ছবি: সংগৃহীত
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, সংস্কারের জন্য তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করছে আইন মন্ত্রণালয়। এগুলো হলো দ্রুত ও স্বল্পতম সময়ে অল্প খরচে মামলা নিষ্পত্তি করা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং মামলার অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া। আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর প্রাথমিক খসড়ার ওপর এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা তার মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে এ কথা বলেন।
শনিবার (১৪ জুন) রাজধানীর বেইলি রোডে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন জেলার আইনজীবী সমিতির নেতা, বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের প্রতিনিধি এবং আইন মন্ত্রণালয় ও আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন। তারা আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার ওপর বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্কার কার্যক্রমের কথা বলতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংস্কারের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে অনেকগুলো কর্মসূচি নিতে পেরেছি। সংস্কার কার্যক্রমের ব্যাপারে আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। একটি হচ্ছে দ্রুত ও স্বল্পতম সময়ে অল্প খরচে মামলা নিষ্পত্তি করা। এই লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটা পরিবর্তন ইতোমধ্যে করেছি, সেটা হচ্ছে দেওয়ানি কার্যবিধির পরিবর্তন করেছি। দ্বিতীয়ত, ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধনের কাজও দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছি। আশা করি এক মাসের মধ্যে এটি আইন আকারে (অধ্যাদেশ) পাস করতে পারব।’
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সংস্কারের দ্বিতীয় লক্ষ্য উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি খুব কঠিন কাজ। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটালাইজেশনের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। বিচারকদের প্রশিক্ষণ শিক্ষাক্রমের মান উন্নত করার কথা চিন্তা করছেন। বিচার বিভাগের সবার সম্পদ বিবরণী সংগ্রহ করা হয়েছে। সেটি নিয়ে ভবিষ্যতে আরও কাজ করা হবে। এ ছাড়া আইনজীবীদের সহায়তায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দ্বিতীয় এই লক্ষ্য পূরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের তৃতীয় লক্ষ্য হচ্ছে, মামলার অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া। এই লক্ষ্য পূরণ করার জন্য আইনগত সহায়তা সংস্থার অধীনে যেসব আইন আছে, সেগুলো পরিবর্তন করতে যাচ্ছি।’
আইনগত সহায়তা প্রদান আইন সংশোধন প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় প্রথম সভায় তিনি জেনেছেন, প্রতিবছর গড়পড়তা দেশে ৫ লাখ মামলা হয়। সেখানে সরকারি আইনগত সহায়তার মাধ্যমে ৩৫ হাজার মামলা নিষ্পত্তি করা যায়। আদালতের তুলনায় এখানে নিষ্পত্তিতে সময় কম লাগে এবং ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট থাকেন। এটা বড় সুযোগ।
যদি আইনগত সহায়তা কর্মসূচিকে আরও সম্প্রসারণ, দক্ষ ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারলে মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি এক থেকে দুই লাখে নেওয়া যাবে। এক লাখে অবশ্যই পারা যাবে। তাদের লক্ষ্য দুই লাখে নিয়ে যাওয়া। কেউ মধ্যস্থতায় সন্তুষ্ট না হলে মামলা করার সুযোগ থাকছেই বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন ‘মধ্যস্থতার জন্য আসাটা বাধ্যতামূলক করছি, মধ্যস্থতার রায় মেনে নেওয়াকে বাধ্যতামূলক করছি না। কাজেই কারও অধিকার কেড়ে নেওয়ার ব্যাপার এখানে থাকছে না।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ১০ মাস অতিবাহিত হলেও শৃঙ্খলা ফেরেনি প্রশাসনে। বরং এখন বিশৃঙ্খলা চরম আকার ধারণ করেছে। চতুর্মুখী দাবি-দাওয়ার আন্দোলনে বিপর্যস্ত প্রশাসন। প্রশাসন এখন অনেকটাই স্থবির। সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছেন না নাগরিকরা।জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক আমলারা জানিয়েছেন, যেখানে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে প্রশাসন ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে যাবে, সেখানে উল্টো অরাজকতা আরও বেড়েছে। গত দশ মাসে প্রশাসনকে কাক্সিক্ষত জায়গায় নিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারেনি সরকার। যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। মূলত নেতৃত্বের দুর্বলতায় প্রশাসনে স্থিতিশীলতা আসার পরিবর্তে অরাজকতা বেড়েছে বলে মনে করছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা।‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে ঈদের আগে টানা দুই সপ্তাহ আন্দোলন করছে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়াও প্রশাসন ক্যাডারের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে দুই দিন (২৭ ও ২৮ মে) অর্ধদিবস কলমবিরতি পালন করেছেন ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতিসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম।সচিবালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকার পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে। যখন একটা হযবরল অবস্থা, ওই সময় কেন সরকারকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ করতে হবে। এটি সব পর্যায়ের কর্মচারীদের ক্ষুব্ধ করেছে। কারণ আইনটি নিবর্তনমূলক। এটির অপব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।এদিকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারী সংগঠনগুলো দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানে। অনুমোদিত অধ্যাদেশটি পর্যালোচনায় উপদেষ্টা কমিটি গঠন সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখছেন কর্মচারী নেতারা। তবে বিষয়টি ফয়সালা হয়ে গেছে এবং আর কোনো কথা হবে না- এমনটি মনে করছেন তারা। ঈদের ছুটির পর আজ রোববার প্রথম কর্মদিবস তাদের কর্মসূচি চলতে থাকবে এমনটি ঘোষণা আগেই দিয়েছেন তারা। অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম ঈদের ছুটির পর তাদের চারদফা দাবি আদায়ে আবার সচিবালয়ে যাওয়ার এবং অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক সচিব মো. আব্দুল খালেক বলেন, স্বৈরাচারের দোসর সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব ও উপ-সচিবদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের অপসারণ করে আইনের আওতায় আনতে হবে। চুক্তিভিত্তিক কর্মে নিয়োজিত বিতর্কিত কর্মকর্তাদের চুক্তি বাতিল করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সরকারের রুলস অব বিজিসেন ভঙ্গ করে গঠন করা পদোন্নতি ও পদায়ন সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি বাতিল করতে হবে। নিবর্তনমূলক অবৈধ কালাকানুন (সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ-২০২৫) বাতিল করতে হবে।আব্দুল খালেক আরও বলেন, এসব দাবি প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ। এখানে আমাদের ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই। দেশের জন্য অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা দাবিগুলো তুলে ধরেছি। কিন্তু প্রশাসনে সুবিধাভোগীরা সরকারকে ভুল বুঝিয়ে বিষয়গুলোতে কোনো পদক্ষেপ নিতে দিচ্ছে না বা কর্ণপাত করছেন না। বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম বিষয়টির শেষ দেখে ছাড়বে বলে তিনি ঘোষণা দেন।অপরদিকে বাংলাদেশ সচিবালয় নন-ক্যাডার কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবীর বলেন, ঈদের ছুটির পর আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে। প্রয়োজনে আন্দোলনটাকে আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে নিয়ে যাব। এক কথায় নিবর্তনমূলক কালো আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।সংগঠনের অপর কো-চেয়ারম্যান মো. নূরুল ইসলাম বলেন, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের আন্দোলন থেমে যায়নি এবং যাবে না। সরকার এ বিষয়ে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে আহ্বায়ক করে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছে। সরকারের এ পদক্ষেপ আমরা ইতিবাচক হিসাবে দেখছি এবং স্বাগত জানাই। তবে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে এবং এ বিষয়ে আর কথা বলতে হবে না-বিষয়টি এমন কিন্তু নয়। ঈদের ছুটির পর আজ আবার আমরা কর্মসূচি নির্ধারণ করে মাঠে নামব।কর্মচারী সংগঠনগুলোর দুই সপ্তাহের আন্দোলনের পর গত ৪ জুন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন- বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম এবং তথ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তারকে কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিতে বলা হয়েছে।উল্লেখ্য, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ ২০২৫-এ চার ধরনের অপরাধের জন্য তিন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। অপরাধগুলো হলো-১. এমন কোনো কাজ করা যাতে অনানুগত্য সৃষ্টি হয় বা এমন কাজ করা যার ফলে অন্য কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত অথবা কর্তব্যকর্ম সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে।২. সমবেতভাবে অথবা এককভাবে ছুটি ছাড়া যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কর্মে অনুপস্থিত থাকা।৩. কোনো কর্মচারীকে তার কর্মে অনুপস্থিত থাকতে, বিরত থাকতে বা কর্তব্য পালন না করার উসকানি দেওয়া বা প্ররোচিত করা এবং৪. কোনো কর্মচারীকে তার কর্মে উপপস্থিত থাকতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করা। উল্লিখিত অপরাধের জন্য তিন ধরনের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে। শাস্তিগুলো হচ্ছে- নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ, চাকরি থেকে অপসারণ এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা।এদিকে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। তখন প্রশাসনে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো থেকে আগের সরকারের নিয়োগ দেওয়া প্রায় সব কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়ার আন্দোলনে নজিরবিহীন অরাজকতা সৃষ্টি হয় প্রশাসনে। এরপর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা প্রথম দিকের বিশৃঙ্খলাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ বলেন, সরকার প্রথম শীর্ষ পদগুলোতে বাছাই করে নিজের পছন্দের লোক বসিয়েছে, এটাই সরকারের ভুল হয়েছে। আসলে দেখা উচিত ছিল দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন লোক। এই ধরনের লোকদের শীর্ষ পদে বসানো উচিত ছিল। এটা না করাতে এবং নিজেদের পছন্দের লোক বসানোর কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য তারা প্রশাসনের সংকটটা সামাল দিতে না পেরে আরও জটিল করে তুলেছে।তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর তো প্রশাসন ভঙ্গুর ছিল। ভঙ্গুর প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর জন্য যে ধরনের দক্ষ, যোগ্য এবং অভিজ্ঞ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা প্রয়োজন ছিল, সেক্ষেত্রে বাছাই করে নিয়োগ দিতে ভুল করেছে সরকার। সরকার ব্যক্তিগত পছন্দের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল। যেহেতু এদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা নেই, সবচেয়ে বড় কথা এদের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো তেমন গুণাবলি নেই। যে কারণে এরা নিজেরাই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে এবং ভীত অবস্থায় ছিল। যারা একটু কম দক্ষ, অভিজ্ঞ হয় তারা সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করে, ভুল করে, অন্যের ওপর নির্ভর করে। তারা প্রতিনিয়ত এই ভুলগুলো করে গেছে।সাবেক আমলা ফিরোজ মিয়া আরও বলেন, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা সরকারের নীতি-নির্ধারকদের সঠিক পরামর্শ দিতে পারেননি। তারা দিয়েছেন ভুল পরামর্শ। যাদের নেওয়া হয়েছে তারা মেধাবী হতে পারেন, কিন্তু প্রশাসন বিষয়ে তারা দক্ষ নন এবং প্রশাসনিক নেতৃত্ব দেওয়ার মতো গুণাবলি তাদের নেই। প্রশাসনিক সক্ষমতা, দক্ষতা ও জ্ঞান তাদের নেই। সেই কারণে আস্তে আস্তে প্রশাসনে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন আরেকটি বিপর্যয় ডেকে এনেছে- মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ কমিশন কতগুলো বিতর্কিত কাজ করেছে। তারা সংস্কার করবে এমন সব বিষয়- যার মাধ্যমে কীভাবে জনস্বার্থ রক্ষা হবে, জনগণ কীভাবে আরও বেশি সেবা পাবে। তারা জনস্বার্থের বিষয়গুলোর দিকে না গিয়ে কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে গেছে। সেটা করতে গিয়ে তারা তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। তারা বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র করে তুলেছেন। ক্যাডার, নন ক্যাডার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। সব জায়গায় একটা বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো সক্ষমতা বর্তমান সরকারের নেই। যারা কর্মকর্তা রয়েছেন তারা সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পাচ্ছেন। মনে করছেন, কোনো সিদ্ধান্ত নিলে কী বিপদে পড়বো। এই যে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে থেকে দাবি-দাওয়া জানানো হচ্ছে। তাদের সঙ্গে বার্গেনিং করে তাদের নিউট্রালাইজ করা, সেই সক্ষমতা তো দেখতে পাচ্ছি না।তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীরা তাদের (শীর্ষ কর্মকর্তা) দক্ষতা যোগ্যতা সম্পর্কে জেনে গেছেন। সেজন্য এদের আর পাত্তা দিচ্ছেন না। তারা একটা শুদ্ধ আদেশও জারি করতে পারছেন না। আদেশ জারি করে তা বাতিল করার ঘটনা অহরহই ঘটছে।নিরপেক্ষ ও দক্ষ লোকদের দিয়ে প্রশাসন সাজানোর পরামর্শ দিয়ে ফিরোজ মিয়া বলেন, আগে যারা দলীয় মার্কামারা ছিলেন, তাদের আপনি নিবেন, এনজিওতে কাজ করেছেন, নিজেদের পরিচিত ছিলেন তাদের নেবেন, তাহলে তো অবস্থা এমন হবেই। দক্ষ, যোগ্য, নিরপেক্ষ সাহসী লোক যারা জনপ্রশাসন বুঝে এমন লোক তো তারা নিচ্ছেন না। আবার সবাই যে খারাপ করছে প্রশাসনে, সেটাও না। কিন্তু তাতে তো কাজ হচ্ছে না। পুরো জনপ্রশাসন একটা স্পিরিট নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এক জায়গায় দুর্বলতা দেখা দিলে তো সেটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এখনো অনেক পদশূন্য রয়েছে। এতদিন পদ কেন শূন্য থাকবে? বলেন সাবেক এ জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ।সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, সরকারের কথা ও কাজের মধ্যে তো জনগণ মিল খুঁজে পাচ্ছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, নিরপেক্ষ নেতৃত্ব দেওয়ার তাদের যে সুবিধা ছিল- সেখানে তারা চরমভাবে ব্যর্থ।এ কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বলেন, সচিবালয়ের কাজকর্ম বলেন, পুলিশের কাজকর্ম বলেন, সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে মাঠে আছেন কিন্তু তারা কেউ কাজ করতে পারছেন না। কারণ সরকার নেতৃত্ব দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ।তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে চরম দুর্বলতা দেখা গেল, সংস্কার সংস্কার নিয়ে যে খেলা হচ্ছে সেই খেলারও কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই এতে তো জনগণের মনোযোগ থাকবে না। তখন জনগণ তাদের নানা দাবি-দাওয়া অমুক-তমুক বিষয় নিয়ে মাঠে থাকবে। সরকারকে একটা বলিষ্ঠ কঠোর নিরপেক্ষ নেতৃত্ব দিতে হবে। সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ, সমাবেশ হচ্ছে। সরকার কেন এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? এনসিপিকে আপনি বাসার সামনে মঞ্চ করে তাদের সমাবেশ করতে দিয়েছেন। ১৪৪ ধারা থাকার পর তাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের পেটানো হয়েছে। এখানে তো সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলেন সাবেক আমলা আবু আলম শহীদ খান।ভোরের আকাশ/এসএইচ
দেশে ডেঙ্গু ও করোনা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ১৬৯ জন ডেঙ্গুরোগী। করোনা শনাক্তের সর্বাত্মক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি সরকার। এর মাঝেও গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ৭ জন করোনা রোগী।শনিবার (১৪ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০১ জন বরিশালের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছে।এছাড়া, ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে ৩৫, (সিটি করপোরেশন বাদে) চট্টগ্রাম বিভাগে ২৮ জনও ঢাকা বিভাগে ৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৭৩৯ জন।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব-ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু করোনা প্রতিরোধ-সংক্রান্ত তৎপরতা প্রায় নেই বললেই চলে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে করোনার তথ্য সংগ্রহ-সংক্রান্ত কাজও ঢিমেতালে চলছে। রাজধানীর কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল ছাড়া দেশের কোথাও করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও শনাক্তের ব্যবস্থা নেই। রয়েছে কীটের তীব্র সংকট। নমুনা পরীক্ষার সুব্যবস্থা থাকলে দেশে করোনা রোগী শনাক্তের হার অনেকগুণ বেশি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।ভোরের আকাশ/এসএইচ
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, সংস্কারের জন্য তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করছে আইন মন্ত্রণালয়। এগুলো হলো দ্রুত ও স্বল্পতম সময়ে অল্প খরচে মামলা নিষ্পত্তি করা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা এবং মামলার অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া। আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর প্রাথমিক খসড়ার ওপর এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা তার মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে এ কথা বলেন।শনিবার (১৪ জুন) রাজধানীর বেইলি রোডে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন জেলার আইনজীবী সমিতির নেতা, বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের প্রতিনিধি এবং আইন মন্ত্রণালয় ও আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন। তারা আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার ওপর বিভিন্ন পরামর্শ দেন।আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্কার কার্যক্রমের কথা বলতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংস্কারের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে অনেকগুলো কর্মসূচি নিতে পেরেছি। সংস্কার কার্যক্রমের ব্যাপারে আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তিনটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। একটি হচ্ছে দ্রুত ও স্বল্পতম সময়ে অল্প খরচে মামলা নিষ্পত্তি করা। এই লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটা পরিবর্তন ইতোমধ্যে করেছি, সেটা হচ্ছে দেওয়ানি কার্যবিধির পরিবর্তন করেছি। দ্বিতীয়ত, ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধনের কাজও দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছি। আশা করি এক মাসের মধ্যে এটি আইন আকারে (অধ্যাদেশ) পাস করতে পারব।’ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সংস্কারের দ্বিতীয় লক্ষ্য উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি খুব কঠিন কাজ। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটালাইজেশনের কথা চিন্তা করা হচ্ছে। বিচারকদের প্রশিক্ষণ শিক্ষাক্রমের মান উন্নত করার কথা চিন্তা করছেন। বিচার বিভাগের সবার সম্পদ বিবরণী সংগ্রহ করা হয়েছে। সেটি নিয়ে ভবিষ্যতে আরও কাজ করা হবে। এ ছাড়া আইনজীবীদের সহায়তায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দ্বিতীয় এই লক্ষ্য পূরণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের তৃতীয় লক্ষ্য হচ্ছে, মামলার অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়া। এই লক্ষ্য পূরণ করার জন্য আইনগত সহায়তা সংস্থার অধীনে যেসব আইন আছে, সেগুলো পরিবর্তন করতে যাচ্ছি।’আইনগত সহায়তা প্রদান আইন সংশোধন প্রসঙ্গে আইন উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থায় প্রথম সভায় তিনি জেনেছেন, প্রতিবছর গড়পড়তা দেশে ৫ লাখ মামলা হয়। সেখানে সরকারি আইনগত সহায়তার মাধ্যমে ৩৫ হাজার মামলা নিষ্পত্তি করা যায়। আদালতের তুলনায় এখানে নিষ্পত্তিতে সময় কম লাগে এবং ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সন্তুষ্ট থাকেন। এটা বড় সুযোগ।যদি আইনগত সহায়তা কর্মসূচিকে আরও সম্প্রসারণ, দক্ষ ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারলে মধ্যস্থতার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি এক থেকে দুই লাখে নেওয়া যাবে। এক লাখে অবশ্যই পারা যাবে। তাদের লক্ষ্য দুই লাখে নিয়ে যাওয়া। কেউ মধ্যস্থতায় সন্তুষ্ট না হলে মামলা করার সুযোগ থাকছেই বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা।তিনি বলেন ‘মধ্যস্থতার জন্য আসাটা বাধ্যতামূলক করছি, মধ্যস্থতার রায় মেনে নেওয়াকে বাধ্যতামূলক করছি না। কাজেই কারও অধিকার কেড়ে নেওয়ার ব্যাপার এখানে থাকছে না।’ভোরের আকাশ/এসএইচ
দশম দেশ হিসেবে জাপানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকাভুক্ত করে এনআইডি দিতে চায় নির্বাচন কমিশন। আগামী জুলাই মাসে শুরু হচ্ছে এনআইডি সেবা কার্যক্রম।শনিবার (১৪ জুন) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা চূড়ান্ত করেছি- যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছি আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে জাপানে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।ইতোমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় ১৬টি মিশন অফিসে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি সেবা দেওয়া হচ্ছে।জানা গেছে, মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত সাতটি দেশে আবেদন করেছেন ৪৫ হাজার ১৮৪ জন। তাদের মধ্যে আঙুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধন সেরেছেন ২৮ হাজার ৯২৬ জন। তদন্তে বাতিল হয়েছে ৩ হাজার ৫৬৩টি আবেদন। বিভিন্ন উপজেলায় তদন্তাধীন রয়েছে ২১ হাজার ৮৮৯টি আবেদন। এ পর্যন্ত প্রবাসে ১১ হাজারেরও বেশি নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন। পর্যায়ক্রমে ৪০টি দেশে এনআইডি সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন বর্তমানে ৯টি দেশের ১৬টি মিশন অফিসে এনআইডি সেবা কার্যক্রম দিয়ে যাচ্ছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ