চানখাঁরপুলে গণহত্যায় ফরমাল চার্জ দাখিল
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে গত বছর ৫ আগস্ট রাজধানীর চানখাঁরপুলে গুলি করে ছয়জনকে হত্যার ঘটনার মামলায় দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) বিচারের জন্য আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই প্রথম জুলাই অভ্যুত্থানের কোনো মামলায় ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়া হলো এবং এর মধ্য দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলো।
এদিকে এই মামলায় পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৩ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গতকাল রোববার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়ার কারণ রয়েছে। তাই তা আমলে নেওয়া হলো। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
পরে এবিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেছেন, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় আজ (রোববার) প্রথম ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়। এই ফরমাল চার্জেরভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বিচারের জন্য আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হলো।
এর আগে গতকাল বেলা ১১টার দিকে প্রসিকিউশন পক্ষ জুলাই-আগস্টে চানখাঁরপুলে দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাসসহ জুলাই আন্দোলনে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করে ফরমাল চার্জ দাখিল করে। এই ফরমাল চার্জ আমলে নিতে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিচারের জন্য আমলে নিয়ে আদেশ নেন।
মামলার আট আসামি হলেন : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম, রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। আট আসামির মধ্যে ইন্সপেক্টর মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম কারাগারে। তাদের গতকাল কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। হাবিবুর রহমানসহ অপর চারজন পলাতক।
এর আগে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনকে আসামি করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটর বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। গত ২১ এপ্রিল দাখিল করা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় আসামিগণ কর্তৃক নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে। ৯০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই শেষে ফরমসাল চার্জ আকারে গতকাল ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে প্রসিকিউশন তথা রাষ্ট্রপক্ষ।
তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, ৭৯ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে ১৯টি ভিডিও, পত্রিকার ১১টি রিপোর্ট, দুটি অডিও, বই ও রিপোর্ট ১১টি এবং ছয়টি ডেথ সার্টিফিকেট সংযুক্ত করা হয়।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
রাজধানীর গুলশানে প্রায় ১০ বছর আগে ইতালির নাগরিক এবং নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও-বিডির কর্মকর্তা তাবেলা সিজার হত্যা মামলায় তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলায় অভিযুক্ত বাকি চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুরে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলামের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন- তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল আরেফিন ওরফে ভাগনে রাসেল।খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম, তার ভাই আবদুল মতিন, শাখাওয়াত হোসেন ও সোহেল।তাবেলা সিজার হত্যা মামলায় আসামিদের মধ্যে তামজিদ আহমেদ, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল, মতিন ও শাখাওয়াত আদালতে বিভিন্ন সময়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেন। মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি কাইয়ুম ও সোহেল বিচার চলাকালে পলাতক ছিলেন। মতিন জামিনে ছিলেন, আর বাকি চার আসামি ছিলেন কারাগারে। রায় ঘোষণার দিন বৃহস্পতিবার তাদের সবাইকে আদালতে হাজির করা হয়।তাবেলা সিজার হত্যা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান ৯০ নম্বর সড়কের পশ্চিম প্রান্তে, গুলশান অ্যাভিনিউ সংলগ্ন গভর্নর হাউজের দক্ষিণ পাশের ফুটপাতে দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। তিনি ছিলেন ইতালির নাগরিক এবং নেদারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও-বিডির কর্মকর্তা।স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়, ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হত্যার দায় স্বীকার করেছে। ঘটনার পর নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আইসিসিও কো-অপারেশনের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি হেলেন দার বিক গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করা হয়।এরপর তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২৮ জুন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (ডিবি) পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। পরে একই বছরের ২৪ আগস্ট অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন তৎকালীন মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা।চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গ নাগরিককে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা।ভোরের আকাশ/আজাসা
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর মামলায় ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন।বুধবার (২ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। প্রসিকিউটর সাইমুম রেজা তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।এর আগে, গত ২৪ জুন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর লাশ পোড়ানোর মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য ২ জুলাই নির্ধারণ করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন সাইমুম রেজা তালুকদার। এ সময় আদালতে অভিযোগ গঠনের জন্য এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়। পরে শুনানি শেষে নতুন দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় যারা শহীদ হয়েছেন, তারা হলেন, সাজ্জাদ হোসেন (সজল), আস সাবুর, তানজীল মাহমুদ সুজয়, বায়েজিদ বুসতামি ও আবুল হোসেন। এছাড়া একজনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি (অজ্ঞাত)।প্রসিকিউশন জানায়, নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়।ভোরের আকাশ/এসএইচ
আদালত অবমাননার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।বুধবার (২ জুলাই) দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।এর আগে, আদালত অবমাননার এই মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ২ জুলাই দিন ধার্য করা হয়।আইন অনুযায়ী, এ ধরনের মামলায় কোনো পক্ষের জন্য সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগের বিধান না থাকলেও ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনার পক্ষে এক আইনজীবী নিয়োগ দেন আদালত।অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের পর প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আলম বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানিতে একজন অ্যামিকাস কিউরি (আদালত বন্ধু) নিয়োগ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও শেখ হাসিনা ও অপর অভিযুক্ত হাজির না হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিচারের স্বচ্ছতার স্বার্থে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানের অভিমত ট্র্যাইব্যুনাল শুনবেন বলে জানান প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম।ভোরের আকাশ/এসএইচ
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। গত বছরের জুলাই আন্দোলনে হত্যা, হত্যা চেষ্টা, ষড়যন্ত্রসহ ৫টি অভিযোগ গঠনের জন্য এ শুনানি হচ্ছে। গত ১ জুন তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।ক্ষমতাচ্যুতির প্রায় ১১ মাস পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হলো। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য তিনি যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিলেন; সেই ট্রাইব্যুনালেই তার বিচার হচ্ছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুনানি হচ্ছে।ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এ মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে মো. আমির হোসেনকে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে রাষ্ট্র।১ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ মামলার ১৩৪ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল।এ মামলায় আরেক অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ১৬ জুন অভিযুক্তদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তার সূচনা বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘এই বিচার কেবল অতীতের প্রতিশোধ নয়। এটি ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা।’হত্যা, ষড়যন্ত্রের পাঁচ অভিযোগ : জুলাই-আগস্টে ১৪০০ মানুষকে হত্যা এবং ২৫ হাজার মানুষ আহত করা হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। নিহতদের তালিকা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া অডিও, ভিডিও, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনও দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। এ মামলায় ৮১ জন সাক্ষ্য দেবেন বলে ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন তাজুল ইসলাম। এই তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, ষড়যন্ত্র, সহায়তা, প্ররোচনা, উস্কানি, সম্পৃক্ততার পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। পাঁচ অভিযোগে সুনির্দিষ্টভাবে মোট ১৩ জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা, নাতি-পুতি বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী কর্তৃক ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ, নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর আক্রমনের অংশ হিসেবে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতনে সহায়তা করেছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে বলা হয়েছে, এটি আসামিদের জ্ঞাতসারে সংঘটিত অপরাধ।শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদকে লক্ষ্য করে বিনা উস্কানিতে হত্যা, রাজধানীর চাঁনখার পুলে ছয়জনকে হত্যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া সরকার পতনের দিন পাঁচই অগাস্ট আশুলিয়ায় পাঁচজনকে গুলি করে হত্যার পর তার মরদেহ এবং জীবিত একজনকেও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়েছে ২৭টি। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৩ জনকে। এখনো পলাতক ১৩২ জন। আসামিদের মধ্যে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে মারা গেছেন একজন।গ্রেপ্তারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যারা : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সাবেক উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য আছেন ১৭ জন। তারা হলেন আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আমির হোসেন আমু, মো. আব্দুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, শাজাহান খান, দীপু মনি, গোলাম দস্তগীর গাজী, কামরুল ইসলাম, শামসুল হক, আতিকুল ইসলাম, কামাল আহমেদ মজুমদার, জুনাইদ আহমেদ পলক ও এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। সশস্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক সদস্যদের মধ্যে অন্তত ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহায়েল, পুলিশের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাবেক সহকারী কমিশনার জাবেদ ইকবাল, রাঙামাটি ট্রেনিং সেন্টারের সাবেক পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ডিএমপির মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন মোল্লা, মিরপুর বিভাগের সাবেক এডিসি মইনুল ইসলাম, বরিশাল রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন, সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, সাবেক এসি তানজিল আহমেদ, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান, গুলশান থানার সাবেক ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম, উত্তরা পূর্ব থানার সাবেক ওসি মো. মুজিবুর রহমান, ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মোহাম্মদ আরশাদ হোসেন, সাবেক উপপরিদর্শক চঞ্চল চন্দ্র সরকার ও মালেক, সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, ইমাজ হোসেন, মো. নাসিরুল ইসলাম, মো. সুজন হোসেন, মুকুল চোকদার, হোসেন আলী ও মো. আকরাম হোসেন।এ ছাড়া সাবেক সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, উত্তরা পূর্ব থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনোয়ার ইসলাম চৌধুরী, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহিনুর মিয়া, উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. বশির উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী প্রমুখ গ্রেপ্তার হয়েছেন।ভোরের আকাশ/এসএইচ