ছবি: সংগৃহীত
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
রোববার (২২ জুন) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বাড়তি কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে বিভিন্ন পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেই বিধান বাতিল করা হয়েছে। ফলে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আর থাকছে না।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয় ৮১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সেটি বাড়িয়ে ৯১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা করে বাজেট পাস করা হয়েছে। এতে এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তীব্র আন্দোলন, রেকর্ড রাজস্ব ঘাটতি এবং আগামী বাজেট বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তার মুখে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছে। চেয়ারম্যানের অপসারণ ও বিভাজন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে চলমান কর্মবিরতি, রাজস্ব ভবনে সেনাবাহিনীর প্রহরা এবং অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণে ধস- এসবই প্রশ্ন তুলছে, এনবিআরের ভবিষ্যৎ কী?অচলাবস্থার সূত্রপাত ঘটে গত ১২ মে সরকার এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগে বিভক্ত করার অধ্যাদেশ জারি করার মাধ্যমে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গঠন করেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ নামের সংগঠন। এই সংগঠনের ব্যনারে একের পর এক কর্মসূচির মাধ্যমে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে রাজস্ব বোর্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম।সংগঠনটির মূল দাবির মধ্যে রয়েছে, অবিলম্বে অধ্যাদেশ বাতিলকরণ, সংস্থাটির চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের অপসারণ ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় এনবিআর কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ। অধ্যাদেশ জারির দুই দিনের মাথায় গত ১৪ মে কলমবিরতির মাধ্যমে শুরু হওয়া এই আন্দোলন বর্তমানে কঠোর পর্যায়ে পৌঁছেছে। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসার জন্য ২৫ জুন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আহ্বান জানালেও ‘অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়’ জানিয়ে আহ্বান প্রত্যাখান করে ঐক্য পরিষদ। উল্টো তারা শনিবার (২৮ জুন) মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি ঘোষণা করে।এছাড়া রাজস্ব ভবনে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। এই কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এনবিআরের প্রধান কার্যালয় রাজস্ব ভবনে সেনা মোতায়েন করে সরকার এবং আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবনে ঢুকতে বাধা দেয়। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে গতকাল সকালেই ইকনমিক রিপোর্টর্স ফোরামে অনুষ্ঠিত হওয়া এক সেমিনারে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান স্বীকার করেন, চলমান আন্দোলন নিয়ে তিনি সংকটে আছেন।তিনি বলেন, আমি আসলে আজকে খুবই ঝামেলার মধ্যে আছি। আপনারা জানেন যে, এনবিআর সংস্কার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছেন, পরবর্তীতে এটা নিয়ে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে অনেকগুলো বিষয়ে দ্বিমত এসেছে। এগুলো চিহ্নিত করে জুলাই মাসের মধ্যে একটা সংশোধনী দেয়ার ঘোষণাও আমাদের অর্থ উপদেষ্টা দিয়েছেন এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আজ (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৫টায় আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন। এই আলোচনা ফলপ্রসূ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। কিন্তু আন্দোলনকারীরা কর্মসূচি অব্যাহত রেখে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, চেয়ারম্যান অপসারণ ছাড়া আলোচনা নয়। এই অচল অবস্থায় রাজস্ব আহরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে স্বীকার করেন এনবিআর চেয়ারম্যান।তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনে রাজস্ব আদায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের অনড় অবস্থানে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত বুধবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এনবিআরে চলমান আন্দোলনের পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীর ইন্ধন থাকতে পারে। সংস্কারের বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করে তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, এনবিআরে স্বচ্ছতা আনতে সংস্কার জরুরি।প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা : এদিকে অচলাবস্থা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছে আন্দোলনে নামা কর্মীদের প্লাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। গতকাল বিকালে রাজস্ব ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘সার্বিক পরিস্থিতিতে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ মনে করে, প্রধান উপদেষ্টার সানুগ্রহ হস্তক্ষেপ ছাড়া এ অচলাবস্থার নিরসন হবে না। তাই এই অচলাবস্থা নিরসনে আমরা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ এদিকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটে রাজস্ব ভবনে।সারাদিন রাজস্ব ভবন ঘিরে রাখে সেনাবাহিনীর একটি দল। সঙ্গে ছিল র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড। তারা কার্যালয় ভেতর থেকে আটকে রাখেন; কাউকে ঢুকতে দেননি এবং কাউকে বের হতেও দেননি। সকালে পরিষদের সভাপতি অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মোহাম্মদ তারেক রিকাবদার ভবনে ঢুকতে বাধা পেয়ে মূল ফটকেই বসে পড়েন। পরে বাইরে থাকা অন্য কর্মীরাও ফুটপাত ও সড়কের একটা অংশে বসে পড়েন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন এনবিআরের কয়েক সদস্য ও কমিশনার। এদিকে অফিস সময় শেষে ভেতর থেকে সেনাবাহিনী ফটক খুলে দিলেও কেউ বের হতে পারেননি। কারণ বাইরে থেকে একটি তালা পরিষদের তরফে লাগানো ছিল। পরে সোয়া ৫টার দিকে তালা খুলে দেওয়া হয়।বিশাল রাজস্ব ঘাটতিতে কঠিন চ্যালেঞ্জ : নানামুখী সংকটের মধ্যেই হাজির হওয়া এই আন্দোলনে চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আয়ে ভয়াবহ ঘাটতি রেকর্ড করা হয়েছে। অর্থবছরের মাঝপথে এসে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায় বাড়তি শুল্ক-কর চাপিয়ে দিলেও তাতে রাজস্ব আদায়ে খুব একাটা সুফল মেলেনি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১১ মাস শেষে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৬ হাজার ৬৭৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা পিছিয়ে রয়েছে এনবিআর। এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রাজস্ব আদায় করতে হবে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা, বাস্তবতার নিরিখে যা অসম্ভব।এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে ৮৩ দশমিক ১০ শতাংশ। রাজস্ব আয়ে ঘাটতির প্রধান কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করেছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।এর মধ্যে আন্দোলনের প্রভাবও রয়েছে। মে মাসে কর্মবিরতির কারণে রাজস্ব কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। পাশাপাশি দেশে অর্থনৈতিক মন্দ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিনিয়োগে স্থবিরতা, আমদারি-রপ্তানি সংকোচন ও ব্যবসায়িক মন্থরতার কারণে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।এছাড়া জানুয়ারিতে ১০০টি পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর পর আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি লঙ্ঘিত হয়েছে। এসবের ওপর কর ফাঁকির প্রবণতা তো আছেই। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ- সিপিডির গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কর ফাঁকির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে আইএমএফ চলতি বছরের জন্য যে ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে তা অর্জন অসম্ভব বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।আগামী বাজেট বাস্তবায়নে শঙ্কা : এনবিআরে চলমান আন্দোলনের মাঝেই আগামী অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির গতি কমে আসার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঘিরে আগামী বছরটি আরও কঠিন হতে যাচ্ছে। প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস, রাজস্ব ঘাটতি, ব্যাংক খাতের সংকট এবং বিনিয়োগে স্থবিরতা নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। সামনের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ পূর্বাভাসে।চলতি অর্থবছরের শেষ দিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে নামতে পারে এবং আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দুই আন্তর্জাতিক সংস্থাই। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ নাগাদ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নামতে পারে। আইএমএফও চলতি বছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এই পূর্বভাস বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশের হিসাব থেকেও কম।এদিকে গত ২৩ জুন ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ৮০০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংস্থাটি। তবে এ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে আগামীর অর্থনীতি নিয়ে কঠোর সতর্ক বার্তা।আইএমএফ বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ আগামী অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের বাজেট লক্ষ্যমাত্রায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে।আইএমএফ উল্লেখ করেছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কঠোর মুদ্রানীতি ও ব্যাংক খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নাইজেল ক্লার্ক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুস্তরীয় চাপে রয়েছে। কাঠামোগত সংস্কার, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কার্যকর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।’ এখন কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূরত্ব ও উভয় পক্ষ যার যার জায়গায় অনড় থাকার কারণে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্জনযোগ্য বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা ।এর পেছনে অর্থনৈতিক দুর্বলতার পাশাপাশি আন্দোলনের প্রভাবও রয়েছে। কারণ, কর্মবিরতির কারণে আমদানি-রপ্তানি ও শুল্ক আদায় প্রায় বন্ধ। এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এনবিআরে কাঠামোগত সংস্কার না হলে রাজস্ব ঘাটতি চলতেই থাকবে। এমনকি আইএমএফের ঋণ সহায়তা থেকেও বিচ্ছিন্ন হতে পারে বাংলাদেশ।সংকট সমাধানে সংলাপ, স্বচ্ছতা ও নীতিসংস্কারে জোর : সমস্যা সমাধানে অভ্যন্তরীণ সংস্কারে জোর দিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে অবিলম্বে সংলাপে বসে অধ্যাদেশের বিষয়টিতে জরুরিভিত্তিতে সমঝোতায় আসার পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। এছাড়া এনবিআরে জবাবদিহি বাড়াতে ডিজিটাল অডিট সিস্টেম চালু করার কথাও বলেছেন তারা।এ প্রসঙ্গে অর্থনীতি বিশ্লেষক মো. মাজেদুল হক ভোরের আকাশকে বলেন, এনবিআরের বর্তমান সংকট কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের অন্তর্দ্বন্দ্ব নয়, এটি বাংলাদেশের সমগ্র অর্থনৈতিক ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। রাজস্ব ঘাটতি বড় আকার ধারন করলে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়ন, সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দ এবং কর্মসংস্থান তৈরি অসম্ভব হয়ে উঠবে। সংকট থেকে উত্তরণে আরো কিছু পরমর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়ে বা অধ্যাদেশ সংশোধনের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে। পাশাপাশি দ্রুততার সঙ্গে কর প্রশাসনের ডিজিটাল রূপান্তর করার মাধ্যমে ভুয়া টিন সার্টিফিকেট, কর ফাঁকি ও শুল্ক ফাঁকি বন্ধে ব্লকচেইন প্রযুক্তির প্রয়োগ করা যেতে পারে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
নানামুখী চ্যালেঞ্জের কারণে আগামী অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির গতি কমে আসার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঘিরে আগামী বছরটি আরও কঠিন হতে যাচ্ছে। প্রবৃদ্ধির গতি হ্রাস, রাজস্ব ঘাটতি, ব্যাংক খাতের সংকট এবং বিনিয়োগে স্থবিরতা নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে। সামনের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ পূর্বাভাসে। চলতি অর্থবছরের শেষ দিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে নামতে পারে এবং আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দুই আন্তর্জাতিক সংস্থাই।বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ নাগাদ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫ শতাংশের নিচে নামতে পারে। আইএমএফও চলতি বছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এই পূর্বভাস বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশের হিসাব থেকেও কম।এদিকে গত ২৩ জুন ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আইএমএফের নির্বাহী বোর্ড সভায় বাংলাদেশকে ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ৮০০ মিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সংস্থাটি। তবে এ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে আগামীর অর্থনীতি নিয়ে কঠোর সতর্ক বার্তা।আইএমএফ বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, যা বাংলাদেশের বাজেট লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশের তুলনায় অনেক কম। সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, কঠোর মুদ্রানীতি ও ব্যাংক খাতের কাঠামোগত দুর্বলতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নাইজেল ক্লার্ক বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বহুস্তরীয় চাপে রয়েছে। কাঠামোগত সংস্কার, রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে কার্যকর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।আর্থিক খাতের দুরবস্থার পাশাপাশি রাজস্ব ঘাটতিও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬৬ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে। মে মাস পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৮৩ দশমিক ১০ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে জুন মাসেই আদায় করতে হবে আরও ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা যা ‘প্রায় অসম্ভব’ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাংক খাতের নাজুক অবস্থা। বর্তমানে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। বছরের শেষ নাগাদ এটি ৬ লাখ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো, ফলে নতুন বিনিয়োগে ঋণ দেওয়া প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা।এদিকে সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা ও উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি খাতে অর্থপ্রবাহ সংকুচিত হয়ে পড়ছে। সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ১ দশমিক ৪ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিতে চায়। এতে তারল্য সংকট আরও তীব্র হওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি খাতের জন্য ঋণের সুযোগ সংকুচিত হবে। বাড়বে সুদের হারও, যা অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি করবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদগণ।এছাড়া মূল্যস্ফীতির চাপ ও বৈদেশিক সংকটও দূর হয়নি। চলতি অর্থবছরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি থাকবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ভোক্তা পর্যায়ে চাপ অব্যাহত রাখবে।আগামী অর্থবছরে তা কমে ৬ দশমিক ২ শতাংশে নামার পূর্বাভাস দিলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে নানামুখী অস্থিরতা মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারে।অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সরকারি লক্ষ্য সাড়ে ৬ শতাংশ হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও নিচের মাত্রায় নামিয়ে আনতে চায়।গত ২৪ জুন রাজধানীর একটি হোটেলে ‘গুগল পে’ সেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।গভর্নর বলেন, সরকার মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামাতে চায়। তবে আমরা আরও আগ্রাসী লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি— ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারলে সেটাই হবে আমাদের সফলতা। সব মিলিয়ে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ সংকুচিত হয়ে পড়ায় প্রভাব পড়ভে কর্মসংস্থানে। বর্তমানে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাময়িকভাবে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা চলছে, তবে এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ডলার সংকট শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত করছে। এতে ঋণখেলাপির আশঙ্কা বাড়ছে।তিনি ভোরের আকাশ’কে বলেন, রাজনৈতিক সরকার না আসা পর্যন্ত বিনিয়োগ আসবে না।আর ব্যাংকের সব টাকা যদি সরকারই নিয়ে যায় তাহলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ করবে কোথা থেকে- এমন প্রশ্ন রেখে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, দেশীয় বিনিয়োগ না বাড়া পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার কোন সুযোগ নেই।ভোরের আকাশ//হ.র
বাজেট সহায়তা হিসেবে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থ পাওয়া এবং রপ্তানি আয় মোটামুটি ভালো হওয়ার পাশাপাশি প্রবাসী আয় গতিশীল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের একটা নির্দিষ্ট সময় প্রকাশ হওয়ায় আইএমএফসহ সবাই সন্তুষ্ট। কারণ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সংস্কার রাজনীতির ওপর নির্ভর করে। দেশে নিয়ম-নীতি ঠিক থাকলে বৈদেশিক বিনিয়োগও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন এই প্রবীণ অর্থনীতিবিদ। বুধবার (২৫জুন) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ক্রয় কমিটির বৈঠকে গম কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে গমের দাম কমেছে। ফলে গম কেনায় ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।অর্থ উপদেষ্টা বলেন, হরমুজ প্রণালি ঘিরে অস্থিরতার কোনো প্রভাব পড়েনি। যুদ্ধের (ইরান-ইসরায়েল) মধ্যেও জ্বালানি কেনার ক্ষেত্রে সাশ্রয় হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে যে প্রাইস ছিল যুদ্ধ বন্ধের পর সেটা কমেছে। দ্রুত পুনঃনিলাম করে ৫ থেকে ১০ ডলার কম পেয়েছি। সেখানে প্রায় ৭০-৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এটি জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সফলতা। মরক্কো, তিউনিশিয়া থেকে আসা সারের দাম কিছুটা বেড়েছে। এখানে কোনো উপায় ছিল না। চাল ও গমের যে রিজার্ভ আছে সেটি এখনো সন্তোষজনক। তবুও আমরা বলেছি ৫০ হাজার টন গম এনে রাখার জন্য। যেন খাদ্যের কোনো খাটতি না হয়- বলেন অর্থ উপদেষ্টা।আইএমএফের অর্থছাড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের একটা সময় প্রকাশ হওয়ায় আইএমএফসহ সবাই সন্তুষ্ট। আইএমএফ আমাকে প্রশ্ন করেছিল, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না। আমরা তো বলেছি হবে। রিসেন্টলি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এএফডি, এআইআইবি ঋণ অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশে সংস্কার কাজের অগ্রগতি দেখে সবাই সন্তুষ্ট।ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ একটু স্লো আছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে, বিশেষ করে বাজেট সাপোর্ট আসায় ফরেন রিজার্ভ বেড়েছে। রপ্তানিটাও এখন মোটামুটি ভালো। রেমিট্যান্স ভালো আসছে। সৌদি আরবে গিয়ে জানলাম, আমরা আসছি বলেই প্রবাসীরা টাকা পাঠাচ্ছে। আগে তারা টাকা পাঠাতে স্বস্তি পেতো না। টাকা পাঠালে কোথায় যায়, কী হয় এগুলো নিয়ে তাদের অস্বস্তি ছিল।সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, অর্থনৈতিক সংস্কার রাজনীতির ওপর নির্ভর করে। রাজনীতি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন নির্বাচনের সম্ভাব্য একটা সময় প্রকাশ হওয়ায় সবাই সন্তুষ্ট।তিনি বলেন, রিসেন্টলি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক অ্যাপ্রুফ করেছে, এডিবি অ্যাপ্রুফ করেছে, গত পরশু এআইবি বিরাট একটা অংক অ্যাপ্রুফ করেছে। আমাদের সংস্কার কার্যক্রমের যে প্রগ্রেস, তারপর অর্থনৈতিক খাতে আমরা যেটা করেছি তাতে তারা সন্তুষ্ট বলেই কোনো এজেন্সি এখন পেন্ডিং নেই। আইএমএফ থেকে লেটেস্ট এসেছে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের আস্থা আরও বেশি কীভাবে আনা যায় আমরা দেখবো। তাদের মোটামুটি আস্থা কিন্তু আছে। আমরা যখন ফরেন এক্সচেঞ্জ ওপেন করি (ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া) তখন আমাদের অনেক টেনশন ছিল, হঠাৎ কী হয়। পাকিস্তানের মতো হয়ে গেলে তো আমাদের জন্য বিপদ। সেটা হয়নি।অন্য এক প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগ এখন স্লো আছে। ওরা লক্ষ্য করছে ফরেন এক্সচেঞ্জ স্থিতিশীল কী না। এখন তো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটু বেড়েছে। দেশে রেগুলেটরিটি বিষয়টি ঠিক থাকলে ডেফিনেটলি বিনিয়োগ বাড়বে।৫০ হাজার টন গমসহ ৭ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন : সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সুসংহত রাখার লক্ষ্যে জিটুজি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন গম ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এই গম আনতে ব্যয় হবে ১৬৮ কোটি ৮২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আজ সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ২৪তম সভায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সর্বমোট ৭টি প্রস্তাব উপস্থাপিত হলে সব ক’টি প্রস্তাবই অনুমোদন দেওয়া হয়।এরমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৩টি, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে ৩টি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব রয়েছে। জানা গেছে, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-১ এর আওতায় ৫০ হাজার টন গম ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার।সংযুক্ত আরব আমিরাতের মেসার্স সিরিয়াল ক্রপস ট্রেডিং এলএলসি থেকে এই গম ক্রয়ে ব্যয় হবে ১৬৮ কোটি ৮২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রতি টন গমের দাম পড়বে ২৭৫ মার্কিন ডলার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখাসহ খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সুসংহত রাখার লক্ষ্যে জিটুজি ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে গম আমদানি করা আবশ্যক।উল্লেখ্য, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৭ লাখ ২৫ হাজার টন এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ২৫ হাজার টন গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের প্ল্যাটফর্ম এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। একই সঙ্গে দাবি আদায়ে ২৮ জুন লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউনের পাশাপাশি মার্চ টু এনবিআর কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা আসে। এদিকে চলমান এই আন্দোলনের পেছনে বিগত সরকারের কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের ইন্ধন থাকতে পারে বলে ধারনা অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের। আজ দুপুরে সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।এনবিআর ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও অতিরিক্ত কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতাসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অর্থ উপদেষ্টা আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় বিসিএস (কর) ও সিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদের তার সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা বরাবরই আলোচনার পক্ষে। আর আলোচনার পক্ষে ছিলাম বলেই ২০ মে উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় অংশগ্রহণ করি।সংস্কার ঐক্য পরিষদের ১৩ জন প্রতিনিধিসহ মোট ২৬ জন সভায় উপস্থিত ছিলেন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দুই জন প্রতিনিধিকে মোট ১০ মিনিট সময় দেওয়া হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ার পরও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে অর্থ উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান।অর্থাৎ আমাদের আলোচনার অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। অন্যদিকে অর্থ উপদেষ্টা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিদের বৃহস্পতিবারের আলোচনার জন্য আহ্বান করেননি, চিঠিও পাঠাননি। সেহেতু এ আলোচনায় আমরা অংশগ্রহণ করছি না, বলেন আন্দোলনরত সংগঠনটির নেতারা।আলোচনার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, কিছুক্ষণ আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন বিতর্কিত সদস্যের স্বাক্ষরিত সভার নোটিশ এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ নোটিশের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সভার প্রস্তুতি গ্রহণ করার লক্ষ্যে বুধবার সকাল ১০টায় একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে।তবে নোটিশটি এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদকে পাঠানো হয়নি জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিষয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি। ধরে নেওয়া যায়, একদিন আগের তারিখ দিয়ে জারিকৃত এই সভার নোটিশটি একটি আই-ওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়। তদুপরি, ঐক্য পরিষদ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত কমিটির সঙ্গে আলোচনা করার কোনো সুযোগ নেই মর্মে ঐক্য পরিষদ মনে করে।এ অবস্থায় আন্দোলনারীরা বলছেন, অনতিবিলম্বে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ৪৪ আমলার তালিকায় তিন নম্বরে থাকা বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের মধ্য দিয়েই সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কারের যাত্রা শুরু হবে। এর আগে কোনো আলোচনা নয়।সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে : বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের ঢাকার সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম-বিরতি এবং ঢাকার বাইরে স্ব-স্ব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম-বিরতি চলবে। পাশাপাশি, চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ চলবে।এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যানকে ২৭ জুন তারিখের মধ্যে অপসারণ না করা হলে আগামী ২৮ জুন আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন চলবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কমপ্লিট শাটডাউনের আওতা বহির্ভূত থাকবে। একই সঙ্গে সারাদেশের ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তর থেকে এনবিআর অভিমুখে মার্চ টু এনবিআর পালিত হবে। এ কারণে ঢাকার বাইরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকিট কেটে রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদ উল্লেখ করেছে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম এনবিআরের কোনো সদস্য থেকে শুরু করে অফিস সহায়ক পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অবসর প্রদান, বদলি/পদায়ন, প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক বদলি বা যেকোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ হলে আয়কর, কাস্টমস, ও ভ্যাট বিভাগের হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবে। আমরা মনে করি, জুলাই অভ্যুত্থানের টেকসই সংস্কারের স্পিরিট ও শিক্ষা থেকে আমরা যেন বিচ্যুত না হই। সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার সানুগ্রহ হস্তক্ষেপ ছাড়া এই অচলাবস্থার নিরসন হবে না বলেও উল্লেখ করেন আন্দোলনকারীরা।এদিকে আজ দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি ব্যতীত কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে ঢাকার ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম-বিরতি এবং ঢাকার বাইরে স্ব-স্ব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি পালন করা হয়। এ সময় দফা এক, দাবি এক, চেয়ারম্যানের পদত্যাগ- এমন স্লোগান দিতে দেখা গেছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।অপরদিকে আজ এক বিবৃতিতে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামীকার বিকেল ৫টায় বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের প্রতিনিধিদের তার সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে যার যার দপ্তরে অবস্থান করে অর্থবছরের শেষ কর্মদিবসগুলোতে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমে মনোনিবেশ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।আজ দুপুরে সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কার নিয়ে বলেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে একটি নেতিবাচক ধারণা আছে। আমরা বলতে পারি, তাদের ক্যারিয়ারের কোনো অসুবিধা হবে না। বরং এনবিআর একটি স্বতন্ত্র ডিভিশন হবে। তাদের স্ট্যাটাসটা বাড়বে। তাদের ক্যারিয়ারটা আরও প্রস্ফুটিত হবে। তাদের প্রমোশনটা আরও ভালো হবে। এখন তাদের কারা কী বুঝিয়েছে, ভেতরের ব্যাপার সেপার আপনারা আরও ভালো বলতে পারবেন।তিনি বলেন, তারা যেটা করেছে কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, এটা কোনো সরকারি কর্মচারী, বিশেষ করে এনবিআরের কেউ কোনোদিন করেনি। এটা আপনার আমার ব্যাপার নয়। পুরো দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য, রাজস্বের ব্যাপার। বন্দর, স্থলবন্দর, আমদানি-রপ্তানির ব্যাপার। আমি বলেছি, এমন কোনো সমস্যা নেই যেটা আলোচনা করে সমাধান করা যাবে না।আন্দোলনে ব্যবসায়ীদের ইন্ধন প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরে সংস্কার করার কারণ হচ্ছে এখানে আগে অনেক রকম অসঙ্গতি (ডিসক্রেপেন্সি) ছিল। সেখানে অ্যাকাউন্টেবিলিটি ও ট্রান্সপারেন্সি নেই। এখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগের সরকারের সময় কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী সুবিধা পেতেন, ভালো যারা তারা সুবিধা পেতেন না। এনবিআর লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের ধারে কাছেও ছিল না।অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অতএব আমি অনুমান করে বলছি, এখানে ব্যবসায়ীদের কিছু স্বার্থ আছে। না হলে ক্যারিয়ার নিয়ে তারা হঠাৎ করে এত চটে গেলেন কেন? অন্য কোনো উদ্দেশ্য যদি না থাকে তাহলে এমন হওয়ার কথা নয়। এটা হলো আমার অনুমান। আমি ব্যবসায়ীদের ওভাবে দোষ দিচ্ছি না।আন্দোলনের মাধ্যমে এনবিআর কর্মকর্তারা চাকরিবিধি লঙ্ঘন করছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, এটা তো, হ্যাঁ, আমরা একটু ধৈর্য ধরছি। চাকরি করতে হলে অনেক বিধিনিষেধ মানতে হবে, শৃঙ্খলা থাকতে হবে।জানা গেছে, এনবিআরকে পৃথক করে রাজস্ব শাখা ও নীতি শাখা হিসেবে নতুন বিভাগ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে এমনটি করা হলে এখানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অধিপত্য ও উপস্থিতি বাড়বে বলে বিসিএস (কর) ক্যাডার এবং বিসিএস (শুল্ক ও আবগারী) ক্যাডার কর্মকর্তারা বলে আসছেন।এরই ভিত্তিতে আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে আন্দোলন ও কর্মবিরতি চলছে। সেখানে পুলিশ পাহারায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করছেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সচিব আবদুর রহমান খান।ভোরের আকাশ/এসএইচ