সুরতহাল প্রতিবেদনে আঘাতের চিহ্ন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:৪৭ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পুলিশ হেফাজতে আব্দুল্লাহ (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ঘটনায় সুরতহাল প্রতিবেদনে শরীরে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রিন্স সরকার।
তিনি জানান, নিহতের কপাল ও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। এদিকে ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর আগে মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই সাকিল মিয়া ৪ জনের নাম উল্লেখ করে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) নবীনগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন- সলিমগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মহিউদ্দিন, প্রকাশ (রাব্বি), তবি মিয়া ও মাসুদ রানা। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ২০–২৫ জনকে আসামি করা হয়।
ঘটনার পর এসআই মহিউদ্দিনকে সোমবার সকালে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ওবায়দুর রহমান।
অপরদিকে নবীনগর থানা পুলিশের অভিযোগ, নিহত আব্দুল্লাহকে ৪দিন ধরে ছলিমগঞ্জ ফাঁড়িতে আটকে রাখা হলেও বিষয়টি থানার ওসি ও সার্কেল কর্মকর্তার কাছ থেকে গোপন করেন ফাঁড়ির ইনচার্জ মহিউদ্দিন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত (১৭সেপ্টেম্বর) ছলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামে নগদ অর্থ চুরির অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার সূত্র ধরে (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে সলিমগঞ্জ বাজার সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় আব্দুল্লাহকে আটক করা হয়। স্থানীয় কয়েকজন তাকে মারধর করে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখানে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আব্দুল্লাহকে সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করা হয়। কিন্তু পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ফাঁড়িতে নেওয়ার পরও নির্যাতন চলতে থাকে। পরিবারের দাবি, তার হাতের নখ গ্লাস দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়, কপালের চামড়া ছুলে দেওয়া হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়- আসামীরা সম্মিলিতভাবে আব্দুল্লাহকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন এবং পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন।
আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সলিমগঞ্জ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে । উত্তেজনা বাড়তে থাকায় প্রশাসন ফাঁড়িটি বন্ধ করে দেয় এবং সেনা মোতায়েন করেন।
ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহিউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে সোমবার দুপুরে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার মো. এহতেশামুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় ১ পুলিশ সদ্যসহ ৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা হয়েছে। পাশাপাশি সব আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
ভোরের আকাশ/জাআ