× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

উত্তরায় সাময়িক বিমান বিধ্বস্তে নিহত ২১, আহত দেড় শতাধিক

এ শোক সইব কেমনে

নিখিল মানকিন

প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫ ০৫:২৮ পিএম

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়ে এ পর্যন্ত পাইলটসহ ২১ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। আইএসপিআর ও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে হতাহতের এ তথ্য জানানো হয়েছে। নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তবে তাদের অধিকাংশই শিশু এবং তারা মাইলস্টোন স্কুুলের শিক্ষার্থী। আজ একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। উড্ডয়নের ১২ মিনিটের মধ্যেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয় এবং পরক্ষণেই ধরে যায় আগুন। ঘটনার শুরু থেকেই সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যান এবং পরিস্থিতি উত্তরণের সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনের জন্য বিমানবাহিনী ইতোমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টা পরিষদের সকল সদস্য। উদ্ধার কার্যক্রম ও চিকিৎসাসেবার কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ।

আইএসপিআরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিধ্বস্ত হওয়া প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলটসহ ২০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৬৪ জন। এর আগে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল এ ঘটনায় ২১ জন নিহত হওয়ার তথ্য দেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে। পরে বিধ্বস্ত হয়।

সোমবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মাইলস্টোনের দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা পরিদর্শনের সময় ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন, আজ বিমানবাহিনীর একটি এফ-সেভেন বিজেআই ফাইটার এয়ারক্র্যাফট আনুমানিক একটার দিকে আমাদের মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উত্তরা শাখার দোতলা স্কুলভবনে ক্র্যাশ ল্যান্ডিং করেছে। এই দোতলা ভবনের প্রথম তলায় ছিল তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বাচ্চাদের ক্লাস। দ্বিতীয় তলায় ছিল দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। তার সাথে ছিল প্রিন্সিপালের (অধ্যক্ষের) অফিস মিটিং রুম। একটা কোচিংয়ের ক্লাস চলমান ছিল। ক্র্যাশ ল্যান্ডিং যখন হয়, তখন স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছিল এবং ওই সময় যে জায়গায় টিচার্স রুমের সাথে যে ল্যান্ডিং হয়, আঘাত করে, ওই জায়গায় বাচ্চা জড়ো হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে হয়তো কিছু অভিভাবকও ছিল।’

ফায়ার ফার্ভিস আনুমানিক বেলা ১টা ১৮ মিনিটে দুর্ঘটনার খবর পায় জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘দ্রুত আমাদের ইউনিট পৌঁছে যায় এবং উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। আমাদের মোট ৯টা ইউনিট এখানে কার্যক্রম করেছে। বর্তমানে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ অবস্থায় আছে এবং আমরা উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছি।’

হতাহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত আমরা ২১ জনের ডেডবডি উদ্ধার করেছি। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে আছে। এখানে সেনাবাহিনী এবং আমাদের ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ অন্যান্য সবাই মিলে আমাদের সহযোগিতা করেছে, আমাদের উদ্ধারকাজ চলমান আছে। উদ্ধারকাজ শেষ হলে আমরা টোটাল ক্ষয়ক্ষতির ফিগারটা আপনাদেরকে বলতে পারব।’

মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, ‘যারা নিহত, এখনো তাদের পরিচয় আমরা জানতে পারিনি, সময় লাগবে। আমাদের ধারণা, অধিকাংশই শিশু।’

আজ মঙ্গলবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় আজ মঙ্গলবার একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পাশাপাশি সকল সরকারি, বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশি মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। আহত-নিহতদের জন্য দেশের সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরই আগুন ধরে যায়
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সবুজ মিয়া বলেন, স্কুলের দোতলা ভবনের প্রবেশ মুখে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। তখন স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। কিছু শিক্ষার্থী বের হয়ে গেছে, অনেকে ভেতরেই ছিল। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরই আগুন ধরে যায়।

যুদ্ধবিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল : আইএসপিআর
মাইলস্টোন স্কুল ভবনে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান। সেটি নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে ঢাকার কুর্মিটোলার বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি একে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের পর যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে।

আইএসপিআর বলেছে, ‘দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের দোতালা একটি ভবনে অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।’

এই আকস্মিক দুর্ঘটনায় বৈমানিকসহ ২১ জন নিহত এবং ১৬৪ জন আহত হওয়ার তথ্য জানিয়ে আইএসপিআর বলেছে, আহত সবাইকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারসহ অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এবং নিকটস্থ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্থানান্তর করা হচ্ছে। এই অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী গভীরভাবে মর্মাহত এবং হতাহতদের সর্বাত্মক চিকিৎসাসহ সার্বিক সহযোগিতায় তৎপর রয়েছে। বিমানবাহিনীর প্রধান সরকারি সফরে দেশের বাইরে থাকায় সহকারী বিমানবাহিনীর প্রধান (প্রশাসন), বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও উদ্ধারকারী দল দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে।

সেনাবাহিনীর প্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগসহ সামরিক বাহিনীর, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিস দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি উত্তরণের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনের জন্য বিমানবাহিনী ইতোমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমানটি ভেঙে পড়ার পর আশপাশ থেকে ছুটে এসেছিলেন অনেকে। তবে দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে ছিলেন কলেজটির নিরাপত্তাকর্মী আকবর হোসেন। তিনি মাইলস্টোনে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা দেন।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সময় ৫ম থেকে ৮ম শ্রেণির ছুটি হয়। শিক্ষার্থীরা কেবল বের হচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দের পর তিনতলা ভবনের সামনের নারিকেল গাছ ভেঙে ভবনে ধাক্কা দেয় বিমানটি। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়।

আকবর হোসেন বলেন, তিনতলা ভবনের নিচতলা মাটির নিচে, সেখানে ক্লাস হয় না। বিমানটি সেখানে ঢুকে পড়ে। স্কুলভবন থেকে ১০০ গজের মধ্যে মোহাম্মদ জইমত আলীর এক্সক্যাভেটর মেরামতের গ্যারেজ। সেখানে চালক আপন আহমেদ কাজ করছিলেন। উড়োজাহাজ খুব নিচু দিয়ে উঠতে দেখে তারা দুজনে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। কয়েক মুহূর্ত পরেই বিকট শব্দ শুনে তারা প্রথমে ছুটে যান পাশের মেট্রোরেলের ডিপোর দিকে। পরে তারা দেখেন, স্কুল থেকে আগুন বের হচ্ছে।

এদিকে দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা যখন ক্লাসে ছিলাম, তখন বিস্ফোরণের মতো একটা শব্দ হইছে। আমরা কেউ বুঝতে পারিনি প্রথমে। তারপর হঠাৎ যখন সবাই দৌঁড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করল- তারপর স্যার আসলেন। বললেন- পুরো বিল্ডিংয়ে আগুন ধরে গেছে। তারপর দেখি ফায়ার সার্ভিস। আগুন নেভাতে বেশি সময় লাগেনি, কিন্তু ভেতরে অনেক মানুষ ছিল। ছোট বাচ্চারা ছিল। ওদেরকে বের করতে অনেক সময় লাগে’, বলেন তিনি।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ ভেঙে পড়ার পর আশপাশ থেকে ছুটে এসেছিলেন অনেকে। তারা বলছেন, ঘটনার পর তারা স্কুলমাঠে একজনকে প্যারাসুট দিয়ে নামতে দেখেছেন। ভয়াল আগুনের জন্য তারা শুরুতে কাউকে উদ্ধার করতে পারেননি।

উড়োজাহাজটি আঁছড়ে পড়ে একটি ভবনের মুখে, যেখানে শিশু ও অভিভাবকদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল। আর ভবনটিতে বেশ কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে, যেখানে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি মাধ্যমের ক্লাস হতো। ঘটনার আগে সবেমাত্র সেখানে ক্লাস শেষ হয়েছিল।

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী কাওসার বলেন, ‘একটা ফাইটার প্লেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমাদের জুনিয়র ক্যাম্পাস- এখানে ক্লাস ফাইভ থেকে এইটের ছেলেপেলেরা পড়াশোনা করে, ঠিক সেইখানে প্লেনটা পড়ছে ভাই। আমাদের ছোটো ভাইয়েরা ছিল, সবাই ছিল ভাই। ওইখানে বলতে গেলে সবাই পুড়ে গেছে, সবাই ঝলসে গেছে। আমরা ভেতরে গেছিলাম, আগুনের কারণে কাউকে বের করিতে পারি নাই। খুব খারাপ অবস্থা।’

একাদশের শিক্ষার্থী আজমাইন বলেন, ক্লাসে ছিলেন, শব্দ পেয়ে নিচে নেমে দেখেন আগুন।
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদমান তানভীর বলেন, ‘আমরা যখন ক্লাসে ছিলাম, তখন বিস্ফোরণের মতো একটা শব্দ হইছে। আমরা কেউ বুঝতে পারিনি প্রথমে। তারপর হঠাৎ যখন সবাই দৌঁড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করল- তারপর স্যার আসলেন। ১ নম্বর বিল্ডিংয়ে বিমানের কিছু অংশ হয়তো ব্লাস্ট হইছে।

বিল্ডিংয়ের সামনে পড়ছে, যার কারণে পুরো বিল্ডিংয়ে আগুন ধরায়ে গেছে। তারপর আমরা বের হইছি। তারপর দেখি ফায়ার সার্ভিস। পাশেই ফায়ার সার্ভিস আর পাশেই আর্মি ক্যাম্পও ছিল। যার কারণে সবাই দ্রুত চলে আসছে। আগুন নিভাইতে বেশি সময় লাগেনি, কিন্তু ভেতরে অনেক মানুষ ছিল। ছোট বাচ্চারা ছিল। ওদেরকে বের করতে অনেক সময় লাগে।’

স্কুলের পাশেই বাসা লতিফা বেগমের। তিনি বলেন, ‘তার ভাতিজি ক্লাস সিক্সে পড়ে। ক্লাসে শেষে সবে সে বাসায় ফেরে। আর অন্য বাচ্চারা কোচিংয়ের জন্য ওই ভবনের সামনে অপেক্ষা করছিল। আর তখনই ঘটনা ঘটে।’

ঘটনার সময় অনেকেই ছুটে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তাদের কয়েকজন বিকালে স্কুলের ঘটনা নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন।

তাদের একজন জহিরুল বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, উড়োজাহাজটা মাঠের মাঝখানে আছড়ে পড়ে। তারপর ছিচড়ে ভবনে গিয়ে ধাক্কা খায়। সেখানেই আগুন ধরে যায়।’

স্কুল ভবন থেকে ১০০ গজের মধ্যে মোহাম্মদ জইমত আলীর এক্সক্যাভেটর মেরামতের গ্যারেজ। চালক আপন আহমেদ কাজ করছিলেন। উড়োজাহাজ খুব নিচু দিয়ে উঠতে দেখে তারা দুজনে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। কয়েক মুহূর্ত পরেই বিকট শব্দ শুনে তারা প্রথমে ছুটে যান পাশের মেট্রোরেলের ডিপোর দিকে। পরে তারা দেখেন, স্কুল থেকে আগুন বের হচ্ছে।

জইমত আলী বলেন, ‘আমরা গিয়ে দেখি, একজন প্যারাসুট নিয়া নামছে। আর বহু বাচ্চা আর তাদের গার্ডিয়ানরা আগুনে পুড়ছে। সবাই ধরাধরি করে তাদের সেখান থেকে সরায়ে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু আগুনের তাপ ছিল সাংঘাতিক। স্কুলের ওই বিল্ডিংটার ভেতরে ঢোকার কোনো উপায় ছিল না। ওটার ভেতরে যারা ছিল, তাদের কী অবস্থা তা জানি না।’

ভেকু চালক আপন আহমেদ বলেন, ‘এক জায়গায় দেখি ১০-১৫টা বাচ্চা ডলা হয়ে পইড়ে রইছে। তাদের উদ্ধার করার কোনো উপায় আমাদের ছিল না। এসব বাচ্চাদের বের করা হয়েছে, তারাও সব পুড়ে গেছে। জামাকাপড় ব্যাগ সব পোড়া।’

আপন বলেন, ‘কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন চলে আসে।
মাইলস্টোন স্কুল থেকে সবে বাসায় ফিরেছিলেন দশম শ্রেণির ছাত্র শান্ত। তাদের বাসা স্কুল থেকে দুই মিনিটের হাঁটা পথ।’

শান্ত বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে তিনি ঘরের বারান্দায় গিয়ে দেখেন, স্কুল থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এরপর দৌঁড় দিয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি, স্কুলের আগে যেটা হোস্টেল ছিল, পরে সেটা ইংলিশ মিডিয়াম শাখা বানানো হয়েছে- তার ঠিক সামনে একটি বিমান ক্রাশ করেছে। দাউ দাউ আগুন বের হচ্ছে।’

শান্ত আরও বলেন, ‘ওই ভবনে ১১ থেকে ১২টি ক্লাসরুম রয়েছে। ক্লাস থ্রি থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত ইংলিশ মিডিয়ামের ক্লাস হয় এখানে। প্রতি ক্লাসে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে বলে শান্ত ধারণা দেন।’

শিক্ষার্থীদের কী অবস্থা হয়েছে, জানতে চাইলে শান্ত বলেন, ‘আমরা অনেক ছাত্রকে বের করেছি, যাদের জামা-কাপড়, হাত-পা সব পুড়ে গেছে। যারা ভেতরে ছিলেন, তাদের বের হওয়ার কোনো উপায় ছিল না।’

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স বের হচ্ছিল। এ সময় একটি হলুদ রঙের ক্রেইন ও বিমান বাহিনীর একটি বড় ট্রাক ভেতরে ঢোকানো হয়। ঘটনার পর পরই উপস্থিত হয়েছিলেন ঠিকাদার আতিকুর রহমান।

তিনি বলছেন, ‘যারা পুড়েছে, তাদের বেশিরভাগই আট থেকে দশ বছরের বাচ্চা। অনেককে হাতে ধরার মত অবস্থায় ছিল না।’

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
সেনাসদস্য-স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে জনতার ‘অনভিপ্রেত’ ঘটনার ব্যাখ্যা দিল আইএসপিআর

সেনাসদস্য-স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে জনতার ‘অনভিপ্রেত’ ঘটনার ব্যাখ্যা দিল আইএসপিআর

৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধের পর মাইলস্টোন ছাড়লেন দুই উপদেষ্টা-প্রেস সচিব

৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধের পর মাইলস্টোন ছাড়লেন দুই উপদেষ্টা-প্রেস সচিব

শ্রীপুরে কাভার্ডভ্যান-মোটরসাইকেল সংঘর্ষ, নিহত ১

শ্রীপুরে কাভার্ডভ্যান-মোটরসাইকেল সংঘর্ষ, নিহত ১

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ব্রিটিশ মন্ত্রীর শোক

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ব্রিটিশ মন্ত্রীর শোক

বিমান বিধ্বস্তে আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে চায় ভারত

বিমান বিধ্বস্তে আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে চায় ভারত

 গাইবান্ধায় সড়ক দুর্ঘটনায় চালকসহ আহত ৭

গাইবান্ধায় সড়ক দুর্ঘটনায় চালকসহ আহত ৭

সংশ্লিষ্ট

শেওড়াপাড়ায় মেট্রো স্টেশনের পাশের ভবনে আগুন

শেওড়াপাড়ায় মেট্রো স্টেশনের পাশের ভবনে আগুন

তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিক্সা (ই-রিক্সা) প্রশিক্ষণের উদ্বোধন

তিন চাকার ব্যাটারিচালিত রিক্সা (ই-রিক্সা) প্রশিক্ষণের উদ্বোধন

এ শোক সইব কেমনে

এ শোক সইব কেমনে

উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ১

উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত, নিহত ১