ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫ ০৯:৫৯ পিএম
সংগৃহীত ছবি
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের পর সেনাসদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে জনতার ‘অনভিপ্রেত’ ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় সোমবার দুপুর আনুমানিক ১টা ১৮ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় শিশুসহ বেশ কয়েকজন নিরীহ নাগরিক হতাহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিকটবর্তী ক্যাম্প থেকে সদস্যরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বিতভাবে আহতদের দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিশ্চিত করতে তৎপরতা চালানো হয়।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে দুর্ঘটনাস্থলে উৎসুক জনতার ব্যাপক ভিড় দেখা দেয়, যা ইভাকুয়েশন ও রেসকিউ কার্যক্রমকে বারবার ব্যাহত করে। সেনাবাহিনীর সদস্য এবং মাইলস্টোন স্কুলের স্বেচ্ছাসেবক বারবার অনুরোধ করলেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় সময়মতো আহতদের সরিয়ে নেওয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে, প্রাণহানির ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।
সেনাসদস্যরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে। উল্লেখ্য, এই উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত ১৪ সেনাসদস্য শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে বর্তমানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আইএসপিআর জানায়, উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন বিকেলের দিকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কিছু উৎসুক জনতা ঘটনাস্থল ত্যাগ না করায় উদ্ধার কাজে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ফলে একদল উৎসুক জনতার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়, যা একপর্যায়ে একটি অনভিপ্রেত ঘটনার অবতারণা করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে থেকে পেশাদারিত্ব ও সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধের সঙ্গে কর্তব্য পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান বিমানবাহিনী প্রধানের
দেশবাসীকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটির এ কে খন্দকার প্যারেড গ্রাউন্ডে বিমান বিধ্বস্তে নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আয়োজিত ফিউনারেল প্যারেডে এ কথা বলেন তিনি।
বিমানবাহিনীর প্রধান বলেন, পাইলট বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারানোর সময়ও সেটিকে নিরাপদ কোনো খালি জায়গায় অবতরণ করানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন। তবে সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিমানটি একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। জরুরি নির্গমনের প্রক্রিয়ায় দেরি হওয়ায় পাইলটকে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনার এই দুঃসময়ে ফায়ার সার্ভিস, চিকিৎসক, শিক্ষার্থী, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতারা সবাই একযোগে দায়িত্ব পালন করেছেন। দুর্ঘটনার পরপরই সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নেয়। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
হাসান মাহমুদ খান বলেন, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এরই মধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকৃত কারণ শনাক্ত করা হবে। ত্রুটি বা গাফিলতির প্রমাণ মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিমানবাহিনী প্রধান বলেন, প্রতিটি বিমানের একটি নির্ধারিত কার্যক্ষম মেয়াদ থাকে, সাধারণত ৩০ বছর। এই সময়ের মধ্যে নিয়মিতভাবে প্রস্তুতকারক দেশের নির্দেশনা অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি পুরোনো ছিল না, তবে এর প্রযুক্তি কিছুটা পুরোনো হতে পারে। তবে রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় কোনো ধরনের আপস করা হয় না।
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, এই দুঃসময়ে কেউ যেন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া তথ্য বা গুজবে কান না দেয়। একটি পেশাদার, দক্ষ ও শক্তিশালী বিমানবাহিনী আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার অন্যতম স্তম্ভ। এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার মানেই দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আঘাত।
বিমানপ্রধান এই দুর্ঘটনাকে ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও অপূরণীয় ক্ষতি’ হিসেবে উল্লেখ করে নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, বিমানবাহিনী সব সময় এসব পরিবারকে সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান করবে।
প্যারেড গ্রাউন্ডে সহকর্মী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যরা অশ্রুসিক্ত নয়নে তৌকিরকে বিদায় জানান। অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন এবং ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
ভোরের আকাশ/এসএইচ