জুলাই বিল্পবের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৫ ১০:০৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, রক্তস্নাত জুলাই-আগস্ট আমাদের মাঝে এক বছর পর ফিরে এসেছে। দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিস্টদের নির্মম অত্যাচার, নির্যাতন, গ্রেফতার, গুম-খুনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী করতে চেয়েছিল আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪: জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক বিএনপি আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অথিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূতিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দলটি।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটেছে। সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ার। এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছে তাদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক শ্রদ্ধা, আহতদের সমবেদনা। তাদের এই আত্মত্যাগ জাতি চিরকাল মনে রাখবে।’
তিনি বলেন, গুম-খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার যারা হয়েছেন, তাদের তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেকটি পরিবারের সম্মানজনক পুনর্বাসন ও নিরাপদ ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে হবে।
বেগম খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আমাদের সামনে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার, তা আমাদের দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে যেকোনো মূল্যে।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই রক্তস্রোত, মায়ের অশ্রুধারা যেন বৃথা না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। ঐক্য বজায় রাখতে হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে শহীদ জিয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করি। বাস্তবায়ন করি কোটি মানুষের বাংলাদেশ নির্মাণের স্বপ্নকে।
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ১৯৭১, ১৯৭৫ এর ৭ নভেম্বর ১৯৯০ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের আত্মত্যাগ আমাদের মনে রাখতে হবে। এছাড়া দেশে গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্থদের ভুলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ হবে গণতান্ত্রিক, সাম্য ও মানবিক মূল্যবোধের। তারেক রহমান বলেন, এখন যারা পিআর পদ্ধতিতে ভোট চাইছেন তাদেরকে ভাবতে হবে বাংলাদেশে এই প্রেক্ষাপটে আসলে সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মাঝে অনৈক্যের কারণে যেন ফ্যাসিবাদ নতুন করে সৃষ্টি না হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে। তার জন্য বিচার নিশ্চিত করতে হবে। শহীদ পরিবারকে আমাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে।
সংস্কার কাজ নিয়ে তারেক রহমান বলেন, এটি চলমান প্রত্রিয়া। বিএনপি ৩১ দফা বেশ আগেই ঘোষণা দিয়েছে। আগামীতে জনগণের ভোটে সরকার গঠন করলে সবাইকে নিয়ে তিনি জাতীয় সরকার গঠন করবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্যের শুরুতেই শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন বাংলাদেশ ভোলেনি, ২০২৪ সালে দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধে বীর শহীদদেরও বাংলাদেশ কখনো ভুলবে না।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন স্থাপনা-সড়কের নামকরণ করবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, জনগণের রায়ে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতা পেলে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থাপনা, সড়ক কিংবা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নামকরণের ইচ্ছে আমাদের আছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সদস্য সচিব আবুল হোসেন। এরপর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে মূল আয়োজন শুরু হয়। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভাপতিত্ব করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি পরিবর্তনে বিশ্বাস করে বলেই বহু আগেই রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা ঘোষণা দিয়েছিল। সংস্কারের কথা তো বিএনপিই বলেছিল, অথচ এখন প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে বিএনপি সংস্কার মানছে না। শুধু বিএনপিকে দোষারোপ করা ঐক্যের জন্য সহায়ক নয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গণতন্ত্র ও ঐক্যের প্রশ্নে কোনো আপস নেই বিএনপির। এমনকি ‘জুলাই সনদ’-এর প্রস্তাব আগেই দিয়েছে বিএনপি। এখন সরকারের দায়িত্ব সেটা সামনে নিয়ে আসা। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস নেই।
অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নিহত ও আহতদের পরিবারগুলোর জন্য সম্মানসূচক আসনের ব্যবস্থা করা হয়। শহীদ পরিবারে কয়েকজন সদস্য অনুষ্ঠানে বক্তব্যও রাখেন। এসময় স্বজনহারাদের কান্নায় অনুষ্ঠানস্থলে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডা, এজেএম জাহিদ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ