আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫ ০২:৪৩ এএম
গাজায় যুদ্ধবিরতির মাঝেও ইসরায়েলের হামলায় নিহত ৬২
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ সরবরাহের উদ্দেশ্যে ঘোষিত বিশেষ যুদ্ধবিরতির মাঝেও ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৬২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩৪ জন ছিলেন ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এর আগে গাজার তিনটি এলাকায় প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সামরিক অভিযান স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। তারা জানায়, মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে সুবিধা দিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হয়নি বলেই অভিযোগ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সূত্রের।
রয়টার্স এবং আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও একই সময় হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া গাজায় নতুন ত্রাণ করিডোর চালুর ঘোষণাও দিয়েছে তারা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খাবার ও ওষুধবাহী গাড়িবহরের জন্য একটি নির্ধারিত নিরাপদ পথ চালু থাকবে। পাশাপাশি আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ ও গাজা সিটিতে অভিযান বন্ধ রাখার কথাও বলা হয়।
এদিকে মিসরের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন আল-কাহেরা নিউজ জানায়, গাজার উদ্দেশে সীমান্ত পার হয়ে ত্রাণবাহী ট্রাক চলাচল শুরু হয়েছে। ইসরায়েলও আকাশপথে কিছু ত্রাণ ফেলেছে বলে জানায় তারা।
তবে জাতিসংঘ বলছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েল পর্যাপ্ত ত্রাণ করিডোর খুলছে না, ফলে সরবরাহ কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলিকর্তৃপক্ষ বিকল্প রুটের অনুমতি না দেওয়ায় তারা যথাযথভাবে ত্রাণ পৌঁছাতে পারছে না।
রয়টার্স জানিয়েছে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি ঘিরে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনা থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে, দাবি করে যে হামাস সমঝোতায় আগ্রহী নয়।
এর আগে, গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে ২২ লাখ মানুষের এই ভূখণ্ডে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এরপর মে মাসে সীমিত পরিসরে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।
ইসরায়েল এক্ষেত্রে দাবি করছে, গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই এবং হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবেই কিছুদিন ত্রাণ স্থগিত রাখা হয়েছিল। তবে জাতিসংঘ বলছে, গাজায় খাদ্যের অভাব প্রকট এবং তারা ইসরায়েলি বিধিনিষেধের মধ্যেও যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এদের অধিকাংশই নারী, শিশু ও বেসামরিক নাগরিক। গাজার বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় পুরো জনসংখ্যাই বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে।
ভোরের আকাশ//হ.র