ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:৫১ পিএম
সংগৃহীত ছবি
সারাদেশে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া মাসব্যাপী টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন (TCV) ২০২৫ সফল করার পথে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং কওমি মাদ্রাসাগুলোতে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ চিহ্নিত করে এক যুগান্তকারী গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন (HSF)-এর আয়োজনে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর কৌশলগত অংশীদারিত্বে ‘Sharing of Situation Analysis Report on English Medium School & Qawmi Madrasa’ শীর্ষক এক সভায় এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জনাব এ.টি.এম. সাইফুল ইসলাম, যিনি এই গবেষণাটিকে বাংলাদেশে প্রথম বলে উল্লেখ করেন।
গবেষণার মূল ফলাফল: দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন চ্যালেঞ্জ: গ্যাভী সিএসও'র চেয়ার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডাঃ নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। তিন মাসব্যাপী পরিচালিত এই গবেষণায় মিক্সড মেথড ব্যবহার করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সাক্ষাৎকার, FGD ও KII-এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের চ্যালেঞ্জ (ভ্যাকসিন দ্বিধা): ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর স্বাস্থ্য সুবিধায় অগ্রগতি থাকলেও, টিকাদান কার্যক্রমে প্রধান বাধা 'ভ্যাকসিন দ্বিধা' (Vaccine Hesitancy):
উদ্বেগ ও স্বাচ্ছন্দ্য: অধিকাংশ শিক্ষক ও অভিভাবকের মধ্যে ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা, মান ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তারা অনেকে প্রাইভেট হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
প্রশাসনিক ও স্থান সমস্যা: কিছু স্কুলে স্থান সংকুলান, অনুমোদনের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতা এবং প্রচারণার অভাব পরিলক্ষিত হয়।
যোগাযোগের বাধা: সরকারি বা এনজিও ভ্যাকসিনেটররা অনুমোদন ছাড়া স্কুলে প্রবেশ করতে পারেন না, যা টিকা প্রাপ্তিতে বড় চ্যালেঞ্জ।
কওমি মাদ্রাসার চ্যালেঞ্জ (সচেতনতা ও যোগাযোগ): কওমি মাদ্রাসাগুলোতে স্বাস্থ্য ও টিকাদান কার্যক্রম খুবই সীমিত। এখানে মূল সমস্যা সচেতনতার অভাব ও কাঠামোগত বাধা।
স্বাস্থ্যসেবার অভাব: অধিকাংশ মাদ্রাসায় ফার্স্ট এইড কিট নেই এবং শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হলে নিকটস্থ ফার্মেসি বা ক্লিনিকে নেওয়া হয়।
ভ্যাকসিনের তথ্য ও গুজব: মাদ্রাসার শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটি ভ্যাকসিনের মান, নিরাপত্তা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন। কখনও কখনও টিকা সম্পর্কে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়।
নিবন্ধনের সমস্যা: মাদ্রাসায় টিকাদানে অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ খুবই সীমিত।
ইউনিক সামাজিক বাধা: ছেলে মাদ্রাসায় নারী ভ্যাকসিনেটর এবং মেয়ে মাদ্রাসায় পুরুষ ভ্যাকসিনেটর কাজ করার অনুমোদন নেই।
TCV ক্যাম্পেইন ২০২৫: টার্গেট ও উদ্যোগ: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় আগামী ১২ অক্টোবর ২০২৫ থেকে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন শুরু হবে।
টিকাদানের লক্ষ্য: প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৯ম শ্রেণী/সমমান পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত ০৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের বিদ্যমান ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ শেখ ছাইদুল হক বলেন, এই ক্যাম্পেইন সফল করতে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল এবং কওমি মাদ্রাসাসহ সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ জরুরি।
ক্যাম্পেইন সফল করতে সুপারিশমালা-
গবেষণা প্রতিবেদনে TCV কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে:
অফিসিয়াল যোগাযোগ: সরকার থেকে অফিসিয়াল চিঠি দিয়ে TCV কার্যক্রমের তারিখ ও সময় জানানো এবং DGHS/EPI থেকে ফোকাল পারসন নিয়োগ করে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা।
সচেতনতা বৃদ্ধি: শিক্ষক, অভিভাবক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের জন্য ওরিয়েন্টেশন সেশন আয়োজন করে ভ্যাকসিন সুবিধা, নিরাপত্তা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
গুজব নিরসন: টিকাদানের ক্ষেত্রে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যেকোনো গুজব দেখা দিলে দ্রুত তা দূরীকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ।
সুবিধামতো সময়: ভ্যাকসিনেশন স্কুল/মাদ্রাসার ক্লাস চলার সময়ে বা শিক্ষার্থীদের সুবিধামতো সময়ে আয়োজন করতে হবে এবং অনুপস্থিতদের জন্য বিকল্প ইপিআই সেন্টার ব্যবহার করতে হবে।
কভারেজ: টিকাদান কার্যক্রমের রেকর্ড ও কভারেজ ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ এবং জন্ম নিবন্ধন নেই এমন শিশুদের ক্ষেত্রে কাগজে সংরক্ষণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (ডাঃ আবু আহম্মদ আল মামুন), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এনপিও (ডাঃ চিরঞ্জিত দাস), এবং অপরাজেয় বাংলার নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু উপস্থিত ছিলেন।
ভোরের আকাশ/জাআ