নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৪৭ পিএম
সংগৃহীত ছবি
আওয়ামী লীগের আমলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ছিলো গণভবন। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় গণভবনে বিক্ষুব্ধ জনতা ঢুকে ভাঙচুর চালালে সেটি অকার্যকর হয়ে যায়। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার ভেতরে তৈরি হচ্ছে দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের জন্য নির্মিত পাশাপাশি দুটি ভবনকে একীভূত করে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভবন দুটির মধ্যে যাতায়াতের সুবিধার জন্য নির্মাণ করা হবে দুই স্তরবিশিষ্ট একটি করিডর।
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা। তবে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জন্য টেকসই সমাধান খুঁজতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি কাজ করছে। শুরুতে যমুনা ও হেয়ার রোডের কিছু বাংলো নিয়ে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত সংসদ চত্বরের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়।
গত রোববার গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব নজরুল ইসলাম, সংসদ সচিবালয়ের সচিব কানিজ মওলা, প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল ফেরদৌস হাসান ও এসএসএফ মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুব উস সামাদসহ একটি প্রতিনিধি দল ভবন দুটি ঘুরে দেখেন। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও একাধিকবার এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন।
সংসদ চত্বরে লাল ইটের দোতলা দুটি ভবন ২০০২ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নির্মিত হয়। এ নিয়ে লুই আই কানের মূল নকশা বিকৃত করার অভিযোগ ওঠে এবং হাইকোর্ট ভবন দুটি নির্মাণকে অবৈধ ঘোষণা করে। তবে ২০২২ সালে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেয়। সর্বশেষ স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু এই ভবনগুলোতে বসবাস করতেন।
স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের জন্য নির্ধারিত দুটি বাসভবন জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম পাশে (আসাদ গেটের দিকে) অবস্থিত। পাশাপাশি অবস্থিত দক্ষিণমুখী লাল ইটের ভবন দুটির মাঝখানে একটি সীমানাপ্রাচীর আছে। দুটি ভবনই দোতলা, একই আদলে তৈরি। চারদিকে সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা। সামনে খোলা জায়গা ও বাগান আছে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে গণভবন নির্মাণ করা হয়। তবে তিনি গণভবনে বসবাস করেননি। এইচ এম এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৫ সালে গণভবনকে সংস্কার করে এটিকে ‘করতোয়া’ নাম দিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তখন তিনি গণভবন নাম পুনর্বহাল করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে সেখানে বসবাস করেন।
তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কখনো গণভবনে থাকেননি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর গণভবন সংস্কার করা হয়। ২০১০ সালের মার্চে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবার গণভবনে ওঠেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত তিনি এই ভবনে ছিলোেন।
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, জাতীয় সংসদ ভবন আধুনিক স্থাপত্যশৈলির বিশ্বসেরা নিদর্শনের একটি। এর নকশায় ব্যত্যয় ঘটলে স্থাপত্য উৎকর্ষ কমে যাবে। তিনি এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব দেন।
সরকারি সূত্র জানায়, সংস্কার খরচ খুব বেশি হবে না। ভবন দুটির সংযোগ ও নিরাপত্তা জোরদার করলেই নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হিসেবে এটি ব্যবহার করা যাবে। প্রয়োজনে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবেও এটি কাজে লাগানো সম্ভব।
ভোরের আকাশ/তা.কা