সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:২৩ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
সীতাকুণ্ডে ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের করালগ্রাস থেকে উপকূলবাসীদের রক্ষায় আশি‘র দশকে সরকারি উদ্যোগে সমুদ্র তীরে গড়ে উঠে উপকূলীয় বনায়ন। শীত-বসন্ত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা‘সহ যে কোন মৌসুমে এ কৃত্রিম বনাঞ্চলে কয়েক যুগ ধরে অবাধে বিচরণ করে আসছে হরিণ, বানর, ডাহুক, কোকিল, কুমির, বক ও চিল‘সহ নানা প্রজাতির পশুপাখি।

উপজেলার সমুদ্র সৈকত ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় উপকূলীয় এ বনায়নের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।উপজেলার পশ্চিম সৈয়দপুর, অলিনগর, মান্দারীটোলা, গুলিয়াখালী, ভাটেরখীল, বাঁশবাড়িয়া, নড়ালিয়া, বগাচতর ও মহানগর‘সহ অন্যান্য সমুদ্র সৈকতগুলোতে উপকূলীয় এ বনাঞ্চল রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে উপকূলীয় বন বিভাগ।
৬নং বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নস্থ দক্ষিণ বাঁশবাড়ীয়া হাজীপাড়া থেকে মো. শাহজাহান জানান, অপরিকল্পিত নগরায়ন-শিল্পায়ন ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের প্রকৃতিকে। এক সময় বাঁশবাড়ীয়া বেড়িবাঁধের বাইরে উপকূলীয় বনাঞ্চল থেকে সাগরের অবস্থান ছিল আরও অন্তত এক কিলোমিটার দূরে। বনাঞ্চলের বাইরের অংশে ছিল মাটির ওপর ঘাসের সবুজ-শ্যামল আস্তর। তবে জোয়ারের প্রচন্ড ঢেউয়ের আঘাতে প্রতিনিয়ত জর্জরিত হলেও বাঁশবাড়ীয়া সৈকতে সবুজের বিস্তার ও ঘনত্বে জৌলুস অব্যাহত রয়েছে উপকূলীয় এ বনাঞ্চলের।

উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্রে আরো জানা যায়, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতে গড়ে তোলা হয় সাড়ে ১২ একরের ঝাউবাগান। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ঢেউয়ের ধাক্কায় এ সৈকতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। জোয়ারের ধাক্কায় গোড়ালি থেকে বালু সরে ক্ষতির মূখে উপকূলীয় বনাঞ্চল।

মুরাদপুর থেকে মো.সদরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, উপজেলার সৈয়দপুর থেকে সলিমপুর প্রতিনিয়তই উপকূলীয় বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে। সংরক্ষিত উপকূলীয় বনাঞ্চল থেকে বৃক্ষ উজাড় হতে থাকলে হুমকির মুখে পড়তে পারে সৈকতের পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য। উপজেলার বেশিরভাগ শিপইয়ার্ড মূলত সমুদ্র উপকূলের বনাঞ্চল উজাড় করে গড়ে উঠেছে।

চট্টগ্রাম জজ আদালতের আইনজীবি অ্যাডভোকেট তৌফিক উদ্দিন বলেন, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে রয়েছে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা। উপকূলবাসীদের রক্ষায় সরকার সমুদ্রের মোহনায় বিশাল এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে নানা প্রজাতির গাছে গড়ে তুলে বনাঞ্চল। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় অসংখ্য প্রজাতির গাছ গাছালিতে ভরে ওঠে এ উপকূলীয় বনাঞ্চল।

উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব‘সহ সাগরে তীব্র জোয়ার ও প্রচন্ড ঢেউয়ের আঘাতে সীতাকুণ্ডের সমুদ্র উপকূলের এ কৃত্রিম বনাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। মহাপ্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত মানুষের জানমাল রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে উপকূলীয় বনাঞ্চল ও উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ভোরের আকাশ/তা.কা