ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৫ ০১:১৬ পিএম
সাংবাদিকদের মাধ্যমেই গোটা জাতি বাংলাদেশকে দেখে: অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, আমরা বাংলাদেশে বিপ্লবোত্তর সময় পার করছি। এই সময়ে সাংবাদিকরা সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করছেন। আপনাদের মাধ্যমে গোটা জাতি গোটা বাংলাদেশকে দেখে। আপনারা দেখেন, মানুষের সামনে তুলে আনেন। ভঙ্গুর অর্থনীতি, বিপর্যস্ত মানবাধিকার, মানুষের একদিকে যেমন আকাশ সমান স্বপ্ন-বিজয়ের উল্লাস সবমিলিয়ে এই দশ মাস সময়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার যতটুকু কাজ করেছে সেই কাজগুলো আপনারা তুলে ধরুন। বুধবার (৪ জুন) রাত ৮টায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার এমন একটি সময়ে এসেছে যেসময় বাংলাদেশে তথাকথিত প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে নিয়ে পালিয়ে গেছে। কোনো কোনো আত্মীয়-স্বজনকে এক সপ্তাহ আগেই পালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ যখন অরক্ষিত, বাংলাদেশের মানুষ যখন অরক্ষিত তখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে সুপ্রিম কোর্ট সুনির্দিষ্টভাবে বলেছে এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি দেশ পরিচালনার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করতে পারবে। সেই প্রেক্ষাপটে দাড়িয়ে ভঙ্গুর অর্থনীতি, বিপর্যস্ত মানবাধিকার, মানুষের একদিকে যেমন আকাশ সমান স্বপ্ন-বিজয়ের উল্লাস সবমিলিয়ে এই দশ মাস সময়ে যতটুকু কাজ করেছে সেই কাজগুলো আপনারা (সাংবাদিক) তুলে ধরুন।
তিনি বলেন, গত দশ মাসে বাংলাদেশে একটিও গুমের ঘটনা ঘটেনি। কোনো পুলিশ কর্মকর্তা বাদী হয়ে একটিও গায়েবী বা মিথ্যা মামলা করেনি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার জন্য গত দশ মাসে দশজন মানুষও বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়নি। যা দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে সেইটাও সরকার তাৎক্ষণিকভাবে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এটা আমাদের এক ধরণের সামাজিক বিবর্তন এবং পরিবর্তনে অঙ্গিকার বাস্তবায়ন।
আটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা মানবাধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছি। বাংলাদেশে আগে জঙ্গি হামলা হতো। গত ১০ মাসে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি হামলা হয়নি। জঙ্গি হামলা সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা তৈরি হয়েছিল। অনেকগুলো জঙ্গি হামলা সাজানো নাটক ছিল। গত ১০ মাসে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ হয়নি।
মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, আইন অঙ্গনে আমার ব্যাপকভাবে সংস্কারে হাত দিয়েছি। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশে সবচেয়ে যে দুই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ছিল, একটি হলো বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহার হত্যা মামলা আরেকটি ছিল মেজর সিনহা হত্যা মামলা। আমরা অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে উদ্দ্যোগ নিয়ে সেই দুটি হত্যা মামলা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছি এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মনের মাঝে আমরা এই স্বপ্ন বুনতে পেরেছি যে দেশে কোনো খুনি খুন করে পার পাবে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ৫ আগষ্টের পরে সারা বাংলাদেশে যেখানে হামলা-মামলা হয়েছে প্রতিশোধের রাজনীতি হয়েছে, ঘর-বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে। আমরা শৈলকুপাতে কোনোরকম হামলা-মামলা, ঘরবাড়িতে আক্রমণ থেকে মানুষকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, প্রতি ঈদে শৈলকুপা থেকে কোনো না কোনো ভাবে মায়ের বুক খালি হয়েছে। গ্রামে গ্রামে কাইজ্যা হতো এবং সেখানে এক-দুটি মার্ডার হতো। ঈদের মধ্যে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে শৈলকুপার রোগীতে ভর্তি হয়ে থাকতো। কারো হাত গেছে, কারো পা গেছে। আমরা অত্যান্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, বিগত রমজানের ঈদে আমাদের শৈলকুপা থানায় একটিও মার্ডার হয়নি।
আমরা আশা করছি, আগামী ৭ তারিখের ঈদেও একই পরিবেশ বিরাজমান থাকবে। সেই পরিবেশের মধ্য দিয়ে আমরা এই শান্তিপূর্ণ ঈদ উদযাপন করবো।
শৈলকুপা শহরের কবিরপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় শৈলকুপা প্রেসক্লাবের আহবায়ক তাজনুর রহমান ডাবলুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শিহাব মল্লিকের সঞ্চালনায় সিনিয়র সাংবাদিক বিমল কুমার সাহা, সাংবাদিক দেলোয়ার কবির, উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন বাবর ফিরোজ, পৌর বিএনপির সভাপতি আবু তালেব মিয়াসহ শৈলকুপা উপজেলায় কর্মরত সকল সংবাদকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ