নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৫ ১১:৪৮ এএম
ভূমি ছেড়ে দিতে রাজি জেলেনস্কি!
ইমরুল শাহেদ: লোহিত সাগরের তীরবর্তী সৌদি আরবের শহর জেদ্দায় আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইউক্রেন ও মার্কিন প্রতিনিধি পর্যায়ের আলোচনা বৈঠক। আলোচনা হবে দুইটি বিষয়ে যার একটি হলো রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠায় শর্তাবলি নির্ধারণ এবং অপরটি হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ চুক্তির খসড়া প্রস্তুত।
একদিকে চলছে আলোচনার চূড়ান্ত প্রস্তুতি, আরেক দিকে যুদ্ধ। চলমান এই যুদ্ধে অব্যাহত রয়েছে রুশ বাহিনীর জয়যাত্রা। জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধি হিসেবে গতকাল সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সৌদি আরবে পৌঁছে গেছেন।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইউক্রেনের সুমি অঞ্চল এবং রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে নতুন করে সাফল্য অর্জন করার কথা জানিয়েছে মস্কো। একই সময়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি সৌদি আরবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আলোচনার আগে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপে বসতে ‘সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
আজ মঙ্গলবার জেদ্দায় আলোচনায় বসতে চলেছেন, যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি চুক্তির জন্য একটি ‘কাঠামো’ নিশ্চিত করার জন্য জোরকদমে কাজ করছে। এখন ইউরোপের চোখও এই আলোচনার দিকে। ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে শান্তি চুক্তির শর্ত কি হতে পারে এই নিয়েই তাদের কৌতূহল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে বাগবিতণ্ডার জেরে হোয়াইট হাউজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর ইউরোপ বিনা শর্তেই তার পাশে দাঁড়ায়। ইউরোপীয় নেতারা প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে সম্মত হয়েছেন। কারণ তারা রাশিয়ার হুমকির বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তাতে তুষ্ট হতে পারেননি জেলেনস্কি। ইউরোপ থেকে তিনি অর্থ-অস্ত্র যতই পান না কেন যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে যুদ্ধ চালানো তার পক্ষে সম্ভব নয়- এমনটাই অনুভব করেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই একবার বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের যেটুকু ভূমি দখল করে নিয়েছে তার পুরোটা পুনরুদ্ধার করা যাবে না। জেলেনস্কি যদি যুদ্ধবিরতিতে দেরি করেন তাহলে তাকে গোটা দেশই হারিয়ে ফেলতে হবে। এখন ইউক্রেনের জনগণও এ বিষয়টি অনুভব করতে শুরু করেছেন যে জেলেনস্কিকে ভূমি ছাড় দিয়েই রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে হবে।
শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা সত্ত্বেও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, তাদের বাহিনী কুরস্ক সীমান্তের কাছে সুমির ছোট্ট গ্রাম নোভেনকে ‘মুক্ত’ করেছে। মস্কো কুরস্কের লেবেদেভকা, মালায়া লোকনিয়া, চেরকাসকোয়ে পোরেচনয়ে এবং কোসিৎসা গ্রাম পুনরুদ্ধারের ঘোষণাও দিয়েছে। রাশিয়া ২০২২ সালে সর্বাত্মক আক্রমণের শুরুতে ইউক্রেনের সুমির কিছু অংশ সংক্ষিপ্তভাবে দখল করে নিয়েছিল কিন্তু তারপর থেকে সেখানে কোনও অঞ্চল দখল করেনি। অবশ্য কিয়েভ এখনও রাশিয়ার নোভেনকে দখল করার দাবির বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই এলাকা দখলের ফলে রাশিয়ান সৈন্যদের একটি প্রধান ইউক্রেনীয় সরবরাহ পথ অবরুদ্ধ করার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে রোববার সন্ধ্যায় জেলেনস্কি তার ভাষণে বলেন, আমি আমাদের সমস্ত ইউনিটকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা দখলদারকে ধ্বংস করার, আক্রমণ প্রতিহত করার এবং আমাদের অবস্থান রক্ষা করার জন্য অবিচল এবং সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। তিনি বলেন, ফ্রন্ট-লাইনে শক্তিশালী অবস্থান থাকার ওপরই নির্ভর করছে কূটনীতিতে আমাদের অবস্থান কতটা শক্তিশালী হবে এবং আমরা ইউক্রেনের ফ্রন্ট-লাইনের চাহিদা পূরণ নিশ্চিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
পক্ষান্তরে জেলেনস্কি ওয়াশিংটনের সঙ্গে খনিজ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করার পরই ট্রাম্পের ক্রোধের মুখোমুখি হয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মতে, আসন্ন চুক্তিতে মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন তাতে কোনও ধরনের প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং পরিবর্তে ইউরোপকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির জন্য সাহায্য বাড়াতে বলেছে।
এমন পরিস্থিতিতেই জেলেনস্কি গত শনিবার নিশ্চিত করেন, তিনি শিগগিরই সৌদি আরব সফর করবেন এবং সোমবার ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ইউক্রেনের কূটনৈতিক এবং সামরিক প্রতিনিধিরা মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলেনস্কি এবং ট্রাম্পের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি চিৎকার-চেঁচামেচির পর্যায়ে চলে যাওয়ার পর এবং ইউক্রেনীয় নেতাকে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে বলার পর এটিই হবে মার্কিন ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের প্রথম উচ্চ-স্তরের বৈঠক।