নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৫৪ এএম
ছবি- ভোরের আকাশ
নওগাঁ বাইপাস সড়কের দুই পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি প্রায় ৫৫০টি তালগাছের মাথা কেটে দেওয়া হয়েছে। এসব তালগাছের ওপর দিয়ে বিদ্যুত সরবরাহ লাইনের সুরক্ষা দিতে গাছগুলোর মাথা কেটে দিয়েছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (নেসকো) অফিসের কর্মীরা। বিদ্যুৎ বিভাগের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা।
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, সরকার যখন পরিবেশ রক্ষায় ও বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা পেতে তালগাছ রোপণের উদ্যোগ নিচ্ছে সেখানে গাছগুলোর মাথা কাটা করা ঠিক হয়নি। এতে হুমকির মুখে পড়বে পরিবেশের ভারসাম্য। বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল। এতে গাছও বাঁচত, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পেত।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সড়কের দুইপাশে বেড়ে ওঠা এসব তালগাছের বয়স প্রায় ২০-৩০ বছর। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বিভিন্ন এলাকা থেকে তালের বীজ সংগ্রহ করে সড়কের দুইপাশে রোপণ করে। এখন এসব তাল গাছগুলোর কারনে সড়কটি সৌন্দর্যবর্ধন হয়ে উঠে। গাছগুলোর ডালপালা ছেঁটে ন্যাড়া করে ফেলার কারণে ধীরে ধীরে মরে যেতে পারে গাছগুলো। এরআগেও ডাল কেটে ফেলার কারণে কিছু গাছ মরে গেছে। গাছগুলো বাঁচাতে কারও কোনো উদ্যোগ নেই। এরআগেও সড়ক সংস্কারের নামে নির্বিচারে কাটা হয় গাছ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁ বাইপাস সড়কের রামভদ্রপুর থেকে বটতলী বোয়ালিয়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারে থাকা কয়েক হাজার তালগাছ। এসব গাছের উচ্চতা ১০-১২ ফুট। তালগাছের সামান্য দূরত্বে বিদ্যুতের খুঁটি। এরমধ্যে দুইপাশে থাকা প্রায় ৫৫০টি তালগাছ মাথা কাটা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি এসব গাছে ন্যাড়া করে ফেলায় সড়কটি সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এভাবে তালগাছগুলোর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া ঠিক হয়নি বিদ্যুৎ অফিসের লোকদের। এর আগেও কিছু গাছ ন্যাড়া করে দেওয়ায় মরে গেছে। আমরা প্রতিবাদ করলেও তারা শুনে না। প্রশাসনের লোকজন সাথে নিয়ে কাটে। শুধু এখানে নয়, গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের লাইনের জন্য গাছ কাটা পড়ে।’
আরেক বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, ‘দিন দিন তালগাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এই গাছগুলো একদিনে বড় হয়নি? বিদ্যুতের লাইন পরিষ্কারে নামে বিদ্যুতের লোকজন এসে সমানে ডালপালা কেটে একেবারে মাথা ন্যাড়া করে ফেলেছে। তালগাছের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের খুঁটিগুলো দুই-তিন হাত সরিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু তারা সেটি না করে গাছগুলোর ক্ষতি করলেন। মনে হচ্ছে তালগাছগুলো পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলার চিন্তা করা হয়েছে। বিদ্যুত অফিসের লোকদের আরো ভেবেচিন্তে কাজ করা উচিত ছিলো।’

স্থানীয় পরিবেশকর্মী নাইস পারভীন বলেন, ‘নওগাঁতে প্রতিবছর বজ্রপাতের অনেক মানুষ মারা যায়। সেখানে বজ্রপাত রোধে তালগাছ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব গাছ না থাকলে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। যেখানে সরকার গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সেখানে গাছগুলোর মাথা কেটে দিয়ে নেসকো পরিবেশ বিধ্বংসী আচরণ করলো। প্রাকৃতিক বিপর্যয় কখনোই আমাদের কাছে কাঙ্খিত নয়। এমন কর্মকান্ড বন্ধ না হলে আন্দোলনের হুশিঁয়ারি দেন এই পরিবেশকর্মী।'
এ বিষয়ে নেসকোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: কালাম বলেন, ‘এটি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। বিদ্যুৎ লাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ গাছের ডাল ও মাথা কাটা হয়েছে।’
ভোরের আকাশ/মো.আ.