আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৫ ১২:৪৭ এএম
চীন-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে বেইজিং যাচ্ছেন ইসহাক দার
সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘাতের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সরকারি সফরে চীন যাচ্ছেন। সোমবার শুরু হওয়া এই সফরে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে চীনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন তিনি।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই–এর আমন্ত্রণে ১৯ থেকে ২১ মে পর্যন্ত বেইজিং সফর করবেন ইসহাক দার। সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, এই সফর চীন-পাকিস্তান কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও শক্তিশালী করবে এবং চলমান উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক সংলাপের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।
ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে আফগানিস্তান ইস্যু
এ সফরের অংশ হিসেবে ২০ মে তালেবান শাসিত আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুততাকিও চীন সফরে যাচ্ছেন। সেখানে চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, শান্তি এবং স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাত
গত মাসে কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন ভারতীয় পর্যটকের মৃত্যু হয়। ভারত হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করলেও কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে।
ভারত সীমান্তে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে সামরিক অভিযান শুরু করে। জবাবে পাকিস্তানও ‘অপারেশন বুনিয়ানুম-মারসুস’ নামের প্রতিরোধমূলক অভিযান চালায়। পাকিস্তানের দাবি, তারা ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান (তিনটি রাফালসহ) এবং বেশ কয়েকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানায়, এই সংঘর্ষে তাদের ১৩ সেনা সদস্যসহ মোট ৫৩ জন নিহত হয়েছেন। ৮৭ ঘণ্টা স্থায়ী এ সংঘাত শেষ হয় ১০ মে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন হওয়া এক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে।
চীনের সমর্থন
সংঘাতের সময় চীন প্রকাশ্যে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন জানায়। বেইজিংয়ে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত পাকিস্তানকে ‘আয়রন ব্রাদার’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “সংকটকালে চীন সবসময় পাকিস্তানের পাশে থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।”
কূটনৈতিক গুরুত্ব
বিশ্লেষকদের মতে, ইসহাক দারের এই সফর কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পর্যালোচনাই নয়, বরং আঞ্চলিক কূটনৈতিক সমীকরণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, আফগানিস্তানকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় কাঠামো গঠনের মাধ্যমে চীন দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।
পাকিস্তান একদিকে যুদ্ধবিরতির পরিবেশ ধরে রাখতে চায়, অন্যদিকে ভারতের ‘আগ্রাসী ভূমিকাকে’ আন্তর্জাতিক মহলে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
এই সফর শেষে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক কোন পথে যাবে, তা নির্ভর করবে চীনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নতুন কূটনৈতিক সমঝোতার ওপর।
সূত্র: দ্য নিউজ
ভোরের আকাশ//হ.র