লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৫ ০১:৪৮ পিএম
লাকসামে রেলের অপরাধ তৎপরতা
দেশের ঐতিহ্যবাহী লাকসাম রেলওয়ে জংশনটি বৃহত্তর জংশন হিসেবে পরিচিত হলেও বর্তমানে দায়িত্বরত এক শ্রেণির অসাধু রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপরাধী তৎপরতার কারণে জংশন এলাকার সার্বিক পরিবেশের অবনতি ঘটছে।
স্থানীয় রেলওয়ের একাধিক সূত্র জানায়, বিগত সরকার কয়েক হাজার কোটি টাকার নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রায় লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী নিয়ে জংশন এলাকা গড়ে উঠেছে এক মনোরম পরিবেশ। বর্তমান জংশন এলাকার কর্মকাণ্ড দেখলে বোঝা যায় এলাকাটি এখন নিজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। বিগত কয়েক বছর ধরে এলাকার সর্বত্র ট্রেনের নির্গত ধোঁয়া, যত্রতত্র মলমূত্র এবং নোংরা আবর্জনা, রেলওয়ে জিআরপি পুলিশ, আনসার ও নিরাপত্তা বাহিনীর চোরাচালান, টোকেন ব্যবসা, রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপতৎপরতাসহ বিভিন্ন অপরাধী কার্যকলাপের কারণে গোটা এলাকা যেন অপরাধী চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে প্রকাশ্যে চোরাচালান ব্যবসা, মাদকদ্রব্য আমদানি, পকেটমার, ভ্রাম্যমাণ পতিতা, ছিনতাইকারী, বখাটে মাস্তানদের উপদ্রব, প্ল্যাটফর্মে হকারদের দৌরাত্ম্য, টিকিট কালোবাজারি ও স্থানীয় বিভিন্ন অপরাধী চক্রের দৌরাত্ম্যে জংশন এলাকার সার্বিক জনজীবন আজ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, এ রেলওয়ে জংশনে বিভিন্ন অপরাধী চক্রের সঙ্গে স্থানীয় একটি মহল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন অপরাধী তৎপরতায় সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। রেল সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে নিরাপত্তা বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জিআরপি থানা, প্ল্যাটফর্ম নিয়ন্ত্রণে জিআরপি ও নিরাপত্তা হাবিলদার এবং জংশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ রেল জংশনের বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তর দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা অতি মুখ্য হলেও দেখা যায়, সরকারের ভ্রান্তনীতির অজুহাতে ও নানামুখী সুযোগ নিয়ে স্থানীয় কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে সরকার বিভিন্ন দপ্তর থেকে বছরে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রেলওয়ে লোকোসেড থেকে তেল ও বিভিন্ন সম্পদ পাচার, পার্সেল ও বুকিং অফিসে দুর্নীতি, জংশন বাজারে অবৈধভাবে সরকারি জায়গা-জমি পুকুর কম মূল্যে ইজারা প্রদান, চোরা পথে রেলের স্লিপার, গাছসহ রেল সম্পদ পাচারে কতিপয় অসাধু ব্যক্তির তৎপরতা, জংশনের সবগুলো কলোনিতে চোরাচালান, মাদকসহ অসামাজিক কার্যকলাপে অপরাধী চক্রের আখড়া খানায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে আখাউড়া-লাকসাম-চট্টগ্রাম, লাকসাম-নোয়াখালী ও লাকসাম-চাঁদপুর রেলওয়ে লাইনের দুই পাশে সরকারি জমিগুলো জবরদখলে এবং রেলওয়ে লাইনের ওপর হাটবাজার বসিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি মহল।
এসবের পেছনে হরেক রকম শ্রমিক সংগঠনের নামে ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতি, জিআরপি পুলিশ, আনসার ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মাসিক টোকেন ব্যবসা অন্তরায় সৃষ্টি করে চলেছে। অপর একটি সূত্র জানায়, এদিকে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেমন ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সেক্টরে লুটপাটে ব্যস্ত, তেমনি তাদের মদদদাতা স্থানীয় একটি বিশেষ মহল অবৈধভাবে সরকারি অর্থ অপচয় ও আত্মসাতের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে।
রেলের সার্বিক প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তরে নিয়মনীতির কোনো বালাই নেই। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে এসবের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালালেও কিছু দিন পর পুনরায় সাবেক পরিস্থিতিতে ফিরে আসে। যা গত ১০ বছরে বিভিন্ন ফাইল ঘাটলেই রেলওয়ের বিভাগীয় দপ্তরগুলোর অনেক অজানা তথ্য বের হয়ে আসবে।
জংশনের বিভিন্ন কলোনিতে পরিত্যক্ত বাসা ও অবৈধভাবে জোরপূর্বক বাসা ভাড়া দিয়ে, অবৈধ বিদ্যুৎ-গ্যাস লাইন সংযোগ ও কারেন্ট হিটার বসিয়ে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করে সরকারি অর্থ ফাঁকি দিচ্ছে এবং কলোনিগুলোতে বিভিন্ন অপরাধী কর্মকাণ্ডের ফলে আন্তজেলা অপরাধী চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় সার্বিক প্রশাসনের আন্তরিকতা অতি মুখ্য হলেও তা অনেকটা অনিশ্চিত। এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও বিভিন্ন অপরাধী সিন্ডিকেটের সদস্যরা স্থানীয় কোনো না কোনো রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সদস্য। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ একটু আন্তরিক হলে লাকসাম রেলওয়ে জংশনের অনেক অজানা তথ্য বের হয়ে আসবে বলে এলাকার জনমনে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রেলওয়ে জংশনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা মুখ খুলতে নারাজ। তবে তারা পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ