স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৫ ১২:২৬ এএম
জরায়ু ফাইব্রয়েডে করণীয়: কী খাবেন, কী খাবেন না
নারীদের একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলো জরায়ু ফাইব্রয়েড, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় “লিওমায়োমা” নামে পরিচিত। জরায়ুর দেয়ালে গঠিত এই অগানিক টিউমার সাধারণত মাংসপেশি ও তন্তুযুক্ত টিস্যু দিয়ে তৈরি হয়। গবেষণা বলছে, ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ নারী জীবনের কোনো এক পর্যায়ে এই সমস্যায় ভোগেন, যদিও সবার ক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দেয় না। তবে খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন আনলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সবুজ শাকসবজি ও ফলই হতে পারে প্রথম অস্ত্র:
জরায়ু ফাইব্রয়েডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফল ও সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। এসব খাবারে থাকা ফাইবার হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের প্রদাহ কমায়। পালং শাক, গাজর, মুলা, টমেটো, বেল মরিচ ও ব্রুকলি—এই সবজিগুলো বিশেষভাবে উপকারী। তাজা ফল ও শাকসবজি শরীরে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমিয়ে ফাইব্রয়েডের বৃদ্ধি রোধে ভূমিকা রাখে।
লাল মাংস নয়, বেছে নিন সাদা মাংস:
গরু ও মহিষের মাংস ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে ফাইব্রয়েড বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে। তাই এই রোগে আক্রান্ত নারীদের জন্য হাঁস-মুরগি কিংবা সামুদ্রিক মাছের মতো সাদা মাংস খাওয়া বেশি উপকারী। এতে পেটব্যথা বা অস্বাভাবিক রক্তপাতের ঝুঁকি কমে।
ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ রাখুন খাদ্যতালিকায়:
ফাইব্রয়েড আক্রান্তদের জন্য ফ্যাটি ফিশ যেমন স্যামন, টুনা, সার্ডিন খাওয়া ভালো। এসব মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে এবং ইস্ট্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
পুরো শস্য এবং বাদামি খাবার:
সাদা চাল বা আটা নয়, বরং বাদামি চাল, গম, ওটস ও বার্লির মতো গোটা শস্যভিত্তিক খাবার ফাইব্রয়েড প্রতিরোধে কার্যকর। এগুলোতে ফাইবার, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন বের করে দিতে সহায়তা করে।
গ্রিন টি: ছোট একটি কাপ, বড় উপকার:
প্রতিদিন এক থেকে দুই কাপ গ্রিন টি ফাইব্রয়েডের লক্ষণ কমাতে পারে। এতে থাকা এপিগ্যালোকাটেচিন গ্যালেট নামক উপাদান প্রদাহ কমায় এবং টিউমার সঙ্কুচিত করতে সাহায্য করে। তাছাড়া গ্রিন টি অতিরিক্ত রক্তপাতও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আপেল সাইডার ভিনেগারেও মিলতে পারে উপকার:
শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে এবং জরায়ু সুস্থ রাখতে কার্যকর হতে পারে আপেল সাইডার ভিনেগার। সরাসরি খেতে সমস্যা হলে সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে এটি।
পরিশেষে:
জরায়ু ফাইব্রয়েড চিকিৎসার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলাই হতে পারে টেকসই সমাধান। প্রাকৃতিক ও সুষম খাবারের মাধ্যমে এই রোগের জটিলতা যেমন কমানো যায়, তেমনি ভবিষ্যতে নতুন ফাইব্রয়েড গঠনের ঝুঁকিও হ্রাস পায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনাই হতে পারে প্রথম পদক্ষেপ।
ভোরের আকাশ।।হ.র