নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫ ১২:৪০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বেশ কিছুদিন ধরে দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ায় এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পসহ ডিএমটিসিএলের বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। এ সব সংবাদে ঢাকা মহানগরবাসীসহ দেশের আপামর জনসাধারণের মধ্যে ডিএমটিসিএল ও এর বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে তীব্র নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে।
ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা মহানগরীতে এমআরটি লাইন-১ এর মতো একটি জটিল প্রকল্প স্থানীয় জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগিতা ছাড়া বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর নয়। জনসাধারণের মধ্যে প্রকল্প সম্বন্ধে বিভ্রান্তি ও বিরূপ ধারণা বিদ্যমান থাকলে, প্রকল্প বাস্তবায়নকালে জনসাধারণের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া এ ধরনের মিথ্যা সংবাদ ডিএমটিসিএল ও সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্রমাগত ক্ষুণ্ন করছে।
এ সব বিভ্রান্তিকর সংবাদের প্রতিবিাদ ও সঠিক সংবাদ দেশবাসীর মাঝে পৌঁছে না দিলে ডিএমটিসিএল ও এর বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে জনমনে স্থায়ী অসন্তোষ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে, যা পরবর্তীতে নিরসন করা জটিল হয়ে পড়তে পারে। তাই দেশবাসী ও পাঠকদের অবগতের জন্য নিচে প্রকৃত সঠিক ও সত্য তথ্য দেওয়া হলো।
ঢাকা মেট্রোর এমআরটি লাইন-১ প্রকল্প: বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিপরীতে বাস্তব চিত্র
অতি ঘনবসতিপূর্ণ এবং নিত্যদিনের অত্যধিক যানজট কবলিত ঢাকা শহরে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বার্থে পাতাল রেল নির্মাণ পরিকল্পনা প্রণয়ন সরকারের একটি সময়োপযোগী উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। ২০১৫ সালে প্রণীত আরএসটিপি (রিভাইজড স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান) অনুসরণ করে এমআরটি লাইন-১ এর রুট অ্যালাইনমেন্ট নির্ধারণ করে ২০১৭-১৮ সালে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়। জাইকা কর্তৃক প্রণীত ওই সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় আন্তর্জাতিক মান ও রীতিনীতি, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং ঢাকায় অবকাঠামো নির্মাণ উপযোগিতার বিষয়গুলো বিবেচনা করে এমআরটি লাইন-১ এর উড়াল এবং পাতাল পথ চূড়ান্ত করা হয়। ১৯ দশমিক ৮৭২ কিমি দীর্ঘ পাতাল এবং ১১ দশমিক ৩৬৯ কিমি দীর্ঘ উড়াল মেট্রোরেলসহ মোট ৩১ দশমিক ২৪১ কিমি দৈর্ঘ্যের অ্যালাইনমেন্টের মধ্যে ১২টি পাতাল ও ৭টি উড়াল স্টেশনের সংস্থান রয়েছে।
ঠিকাদারের উদ্ধৃত দর
প্রকল্পের সর্বমোট ১২টি প্যাকেজের এরই মধ্যে ৯টির দরপত্র দাখিল হয়েছে, যার মধ্যে একটি প্যাকেজের নির্মাণকাজ প্রায় সমাপ্ত এবং অন্য ৭টি প্যাকেজের আর্থিক দরপত্র উন্মুক্ত করা হয়েছে এবং ১টি প্যাকেজের (সিপি-৮) কারিগরি মূল্যায়ন চলমান। সামগ্রিকভাবে দরদাতাদের উদ্ধৃত দর ডিপিপি মূল্যের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। প্রাক্কলিত ব্যয় (পিএ অংশ) ৩৯ হাজার ৪৫০ দশমিক ৩২ কোটি টাকা হতে বৃদ্ধি পেয়ে বাস্তবায়নাধীন একটি প্যাকেজের চুক্তি মূল্য, ৭টি প্যাকেজের উদ্ধৃত দর ও ৪টি প্যাকেজের Engineer’s Estimate বিবেচনায় ৭৫ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। প্রতি কিলোমিটার টানেল নির্মাণ ব্যয় ১ হাজার ২৫০দশমিক ৭২ কোটি টাকা হতে বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৩৯৮ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা হতে পারে।
প্রকল্পে বিশেষায়িত প্রযুক্তির ব্যবহার
• শিল্ড টানেল সেগমেন্ট থেকে পানি লিকেজ (চুঁইয়ে পড়া) এড়াতে সেগমেন্টাল লাইনিং (আস্তরণ) থেকে পানি লিকেজজনিত দুর্ঘটনা এড়াতে টানেল সেগমেন্ট স্থাপনের সময়ে বিশেষ করে দুটো সেগমেন্টের জোড়া/সংযোগস্থলে (Joint) সেগমেন্টাল লাইনিং এর গুণগত মান সুনিশ্চিত করতে এবং শিল্ড টানেল সেগমেন্টের পৃষ্ঠতলে (Surface) কোনোরকম কোন চিড়/ফাটল দৃশ্যমান না হওয়ার জন্য পানি নিরোধক জাপানি বিশেষ প্রযুক্তি ওয়ান পাস জয়েন্ট ব্যবহার করা হবে।
• বালু নদীর উপর বিদ্যমান তিন স্প্যান বিশিষ্ট সেতুটি ১৪৯ মিটার দীর্ঘ এবং সেতু সংলগ্ন একটি আন্ডারপাস রয়েছে। বিদ্যমান সেতুটি অক্ষুন্ন রেখে তার উপর দিয়ে যথাযথ নির্মাণের সুবিধার্থে ১৭২ মিটার দীর্ঘ একক স্প্যান বিশিষ্ট সেতুর প্রস্তাব করা হয়েছে।প্রকল্পের কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ সিপি-০৮ এর দরপত্র দলিলে ১৭২ মিটার দীর্ঘ একক স্প্যান বিশিষ্ট সেতুর জন্য SBHS (Steel for Bridge High-performance Structure) এর প্রস্তাব আছে। হলো SBHS দীর্ঘ-স্প্যান ব্রিজের জন্য বিশেষভাবে উন্নতকৃত একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন ইস্পাত।
বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও বারংবার পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে এই ইস্পাত JISF (Japan Iron and Steel Federation), NEXCO (Japan Expressway Companies) এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রচেষ্টায় SBHS প্রস্তুত করা হয়। দীর্ঘ-স্প্যান ব্রিজের জন্য SBHS স্টিল বেছে নেওয়ার কারণ হলো SBHS-এর কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দীর্ঘ-স্প্যান ব্রিজের জন্য উপযুক্ত।
• উচ্চ শক্তি ও নমনীয়তা (Y/T <0.85, yield strength বনাম tensile strength)
• ভালো ভূমিকম্প-সহনশীল কর্মক্ষমতা
• ফাটল ছাড়াই ভালো ওয়েল্ডেবিলিটি; উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে
• ওয়েল্ডিং-এর জন্য প্রি-হিটিং দরকার হয় না; ব্যয় সাশ্রয়ী
• নিম্ন তাপমাত্রায় উন্নত টাফনেস
• ভাঙনের ধরন পূর্বাভাস যোগ্য
• প্রচলিত ASTM বা EN গ্রেডের তুলনায় উন্নত ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা
জাপানের Nippon Steel Corporation, JFE Steel Corporation এবং Kobe Steel, Ltd. মূলত Japanese Industrial Standards (JIS G 3140)-এর অধীনে SBHS400, SBHS500, এবং SBHS700 গ্রেড স্টিল উৎপাদন করে থাকে। এখন পর্যন্ত জাপানের বাইরে কোনো ইস্পাত উৎপাদককে অফিসিয়ালি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি বা SBHS একই মানে উৎপাদন করে বলে জানা যায়নি। জাপানের কিছু উল্লেখযোগ্য দীর্ঘতর-স্প্যান ব্রিজে SBHS ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন;
• Yokohama Bridge 460 মিটার প্রধান স্প্যান, কেবল-স্টেইড টাইপ
• Tokyo Gate Bridge 440 মিটার প্রধান স্প্যান, ট্রাস ব্রিজ
• Second Shinminato Bridge 240 মিটার, কেবল-স্টেইড টাইপ
• Kita Bisan Seto Bridge 300 মিটার, কেবল-স্টেইড টাইপ
• Shin-Toyota Bridge 200 মিটার, বক্স গার্ডার
• Rinkai Chuo Bridge 440 মিটার কেন্দ্রীয় স্প্যান, কেবল-স্টেইড টাইপ
• Otagawa Ohashi Bridge 116 মিটার প্রধান স্প্যান, কন্টিনিউয়াস স্টিল বক্স গার্ডার টাইপ
• Tsukiji-Ohashi Bridge 145 মিটার আর্চ স্প্যান, স্টিল থ্রু আর্চ
কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ সিপি-০৮ এর দরপত্র মূল্যায়ন কাজ
কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ সিপি-০৮ এর প্রিকোয়ালিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছে যাতে চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারত ও বাংলাদেশের মোট ০৮ টি প্রতিষ্ঠান উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তীতে চীন-বাংলাদেশ, জাপান-বাংলাদেশ এবং জাপান-কোরিয়ার ০৩ টি প্রতিষ্ঠানে মূল দরপত্র দাখিল করে। বর্তমানে কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ সিপি-০৮ এর কারিগরি মূল্যায়ন চলমান আছে এবং কারিগরি মূল্যায়ন শেষে শুধু উত্তীর্ণ দরদাতাগনের আর্থিক প্রস্তাব উন্মুক্ত করা হবে।
ঢাকার আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোর ব্যয়: একটি আন্তর্জাতিক তুলনামূলক বিশ্লেষণ
সম্প্রতি ভারতের ও অন্যান্য দেশের প্রকল্পগুলোর সাথে তুলনা করে ঢাকার মেট্রো রেল নির্মাণ প্রকল্পকে অতিরিক্ত ব্যয়বহুল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। প্রকল্পের পরিসর, নগরের ঘনত্ব, ভূতাত্ত্বিক পরিস্থিতি এবং মুদ্রাস্ফীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনায় আনলে, ঢাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল নির্মাণ ব্যয় বিশ্বের অন্যান্য সমতুল্য মেট্রো ব্যবস্থার তুলনায় সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এমআরটি লাইন-১ আন্ডার গ্রাউন্ডের আর্থিক দরপত্র উন্মূক্তকৃত প্যাকেজসমূহ
প্যাকেজ -রুট দৈর্ঘ্য (কিলোমিটার)- স্টেশন- দরপত্র মূল্য- ব্যয়/কিমি- সমতুল্য USD (মিলিয়ন)
সিপি-০৪ (রামপুরা – নতুন বাজার) ৪.৪৫০-৪-১৪,৯৮৮- ৩,৩৬৮- ২৮০.৭০
সিপি-০৫ (নতুন বাজার – নদ্দা) ৩.৩৭০-১ -৫,০৫৫- ১,৫০০- ১৩৫.৭০
সিপি-০৬ (নদ্দা – বিমানবন্দর) ৫.০৬০- ৩ -১০,৮২২- ২,১৩৯- ১৯৪.৪০
সর্বমোট ১২.৮৮০ -৮
আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোর প্যাকেজ সিপি-০৪, সিপি-০৫ এবং সিপি-০৬-এর উন্মুক্তকৃত আর্থিক প্রস্তাবের মূল্যায়নের ভিত্তিতে প্রতি কিলোমিটারে নির্মাণ ব্যয় ১৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাস্তবায়নাধীন আন্তর্জাতিক আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো প্রকল্পের সাথে এমআরটি লাইন-১ এর ব্যয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ-
প্রকল্পের নাম- দৈর্ঘ্য (কিমি) -মোট ব্যয় (USD bn) -ব্যয় (USD/m) -বাস্তবায়ন কাল -নোট
Dhaka MRT-1 (Underground section) for CP04, CP05 & CP06- 12.9- 6.11 -199 -2025–2031 (ongoing) Bangladesh’s first underground Metro
Singapore TEL (Thomson–East Coast Line) 43 (mostly underground) -18.5 -430 -2014–2025 (staged opening) Deep tunnels, advanced safety
Sydney Metro City & Southwest 30 (15.5 underground) ≥14.0 -677 -2017–2025 (ongoing) High Cost due to global inflation etc
Melbourne Metro Tunnel 9 (all underground) 9–10 1000- 2017–2025 (expected opening) High Cost due to global inflation etc
Ho Chi Minh City Line 1 19.7 (partly underground) 1.7–2.5- 85125- 2008–2024 (completed) Mostly elevated
এমআরটি লাইন-১ এর ব্যয়ের যৌক্তিকতা
বাংলাদেশে প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো: টানেলিং প্রযুক্তি, বিশেষায়িত সিস্টেম এবং সংশ্লিষ্ট নির্মাণ দক্ষতা প্রথমবারের মতো দেশে আনতে বড় অঙ্কের প্রাথমিক মোবিলাইজেশন ব্যয়ের প্রয়োজন হবে।
ভূতাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জ: ঢাকার নরম মৃত্তিকা, উচ্চ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এবং বন্যা-ঝুঁকি প্রকৌশলগতভাবে মোকাবেলার প্রয়োজনে নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ডঃ এমআরটি লাইন-১ এর ডিজাইনে অগ্নি নিরাপত্তা, বন্যা প্রতিরোধ, জরুরি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং প্ল্যাটফর্ম স্ক্রিন ডোরসহ উন্নত বিশ্বমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
মুদ্রার বিনিময় হারঃ ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি টাকা (BDT) ডলারের তুলনায় প্রায় ৪৪.৩% অবমূল্যায়িত হয়েছে, যার ফলে আমদানিকৃত পণ্যের ও বৈদেশিক মুদ্রায় চুক্তিভিত্তিক ব্যয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
ক্রয় ব্যয় বৃদ্ধি: মেট্রো রেলের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, রোলিং স্টক, সিগন্যালিং সিস্টেম এবং নির্মাণসামগ্রী বাংলাদেশে উৎপাদিত না হওয়ায়, বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এর ফলে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক দরপত্রে ব্যবহৃত মার্কিন ডলার ও জাপানি ইয়েনের বিপরীতে টাকার দুর্বলতা ব্যয় আরও বাড়িয়েছে।
এমআরটি-১ এর আন্ডারগ্রাউন্ড অংশের ব্যয় প্রতি কিলোমিটারে ১৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা সিঙ্গাপুর, সিডনি এবং মেলবোর্নের তুলনায় কম। হো চি মিন সিটির সঙ্গে তুলনীয়: নেল ও স্টেশন নির্মাণ ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করলে ঢাকার ব্যয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমমানের প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। উচ্চ ব্যয় মানে অদক্ষতা নয়: তুলনামূলক বেশি ব্যয় মূলত প্রথমবারের মোবিলাইজেশন, জটিল ভূতাত্ত্বিক অবস্থা, এবং উন্নত নিরাপত্তা ও মান নিশ্চিত করাকে প্রতিফলিত করে যা অপচয় বা অদক্ষতা নয়। ঢাকার প্রকৌশল ও আর্থিক চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় প্রতি কিলোমিটারে ১৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় যৌক্তিক ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী তুলনাযোগ্য। ঢাকার আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো ভবিষ্যৎমুখী এবং জনগণের জন্য নিরাপদ সেবা নিশ্চিতে নির্মিত প্রকল্প।
মেট্রোরেলের লাভ-ক্ষতি নির্ণয়ে সরাসরি আর্থিক বিশ্লেষণের পরিবর্তে দেশের বৃহত্তর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে এই গণপরিবহনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব নির্ণয় করা বাঞ্ছনীয়।
পরিচালন নিট মুনাফা (Operating Net Profit) হয়তো গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে মূল বিনিয়োগের বিপরীতে নিম্নোক্ত উপাদানগুলো বিবেচিত হতে পারেঃ
ক) যানজটে নষ্ট হওয়া লাখ লাখ কর্মঘণ্টায় আর্থিক মূল্যে নির্ণয়পূর্বক বিবেচিত হতে পারে। জনবহুল ঢাকা ও অন্যান্য নগরে সড়কপথে গন্তব্যে পৌঁছানোর ভ্রমণ সময়ের অনিশ্চয়তাকে মেট্রোরেল ইতিবাচক ও উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে পারে
খ) পরিবেশ দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে তা নগর তথা সারাবিশ্বের পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে
গ) দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি উপযুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে
ঘ) ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দৃশ্যমান উন্নতিসাধনের মাধ্যমে বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখতে পারে
ঙ) উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
চ) দ্রুত ও সময়সাশ্রয়ী গণপরিবহনব্যবস্থা হিসেবে মেট্রোরেল বাংলাদেশ সম্পর্কে উন্নয়নসহ যোগী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিকট ইতিবাচক ভাবমূর্তি রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে
ছ) সড়কপথের প্রচলিত যানবাহনে ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি ও দূষণের মাত্রা কমিয়ে মেট্রো বাংলাদেশের নগর পরিবহণকে Green Communication System এ রূপান্তরিত করতে পারে যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কমিয়ে বিশ্বের টেকসই পরিবেশ উন্নয়নের অঙ্গীকার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সমর্থ হয় ।ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান, চীন এমনকি ভারতেও আধুনিক শহরের গণপরিবহণ ব্যবস্থা মেট্রোর উপর নির্ভরশীল। ভূমির দুষ্প্রাপ্যতার কারণে এসব অধিকাংশ শহরে আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো নেটওয়ার্ক বিদ্যমান।
আগামী ১০ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ অন্যান্য বড় শহরে মেট্রোরেল নির্মাণের ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। উল্লেখ্য, বিশ্বের বেশিরভাগ রেলওয়ে ও মেট্রো সিস্টেম সরকারি ভর্তুকিতে চলে, কারণ নাগরিকদের জন্য এর অগণিত পরোক্ষ সুফল রয়েছে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.