আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫ ১০:০২ এএম
গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ৩০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত
ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ৩০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও শত শত মানুষ। গাজা সরকারের গণমাধ্যম দপ্তরের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস জানায়, গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৬টি গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় আশ্রয়কেন্দ্র, বসতঘর, বাজার এবং খাদ্যের সন্ধানে থাকা সাধারণ মানুষের ওপর সরাসরি হামলা চালানো হয়েছে।
শুধু গত ২৪ ঘণ্টাতেই গাজায় ১১৮ জন নিহত এবং ৫৮১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে মারা গেছেন ৭৩ জন। নিহতদের মধ্যে ৩৩ জন ছিলেন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রে খাদ্য সংগ্রহ করতে আসা সাধারণ মানুষ।
এছাড়া দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি ত্রাণকেন্দ্রের তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। গাজা শহরের পশ্চিমাঞ্চলে মুস্তাফা হাফেজ স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুতদের লক্ষ্য করেও হামলা চালানো হয়, যেখানে অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন।
সেখানে আশ্রয় নেওয়া আহমেদ মনসুর নামের একজন বলেন, “ভোররাতে ঘুম ভাঙে প্রচণ্ড বিস্ফোরণে। মনে হচ্ছিল যেন ভূমিকম্প হয়েছে। কেউ বলছে ড্রোন হামলা, আবার কেউ বলছে মিসাইল। শব্দ এতটা তীব্র ছিল যে কানে তালা লেগে যায়। আগুনে পুড়ে অনেকেই মারা গেছেন, কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারেনি।”
গাজার সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, এসব হামলা পরিকল্পিতভাবে শিশু, নারী, বয়স্ক এবং খাদ্যের সন্ধানে থাকা অসহায় জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে চালানো হয়েছে।
এদিকে গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকা থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজজুম জানান, “মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে সামান্য খাবারের আশায়। ঠিক তখনই শুরু হয় গুলির বৃষ্টি। কোনো সতর্কতা নেই। মানুষ দৌড়াতে থাকে, কিন্তু গোলাগুলির কারণে উদ্ধারকর্মীরাও সেখানে পৌঁছাতে পারছে না।”
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এপি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, জিএইচএফ পরিচালিত খাদ্য বিতরণকেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মার্কিন ঠিকাদাররা ক্ষুধার্ত জনতার ওপর তাজা গুলি এবং স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন ঠিকাদার দাবি করেছেন, এসব নিরাপত্তাকর্মীরা অনভিজ্ঞ, অপরিচিত এবং অতিরিক্ত অস্ত্রধারী। তারা কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই কাজ করছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে জিএইচএফ। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, “এই অভিযোগ আসার পরপরই আমরা তদন্ত শুরু করি। সময়োপযোগীভাবে ভিডিও ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়েছি, এপি'র প্রতিবেদন পুরোপুরি ভিত্তিহীন।”
ভোরের আকাশ//হ.র