবন্দরে এই চিকিৎসক দলকে স্বাগত জানান বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গ্লোবাল হেলথ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অনুবিভাগের প্রধান সৈয়দা জেসমিন সুলতানা মিল্কি।চীনের দূতাবাস জানিয়েছে, চিকিৎসা দলটি এসেছে দেশটির হুবেই প্রদেশেন উহান থার্ড হসপিটাল থেকে।বার্ন ইনস্টিটিউটে ভারতীয় চিকিৎসক দল : বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহতদের সহায়তা দিতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। গত বৃহস্পতিবার সকালে দলটি বার্ন ইনস্টিটিউটে যায় এবং হাসপাতালটিতে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল এসে এখানকার চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা গুরুতর দগ্ধদের বিষয় পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং চিকিৎসার পদ্ধতি সম্পর্কে নিজেদের মতামত দিয়েছেন। বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারিতে ভারতের দুই শীর্ষ চিকিৎসা কেন্দ্র- দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতাল ও সাফদারজং হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সমন্বয়ে দলটি বুধবার দেশে এসে পৌঁছায় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে ভারতীয় হাই কমিশন।ভোরের আকাশ/এসএইচ