বিনিয়োগকারীরা চারটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে: বিডা
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানিয়েছেন, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বর্তমানে চার ধরনের বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন।
এগুলো হলো: জ্বালানির মূল্যনীতি, আমেরিকার আরোপিত নতুন শুল্কনীতি এবং তার প্রভাব, তৃণমূল পর্যায়ে পুরনো অনুশীলন, এবং প্রকল্প সম্পাদন ও বাস্তবায়নের গতিতে সমস্যা।
মঙ্গলবার (৬ মে) রাতে বিডার আয়োজিত 'স্টেট অব ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট' ওয়েবিনার সিরিজের তৃতীয় সেশনে তিনি এসব কথা বলেন। ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের প্রধান চারটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে জানান, আগামী ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে গ্যাস বিতরণ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এ সময় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, এলএনজির পূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও অন্যান্য প্রস্তুতি শেষে আগামী দুই বছরের মধ্যে শিল্পগুলো কম মূল্যে গুনগত মানসম্পন্ন জ্বালানি পাবেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার মধ্যে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু এবং সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালবাহী বিমান চলাচল শুরু করা অন্যতম। এছাড়া, পোর্টের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজও চলছে।
ভোরের আকাশ//হ.র
সংশ্লিষ্ট
দেশের বাজারে ফের কমলো সোনার দাম। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ২ হাজার ৬২৪ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ২৩৬ টাকা। আগামীকাল রোববার (২৯ জুন) থেকে এ দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।শনিবার বাজুসের প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং স্ট্যান্ডিং কমিটির এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।বাজুস জানিয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম কমার প্রেক্ষিতে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে এই দাম হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।এর আগে, গত ২৫ জুনও সোনার দাম কমানো হয়েছিল। তার আগে মে ও জুন মাসে চার দফায় সোনার দাম বাড়ানো হয়েছিল। সাম্প্রতিক এই দাম কমানোকে গত কয়েক সপ্তাহের ধারাবাহিক হ্রাস হিসেবে দেখা যাচ্ছে।নতুন দামে বিভিন্ন ক্যারেটের সোনার মূল্য:২২ ক্যারেট: প্রতি ভরি ১,৭০,২৩৬ টাকা (কমেছে ২,৬২৪ টাকা)২১ ক্যারেট: প্রতি ভরি ১,৬২,৫০৩ টাকা (কমেছে ২,৪৯৬ টাকা)১৮ ক্যারেট: প্রতি ভরি ১,৩৯,২৯১ টাকা (কমেছে ২,১৩৫ টাকা)সনাতন পদ্ধতি: প্রতি ভরি ১,১৫,১৭০ টাকা (কমেছে ১,৮৩২ টাকা)গত ২৫ জুন যে দামে সোনা বিক্রি হয়েছে, সেগুলো ছিল যথাক্রমে:২২ ক্যারেট: ১,৭২,৮৬০ টাকা২১ ক্যারেট: ১,৬৪,৯৯৯ টাকা১৮ ক্যারেট: ১,৪১,৪২৬ টাকাসনাতন পদ্ধতি: ১,১৭,০০২ টাকাসোনার দামে পরিবর্তন এলেও রুপার দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বর্তমান রুপার দাম নিম্নরূপ:২২ ক্যারেট: প্রতি ভরি ২,৮১১ টাকা২১ ক্যারেট: প্রতি ভরি ২,৬৮৩ টাকা১৮ ক্যারেট: প্রতি ভরি ২,২৯৮ টাকাসনাতন পদ্ধতি: প্রতি ভরি ১,৭২৬ টাকাভোরের আকাশ//হ.র
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান অপসারণ দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের ইন্ধন বা সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। একই সঙ্গে উদ্ভূত সংকট নিরসনে সরকারকে দ্রুত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা।শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, সময়ক্ষেপণ না করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)–কে দ্রুত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যদিও আন্দোলনের মুখে সেই অধ্যাদেশ স্থগিত করা হয়েছে, তবুও এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শনিবার সকাল থেকে দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন।এ পরিস্থিতিতে গত ২৫ জুন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এনবিআর সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে সরকারপন্থী কিছু ব্যবসায়ীর ইন্ধন থাকতে পারে।তবে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু এ মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “এ ধরনের অভিযোগ যদি থেকে থাকে, তবে নির্দিষ্টভাবে ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করতে হবে। পুরো ব্যবসায়ী সমাজকে দায়ী করা অনুচিত।”তিনি বলেন, “বাংলাদেশের পোশাকশিল্প সবচেয়ে বড় খাত, যেখানে দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এনবিআর কর্মীদের আন্দোলনের কারণে এই বিশাল পরিমাণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। এটা দেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।”চলমান অচলাবস্থায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, “বর্তমানে ব্যবসায়ীরা বৈশ্বিক ও স্থানীয় অর্থনৈতিক চাপে আছেন। এর মধ্যে এনবিআরের অচলাবস্থা নতুন করে আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। এ সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী, সরকারকে দ্রুত সমাধানের পথে ফিরে আসতে হবে।”সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, এনবিআর চেয়ারম্যান অপসারণ কোনো স্থায়ী সমাধান নয় এবং এতে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না।”বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, আন্দোলনের কারণে আমদানি-রপ্তানি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। রপ্তানিকারকরা কাঁচামাল সময়মতো খালাস করতে পারছেন না, বন্দরগুলোতে পণ্য আটকে থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প খাত।এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো সরকারের কাছে ৭ দফা সুপারিশ পেশ করে। একই সঙ্গে আন্দোলনকারীদের শর্তহীনভাবে কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান, এলএফএমইএবি সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রো চেম্বার সভাপতি কামরান টি রহমান, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ এবং বিসিএমইএ সভাপতি মঈনুল ইসলাম প্রমুখ।ভোরের আকাশ//হ.র
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নতুন নকশা করা ওয়েবসাইট আজ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মটি বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিকাঠামোকে আরও সুগম করতে এবং বিনিয়োগকারীদের সার্বিক অভিজ্ঞতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।শনিবার (২৮ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ আরও বিনিয়োগবান্ধব হয়ে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।নতুন ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে বিডার ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রচি বলেন, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা সাধারণত কোনো দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সেই দেশের বিনিয়োগ সংস্থার ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগের সম্ভাব্য খাত মূল্যায়ন ও শর্টলিস্ট করে থাকেন। তাই এই ধরনের প্ল্যাটফর্মগুলো বিনিয়োগসংক্রান্ত তথ্য প্রদান, বিনিয়োগকারীদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এবং দেশের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাগুলো তুলে ধরার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একটি সুসংগঠিত ওয়েবসাইটই প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করতে পারে, কোনো বিনিয়োগকারী একটি দেশ নিয়ে আগ্রহ দেখাবেন কিনা, নাকি অন্য কোনো বিকল্প বিবেচনা করবেন। এ কারণেই বিডার নতুন ওয়েবসাইটটি ডিজাইন করা হয়েছে বিনিয়োগকারীদের যাত্রার বিভিন্ন স্তরকে বিবেচনায় রেখে। যেখানে একজন বিনিয়োগকারী সুযোগ খুঁজে দেখা থেকে শুরু করে, বাজার সম্ভাবনা মূল্যায়ন করা এবং সর্বশেষে সফল বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত ইকোসিস্টেমের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে পারেন।এ প্রসঙ্গে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বিডার পুরোনো ওয়েবসাইটটি একটি সাধারণ সরকারি পোর্টালের মতো ছিল। এটি সক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ সহায়তা দেওয়ার জন্য উপযুক্তভাবে প্রস্তুত ছিল না। নতুন প্ল্যাটফর্মটি স্পষ্টতা এবং কৌশলগত সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে নির্মিত একটি বিনিয়োগকারী-কেন্দ্রিক সেবা মডেলের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই রূপান্তর এবং নতুন ওয়েবসাইট সম্পর্কে কৌশলগত বিনিয়োগকারী ও অংশীদারদের অবহিত করা হচ্ছে, যাতে তারা বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনের অঙ্গীকার সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পান।উল্লেখ্য, ওয়েবসাইটের পাশাপাশি বিডার লোগোতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা নতুন চেহারায় প্রকাশিত হয়েছে। নতুন ওয়েবসাইট ভিজিট করতে এখানে ক্লিক করুন।ভোরের আকাশ/এসএইচ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তীব্র আন্দোলন, রেকর্ড রাজস্ব ঘাটতি এবং আগামী বাজেট বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তার মুখে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছে। চেয়ারম্যানের অপসারণ ও বিভাজন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে চলমান কর্মবিরতি, রাজস্ব ভবনে সেনাবাহিনীর প্রহরা এবং অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণে ধস- এসবই প্রশ্ন তুলছে, এনবিআরের ভবিষ্যৎ কী?অচলাবস্থার সূত্রপাত ঘটে গত ১২ মে সরকার এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগে বিভক্ত করার অধ্যাদেশ জারি করার মাধ্যমে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গঠন করেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ নামের সংগঠন। এই সংগঠনের ব্যনারে একের পর এক কর্মসূচির মাধ্যমে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাজস্ব বোর্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম।সংগঠনটির মূল দাবির মধ্যে রয়েছে, অবিলম্বে অধ্যাদেশ বাতিলকরণ, সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের অপসারণ ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় এনবিআর কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ। অধ্যাদেশ জারির দুই দিনের মাথায় গত ১৪ মে কলমবিরতির মাধ্যমে শুরু হওয়া এই আন্দোলন বর্তমানে কঠোর পর্যায়ে পৌঁছেছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসার জন্য ২৫ জুন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আহ্বান জানালেও ‘অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়’ জানিয়ে আহ্বান প্রত্যাখান করে ঐক্য পরিষদ। উল্টো তারা শনিবার (২৮ জুন) মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি ঘোষণা করে।এছাড়া রাজস্ব ভবনে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এই কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এনবিআরের প্রধান কার্যালয় রাজস্ব ভবনে সেনা মোতায়েন করে সরকার এবং আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবনে ঢুকতে বাধা দেয়। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে গতকাল সকালেই ইকনমিক রিপোর্টর্স ফোরামে অনুষ্ঠিত হওয়া এক সেমিনারে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান স্বীকার করেন, চলমান আন্দোলন নিয়ে তিনি সংকটে আছেন।তিনি বলেন, আমি আসলে আজকে খুবই ঝামেলার মধ্যে আছি। আপনারা জানেন যে, এনবিআর সংস্কার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন, পরবর্তীতে এটা নিয়ে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে অনেকগুলো বিষয়ে দ্বিমত এসেছে। এগুলো চিহ্নিত করে জুলাই মাসের মধ্যে একটা সংশোধনী দেয়ার ঘোষণাও আমাদের অর্থ উপদেষ্টা দিয়েছেন এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আজ (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৫টায় আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। এই আলোচনা ফলপ্রসূ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। কিন্তু আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি অব্যাহত রেখে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, চেয়ারম্যান অপসারণ ছাড়া আলোচনা নয়। এই অচল অবস্থায় রাজস্ব আহরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে স্বীকার করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনে রাজস্ব আদায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের অনড় অবস্থানে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত বুধবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এনবিআরে চলমান আন্দোলনের পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীর ইন্ধন থাকতে পারে। সংস্কারের বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, এনবিআরে স্বচ্ছতা আনতে সংস্কার জরুরি।প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা : এদিকে অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছে আন্দোলনে নামা কর্মীদের প্লাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। গতকাল বিকালে রাজস্ব ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘সার্বিক পরিস্থিতিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ মনে করে, প্রধান উপদেষ্টার সানুগ্রহ হস্তক্ষেপ ছাড়া এ অচলাবস্থার নিরসন হবে না। তাই এই অচলাবস্থা নিরসনে আমরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ এদিকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটে রাজস্ব ভবনে।সারাদিন রাজস্ব ভবন ঘিরে রাখে সেনাবাহিনীর একটি দল। সঙ্গে ছিল র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড। তারা কার্যালয় ভেতর থেকে আটকে রাখেন; কাউকে ঢুকতে দেননি এবং কাউকে বের হতেও দেননি। সকালে পরিষদের সভাপতি অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মোহাম্মদ তারেক রিকাবদার ভবনে ঢুকতে বাধা পেয়ে মূল ফটকেই বসে পড়েন। পরে বাইরে থাকা অন্য কর্মীরাও ফুটপাত ও সড়কের একটা অংশে বসে পড়েন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন এনবিআরের কয়েক সদস্য ও কমিশনার। এদিকে অফিস সময় শেষে ভেতর থেকে সেনাবাহিনী ফটক খুলে দিলেও কেউ বের হতে পারেননি। কারণ বাইরে থেকে একটি তালা পরিষদের তরফে লাগানো ছিল। পরে সোয়া ৫টার দিকে তালা খুলে দেওয়া হয়।বিশাল রাজস্ব ঘাটতিতে কঠিন চ্যালেঞ্জ : নানামুখী সংকটের মধ্যেই হাজির হওয়া এই আন্দোলনে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আয়ে ভয়াবহ ঘাটতি রেকর্ড করা হয়েছে। অর্থবছরের মাঝপথে এসে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় বাড়তি শুল্ক-কর চাপিয়ে দিলেও তাতে রাজস্ব আদায়ে খুব একাটা সুফল মেলেনি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১১ মাস শেষে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৬ হাজার ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা পিছিয়ে রয়েছে এনবিআর। এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রাজস্ব আদায় করতে হবে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা, বাস্তবতার নিরিখে যা অসম্ভব।এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে ৮৩ দশমিক ১০ শতাংশ। রাজস্ব আয়ে ঘাটতির প্রধান কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।এর মধ্যে আন্দোলনের প্রভাবও রয়েছে। মে মাসে কর্মবিরতির কারণে রাজস্ব কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। পাশাপাশি দেশে অর্থনৈতিক মন্দ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিনিয়োগে স্থবিরতা, আমদারি-রপ্তানি সংকোচন ও ব্যবসায়িক মন্থরতার কারণে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।এছাড়া জানুয়ারিতে ১০০টি পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর পর আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি লঙ্ঘিত হয়েছে। এসবের ওপর কর ফাঁকির প্রবণতা তো আছেই। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ- সিপিডির গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কর ফাঁকির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে আইএমএফ চলতি বছরের জন্য যে ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে তা অর্জন অসম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।আগামী বাজেট বাস্তবায়নে শঙ্কা : এনবিআরে চলমান আন্দোলনের মাঝেই আগামী অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির গতি কমে আসার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঘিরে আগামী বছরটি আরও কঠিন হতে যাচ্ছে। প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস, রাজস্ব ঘাটতি, ব্যাংক খাতের সংকট এবং বিনিয়োগে স্থবিরতা নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। সামনের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ পূর্বাভাসে।চলতি অর্থবছরের শেষ দিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে নামতে পারে এবং আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দুই আন্তর্জাতিক সংস্থাই। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ নাগাদ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নামতে পারে। আইএমএফও চলতি বছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এই পূর্বভাস বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশের হিসাব থেকেও কম।এদিকে গত ২৩ জুন ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ৮০০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংস্থাটি। তবে এ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে আগামীর অর্থনীতি নিয়ে কঠোর সতর্ক বার্তা।আইএমএফ বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ আগামী অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের বাজেট লক্ষ্যমাত্রায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে।আইএমএফ উল্লেখ করেছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কঠোর মুদ্রানীতি ও ব্যাংক খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নাইজেল ক্লার্ক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুস্তরীয় চাপে রয়েছে। কাঠামোগত সংস্কার, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কার্যকর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।’ এখন কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূরত্ব ও উভয় পক্ষ যার যার জায়গায় অনড় থাকার কারণে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্জনযোগ্য বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা ।এর পেছনে অর্থনৈতিক দুর্বলতার পাশাপাশি আন্দোলনের প্রভাবও রয়েছে। কারণ, কর্মবিরতির কারণে আমদানি-রপ্তানি ও শুল্ক আদায় প্রায় বন্ধ। এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এনবিআরে কাঠামোগত সংস্কার না হলে রাজস্ব ঘাটতি চলতেই থাকবে। এমনকি আইএমএফের ঋণ সহায়তা থেকেও বিচ্ছিন্ন হতে পারে বাংলাদেশ।সংকট সমাধানে সংলাপ, স্বচ্ছতা ও নীতিসংস্কারে জোর : সমস্যা সমাধানে অভ্যন্তরীণ সংস্কারে জোর দিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে অবিলম্বে সংলাপে বসে অধ্যাদেশের বিষয়টিতে জরুরিভিত্তিতে সমঝোতায় আসার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়া এনবিআরে জবাবদিহি বাড়াতে ডিজিটাল অডিট সিস্টেম চালু করার কথাও বলেছেন তারা।এ প্রসঙ্গে অর্থনীতি বিশ্লেষক মো. মাজেদুল হক ভোরের আকাশকে বলেন, এনবিআরের বর্তমান সংকট কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের অন্তর্দ্বন্দ্ব নয়, এটি বাংলাদেশের সমগ্র অর্থনৈতিক ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। রাজস্ব ঘাটতি বড় আকার ধারন করলে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন, সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দ এবং কর্মসংস্থান তৈরি অসম্ভব হয়ে উঠবে। সংকট থেকে উত্তরণে আরো কিছু পরমর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়ে বা অধ্যাদেশ সংশোধনের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে। পাশাপাশি দ্রুততার সঙ্গে কর প্রশাসনের ডিজিটাল রূপান্তর করার মাধ্যমে ভুয়া টিন সার্টিফিকেট, কর ফাঁকি ও শুল্ক ফাঁকি বন্ধে ব্লকচেইন প্রযুক্তির প্রয়োগ করা যেতে পারে।ভোরের আকাশ/এসএইচ