আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫ ০৮:৩৪ এএম
ভারত-যুক্তরাজ্যের মধ্যে ৬ বিলিয়ন পাউন্ডের বাণিজ্য সম্প্রসারণের পথ উন্মুক্ত
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এক ঐতিহাসিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। প্রায় তিন বছর ধরে আলোচনার পর এই চুক্তি চূড়ান্ত হলো, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে ৬ বিলিয়ন পাউন্ডের বাণিজ্য বাড়বে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট মহল। খবর: বিবিসি
চুক্তির আওতায় যুক্তরাজ্যের গাড়ি ও হুইস্কি ভারতে কম শুল্কে প্রবেশ করবে, অন্যদিকে ভারতের পোশাক, গয়না ও রত্নপাথর যুক্তরাজ্যে আরো সাশ্রয়ে রপ্তানি করা যাবে।
চুক্তিটির আলোচনা শুরু হয়েছিল ২০২২ সালে, বরিস জনসনের প্রধানমন্ত্রিত্বকালে। চলতি বছরের মে মাসে দুই দেশ চুক্তির মূল কাঠামোতে সম্মত হয় এবং ভারতের মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন করে। তবে দেশটির সংসদে এটি এখনো অনুমোদিত হয়নি। বাস্তবায়নে আরও প্রায় এক বছর সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চুক্তির আওতায় যেসব পণ্যে শুল্ক হ্রাস পাবে তার মধ্যে রয়েছে—পোশাক, জুতা, হিমায়িত চিংড়ি, গয়না, রত্ন, গাড়ি, হুইস্কি, জিন, চিকিৎসা সরঞ্জাম, কসমেটিকস, চকোলেট ও বিস্কুট। বিশেষ করে হুইস্কির ওপর শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭৫ শতাংশে আনা হয়েছে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে তা আরও কমে ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, এই চুক্তির মাধ্যমে বছরে দেশটির অর্থনীতিতে ৪.৮ বিলিয়ন পাউন্ড যুক্ত হবে এবং সৃষ্ট হবে ২ হাজার ২০০–এর বেশি নতুন কর্মসংস্থান। বিশেষভাবে উপকৃত হবেন প্রযুক্তি, অ্যারোস্পেস, আধুনিক উৎপাদন ও সাপ্লাই চেইন খাতের কর্মীরা।
চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে—অবৈধ অভিবাসন দমন ও নিরাপত্তা জোরদার সংক্রান্ত যৌথ পরিকল্পনা। এখন থেকে দুই দেশ পরস্পরের সঙ্গে অপরাধমূলক রেকর্ড ভাগাভাগি করবে, যা নজরদারি, আদালতের বিচারপ্রক্রিয়া ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সহায়ক হবে।
এছাড়াও চুক্তিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের কোনো কর্মী যদি অস্থায়ীভাবে অন্য দেশে কাজ করেন, তবে তিনি কেবল নিজ দেশের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য অর্থ প্রদান করবেন। ভারত সরকার এই ব্যবস্থাকে ‘অভূতপূর্ব অর্জন’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
তবে চুক্তি নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এতে ভারতীয় শ্রমিকদের কারণে ব্রিটিশ শ্রমবাজারে চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডস এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “ভারতীয় কর্মীদের জন্য আলাদা কোনো কর ছাড় নেই।”
চুক্তির আওতায় শিক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও প্রতিরক্ষা খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রসার ঘটানোর বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, এক বছর আগে ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ‘টেকনোলজি সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ’ স্বাক্ষর হয়েছিল, যার মাধ্যমে টেলিকম নিরাপত্তা ও উদীয়মান প্রযুক্তিতে যৌথভাবে কাজ করার পথ সুগম হয়।
তবে এখনো যুক্তরাজ্য ভারতের আর্থিক ও আইনগত খাতে যেই প্রবেশাধিকার চায়, তা পুরোপুরি পায়নি। পাশাপাশি ব্রিটেনের ‘উচ্চ-কার্বন শিল্পে কর’ আরোপের পরিকল্পনা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মতবিরোধ অব্যাহত রয়েছে। বিষয়টি ভারতের রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রধানমন্ত্রী মোদির এটি যুক্তরাজ্যে চতুর্থ সফর। এই সফরকে ঘিরে দুই দেশের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার আশা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে বলেন, “এই চুক্তি এখন বাস্তবায়নের পথে। এটি দুই দেশের জন্যই একটি ঐতিহাসিক দিন।”
ভোরের আকাশ//হ.র