কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৫ ০৪:০৬ পিএম
কলাপাড়ায় খাপড়াভাঙ্গা নদের পারের মানুষের দুর্ভোগ
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা ধুলাসার-ডাবলুগজ্ঞ ইউনিয়নের খাপড়াভাঙ্গা নদের ওপর সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। নড়বড়ে সাঁকো পার হয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয় তাদের। খাপড়াভাঙ্গা নদের ওপর সাঁকোটির এক পাড়ে তারিকাটা-নয়াকাটা ও অপর পাড়ে সুরডগি-কাজিকান্দা গ্রাম।
প্রতিবছর নিজেদের টাকায় সাঁকো মেরামত করছেন তারা। বর্তমানে সাকোঁটির বাঁশ, দড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। একটি পাকা সেতু গ্রামবাসীর দাবি হলেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। খাপড়াভাঙ্গা নদের এই সাঁকো দিয়েই দৈনিক পারাপার হচ্ছে ১৫ গ্রামের মানুষ। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।
বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সাঁকোর বদলে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর সেতু নির্মাণ হয় না। একটি পাকা সেতু হলে ওই দু’ইউনিয়নের চিত্র বদলে যেতো। একবিংশ শতাব্দীর এই আত্যানিক যুগেও মাত্র নড়বড়ে সাঁকো হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র উপায়। খাপড়াভাঙ্গা নদের দৈর্ঘ্য ৫কিলোমিটার ও প্রস্থ ২৯০ফুট।
দুই গ্রামের মানুষ ছাড়া ও দু’টি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। নদীর উত্তর পাড়ের তারিকাটা, নয়াকাটা, নয়াকাটা দিওর, বৌলতলী গ্রাম, বৌলতলীপাড়া, মুসলিমপাড়া, খেচাউপাড়া, বেতকাটা, বেতকাটাপাড়া, বেতকাটাচর, সোনাপাড়া, পক্ষিয়াপাড়া, নদীর দক্ষিণপাড়ে কাজিকান্দা, সুরডগি, বরকুতিয়া, খাপড়াভাঙ্গা, মনসাতলীসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষকে এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় রাখাইন মন্দির মিশিপাড়া ও লক্ষèীর বাজার এবং শিববাড়ীয়াবাজার যেতে পার হতে হয় এই বাঁশের সাঁকো। এত বড় ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হয়ে স্কুল-মাদরাসা-কলেজগামী ছাত্রছাত্রীরা হিমশিম খায়। অসুস্থ ও গর্ববতী মায়েদের নিয়ে কষ্টের কোনো শেষ থাকে না। এত ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে ঘটেছে অহরহ দুর্ঘটনা।
নড়বড়ে সাঁকো পার হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও ইউনিয়ন ভুমি অফিস কার্যালয়ে, থানায়, কৃষি ব্যাংক যাতায়াত করেন তারিকাটা, নয়াকাটা, নয়াকাটা দিওর, বৌলতলী গ্রাম, বৌলতলীপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। জনপ্রতিনিধিরা একাধিকবার তারিকাটা ও কাজিকান্ধা গ্রামের মাঝামাঝি পয়েন্টে খাপড়াভাঙ্গা নদের ওপর পাকা সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
সম্প্রতি খাপড়াভাঙ্গা নদের পারে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় তিন শ ফুট চওড়া নদীর ওপর দুটি বাঁশ দিয়ে তৈরি বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করছে আশপাশের এলাকার মানুষজন। এ সময় কথা হয় হয় বংশাল গ্রামের বাসিন্দা রোসাংগিরিি বদ্যালয়ের শিক্ষক জালাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাঁশের সাঁকো পার হতে গিয়ে বুক কাঁপে। আমারই যখন এই দশা, তখন শিক্ষার্থীদের কী অবস্থা হবে বুঝতেই পারছেন।’ তারিকাটা পয়েন্টে একটি সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ১৫ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ বছরের পর বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
দীর্ঘ দিন ধরে এলাকাবাসী একটি সেতুর জন্য বিভিন্ন মহলে আবেদন নিবেদন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ২০০৫ সালে এলাকার লোকজনের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। আবার বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদা তুলে সাঁকোটি মেরামত করা হয়। বর্তমানে সাঁকোটির অবস্থা খুবই খারাপ।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, প্রায় ২৮ বছর ধরে এলাকাবাসীর চাঁদায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদেও পাড়ে দু’টি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষের যোগাযোগের একম মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সাঁকোটির পাশেই তারিকাটা দাখিল মাদ্রাসা, মিশ্রিপাড়া ফাতেমা হাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজের শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে নদীর এপার-ওপারে যেতে হয়। বাঁশের সাঁকো পাড় হয়ে মহিপুর থানা, কৃষি ব্যাংক, ভুমি অফিস, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এখানে সপ্তাহের একদিন শনিবার ও বৃহস্পতিবার এই হাট বসে। দূরদুরান্ত থেকে কৃষিপণ্য ও মালামাল মাথায় করে এলাকাবাসীকে এ সাঁকো পার হয়ে হাটে যেতে হয়। নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি প্রায় দুই যুগের। কিন্তু তা পূরণ হচ্ছে না। এমন অবস্থায় সেতু না হওয়ায় নদী পারাপারের জন্য এই সাঁকোই ভরসা। সাঁকোটি নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যান চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় অসুস্থ মানুষকে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকা নিয়ে আসতে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। ওই
নয়াকাটা গ্রামের স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য নোয়াব আলী হাওলাদার বলেন, দু’টি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। এত বড় ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হয়ে স্কুল-মাদরাসা-কলেজগামী ছাত্রছাত্রীরা হিমশিম খায়। অসুস্থ ও গর্ববতী মায়েদের নিয়ে কষ্টের কোনো শেষ থাকে না। এত ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে ঘটেছে অহরহ দুর্ঘটনা।
সুরডগি/ বরকুতিয়া গ্রামের ৭ম শ্রেণির /১০ম শ্রেনির শিক্ষার্থী রুবেল ও তামান্না বলেন, সরু নড়বড়ে বাঁশের সেতু পার হয়ে তারিকাটা দাখিল মাদ্রাসায় যাতায়াত করতে হয়। কেবল এই দুই শিক্ষার্থী নয়, খাপড়াভাঙ্গা নদের তীরের দু’টি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ এমন ঝক্কি পোহাচ্ছেন।
তারিকাটা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. শামসুল হক বলেন, নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন তারিকাটা দাখিল মাদ্রাসা ছাত্রÑছাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। অনেক জায়গা বাঁশ নেই। তা ধরে আসতে মাদ্রাসা আসতে ভোগ পেতে হয়। তারপর ছাত্রÑছাত্রীরা পড়াশুনা কথা চিন্তা মাদ্রাসায় আসে।
ধুলাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল রহিম জানান, জনস্বার্থে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা উচিত। আমি কয়েক মাস আগে পাকা সেতুর জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি)স্কিম করে গেছে। এখন কবে বরাদ্ধ তা জানি না।
ডাবলুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.হেদায়েত উল্লাহ জানান, আগামি মাসিক মিটিং নড়বড়ে সেতুটি আলোচনা করা হবে।
কলাপাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে(এলজিইডি)উপসহকারী প্রকৌশলী মো.আবুল হোসেন বলেন, আগামী তালিকায় ওই বাঁশের সাকোটি তালিকা পাঠানো হবে।
ভোরের আকাশ/আজাস