দোলনা তৈরিতে উপকরণ হিসেবে মূলত বাঁশ, রঙিন সুতা, প্লাস্টিক চেইন ব্যবহার করা হয়।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগোরী ইউনিয়নের একটি গ্রাম ‘বিরতুল’। গ্রামটি ছোট্ট হলেও দেশ-বিদেশে রয়েছে এর সুখ্যাতি। এই গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল হলেও এখানকার নারীরা প্রায় সবাই স্বাবলম্বী। তারা এখন আর স্বামীর সংসারে বোঝা নন। কারণ তাদের হাতের ছোঁয়ায় বিরতুল গ্রামটিকে সবাই দোলনার গ্রাম হিসেবেই চেনে।
বিরতুলের নারীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন সুযোগ আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে বদলে দেওয়া যায় যেকোনো গল্পের গতি। জানা গেছে, বিরতুল গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বালু নদী। নদীর পাশে কৃষি নির্ভর বিরতুল গ্রামটি সবুজ-শ্যামলে ভরপূর। এখানে শত শত পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঁশের ফ্রেমে হাতে বানানো দোলনা তৈরি করে আসছে।
দোলনা তৈরিতে উপকরণ হিসেবে মূলত বাঁশ, রঙিন সুতা, প্লাস্টিক চেইন ব্যবহার করা হয়। তবে কালের পরিক্রমায় এখন আর বাঁশ ব্যবহার করা হয় না। এটি শহুরে সৌখিন মানুষদের কাছে অতিরিক্ত চাহিদা থাকার কারণে বাঁশের বদলে এখন ব্যবহার করা হয় লোহার রড।
শুধু বিরতুল গ্রামই না পার্শ্ববর্তী ধনুন, বাগদী, বিন্দান ও সেনপাড়া গ্রামের নারীরাও এই দোলনা শিল্পে জড়িত। পাঁচ গ্রামের প্রায় ৩শ পরিবারের নানা বয়সী সহস্রাধীক নারী দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বিরতুল ও আশপাশের গ্রামের নারীদের তৈরি দোলনা রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন নামিদামি বিপনী-বিতানসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে সরবরাহ হয়। কেউ কেউ আবার বিদেশেও রফতানি করছেন।
দোলনা তৈরির নারী কারিগররা জানান, বিরতুল গ্রামের নারীরা এক সময় পরিবার চালানোর জন্য পুরোপুরি স্বামীর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিš‘ এখন আর তাদের টাকার জন্য কারও কাছে হাত পাততে হয় না।
ওই গ্রামের উদোক্তারা জানান, দোলনার দাম কমে গেছে, বেড়েছে কাঁচামালের দাম। অভাব রয়েছে সরকারি সহায়তা বা প্রশিক্ষণের। সহজ শর্তে ঋণের সুযোগ নেই বলে অনেকেই বড় পরিসরে কাজ করতে পারছেন না।
উপজেলার নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ফারজানা তাসলিম বলেন, ইতিমধ্যে বিরতুল গ্রামের দোলনা তৈরির উদ্যোক্তারা বিভিন্ন নামে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন। কলীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তনিমা আফ্রাদ বলেন, বিরতুল গ্রামের দোলনা শিল্পীদের উৎসাহিত করার জন্য উপজেলা প্রশাসন সবসময় তাদের সহযোগীতায় ছিল সামনের দিনগুলোতেও থাকবে।
ভোরের আকাশ/আজাসাা
সংশ্লিষ্ট
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগোরী ইউনিয়নের একটি গ্রাম ‘বিরতুল’। গ্রামটি ছোট্ট হলেও দেশ-বিদেশে রয়েছে এর সুখ্যাতি। এই গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল হলেও এখানকার নারীরা প্রায় সবাই স্বাবলম্বী। তারা এখন আর স্বামীর সংসারে বোঝা নন। কারণ তাদের হাতের ছোঁয়ায় বিরতুল গ্রামটিকে সবাই দোলনার গ্রাম হিসেবেই চেনে। বিরতুলের নারীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন সুযোগ আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে বদলে দেওয়া যায় যেকোনো গল্পের গতি। জানা গেছে, বিরতুল গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বালু নদী। নদীর পাশে কৃষি নির্ভর বিরতুল গ্রামটি সবুজ-শ্যামলে ভরপূর। এখানে শত শত পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঁশের ফ্রেমে হাতে বানানো দোলনা তৈরি করে আসছে।দোলনা তৈরিতে উপকরণ হিসেবে মূলত বাঁশ, রঙিন সুতা, প্লাস্টিক চেইন ব্যবহার করা হয়। তবে কালের পরিক্রমায় এখন আর বাঁশ ব্যবহার করা হয় না। এটি শহুরে সৌখিন মানুষদের কাছে অতিরিক্ত চাহিদা থাকার কারণে বাঁশের বদলে এখন ব্যবহার করা হয় লোহার রড।শুধু বিরতুল গ্রামই না পার্শ্ববর্তী ধনুন, বাগদী, বিন্দান ও সেনপাড়া গ্রামের নারীরাও এই দোলনা শিল্পে জড়িত। পাঁচ গ্রামের প্রায় ৩শ পরিবারের নানা বয়সী সহস্রাধীক নারী দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বিরতুল ও আশপাশের গ্রামের নারীদের তৈরি দোলনা রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন নামিদামি বিপনী-বিতানসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে সরবরাহ হয়। কেউ কেউ আবার বিদেশেও রফতানি করছেন।দোলনা তৈরির নারী কারিগররা জানান, বিরতুল গ্রামের নারীরা এক সময় পরিবার চালানোর জন্য পুরোপুরি স্বামীর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিš‘ এখন আর তাদের টাকার জন্য কারও কাছে হাত পাততে হয় না।ওই গ্রামের উদোক্তারা জানান, দোলনার দাম কমে গেছে, বেড়েছে কাঁচামালের দাম। অভাব রয়েছে সরকারি সহায়তা বা প্রশিক্ষণের। সহজ শর্তে ঋণের সুযোগ নেই বলে অনেকেই বড় পরিসরে কাজ করতে পারছেন না।উপজেলার নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ফারজানা তাসলিম বলেন, ইতিমধ্যে বিরতুল গ্রামের দোলনা তৈরির উদ্যোক্তারা বিভিন্ন নামে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন। কলীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তনিমা আফ্রাদ বলেন, বিরতুল গ্রামের দোলনা শিল্পীদের উৎসাহিত করার জন্য উপজেলা প্রশাসন সবসময় তাদের সহযোগীতায় ছিল সামনের দিনগুলোতেও থাকবে। ভোরের আকাশ/আজাসাা
গ্রীষ্মের অন্যতম আকর্ষণ আম বাজারে এসেছে। রাজশাহীতে গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে আম নামানো। ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী প্রথম দিন গুটি জাতের আম বাজারে আনার কথা ছিল। কিন্তু আমের বাজার প্রথম দিনই দখলে নিয়েছে গোপালভোগ। গাছে আম পেকে যাওয়ায় চাষিরা বাজারে নিয়ে এসেছেন বলে জানা গেছে। তবে এবারও চাষিরা আড়ৎদারদের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। চাষিদের কাছ থেকে তারা ৪৮ কেজিতে এক মণ হিসেবে আম কিনছেন। কোথাও কোথাও ৫২ কেজিতে মণ ধরা হচ্ছে। অথচ আড়ৎদাররা বিক্রি করছেন ৪০ কেজিতে মণ। প্রথম দিনেই বানেশ্বর আমবাজারের দখল ছিল গোপালভোগ আমের। অথচ ঘোষিত ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ২২ মে থেকে গোপালভোগ আম বাজারে আসার কথা।এ ব্যাপারে কথা হয় ‘দেশজপণ্য’ নামের অনলাইন পোর্টালের মালিক ব্যবসায়ী মনিরুল বেলালের সঙ্গে। তিনি বলেন, বড় গাছগুলোতে আগেই আম পেকে যায়। গত বুধবার তিনি গোদাগাড়ীর কাঁকনহাটের একটি বড় গাছ থেকে আম ভেঙেছেন। সব আম পেকে গেছে।তিনি বলেন, ‘ঠান্ডা ঘরে বসে গরমের আমের ক্যালেন্ডার করলে এ রকমই হবে। ২২ মে গোপালভোগ আম নামানোর দিন ধার্য করা হয়েছে। অথচ ওই সময় আসতে আসতে গোপালভোগ আম শেষ হয়ে যাবে।’সরকারি নির্দেশনা মানছেন না ব্যবসায়ীরা: জানা গেছে, ১০ মে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় একটি নির্দেশনা জারি করে। এতে বলা হয়েছে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলায় কেজি দরে আম কেনাবেচা করতে হবে। সাধারণত আমচাষিরা তাদের উৎপাদিত আম মোকামে গিয়ে আড়ৎদার বা কোনো ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ৪০ কেজিতে মণ হিসেবে আম না কিনে অঞ্চলভেদে ৪৫ থেকে ৫২ কেজি পর্যন্ত প্রতি মণ ধরেন। এই ব্যবসায়ীরাই আবার বিক্রির সময় প্রতি মণ ৪০ কেজি দরে বিক্রি করেন। এতে আমচাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রাজশাহীর বড় আমের সবচেয়ে বাজার বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। এই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কোনো ব্যবসায়ীই কেজি দরে আম কেনাবেচা করছেন না। তারা ৪৮ কেজিতে মণ হিসাব করে আম কিনছেন।ব্যবসায়ী মানিক লাল বলেন, আম পাকার পর মণে তিন কেজি ওজন কমে যায়। আর পচা-ফাটা বাদ যাবে আরও চার কেজি আর এক কেজি আম আড়ৎদার নেবে। তাতে ঘাটতি হয়, সে জন্যই তারা ৪৮ কেজি মণ হিসাবেই আম কিনছেন।ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বললেন, ‘বানেশ্বর বাজারের আড়ৎদার বা বণিক সমিতির এটা নিয়ম। আমরা কিনছি ওইভাবে। দিচ্ছিও ওইভাবেই।’আমি চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, আড়ৎদাররা দেখে-শুনেই দাম ধরেন। এরপর ফাটা-পচার অজুহাতে প্রতিমণে বেশি নেন ৮ কেজি। চাষিরা পচা-ফাটা আম বাজারে আনেন না। তারা অতি যত্নের সাথে আম পাড়েন। তারপর বাছাই করেই সেগুলো বাজারে আনেন। এরপরও মণপ্রতি ৮ কেজি বাড়তি দিতে হচ্ছে। এক কেজি আমের দাম ৭০ টাকা ধরলে প্রতি মণে বেশি দিতে হচ্ছে ৫৬০ টাকার আম। এ যেন ব্যবসার নামে গলাকাটা। তিনি প্রশাসনকে বাজারে অভিযান চালানোর অনুরোধ করেন।জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কেজিতে ৮-১০ কেজি বেশি নেওয়া একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এই অনিয়মকে তারা নিয়ম মনে করছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই নিয়ম ভাঙতে হবে। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। আম কেজি হিসেবে কিনতে হবে এবং কেজি হিসেবেই বিক্রি করতে হবে। অন্যায় সহ্য করা হবে না।অভিযান চালানোর ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, এই অন্যায় বন্ধ করতে চাষিদের সহযোগিতার প্রয়োজন। তাদের অভিযোগ করতে হবে। তারা অভিযোগ করলে কারা বেশি নিচ্ছেন, তা জানা সহজ হবে।এ বিষয়ে এক চাষি বলেন, সব আড়ৎদার বেশি নিচ্ছেন। এটা সমিতির সিদ্ধান্ত। এটা তো গোপন কিছু না। সুতরাং প্রশাসনের সদিচ্ছা প্রয়োজন। তারা যেকোনও সময় এলেই প্রমাণ পাবেন। শুধু নির্দেশনা জারি করলেই অনিয়ম বন্ধ হবে না। কার্যকর পদক্ষেপ দরকার। কুরিয়ারের ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ: যতগুলো কুরিয়ারের পার্সেল সার্ভিস আছে, সব কটিই বানেশ্বর বাজারে। তাদের কাছে আম যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দর দ্বিগুণ হয়ে যায়। এবার প্রতি কেজি আম পাঠানোর খরচ পড়ছে ১২ থেকে ২০ টাকা। ঢাকায় ১২ টাকা, ঢাকার বাইরে দূরত্ব অনুযায়ী ২০ টাকা পর্যন্ত। কুরিয়ার ভেদে এই খরচ কমবেশি রয়েছে। একজন ব্যবসায়ী জানান, তিনি সারা বছর কুরিয়ারের মাধ্যমে তেল পাঠিয়ে থাকেন। ঢাকায় ছয় টাকা কেজি হিসাবে খরচ পড়ে। কিন্তু তাদের দাঁড়িপাল্লায় আম ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ৬ টাকা হয়ে যায় ১২ টাকা।এ ব্যাপারে বাজারের জননী কুরিয়ার সার্ভিসের বানেশ্বর শাখার ব্যবস্থাপক ইয়াসিন আরাফাত বলেন, আম কাঁচামাল। এক দিন রেখে দেওয়া যায় না। গাড়ি না ভরলেও পাঠাতে হয়। তখন খরচ বেশি পড়ে যায়। আবার অনেক সময় আম নষ্ট হয়ে গেলে জরিমানাও দেওয়া লাগে।ক্ষোভ প্রকাশ করে এক ব্যবসায়ী বলেন, সবাই একটা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। আর দুপয়সা কামিয়ে নেওয়ার সেই সময় ও সুযোগ হলো আম। সারা বছর কুরিয়ারে ঢাকায় জিনিসপত্র পাঠাই ছয় টাকা কেজি হিসেবে। আম শুনলেই খরচ লাগে ১২টাকা। এ থেকে পরিত্রাণের কোনও সুযোগ নেই।ভোরের আকাশ/এসএইচ
দূর থেকে তাকালেই মনে হয়- পথজুড়ে ছড়িয়ে আছে রঙিন ফুলের ঢেউ। কোথাও সোনালি ঝলক, কোথাও আবার বেগুনির কোমল ছায়া। বাতাস এলেই দুলছে, ঝরছে। গাছে গাছে সবুজের চোখজুড়ানো শান্ত স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে আছে। গ্রীষ্মের খরতাপেও এখানে হেঁটে গেলে গরমটা যেন আর গায়ে লাগে না।সোমবার মৌলভীবাজারের একটি প্রান্ত, কমলগঞ্জের আদমপুর বাজার থেকে শুরু হয়ে কোনাগাঁও গ্রামের দিকে কজন এগিয়ে চলছি। সঙ্গে গ্রামে গ্রামে চারণের মতো ঘুরে বেড়ানো সংগঠক ও লোকগবেষক আহমদ সিরাজ, কমলগঞ্জ উপজেলা মধুচাষি উদ্যোক্তা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ ও মধুচাষি মঙ্গল মিয়া। দীর্ঘ এই সড়ক এখন ফুলের ‘অরণ্য’। সোনালু, জারুল, কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, কাঞ্চনের মিলনমেলা। সড়কের দুই পাশে শুধু বাড়িই নয়, খোলা মাঠও আছে। এসব মাঠে এখন পাকা, আধা পাকা বোরো ফসল আহ্লাদে ঢুলুঢুলু করছে। এখন মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হয়, তাই পাতারা আরও সবুজ হয়ে উঠছে। এখানে প্রতিদিন পথিকের মন ভরিয়ে দিচ্ছে।সেদিন ‘পাহাড়ে মুক্তোর বাড়ি’ও রকম পাহাড়ঘেঁষা একটি বাড়ি থেকে ফেরার পথে কোনাগাঁওয়ে একটি বাড়ির কাছে এসে থমকে দাঁড়াতে হয়। ওখানে বাড়ির প্রবেশপথে, ফটকের কাছে একটি লাল সোনাইলগাছ ফুলে ফুলে রঙের হাট খুলে বসেছে। সবুজ গ্রামের ভেতর অমন মন উচাটন করা ফুল সচরাচর চোখে পড়ে না। ওখানে গ্রামের ভেতর জারুল, কৃষ্ণচূড়া কিংবা অন্য কোনো বুনোফুল যতটা দেখা যায়, লাল সোনাইলের অতটা দেখা মেলে না। গ্রামের ভেতরে অনেকের কাছে ফুলটি এখনো অচেনা। ওখানে বাড়িটিকে আলাদা করেছে ওই লাল সোনাইল।বাড়ির মালিক জেনেশুনেই হয়তো গাছটিকে পথের পাশে, ফটকের কাছে লাগিয়েছিলেন। এখন ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে গাছ। কিছুটা লম্বাটে, সবুজ পাতা ছাপিয়ে গোলাপি রঙের এই ফুল বাতাসকে সঙ্গে করে হেলেদুলে এখন সময় কাটায়। শহরে মাঝেমধ্যে কারও বাসাবাড়ির আঙিনায়, কারও বাড়ির পথের পাশে একা চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় দু-একটা লাল সোনাইল। বাতাস এলে পাপড়ি খসে পড়ে, পথকে রঙিন করে। ফুলগুলো এমনই, এই ফুলে চোখ রাখতে হয় পথচারীকে।কমলগঞ্জ-কুরমা সড়ক ধরে যাওয়ার পথে মধ্যভাগে আরও কিছু গাছের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে একটি সোনালি-হলুদ রঙের সোনালুগাছ। গাছটির শাখাপ্রশাখাজুড়ে সোনার মতো রঙের ফুল অসংখ্য ঝুমকা হয়ে ঝুলে আছে। গাছের পাতারা ম্লান হয়ে আছে ফুলের কাছে। বিকেলের রোদে ফুলগুলো আরও উজ্জ্বল, আরও ঝকঝকে, আরও রঙিন।এই সড়কের ইসলামপুর এলাকায় এক স্থানে লাল হয়ে আছে একটি কৃষ্ণচূড়ার গাছ। গাছটিতে যেন আগুন লেগেছে শূন্যের ওপর। ওড়নার মতো উড়ছে সেই থোকা থোকা আগুন, আগুনের লকলকে শিখা। বৈশাখের শেষ বেলার রোদে আরও জ্বলজ্বলে হয়ে আছে কৃষ্ণচূড়ার ফুল। অনেক দূর থেকেই অন্য সব গাছ ছাপিয়ে সেই তাকেই আগে চোখে পড়ে। গাছটি শুধু ওখানেই নয়, আরও অনেক জায়গাতেই এখন ‘পুষ্পপাগল কৃষ্ণচূড়ার শাখা’ দুলছে। সবুজের বুকে অমন অসহ্য সুন্দর লালে চোখজোড়া আটকে যায়। কমলগঞ্জের কোনাগাঁও, মধ্যভাগসহ আরও কিছু স্থানে ও রকমই কয়েকটি কৃষ্ণচূড়াগাছ আছে।কমলগঞ্জ-কুরমা সড়ক ধরে আসা-যাওয়ার পথে শুধু কৃষ্ণচূড়াই নয়, হঠাৎ বেগুনি রঙের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কোনো বাড়ির দিকে ঝোপের ভেতর, বাঁশবনের কাছে, খেতের পাশে একটা–দুটো জারুলগাছ। জলার্দ্র নরম বেগুনি ফুলে কী যে মায়া! বাতাস এলে একবার ওদিকে ফুলগুলো কাত হয়, একবার ওদিকে ঢলে পড়ে। সড়কের ইসলামপুর এলাকায় এ রকমই একটি গাছ আছে। গাছটিতে ঝেঁপে ফুল এসেছে।গাছটির শাখাগুলোজুড়ে ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে’ অবস্থা। পথের অনেকটা দূর থেকেই গাছটি চোখে পড়ে। হয়তো গ্রাম এখন এ রকমই, কোথাও না কোথাও ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া, কোথাও জারুল। এক-দুটো সোনালু, হয়তো লাল সোনাইল নীরবে ফুটেছে কোথাও। এখানে সবাই কত কিছু ভুলে যায়, তবু গাছগুলো সময় হলে ফুলে-ফলে জেগে ওঠে, রাঙা হয়ে ওঠে। এখনো গাছে গাছে বাংলার ঋতুকে কিছুটা কেন, অনেকটাই বোঝা যায়। ভোরের আকাশ/এসআই
রাত পোহালেই মহান মে দিবস। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। ১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওই দিন তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দিবসটি উপলক্ষ্যে দেওয়ালজুড়ে কিছু পোস্টার সাঁটানো হয়, শহরে মিছিল হয়, বক্তৃতা হয়। কিন্তু আশপাশের ক্লান্ত শ্রমিকদের জীবন তেমন বদলায় না। তারা হয়তো জানেনই না, আজকের দিনটিকে ‘শ্রমিকের অধিকার দিবস’ বলা হয়। কারণ অধিকার নিয়ে তারা ভাবেন না। তারা শুধু ভাবেন কালকের দিনটি যেন আরও একটি মজুরির দিন হয়। তাদের জীবনের গল্প নিয়েই এ আয়োজন।গাবতলীর তুরাগ নদীর তীরঘেঁষা একটি দোকানে দেখা গেল বাঁশের চিকন ফালি হাতে দ্রুতগতিতে জোড়া লাগাচ্ছেন এক যুবক। পাশে বসে মাঝবয়সী লোক গ্যালভানাইজড তার দিয়ে সেগুলো বাঁধছেন। ছোট্ট দোকানে তৈরি করা বাঁশের ঝুড়িগুলো তাদের আয়ের উৎস। ঝুড়ি তৈরির কাজ সহজ নয়। শুরুটা হয় ভালো মানের বাঁশ বেছে নেওয়ার মাধ্যমে। সেই বাঁশ চিড়ে বানাতে হয় পাতলা ফালি। যা নির্দিষ্ট সময় পানিতে ভিজিয়ে নরম করতে হয়। এরপর শুরু হয় ঝুড়ি বোনার কাজ। নকশা অনুযায়ী চলে বুনন। শাক-সবজির ঝুড়ি, মাছধরার ঝাঁকি, চাল রাখার দোন থেকে শুরু করে রঙিন শো-পিস-সবই বানান তারা। কিছু ঝুড়িতে বাড়ানো হয় সৌন্দর্য। যাতে বাজারে ভালো দাম পাওয়া যায়। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলো বছরের পর বছর কাজ করে আসছেন। বাবা-মায়ের হাতে শেখা কৌশল আজ জীবিকার অস্ত্র হয়ে উঠেছে। ঝুড়ি বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে সংসার।কারিগর সোহেল মিয়া বলেন, ‘আমাদের বানানো ঝুড়ি ছাড়া অনেক কাজই থেমে যাবে। এটি ব্যস্ত এলাকা, ঝুড়ির চাহিদা বেশি। কোরবানিতে চাপ বাড়ে। তেমন কোনো ছুটি নাই, না এলে হাজিরা নাই।’শহরের কারখানার শ্রমিকদের পাশাপাশি হস্তশিল্পের নীরব শিল্পীদের স্মরণ করা উচিত। যারা দিনের পর দিন হাতেগড়া শিল্পকর্ম দিয়ে জীবনের হাল ধরছেন। কেউ ট্রলার থেকে বালু নামান, কেউ পাথর ভাঙেন। ঝুড়ি ভরে নামান মালামাল। কেউ আবার জাহাজ-লঞ্চে মাল তোলেন বা নামান। তৈরি ঝুড়িগুলোর বড় অংশ সেখানেই বিক্রি হয়ে যায়। এই পণ্যের বড় বাজার গড়ে উঠেছে মূলত এসব শ্রমজীবী মানুষের প্রয়োজনেই। তাদের নেই কোনো ছুটি বা উৎসব। তবুও প্রতিদিন রুটিন মাফিক কাজ করে যাচ্ছেন টিকে থাকার লড়াইয়ে।ভ্যানে পেছনে গোবরের স্তূপ। সামনে চেনা পথের ধুলো। ঘমে একাকার শরীর। মুখজুড়ে বয়সের রেখা, সাদা চুলে ঝরে পড়া সময়ের ছাপ। তবুও থেমে নেই চাকা, থেমে নেই জীবনসংগ্রাম। নরসিংদীর মনোহরদীর গ্রামীণ পথে দেখা মিললো এই পরিশ্রমী বৃদ্ধের। তার কাছে মে দিবস মানে একটি দিন। প্রয়োজন আর দায়িত্বের কাছে উৎসব নিছক বিলাসিতা। তিনি যাচ্ছেন জমিতে সার প্রয়োগ করতে। যেখানে চলছে ফসলের প্রস্তুতি। এই পরিশ্রমী মানুষেরাই কৃষিকে ধরে রেখেছেন। প্রয়োজন মেটাতেই নিজ ভ্যানে করে তিনি সংগ্রহ করেছেন গোবর। ছুটছেন ফসলি জমির দিকে। আয় বেশি হোক কিংবা কম, জীবনের গতি থেমে নেই। থামেনি শ্রমের চাকা। একাই ছুটছেন।চারপাশে পাথর আর কাদা মাটি। আর মাথার ওপর নির্মম রোদ। একজন মা, পাথর ভাঙছেন অবিরাম। পাশে দাঁড়িয়ে ছোট্ট ছেলে। ছেলেটির কোলে জড়িয়ে আছে আরেকটি শিশু। কোলের শিশুটি ঘুমিয়ে গেছে। কখনো নড়ে ওঠে। ছেলেটি ভাইকে আঁকড়ে রেখেছে। তুরাগ নদীর পাড়ে গাবতলীর এই নির্দয় দুপুরে এমন দৃশ্য দেখে চোখ ভিজে আসে। মনে হয়, পৃথিবীর সমস্ত বক্তৃতা, মিছিল, ব্যানার হার মানে মায়ের ঘামেভেজা মুখের সামনে। এই মা জানেন না, মে দিবস কী? তার কাছে মে দিবস মানে পাথর ভাঙা, ঘাম ঝরানো, শিশুর মুখে ভাত তুলে দেওয়ার যুদ্ধ। পাথর ভাঙার শব্দে লুকিয়ে আছে ভালোবাসার, ত্যাগের, টিকে থাকার গান।বুড়িগঙ্গার বুকে নৌকায় ভেসেই কেটে গেছে জীবনের অনেকগুলো বছর। এখন সে বৃদ্ধ, গায়ের জোর কিছুটা কমেছে। তবুও প্রতিদিন সকালে নেমে পড়েন নদীর জলে। কারণ নৌকাই তার আয়ের উৎস। বুড়িগঙ্গার পাড়ে নৌকার পাটাতন মেরামত করছিলেন তিনি। ‘নৌকা ভাঙলে আমি ভাঙি, এটারে ঠিক না কইরা পারুম কেমনে?’ নদীর জলেই তার পথচলা। কেউ নৌকা চালিয়ে মানুষ পার করেন, কেউ মাছ ধরেন, কেউ চুম্বক দিয়ে তোলেন পানির নিচে লুকিয়ে থাকা লোহার জিনিসপত্র। তিনিও তা-ই করতেন একসময়। এখন আর পারেন না। তবুও মাঝনদী অবধি গিয়ে বসে থাকেন। নৌকার পাল তুলে তাকিয়ে থাকেন আকাশের দিকে। শ্রমিক দিবস না জানা মাঝি। ‘এইডাই আমার জীবন।’বুড়িগঙ্গার পাড়ে চোখে ঘুম আর হাতে হাতুড়ি নিয়ে হাজির জহির। লঞ্চের মরিচা ধরা লোহার গায়ে জোরে জোরে আঘাত করে যাচ্ছে। সহকর্মী রফিক পেছন থেকে টেনে নিচ্ছেন মোটা শিট, যেটা কেটে পুরোনো জায়গায় বসানো হবে। কেউ গরম আগুনে ঝালাই করছেন, আবার কেউ রঙের বালতিতে তুলি ডুবিয়ে ধাতব গায়ে রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন। সবকিছু ছাপিয়ে যা চোখে পড়ে, তা হলো মানুষের ঘাম, ক্লান্তি এবং ঠোঁটে আটকে থাকা নিঃশব্দ সহ্য। শুধু বুড়িগঙ্গা নদী নয়, যে খানেই ছোট-বড় লঞ্চ, কার্গো, বার্জ এর মত নৌযানগুলো যখন চালার অযোগ্য হয়ে পড়ে; তখন তার শুশ্রূষায় নেমে পড়েন এই শ্রমিকরা। কেউ মরিচা পড়া অংশ কেটে বাদ দেন, কেউ নতুন লোহার পাত লাগান, কেউ আবার অগ্নিশিখার মতো আগুনে ঝালাই করেন। প্রতিটি ধাপে থাকে ঝুঁকি, ধুলাবালি, বিষাক্ত গ্যাস এবং দীর্ঘ শ্রমঘণ্টা। তবুও থেমে থাকেন না তারা। যেন জীবন থামলেও, কাজ থামে না।প্রচণ্ড গরমে গেঞ্জির হাতা ছিঁড়ে চোখ বাঁচান ধোঁয়ার ঝাপটা থেকে। মুখে মাস্ক নেই, নিরাপত্তা সরঞ্জামের উপস্থিতিও কম। পায়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল কিংবা খালি পায়ে আগুনের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। ‘ভাই, এই কাজ ছাড়া আর কিছু পারি না। বাসায় বাচ্চারা তাকায়া আছে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে এই কাজ করতে হয়’। বললেন মাঝবয়সী শ্রমিক জাহাঙ্গীর। তাদের কাজগুলো দৈনিক মজুরি ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে। অনেকেই সপ্তাহে সাতদিনই কাজ করেন। কারণ কাজ না করলে পেট চলে না। অথচ স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা বা ছুটির কোনো নিশ্চয়তা নেই। রোগ, দুর্ঘটনা কিংবা বৃদ্ধ বয়স সবই তাদের জন্য নিজের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দেওয়া। মে দিবস কি তাও জানেন না তিনি।এই মে দিবসে তাদের জন্য কোনো পুষ্পস্তবক নয়, শুধু দরকার একটি সম্মানজনক জীবনের স্বীকৃতি। দরকার নিরাপদ কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি আর ভবিষ্যতের এক টুকরো নিশ্চয়তা। ভোরের আকাশ/এসআই