ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৩:৪৯ পিএম
ছবি- সংগৃহীত
চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা, দেশে–বিদেশের মানুষের দোয়া— সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। একই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে ওসমান হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও।
ইনকিলাব মঞ্চের এক ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, “ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।”
হাদির মৃত্যুর পর সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার বিভিন্ন বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ‘ভাইয়া, আল্লাহ যদি আমাকে নিয়ে যায়, আমার বাচ্চাটার দিকে একটু খেয়াল রাইখেন’— শিরোনামের একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে আবেগ ছড়িয়েছে।
ভিডিওটি এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের সময় ধারণ করা। সেখানে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে নিজের সন্তান ও পরিবারের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন হাদি।
ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি নিজেকে আল্লাহর কাছে সপে দিয়েছি। মন খারাপ হয়— আল্লাহ যদি কোনো দিন আমাকে নিয়ে যায়, তো এই যে ছেলেমেয়েগুলা… আল্লাহ আমাকে একটা সন্তান দিসে, তিন মাস বয়স ওর। আমার বাচ্চাটারে তিন মাসে ত্রিশ মিনিটও কোলে নিতে পারি নাই। আমার ওয়াইফ মাঝে মাঝে মজা করে বাচ্চাকে বলে, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই প্রথম মনে হইলো আমি আমার ভাইয়াকে বলি— ভাইয়া, আল্লাহ যদি আমাকে নিয়ে যায়, আমার বাচ্চাটার দিকে একটু খেয়াল রাইখেন। কিন্তু এই কথাটা আমি আর বলতে পারি নাই।”
নিজের লড়াই ও বিশ্বাস নিয়ে হাদি বলেন, “আমার সারা জীবনের সততা আর সাহসের পেছনে আমার আব্বা আছেন। আল্লাহ যদি আমাকে রহম করেন, তাহলে আমার সন্তান, পরিবার, ভাইবোন আর ইনকিলাব মঞ্চের ভাইবোনদের আল্লাহই দেখবেন। কারো কাছে আর কোনো প্রত্যাশা নাই।”
উল্লেখ্য, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, হামলায় জড়িত হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এক নেতাকে শনাক্ত করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে আলোচনা রয়েছে।
ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ওসমান হাদি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের উদ্যোগে গত সোমবার তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়।
সেখানেই শেষ পর্যন্ত জীবনের লড়াইয়ে হার মানেন ইনকিলাব মঞ্চের এই নেতা।
ভোরের আকাশ/মো.আ.