টেকনাফ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৫৩ এএম
ছবি- ভোরের আকাশ
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালী এলাকার গহীন পাহাড়ে বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, মর্টারের শেল, বোমা তৈরির উপকরণ ও হ্যান্ড গ্রেনেড উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বিজিবি সূত্র জানায়, হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গীখালী পাহাড় ও বাহাড়ছড়া ইউনিয়নের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন পাহাড়গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে কয়েকটি স্বশস্ত্র ডাকাত দল অস্থায়ী ঘাঁটি গড়ে তোলে। এসব দল স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের অপহরণ, গুম, হত্যা এবং মানবপাচারের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত ছিল। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় মাদক ও চোরাচালান কার্যক্রমেও তারা সক্রিয় ছিল।
এ পরিস্থিতিতে উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট ডাকাত দলগুলোর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, রঙ্গীখালী পাহাড়ে কয়েকজন ডাকাত স্বশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করছে। খবর পেয়ে ৬৪ বিজিবির একটি চৌকস দল ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের নেতৃত্বে তাৎক্ষণিকভাবে তিন স্তরের কৌশলগত অবস্থান নেয়—একটি দল সীমান্ত এলাকায়, একটি দল রঙ্গীখালী পাহাড়ে এবং অপরটি কক্সবাজারগামী মেরিন ড্রাইভ এলাকায় অবস্থান গ্রহণ করে।
রাত আনুমানিক ১০টা ৫০ মিনিটে পাহাড়ের একটি অংশে ডাকাত দলের সন্দেহজনক তৎপরতা লক্ষ্য করা হলে এলাকা ঘিরে ফেলা হয়। এ সময় ডাকাত দল বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি ছোড়ে। পরে ডাকাতরা তাদের অস্থায়ী ঘাঁটি ছেড়ে পাশের পাহাড়ে পালিয়ে যায়। অভিযান শেষে বিজিবি ওই ঘাঁটিতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে।
উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে রয়েছে: একটি জি-৩ রাইফেল, জি-৩ রাইফেলের অংশবিশেষ ও ম্যাগাজিন, চারটি ওয়ান শুটার গান, একটি এলজি শুটার গান, একটি এমএ-১ (ভ্যারিয়েন্ট এমকে-২), একটি একনলা গাদা বন্দুক, দুটি সিলিং, তিনটি আরজিএস হ্যান্ড গ্রেনেড (লিভারসহ), একটি মর্টারের গোলা, ১৭ কেজি গান পাউডার, হাত বোমা তৈরির ১০টি উপকরণ, চাপাতি ৮টি, ছুরি ৫টি, কাঁচি ১টি এবং মোট ৩০২ রাউন্ড বিভিন্ন ধরনের গুলি। এছাড়া বিভিন্ন অস্ত্রের ব্যবহৃত গুলির ৫৪টি খালি খোসাও উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করেই ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে এই গোয়েন্দা-নির্ভর রুদ্ধশ্বাস অভিযান পরিচালনা করা হয়।
বিজিবি জানায়, চলতি বছরের ১ মার্চ ২০২৫ তারিখে পতাকা উত্তোলনের পর থেকে উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) চোরাচালান ও অস্ত্র উদ্ধারে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এ পর্যন্ত তারা কোটি টাকার ইয়াবা, গাঁজা, মদ, বিয়ার ও ফেন্সিডিলসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করেছে এবং বহু আসামিকে আটক করেছে। পাশাপাশি অতীতে এ ব্যাটালিয়নের অভিযানে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেড, মর্টার শেল ও বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।
উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) কক্সবাজার রিজিয়নের রামু সেক্টরের অধীন থেকে বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের বাংলাদেশ–মায়ানমার সীমান্তে দায়িত্ব পালন করছে। সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান, মাদক, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ দমনে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছে এই ব্যাটালিয়ন।
বিজিবি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভবিষ্যতেও এ ধরনের গোয়েন্দা-নির্ভর ও সমন্বিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ভোরের আকাশ/মো.আ.