মো. নাছির উদ্দিন, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:২২ পিএম
নয়নাভিরাম কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য
কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়ে বসে আছে প্রকৃতি। গ্রীষ্মের সেই নিস্প্রাণ রুক্ষতা ছাপিয়ে প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়া নিজেকে মেলে ধরেছে আপন মহিমায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরূপ গ্রাম-বাংলা ও শহরকে আলাদা করে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে রক্তিম কৃষ্ণচূড়া। যেন রক্তিম ফুলের সৌন্দর্যে শিল্পীর নরম তুলি আঁকা চিত্র। গ্রীষ্মের তীব্র গরম ও অবিরাম উষ্ণতায় যখন সমগ্র দেশ স্থবির, ঠিক তখনই জেগে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিমতা।
প্রতিবছর এ সময়ে চট্টগ্রাম মহানগর ও সীতাকুণ্ড উপজেলাসহ সারা দেশে কৃষ্ণচূড়ার এমন রূপ দেখা যায়। এ যেন লাল গালিচায় স্বাগত জানানো হচ্ছে ভ্রমণপিপাসু অতিথিদের। ফুলের সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ নয়নে কৃষ্ণচূড়ায় ঠাঁই নেয় ক্লান্ত পথচারীরা। সীতাকুণ্ড উপজেলা গেইট, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়, সীতাকুণ্ড মডেল থানা প্রাঙ্গণ, বন বিভাগ এবং পৌর ভবন সংলগ্ন দিঘীর উত্তর-পূর্ব কোণে ফুলে-ফুলে রঙিন বিশাল কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষটি পথচারীদের জন্য বাড়তি বিনোদন হয়ে উঠেছে।
এছাড়া, সীতাকুণ্ড ইকোপার্ক, চন্দ্রনাথ পাহাড়, হাফিজ জুট মিলস গেট, ফৌজদারহাট, ভাটিয়ারী, কুমিরা, উপজেলার সকল রেলওয়ে স্টেশন ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ডিভাইডার জুড়ে কমবেশি বাহারি রক্তিম কৃষ্ণচূড়ার দেখা মেলে। স্নিগ্ধ সকাল, তপ্ত দুপুর বা গোধূলি বেলায় কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য উপভোগ করেন পথচারীরা। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রাঙ্গণ কৃষ্ণচূড়ায় সাজিয়ে নিয়েছে।
উপজেলায় ঠিক কতটি কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ রয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও স্থানীয়রা জানান, এক সময় গ্রাম-গঞ্জে হাজার হাজার কৃষ্ণচূড়া গাছ থাকলেও এখন তা শতাধিক সংখ্যায় সীমাবদ্ধ।
সীতাকুণ্ডের জোড়ামতল ঘোড়ামরার বাসিন্দা, প্রকৃতিপ্রেমী লেখক ও সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, ছোটবেলা থেকেই কৃষ্ণচূড়ার প্রতি তার রয়েছে গভীর দুর্বলতা। কৃষ্ণচূড়ার রঙিন ফুল বৈচিত্র্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এক সময় বাড়ির সামনে সারি সারি কৃষ্ণচূড়া গাছ সৌন্দর্যের প্রতীক ছিল, এখন সেগুলোর জায়গা নিয়েছে কড়ই, মেহগনি, আকাশমণি ও সেগুন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সাইফুল আলম জানান, পৌর ভবনের পাশে আমার বাসার ছাদ থেকে দৃশ্যমান বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছটি আমার বিনোদনের উৎস হয়ে উঠেছে। এক সময় ছুটির দিনে ক্লান্তি কাটাতে কৃষ্ণচূড়ার নিচে আশ্রয় নিতেন। বাচ্চারা লালে-লাল ফুল নিয়ে খেলতো যা ছিল দারুণ উপভোগ্য।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এই গাছগুলো অবাধে কাটা হলেও নতুন রোপণে কৃষ্ণচূড়ার মতো নান্দনিক গাছকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।
সীতাকুণ্ড পৌরসদরস্থ সনি র্যাংগস-এর সত্ত্বাধিকারী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সীতাকুণ্ড রেলওয়ে স্টেশনের পাশে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম ফুল তার যাতায়াতপথে নিয়মিত আনন্দ দেয়।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী বলেন, এক সময় চট্টগ্রামের প্রতিটি এলাকাকে কৃষ্ণচূড়া রাঙিয়ে তুলতো। আদালতের সংযোগস্থলে কৃষ্ণচূড়ার রক্তিমতা আইনজীবীদের মুগ্ধ করে। ঝরে পড়া ফুলগুলো সড়কে পড়ে থাকে যেন আদালত প্রাঙ্গণে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছে বলেন তিনি।
তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কৃষ্ণচূড়ার সেই ঐতিহ্য ও জৌলুস আর নেই। নগরায়নের ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বনায়নের উপযোগী জমি, হারিয়ে যাচ্ছে কৃষ্ণচূড়ার মতো ঐতিহ্যবাহী বৃক্ষ। তিনি নান্দনিক এসব গাছ সংরক্ষণ ও বনায়নে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
ভোরের আকাশ/এসএইচ