৬০ কোটি টাকার সম্পত্তি সরকারের খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৪০ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে ৭০ বছর ধরে বেদখল অবস্থায় থাকা প্রায় ২৩ একর জমি উদ্ধার করে সরকারিভাবে খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা। উদ্ধারকৃত জমির বাজারমূল্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জমির উপর দৃষ্টিনন্দন একটি ইকোপার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আড়াইহাজার উপজেলার বিশনন্দী ফেরিঘাট সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের পাশে অবস্থিত জমিটি ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর হিন্দু মালিকরা ভারতে চলে গেলে অব্যবস্থাপনার সুযোগে স্থানীয় শতাধিক পরিবার চাষাবাদ শুরু করে। দীর্ঘ সময় ধরে জমিটি ভোগদখলে রাখলেও তারা প্রকৃত মালিকানার প্রমাণ দিতে পারেনি।
২০২০ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর লোকজন কৃষকদের কাছ থেকে জমি দখল করে অবৈধ বালুর ব্যবসা শুরু করে। পরে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরাও জমি দখলে নেয়। এতে এলাকায় ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়।
এমন পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা আড়াইহাজার উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন যেন জমির এক ইঞ্চিও আর বেদখল না থাকে। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, কানুনগো ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর যৌথ প্রতিবেদন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) সুপারিশ যাচাইয়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ অনুযায়ী জমিটি খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আড়াইহাজারের সহকারী কমিশনার (ভূমি) নঈম উদ্দীন বলেন, “সব দাবিদারকে কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছিল। গণবিজ্ঞপ্তি দেয়ার পরে শুনানিতে যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, সবাই ভুয়া মালিক। এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস কে মো. মামুনুর রশীদ বলেন, “আমি দ্রুত এ সংক্রান্ত ফাইল জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছি। তিনি নথিতে স্বাক্ষর করে জমিটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্তির আদেশ দেন।”
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, “এই জমিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে ভবিষ্যতে জমিটি আর বেদখল হবে না। পাশাপাশি স্থানীয়রা পর্যটন সুবিধা থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।”
স্থানীয় বিশনন্দী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আব্দুল হামিদ ও ফেরিঘাট জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মতিউর রহমান বলেন, “আমাদের দাদা-বাবা এ জমিতে চাষ করতেন। কিন্তু ২০২০ সালে সাবেক এমপি নজরুল ইসলামের লোকজন জমি বেদখল করে নেয়। সরকার যদি ইকোপার্ক করে, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। চাই শুধু একটাই, ভবিষ্যতে যেন প্রভাবশালীরা দখল করতে না পারে।"
স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিনের অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে জমি উদ্ধারের মাধ্যমে এলাকায় স্বস্তি ফিরে এসেছে। জেলা প্রশাসকের এই সাহসী পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা।
ভোরের আকাশ/জাআ