২০২৪ সালের বন্যা স্বাভাবিক ছিল না : প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সবার সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ধারা অব্যাহত থাকলে একটি সাহসী ও স্বনির্ভর জাতি আমরা গড়ে তুলতে পারব।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল যোগ দিয়ে তিনি একথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা যখন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করি, সঙ্গে সঙ্গে বন্যা শুরু হয়। ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, এ জায়গায় কী বন্যা হবে। অন্যান্য বছর যে বন্যা হয়, এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গার বন্যা। এটা কত গভীরভাবে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, এটার কোনো ধারণা ছিল না। আন্দাজ করা হয়েছিল যে (বন্যা) তাড়াতাড়ি চলে যাবে। তবে দিন যত যাচ্ছিল, এটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল।
তিনি বলেন, বন্যা বেড়ে যাচ্ছিল। সবাই ত্রাণ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি, সাহায্যের জন্য সারাদেশ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এটা যে কত বড় বন্যা ছিল, তা বুঝতে পেরেছি বন্যা চলে যাওয়ার অনেক পরে। বন্যায় যারা বাড়িঘর হারিয়েছিল, তাদের কোথাও যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না।
তিনি আরো বলেন, নানাভাবে প্রস্তাব আসছিল, বাড়ির জন্য টাকা দিতে হবে। টাকা দেওয়ার ব্যাপারে আমি একটু শক্ত অবস্থান নিয়েছিলাম। টাকা দিতে গেলে এই টাকার ভাগবাঁটোয়ারা অনেক রকম হয়ে যাবে। যারা প্রাপ্য, তাদের হাতে পৌঁছাবে না। তখন প্রস্তাব এসেছিল আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে করার। সেই প্রকল্পের বিষয়ে জানা ছিল না, তবে নামটা জানা ছিল। তখন ভাবলাম যে এটা কী করা যায়। পরে জানলাম, এটা সেনাবাহিনী করবে। তখন স্বস্তি পেলাম, আসলে টাকাটা সঠিকভাবে ব্যবহার হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, সদস্য ও সমর্থকরা যতক্ষণ না জুলাই বিপ্লবে নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো শুরু করে, দুঃখ প্রকাশ না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা শান্তি পাবে না।জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার (১ জুলাই) শফিকুল আলম আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লেখেন, আমরা মাটি থেকে আপনাদের কুৎসিত প্রভাবের দাগ মুছে ফেলব এবং তা রক্ত দিয়ে ধুয়ে ফেলব। আপনারা কখনো শান্তি পাবেন না- যতক্ষণ না শহীদ ও আহতদের প্রতি সম্মান দেখান, যতক্ষণ না আপনি ‘দুঃখিত’ বলেন। তিনি লেখেন, আমরা অপেক্ষা করেছি প্রায় ১০ মাস-যাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, সদস্যবৃন্দ এবং তাদের সমর্থকরা দুঃখ প্রকাশ করে এবং একটি বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টায় আমাদের পাশে দাঁড়ায়। কিন্তু গত বছরের জুলাই থেকে আপনারা যা করেছেন, তা হলো শহীদদের নিয়ে উপহাস, আমাদের সংগ্রামকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং ১৭ কোটি মানুষকে ‘জঙ্গি’ বলে কলঙ্কিত করেছেন- এই আশায় যে, আপনার ঔপনিবেশিক প্রভুরা এসে আবারো আপনাদের হাতে দেশ তুলে দেবে, যেন লুণ্ঠন ও বিশৃঙ্খলার আরেকটি অধ্যায় শুরু করতে পারেন।তিনি আরও লেখেন, দুঃখিত, এবার আর তা হবে না। জুলাই আমাদের সাহসী করেছে। জুলাই আমাদের শিখিয়েছে প্রতিকূলতার মুখেও মাথা তুলে দাঁড়াতে। জুলাই আমাদের ডিএনএতে স্থায়ীভাবে এক বিরল সাহসের জিন প্রবেশ করিয়েছে। আমরা আর আগের মতো নই।শফিকুল আলম বলেন, জুলাই আমাদের শিখিয়েছে হাল না ছেড়ে ঝড়ের মতো গুলির মধ্যেও দাঁড়িয়ে থাকার দৃঢ়তা। জুলাই আমাদের ভুলতে দেয় না আমাদের শহীদদের, যাদের আপনারা নির্মমভাবে হত্যা করেছেন; যাদের চোখ উপড়ে নিয়েছেন, যাদের আত্মাকে ছিন্নভিন্ন করেছেন।আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি আরও লেখেন, আপনাদের সঙ্গে কখনো শান্তি হবে না- যতক্ষণ না আপনি ‘দুঃখিত’ বলেন, যতক্ষণ না আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার হাতে রক্ত দেখতে পান।মানবতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রেস সচিব লেখেন, আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে লড়ব- আমাদের জমিতে, নদীতে, পাহাড়ে। আমরা লড়ব ভার্চুয়াল জগতেও। আপনারা গণহত্যার সহযোগী ও মানবাধিকারের ডাকাত, আমরা আপনাদের মুখোশ খুলে ফেলব।ভোরের আকাশ/এসএইচ
রাজধানীর হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার বর্ষপূর্তিতে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাজধানীতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।এ সময় ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। বাংলাদেশে আছে ছিনতাইকারী।’আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘জঙ্গি নেই, এখন ঠেকাতে হবে ছিনতাই। জঙ্গি থাকলে না জঙ্গি নিয়ে ভাবব।’ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময় জঙ্গি নাটক সাজিয়ে ছেলেপেলেদের মারছে, কিসের জঙ্গি?’হলি আর্টিজান হামলা তাহলে সাজানো ঘটনা ছিল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে সাজ্জাত আলী বলেন, ‘ওটা সম্পর্কে আমি জানি না। তবে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নেই। বাংলাদেশে পেটের দায়ে লোকে ছিনতাই করে।’ভোরের আকাশ/এসএইচ
চ্যালেঞ্জের মুখে ফুল গিয়ারে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। আমি জানিয়েছি পুরোদমে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।সিইসি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তাকে অবহিত করা হয়েছে যে, ভোটের প্রস্তুতি এখন ফুল গিয়ারে চলছে।এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই সময় ধরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যথা সময়ে নির্বাচনের তারিখ এবং সিডিউল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।জাতীয় নির্বাচনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক চলছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি সাফ জানিয়ে দেন, প্রধান উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে তো কিছু বলছেন না, তিনি জাতীয় নির্বাচনের কথাই বলে যাচ্ছেন। আমাদের মূল ফোকাস জাতীয় নির্বাচন।সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন সিইসি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৈঠকটি ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ। প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষ এবং আমিও নিরপেক্ষ। এই মুহূর্তে নির্বাচনটা আলোচনার কেন্দ্রে। সৌজন্য সাক্ষাতে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আরো পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্যানুসন্ধান শুরুর কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই পাঁচজনের তিনজন এনবিআরের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির ‘নেতৃত্বে’ ছিলেন।মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুদকের জনসংযোগ দপ্তরের সহকারী পরিচালক তানজির আহমেদ সাংবাদিকদের পাঁচ কর্মকর্তার দুর্নীতির তথ্যানুসন্ধানের তথ্য দেন। এর আগে রোববার ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তথ্যানুসন্ধান শুরুর কথা বলেছিল সংস্থাটি তাদের মধ্যে পাঁচজনও এনবিআরের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচির সামনের সারিতে ছিলেন। নতুন করে তথ্যানুসন্ধানের মুখে পড়া পাঁচ কর্মকর্তা হলেন- এনবিআরের অতিরিক্ত কমিশনার ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য আব্দুল রশীদ মিয়া , সদস্য লুতফুল আজীম, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, উপ কর কমিশনার ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম এবং যুগ্ম কমিশনার ও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সদস্য মো. তারেক হাছান।দুদকের নথি বলছে, এনবিআরের কিছু অসাধু সদস্য ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকির সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও এনবিআরের কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হতে করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন বলেও অভিযোগ আছে। এক্ষেত্রে প্রতিবছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা ঘুষ না পেয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার মিথ্যা মামলা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিককে হয়রানি করেন বলে জানা যায়। নথিতে বলা হয়, অনেক করদাতা আগাম কর দেন আবার কেউ কেউ বেশি কর দেন নিয়ম হচ্ছে, বাড়তি কর দাতাকে ফেরত দিতে হয় কিন্তু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, করের বাড়তি টাকা ফেরত পেতে আরও অন্তত অর্ধেক টাকা ঘুষ বা উপহারে খরচ হয় অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তারা করের টাকা ফেরত দিতে নিজেরাও কামিয়ে নিচ্ছেন মোটা টাকা। অনুরূপভাবে বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে চাকরির সময় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক, ভ্যাট ও ক্ষেত্র বিশেষে আয়কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়ে ও নিজে লাভবান হয়ে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে দুর্নীত, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, এমন অভিযোগও রয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যানের অপরসারণ দাবিতে এক সপ্তাহের কলম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি ও সবশেষ দুই দিনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালনের পর সোমবার থেকে কাজে ফেরেন আন্দোলনকারীরা। এনবিআর কর্মকর্তাদের ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ দ্বিতীয় দিন রোববার কঠোর অবস্থান নেয় সরকার এনবিআরের সেবা ‘অত্যাবশ্যকীয়’ ঘোষণা করে আন্দোলনকারীদের কাজে যোগ দিতে হুঁশিয়ারি আসে। সেদিনই ছয় এনবিআর কর্মকর্তার ‘দুর্নীতির’ তথ্যানুসন্ধান শুরুর তথ্য দেয় দুদক। একই দিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, তাতেও আর বসেননি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ কমপ্লিট শাটডাউন চালু রাখায় তিনি আলোচনা থেকে সরে দাঁড়ান। এদিন সংকট সমাধানে পাঁচ উপদেষ্টাকে নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করার কথা জানায় সরকার। দিনভর নানা নাটকীয়তার পর রাতে ব্যবসায়ীদের বেশ কয়েকটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন অর্থ উপদেষ্টা সেখানেই মেলে সমাধানের সূত্র। ওই বৈঠকে ‘ইতিবাচক আশ্বাসের’ ভিত্তিতে ব্যবসায়ী সমিতির নেতাদের মধ্যস্থতায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ শাটডাউন কর্মসূচি তুলে নেয়। ভোরের আকাশ/এসএইচ