× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পরিস্থিতি সামলাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক

চাপে পড়ে সমর্থন খুঁজছে সরকার

মাজাহারুল ইসলাম

প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৫ ১০:৪৫ এএম

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার প্রশিক্ষণে থাকা বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের পর বিভিন্ন রকমের সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার।  রাষ্ট্রীয় শোকের দিন মঙ্গলবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সচিবালয় এলাকায় সংঘাত হয়েছে।  দুর্ঘটনায় নিহতের ‘লাশ লুকানোর গুজবের’ মধ্যে এদিন সরকারের দুই উপদেষ্টাকে মাইলস্টোন স্কুলে ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল।  ওই ট্রাজেডির পর বিক্ষোভ-সংঘাত নিয়ন্ত্রণে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।  পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছিল ঠিক তখনই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের রাজনৈতিক দলের নেতাদের যমুনায় ডেকে দৃশ্যমান ঐক্যের আহ্বান জানান।  জুলাই অভ্যুত্থানের পর ‘পূর্ণ সমর্থন’ নিয়ে ক্ষমতায় আসা এই অন্তর্বর্তী সরকার গত এক বছরে কয়েক দফা এমন পরিস্থিতি মুখোমুখি হয়েছে।  প্রতিবারই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারপ্রধানকে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বসতে দেখা গেছে।

এবার সরকারপ্রধানের ঐক্যের আহ্বানের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, সরকার কোনো সংকটে পড়লে তখনই কেবল ডাক পড়ে রাজনৈতিক দলগুলোর।  বাকি সময়টাতে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সরকার পরিস্থিতি ‘বেসামাল’ আর ‘লেজেগোবরে’ করে ফেলে।  মাইলস্টোনের ঘটনার পর সরকার আবারও চাপে পড়েছে।  আর সে কারণেই রাজনৈতিক দলগুলোর শরণাপন্ন হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

দিনভর এই বিক্ষোভ-সংঘাতের পর মঙ্গলবার রাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।  গত বুধবার দ্বিতীয় দফায় সিপিবি, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৩ দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।  একইদিন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।  প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ‘কোটায়’ অন্তর্বর্তী সরকারে এসেছেন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের একজন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আছে, আপনারা তাকে চেনেন? তিনি মুহাম্মদ ইউনূসের ভাই-বেরাদর কোঠায় এসেছেন। ইউনূসের স্বজনপ্রীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।  সব সময় বলে আসছি, এই স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কোনো প্রয়োজন নাই।’
দুই দফা বৈঠকে ‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে দৃশ্যমান করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।  দলগুলোও এ বিষয়ে সরকারকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ দিয়ে নিয়মিত তাদের সঙ্গে বসে পরামর্শ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।  সরকারের তরফে বলা হয়েছে, ‘ঘন ঘন’ বসার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শের সঙ্গে তারা একমত। নির্বাচন কাছাকাছি এলে সেভাবেই করা হবে।

মঙ্গলবার বৈঠকের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ক্রাইসিস সৃষ্টি হলে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ডাকেন, আমরা যাই।  তবে আমি মনে করি, এটা ঘন ঘন হলে আরও ভালো হত, তাহলে হয়ত সমস্যাগুলো তৈরি হত না।  মাইলস্টোনে দুইজন উপদেষ্টা এবং প্রেসসচিবকে তারা (শিক্ষার্থীরা) অবরুদ্ধ করে রেখেছিল এবং সচিবালয়ে পরীক্ষা সংক্রান্ত জটিলতায় ছাত্ররা ভেতরে ঢুকে পড়ে।  যেটা আমার কাছে মনে হয়েছে, সকলের কাছে মনে হয়েছে যে, এটা একটা প্রশাসনিক একটা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে এবং একটা ল অ্যান্ড অর্ডার সিচ্যুয়েশন তৈরি হয়েছিল আপনারা দেখেছেন সবাই।

গোপালগঞ্জের ঘটনা নিয়ে ফখরুল বলেন, ‘কিছুদিন আগে আপনারা দেখেছেন, গোপালগঞ্জে আপনার আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট শক্তিরা যা করেছিল, আমরা মনে করি যে, গণতন্ত্র উত্তরণের আমাদের যে প্রক্রিয়া চলছে, জুলাই-আগস্টে কর্মসূচি চালানোর মধ্যদিয়ে যে পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শক্তিকে পরাজিত করা হয়েছে সেটা এই জুলাই আগস্ট মাসেই ওই শক্তির আবার উত্থানের একটা নমুনা দেখার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।  এটার জন্যই প্রধান উপদেষ্টা সম্ভবত আমাদেরকে যারা ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে এই সভা ডেকেছিলেন।  আমরা আমাদের পূর্বের যে কমিটমেন্ট সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা সেটা বলেছি।’

গত বুধবার তিনি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, খেলাফত মজলিস, সিপিবি, বাসদ, গণফোরাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি এবং ১২ দলীয় জোটের নেতাদের ডাকেন।  এভাবে ‘বড় দল’, ‘ছোট দল’ আলাদা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।  অনিবন্ধিত এনসিপি কী করে বিএনপির মত দলের সঙ্গে এক দিনে ডাক পেল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন একজন।  বৈঠকে দলগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘দুর্বলতা’ নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছে।  সরকার কেবল সংকটে পড়লেই তাদের ডাকেন এমন কথাও বলেছেন নেতারা।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আমাদের যে জাতীয় ঐক্য হওয়া দরকার ছিল।  আমরা যে বিপদের মধ্যে ছিলাম শেখ হাসিনার আমলে, শেখ হাসিনার পতনের পরে আমরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছি।  সেই ভাগ হচ্ছে কেউ কেউ এটাকে একটা সুযোগ হিসেবে নিচ্ছেন এবং সেটাকে একটা প্রিভিলেজ হিসেবে নিচ্ছেন।  আবার কেউ কেউ মনে করছেন যে আমাদের মধ্যে একটা অনৈক্য তৈরি হয়েছে। বিভেদ তৈরি হয়েছে।

এই বিভেদের পেছনে সরকারের দায় আছে বলে মনে করেন মঞ্জু।  তিনি বলেন, ‘শুরু থেকে আপনারা এই বিভেদটা দূর করতে পারতেন।  উনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন কিছুটা, তিনি সম্মতি জানিয়েছেন এবং তিনি বলছেন এখন থেকে রেগুলার, আরও ঘন ঘন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবেন।’

এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা বলেছি, দুইটা বিষয়ে ব্যাপক সংশয় আছে।  একটা হচ্ছে সংস্কার আসলে ঠিকমত হবে কিনা, আর নির্বাচন ঠিকমত হবে কিনা।  এই দুইটা বিষয় আপনাকে দূর করতে হবে।  দূর করার জন্য যেটা দরকার, অনেক রাজনৈতিক দল সেখানে সমালোচনা করেছেন।  সরকারের নানা বিমাতাসূলভ আচরণের কথা বলেছেন।  কেউ কেউ বলেছেন যে আপনি কোনো কোনো রাজনৈতিক দলকে প্রটোকল দিচ্ছেন, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন আর আমরা অনেক রাজনৈতিক দল আছি, আমরা কোথাও যাচ্ছি, চলছি, ফিরছি, আমাদের কোনো সরকারি প্রোটোকলের কথাও আমরা বলছি না।  তো এই বিষয়গুলো এসেছে।’

১২ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘আমাদেরকে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে আলোচনা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।  এই অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সরকারের বিভিন্ন দুর্বলতার কথা বলেছি।  আমরা বলেছি, অতীতে বারবার আপনাকে (প্রধান উপদেষ্টা) বলা হয়েছে যে আপনি উপদেষ্টা মণ্ডলীতে সংস্কার করুন।  যোগ্য এবং দক্ষ উপদেষ্টাদের আপনি আপনার উপদেষ্টা পরিষদে সংযুক্ত করুন।  সামনের রাজনীতি এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো দলের প্রতি যেন অনুরাগ অথবা বিরাগের বশবর্তী হয়ে সরকার পরিচালিত না হয়।  আমরা এও দেখেছি, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল, যেই প্রটোকল নিয়ে, যেভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে আক্রমণ করে কথা বলছে, এতে করে আমাদের মধ্যে রাজনৈতিকভাবে বিভেদটা আরও তীব্র হচ্ছে।  আমরা এই বিভেদ চাই না।  সর্বদলীয়ভাবে বৈঠক করে আপনি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেন।  স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা রাজপথে ছিল, সে সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আপনি মাঝে মাঝে বসেন, সময়ে সময়ে বসেন, মতবিনিময় করেন।  মতবিনিময় করলে অনেক কিছু আপনার সমাধান হয়।’

গত বুধবার বৈঠক থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, ‘আমি যেটা বুঝেছি, প্রধান উপদেষ্টা উৎকণ্ঠিত।  তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) আমাদের বলেছেন, আমরা একটা সঠিক নির্বাচন যাতে করতে পারি, সেই দিকে আগাবো এবং এটি সবাই মিলে করতে হবে।  শুধু পুলিশের উপর নির্ভর করলে হবে না, জনগণের উপর নির্ভর করতে হবে।’

তবে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রিন্স বলেন, ‘দেশে সংকট হলেই শুধু প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকেন এবং দেখান যে সবাই একমত।  এরপর থেকে সরকার রাজনৈতিক দলের পরামর্শ গ্রহণ না করলে প্রধান উপদেষ্টার এমন আহ্বানে সাড়া দেবেন না তারা।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘সরকার অভ্যুত্থানের পরই, রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে তাদের সাথে আলাপ, আলোচনা, পরামর্শ না করে, এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা তারা তৈরি করেছে।

বজলুর রশীদ ফিরোজ আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, এই সরকার যখন খুবই বিপদে পড়ে, আর সামলাতে পারছে না, টালমাটাল অবস্থা, এবং মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে, তখন রাজনৈতিক দলগুলোকে, আমাদেরকে ডেকে দেখায় যে, এরা আমার সাথে আছে।  আমরা সরকারকে সমর্থন করেছি ঠিক কিন্তু অভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষার পরিপন্থি কোনো কাজ করলে আমরা এই সরকারকে সমর্থন করব না।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘বিপদের সময় না ডেকে নিয়মিতভাবে বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সম্পৃক্ততা আরও বাড়ানো দরকার।  আমরা বলেছি, আপনি সবচেয়ে জননন্দিত, রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনে আসা সরকার হলেও মানুষের মাঝে ধারণা তৈরি হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুর্বল সরকার। এ কারণে দেশে একটা আধা-নৈরাজ্যের অবস্থা ইতোমেধ্যে তৈরি হয়েছে।’

সরকার সমস্ত দিক থেকে ‘লেজেগোবরে’ করে ফেলেছে মন্তব্য করে সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা দেখছি, সরকারের মধ্যে অনেকগুলো সরকার কাজ করছে।  কার্যত প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আমরা কেবল একটা সরকার দেখতে চাই।  এই অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও অস্থিতিশীল অবস্থা, নৈরাজ্যিক অবস্থা, আরও নাশকতার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।  নির্বাচন কাছে আসলে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হতে পারে।’

বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।  সেখানে বলা হয়, ‘মতপার্থক্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা’ থাকলেও ‘ফ্যাসিবাদের’ বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘মতপার্থক্য, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করা দরকার।  তা না হলে তারা এটাকে সুযোগ মনে করছে।’
ইউনূস বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আয়োজন ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণ করা, সেজন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম।  এতে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দৃশ্যমান হত।  কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে অংশ নেওয়া সব দল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও গণঐক্য বজায় রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করেছে।  দলগুলোর নেতারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টাকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

পেছনের ঘটনা : মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগেও ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে সরকার।  মে মাসের শেষের দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে বিএনপির মাঠের কর্মসূচি এবং সেনাবাহিনীর প্রধানের বক্তব্য ঘিরে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন বলে আলোচনায় আসে। উত্তেজনাপূর্ণ ওই সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও জাতীয় নির্বাচনের ‘রোডম্যাপ’ চেয়ে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি চলতে থাকে।

এরপর জুন মাসে লন্ডন বৈঠকে আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে একমত হন মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।  গত ৯ জুলাই মির্টফোর্ডে এক ব্যবসায়ীকে মাথা থেঁতলে হত্যার ঘটনায় বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।  এই ঘটনাকে বিএনপির তরফে নির্বাচনের পরিবেশ বিঘ্নিত করার অজুহাত দাবি করা হয়।  দলটি নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও তোলে।  এরই মধ্যে গত ১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচি ঘিরে গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৫ জন নিহত হয়েছেন।  এমন সংঘাত এড়াতে আগে থেকে প্রস্তুতি না থাকার কথা বলে সরকার সমালোচনা হয়েছে।

সোমবার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় সরকার ‘ঠিকভাবে’ সাড়া দিতে পেরেছে কি-না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।  মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা পেছাতে গিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা নিয়েও ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে পড়ে সরকার।

দুর্ঘটনার পর থেকে এর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বসা বা চাপ সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে একধরনের সমন্বয়হীনতা দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক স ম আলী রেজা।

দেশের সবার মত সরকারও এ ঘটনায় শোকবিহ্বল তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে একটু সমন্বয়হীনতা মনে হচ্ছে আরকি।  দেখুন বিমান বাহিনী এবং আমাদের যে সেক্টরটা এটার সঙ্গে জড়িত তারা কেন জানি এটা থেকে একটু দূরে, আমরা খেয়াল করছি।  তাই না? এটাকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা।  অন্তত কারণ দর্শানো, কারণটা শনাক্ত করা, যাতে ভবিষ্যতে এরকম সমস্যা না হয় এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিটাকে সামাল দেওয়া যায়- এই বিষয়টা এখানে চলে আসছে।  তো সেখানে আমার কাছে একটু মনে হয়েছে, একটু সমন্বয়হীনতা আছে।’

উপদেষ্টাদের ওপর বিক্ষুব্ধ জনতা চড়াও হয়েছেন এবং শিক্ষা উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টাকে নয় ঘণ্টা মাইলস্টোন স্কুলে অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে।  এসব মোকাবিলায় সরকারের তরফে ‘অবহেলা’ দেখছেন না অধ্যাপক আলী রেজা।  তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আসবে দুর্ঘটনার পরে, আর তাদের সঙ্গে বার্ন ইউনিট।  তারা তাদের মত চেষ্টা করছেন। কিন্তু মোটাদাগে সরকারের তরফ থেকে সাড়া নেই, তা তো না।  সরকারের উপদেষ্টারাও কিন্তু ঘটনাস্থলে গেছেন, তারপরে শিক্ষা উপদেষ্টা, তারপরে অন্য উপদেষ্টা এরা গেছেন।  ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।  তারাও এক ধরনের একটা বিক্ষুব্ধতার মুখে পড়েছিলেন।  তারপরেও তারা তো সেখানে গেছেন।  ফলে সরকার যে এটাকে খুব অবহেলা করছে, সেটা কিন্তু না।’

সরকার ‘চাপ’ বোধ করার পর যে রাজনৈতিক দলের শরণাপন্ন হয়েছে সে বিষয়ে একমত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই শিক্ষক।  রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগে থেকে না বসার ফলে এবং সমন্বয়হীনতার কারণে এই চাপ তৈরি হয়েছে বলে তার ধারণা।  তিনি বলেন, ‘তবে এক ধরনের একটা চাপ তারা খুব বোধ করছেন কিন্তু।  এটা আপনার, আমার বা আমাদের যে বোধগম্যতা তাতে এক ধরনের চাপ যে তারা বোধ করছেন, এটাই আমার মনে হয়।  ওটাকেই কিন্তু আমি সমন্বয়হীনতা বলছি।  কারণ এটা একটা অরাজনৈতিক একটা সরকার।  এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো।  এখানে কিছু বিরুদ্ধ শক্তিও আছে, এর ভেতর দিয়ে তারাও এখানে কিছু অপঘাত করা, এখান থেকে কিছু রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে।  খুব স্বাভাবিক এটা, আমাদের মত দেশের যে রাজনীতি সেজন্য।  সেক্ষেত্রে সরকার খুব দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোকে আমলে নিলে সরকারের জন্যই সুবিধা।  কয়েকটা দল একটা প্রতীকী ওয়াকআউট করে, এটা একটা চাপের কৌশল।  আমি মনে করি যে তাদের এই যে প্রতিক্রিয়া, এটা এই সমন্বয়হীনতার জন্যই, মনে হচ্ছে।’

যা বলছে সরকার
রাজনৈতিক দলগুলোর তরফে প্রতি মাসে নিয়মিত বসার বিষয়ে প্রস্তাব আসার কথা তুলে ধরে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, তাদের সঙ্গে ‘ঘন ঘন’ বসার বিষয়ে ভাবছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস।  তিনি বলেন, ‘দলগুলোর কেউ কেউ বলেছিলেন- এই ধরনের সংকট মোকাবিলায় মাসে অন্তত একবার যেন দলগুলোর সঙ্গে বসা হয়, এমনটা কেউ কেউ বলেছিলেন।  আর প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে বলেছেন- এখন নির্বাচনের সময় কাছে চলে আসছে। সেই সময়ে অন্তর্ঘাত ধরনের ঘটনাও বেড়ে যাচ্ছে।  সেজন্য সরকার আরও ঘন ঘন দলগুলোর সঙ্গে বসার চিন্তা করছে।’

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী যে কোনো কিছুর সুযোগ নিচ্ছে।  মাইলস্টোনের মত দুর্ঘটনার সুযোগও তারা নেওয়ার চেষ্টা করলো।  এগুলোর জন্য প্রধান উপদেষ্টা চাচ্ছিলেন যেন আরও ঘন ঘন বসা যায়।’

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে না হলেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়মিত আলাপ-আলোচনা চলার কথা তুলে ধরেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।  ‘বিপদে পড়লে’ ডাকা হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের এমন মন্তব্যের কী হেতু আছে আমি বুঝতে পারছি না।  ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তো সবগুলোর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের নিয়মিত আলাপ হচ্ছে।’

ভোরের আকাশ/জাআ

  • শেয়ার করুন-
টিসিবির জন্য ৬৪ কোটি টাকার মসুর ডাল কিনবে সরকার

টিসিবির জন্য ৬৪ কোটি টাকার মসুর ডাল কিনবে সরকার

এবার এনবিআরের তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে অবসরে পাঠাল সরকার

এবার এনবিআরের তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে অবসরে পাঠাল সরকার

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ২য় দফায় ৭ম দিনের বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ২য় দফায় ৭ম দিনের বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন

‘মবের রানি’ শেখ হাসিনা: ফারুক

‘মবের রানি’ শেখ হাসিনা: ফারুক

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি, মাসব্যাপী আয়োজনে যা যা থাকছে

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি, মাসব্যাপী আয়োজনে যা যা থাকছে

 আগামী নির্বাচনে অস্ত্রের চেয়েও ভয়াবহ হুমকি এআই: সিইসি

আগামী নির্বাচনে অস্ত্রের চেয়েও ভয়াবহ হুমকি এআই: সিইসি

 পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন

পৌর বিএনপির সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির শুভ উদ্বোধন

 মান্দায় দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১

মান্দায় দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১

 কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ২৩ মামলার আসামিকে কুপিয়ে হত্যা

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ২৩ মামলার আসামিকে কুপিয়ে হত্যা

 সন্ধ্যার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়-বৃষ্টি

সন্ধ্যার মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়-বৃষ্টি

 পেরুতে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১৫, আহত ৩০

পেরুতে বাস দুর্ঘটনায় নিহত ১৫, আহত ৩০

 পুলিশ কর্মকর্তাদের জরুরি নির্দেশনা

পুলিশ কর্মকর্তাদের জরুরি নির্দেশনা

 মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: দগ্ধ আরও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: দগ্ধ আরও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু

 শ্রীবরদীতে প্রবীন শিক্ষক আবু ইউসুফের বিদায়ী সংবর্ধনা

শ্রীবরদীতে প্রবীন শিক্ষক আবু ইউসুফের বিদায়ী সংবর্ধনা

 কেন অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন ডলি জহুর, কী বললেন অভিনেত্রী?

কেন অভিনয় থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেন ডলি জহুর, কী বললেন অভিনেত্রী?

 ১৫ ঘণ্টা পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া লঞ্চ চলাচল শুরু

১৫ ঘণ্টা পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া লঞ্চ চলাচল শুরু

 জাজিরায় পদ্মার ভাঙন ঝুঁকিতে শত ঘর-বসতি

জাজিরায় পদ্মার ভাঙন ঝুঁকিতে শত ঘর-বসতি

 থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ

 বাড়তি মার্কিন শুল্ক আরোপ নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা ২৯ জুলাই

বাড়তি মার্কিন শুল্ক আরোপ নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা ২৯ জুলাই

 দায়িত্বে গাফিলতির দায়ে ৪ পুলিশ ক্লোজড

দায়িত্বে গাফিলতির দায়ে ৪ পুলিশ ক্লোজড

 সাবেক এমপিদের আনা গাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত এনবিআরের

সাবেক এমপিদের আনা গাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত এনবিআরের

 জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দলের মতো দেশও নিয়ন্ত্রণ করবে : ডা. শফিক

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দলের মতো দেশও নিয়ন্ত্রণ করবে : ডা. শফিক

 বিশ্ব মোড়লদের নিয়ে সংশয়ে বাংলাদেশ

বিশ্ব মোড়লদের নিয়ে সংশয়ে বাংলাদেশ

 সাড়ে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে আরও দুই শিশুর মৃত্যু

সাড়ে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে আরও দুই শিশুর মৃত্যু

সংশ্লিষ্ট

আগামী নির্বাচনে অস্ত্রের চেয়েও ভয়াবহ হুমকি এআই: সিইসি

আগামী নির্বাচনে অস্ত্রের চেয়েও ভয়াবহ হুমকি এআই: সিইসি

পুলিশ কর্মকর্তাদের জরুরি নির্দেশনা

পুলিশ কর্মকর্তাদের জরুরি নির্দেশনা

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: দগ্ধ আরও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: দগ্ধ আরও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু

বিশ্ব মোড়লদের নিয়ে সংশয়ে বাংলাদেশ

বিশ্ব মোড়লদের নিয়ে সংশয়ে বাংলাদেশ