আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫ ১২:৩২ এএম
লিবিয়ায় মাফিয়ার বন্দিদশা থেকে দুই বাংলাদেশি তরুণ ফিরছেন দেশে
লিবিয়ায় ভয়াবহ মানব পাচার ও নির্মম নির্যাতনের কবলে পড়ে নয় মাস ধরে বন্দিদশায় থাকা দুই বাংলাদেশি তরুণ দেশে ফিরছেন। বুধবার (৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ৭টায় বুরাক এয়ারলাইন্সের (ফ্লাইট নম্বর: UZ222) একটি ফ্লাইটে তাদের ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। ফিরছেন ঝিনাইদহের মতিউর রহমান সাগর ও কুষ্টিয়ার তানজির শেখ।
২০২৩ সালে গ্রামের দালালদের প্রলোভনে পড়ে তারা পরিবার থেকে ৪ লাখ টাকা দিয়ে লিবিয়ায় পাড়ি জমান, আশ্বাস ছিল একটি ভালো চাকরির। কিন্তু বাস্তবে কোনো কাজের সুযোগ ছিল না। পরে দালালচক্র তাদের বিক্রি করে দেয় একটি সশস্ত্র মাফিয়া চক্রের কাছে, যারা প্রতিশ্রুতি দেয় ইতালিতে পাঠানোর।
এই মাফিয়া চক্রের হাতে তারা ৮০ জন বাংলাদেশির সঙ্গে একটি ঘরে আটক থাকেন, যেখানে শুরু হয় নিষ্ঠুর নির্যাতন। লোহার রড, লাঠি, বৈদ্যুতিক শকসহ নানাভাবে দিনের পর দিন চালানো হয় পৈশাচিক নিপীড়ন। একপর্যায়ে তাদের অবস্থা এতই খারাপ হয়ে পড়ে যে পাচারকারীরা ভেবে নেয় তারা আর বাঁচবে না—এবং তাদের ফেলে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে ভাগ্যক্রমে তারা ত্রিপোলিতে এক আত্মীয়ের কাছে আশ্রয় পান।
পরিবারের পক্ষ থেকে ব্র্যাকের মাধ্যমে সহযোগিতা চাইলে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের টিপ (Trafficking in Persons) অফিস ও আন্তর্জাতিক সংস্থা আইজেএম (International Justice Mission) বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নেয়। এরপর আইওএম হেডকোয়ার্টার ও লিবিয়ার স্থানীয় ইউনিটের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে একটি নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।
সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে অবশেষে তারা দেশে ফিরছেন। তাদের এই ফিরে আসা শুধু ব্যক্তিগত মুক্তির গল্প নয়—বরং এটি আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা, মানবিক উদ্যোগ এবং রাষ্ট্র ও পরিবারের সম্মিলিত প্রচেষ্টার এক বাস্তব উদাহরণ।
এই দুই তরুণের প্রত্যাবর্তন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানব পাচার প্রতিরোধে সচেতনতা ও যৌথ পদক্ষেপ কতটা জরুরি—এবং কীভাবে একটি প্রক্রিয়াগত সহায়তা জীবনের আশাকে ফিরিয়ে আনতে পারে।
ভোরের আকাশ/হ.র