ভোরের আকাশ ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০২৫ ০১:৫৬ পিএম
কমেছে মুরগির দাম, সবজি ও মাছের দাম চড়া
পুরো রমজান মাসজুড়ে দুই-একটি সবজি ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম তুলনামূলক কম ছিল। তাতে স্বস্তিতে ছিলেন ক্রেতারা। তবে রমজান ও ঈদ শেষে বাজারে সব ধরনের মুরগির দাম কমলেও বেড়েছে সবজি এবং মাছের দাম। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, রাজধানীর রামপুরা বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৯০ থেকে টাকা, পটল ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ধুন্দল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতির কেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সজনের কেজি ১৪০ টাকা, ঝিঙে ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা এবং কাঁচা আম ৬০ টাকা কমে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাজারে শিমের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। ফুলকপি প্রতিটি ৬০ টাকা পিস, বাঁধা কপি ৫০ টাকা, লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাকা টমেটো প্রকারভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসার কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজারে লেবুর হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ১৪০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা। চাল কুমড়া প্রতিটি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্যাপসিকাম ১২০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
লাল শাকের আঁটি ১০ টাকা, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পালং শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, কলমি শাক ৩ আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও ডাঁটা শাকের দুই আঁটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আদার কেজি ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি রসুন ১০০ টাকা, ইন্ডিয়ান রসুন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮৫ থেকে ৯৮ টাকা, নাজিরশাইল ৮৮ থেকে ৯২ টাকা, স্বর্ণা ৫৮ টাকা এবং ২৮ চাল ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এসব বাজারে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৫০ টাকা কমে ২৭০ টাকা এবং সোনালি হাইব্রিড কেজিতে ৪০ টাকা কমে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৭০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ৩০ টাকা কমে ১৮০ টাকা এবং দেশি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ৬৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ২২০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকা।
বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭৮০ টাকা। গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি এক হাজার ১৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
অন্যদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার কিছুটা চড়া রয়েছে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ইলিশের দাম কিছুটা বেড়েছে। আকার ও ওজনভেদে ইলিশের কেজি এক হাজার ২০০ টাকা থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর বাজারগুলোতে নদীর দেশি চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দুই সপ্তাহ আগেও ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা ছিল। চাষের চিংড়িও বেড়ে ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকা হয়েছে। ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে টেংরা মাছ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।
শুধু চিংড়ি কিংবা টেংরা নয়, দেশি শিং ও শোল মাছের দামও চড়া। শিং ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, শোল ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি পুঁটি মাছও বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। বড় আকৃতির রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়ার মতো সাধারণ চাষের মাছও বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ কম। শীতের অধিকাংশ সবজি শেষ হয়ে গেছে আর গ্রীষ্মের অনেক সবজি এখনো বাজারে কম। এ কারণে দাম বেড়েছে।
রাজধানীর শনিরআখড়া এলাকায় বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঈদের পর থেকেই সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। এখন বাজারে সত্তর-আশি টাকার নিচে ভালো সবজি পাওয়া যায় না। তবে চলতি বছরের রমজান মাসে সস্তায় সবজি কিনতে পেরেছি।
ক্রেতা নারগিস বেগম বলেন, বাজারে মাছের দাম অসহনীয়। এমন দাম দিয়ে সপ্তাহে একবার মাছ কেনাও কষ্টকর। এখন মাছ খাওয়া যেন বিলাসিতায় রূপ নিয়েছে। বাসায় বাচ্চারা ছোট মাছ খেতে চায়, কিন্তু বাজারে পাবদা বা শিংয়ের দাম শুনে কেবল আফসোসই করা যায়।
এদিকে, বাজারে আবারও সয়াবিন তেলের কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক দোকানেই তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে। অর্থাৎ কোনো দোকানে ৫ লিটারের বোতলজাত তেল থাকলেও এক-দুই লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কোনো কোনো দোকানে প্রতি লিটারে নির্ধারিত দাম ১৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মালিবাগ বাজারের বিক্রেতা এনামুল বলেন, কোম্পানি তেল দেয় না। ঈদের পর থেকে অর্ডার নিচ্ছে না। যে কারণে ৫ টাকা বেশি দিয়ে বাইরে থেকে কিনে আনি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ