কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫ ১১:৪৪ এএম
ছবি-ভোরের আকাশ
গাজীপুরের কাপাসিয়া সদর বাজার-তরগাঁও খেয়াঘাটে পারাপারে ইজারাদারের বিরুদ্ধে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় এবং খেয়াঘাটের মাঝিদের কাছ থেকে চাঁদা দাবির প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে খেয়াঘাটের মাঝি, দৈনিক পারাপার হওয়া শিক্ষার্থীসহ শতাধিক এলাকাবাসী অংশ নেন। এ সময় তারা অবিলম্বে ইজারাদারের সকল অনিয়ম বন্ধ করে সরকারি নিয়ম মেনে যাত্রীসেবা ও মাঝিদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানান বক্তারা।
জানা যায়, কাপাসিয়া বাজার-তরগাঁও খেয়াঘাটটি চলতি বছরের পহেলা জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত এক বছর মেয়াদে প্রায় ১ লাখ টাকায় ইজারা নেন শাহনারা পারভীন নামে তরগাঁও এলাকার এক নারী।
গাজীপুর জেলা পরিষদ থেকে ইজারার বিজ্ঞপ্তিতে প্রথমবার একজন পেশাদার পাটনীকে দেওয়ার শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই বিজ্ঞপ্তির ৫ নং শর্তে উল্লেখ রয়েছে-ইজারা গ্রহীতা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ‘টোল রেইট’ সর্ব সাধারণের জ্ঞাতার্থে সংশ্লিষ্ট খেয়াঘাটের প্রকাশ্য স্থানে লটকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করবেন এবং ইজারা গ্রহিতা নির্ধারিত হারে টোল আদায় করতে বাধ্য থাকবেন। নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত টোল আদায় করলে ইজারা বাতিল করা হবে এবং ইজারা গ্রহিতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাজীপুর জেলা পরিষদ থেকে সর্বশেষ জারিকৃত ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে অফিস আদেশে খেয়াঘাটের টোল হার অনুযায়ী প্রতিজন যাত্রীর কাছ থেকে ৪ টাকা টোল আদায় করা যাবে এবং শিক্ষার্থীরা বিনা মাশুলে যাতায়াত করতে পারবে। কিন্তু ওই খেয়াঘাটের নতুন ইজারাদার সকল ধরনের যাত্রীর কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা হারে টোল আদায় করে তাদেরকে নিজস্ব ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে একবার পার করে দিচ্ছেন। এখানে শিক্ষার্থীদেরকেও প্রতিবার ১০ টাকা হারে টোল দিতে হচ্ছে।
ওই খেয়াঘাট দিয়ে কাপাসিয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও কাপাসিয়া টেকনিকেল স্কুলের শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ ঘাট দিয়ে স্কুল খোলার দিনগুলোতে দুইবার আসা যাওয়া করে।
উপজেলা সদরের কলেজ রোডের শিক্ষার্থী মোঃ ফাহিম জানান, তিনি কাপাসিয়া টেকনিকেল স্কুলের ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তাকে এখন প্রতিদিন খেয়া পারাপার হতে গিয়ে বিশ টাকা দিতে হয়। তাদের পক্ষে এ টাকা দেওয়া খুবই কষ্টকর।
ওই খেয়াঘাটের মাঝি লুলু মিয়া (৭৫) জানান, দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি এ ঘাটে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কিন্তু এই ইজারাদারের কারণে এখন আর এ পেশায় টিকে থাকতে পারবেন না বলে আক্ষেপ করছিলেন। ইজারাদারের লোকজন এ ঘাটে কর্মরত ৩৫-৪০ জন মাঝির কাছ থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে চাঁদা দাবি করছেন।
এ টাকা না দেওয়ায় ইজারাদার যাত্রীদের কাছ থেকে ঘাটে ১০ টাকা হারে টোল আদায় করে দুটি ট্রলারে পারাপার করে দেন। সেজন্য এখন তারা তেমন কোনো যাত্রীই পাচ্ছেন না। তিনি গত শুক্রবার সারাদিনে মাত্র ৩৫ টাকা উপার্জন করেছেন বলে দাবি করেন। তার মতো অবস্থা সকল মাঝিদের।
তরগাঁও এলাকার বাসিন্দা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বর্তমান ইজারাদারের লোকজনের কাছে সকল শ্রেণির যাত্রী এবং কর্মরত মাঝিরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নিয়েও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
এ বিষয়ে শাহানারা পারভীনের ছেলে মোঃ শরীফ জানান, তারা জেলা পরিষদের লোকজনের অনুমতি নিয়েই ঘাটে পাঁচ টাকা এবং ট্রলারের জন্য পাঁচ টাকা করে প্রতিজন যাত্রীর কাছ থেকে আদায় করছেন। আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধু ট্রলারের জন্য পাঁচ টাকা আদায় করছেন। আর গত ১২ দিন যাবৎ মাঝিদের কাছ থেকে এক টাকাও নেননি তিনি। তবে বিগত বছরগুলোর ন্যায় মাঝিদেরকে তার সাথে সমন্বয় করে দৈনিক কিছু টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ডাঃ তামান্না তাসনীম জানান, খেয়াঘাটের ইজারার বিষয়টি জেলা পরিষদ কার্যালয়ের। এলাকাবাসীর অভিযোগ পেলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভোরের আকাশ/জাআ