জাতিসংঘে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ড. ইউনূস
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৫ ১২:২৭ এএম
মিয়ানমার-আরাকান আর্মির ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ সৃষ্টি করতে হবে
জাতিসংঘের অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভাষণ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বললেন, রোহিঙ্গা সংকটের মূলে মিয়ানমার—সমাধানও সেখানে পাওয়া যাবে; তাই মিয়ানমার ও আরাকান আর্মির ওপর আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর চাপ দরকার যাতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা যায়।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ইউনাইটেড নেশনস সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গণহত্যা শুরু হওয়ার আট বছর পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা থামেনি। সংকট নিরসনে যথেষ্ট উদ্যোগ নেই, এবং আন্তর্জাতিক তহবিলও উদ্বেগজনকভাবে ঘাটতি নিয়ে পড়ে আছে।’
ড. ইউনূস বলেছেন, তহবিল সংকট কাটানোর সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ এবং কার্যকর উপায় হলো দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু করা—কারণ আন্তর্জাতিক সংরক্ষণে থাকা অতিরিক্ত ব্যয় প্রয়োজন হয়। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গারা সবসময়ই ঘরে ফিরে যেতে চেয়েছে; বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে সংঘাত এড়াতে যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের প্রাথমিকভাবে প্রত্যাবাসনের সুযোগ দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবের কথাও তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, বাংলাদেশের উপর আর্থিক, সমাজ ও পরিবেশগতভাবে বড় বোঝা পড়েছে এবং রাখাইন থেকে বাংলাদেশে মাদকের প্রবাহসহ সীমান্ত বিমুখ অপরাধমূলক কার্যকলাপের কারণে সামাজিক কাঠামো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি জানান যে, দেশের উন্নয়নগত চ্যালেঞ্জ—উদাহরণস্বরূপ উচ্চ বেকারত্ব ও দরিদ্রতা—ব Consider করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে নিয়মিতভাবে কর্মসংস্থান দেওয়া কঠিন।
বক্তব্য শেষ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘বিশ্ব আর রোহিঙ্গাদের বাড়ি ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে পারে না—আজই আমরা সবাই একসাথে বসে এই সংকটের স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করব’ এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন।
রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য তিনি সাত দফা সুপারিশ উপস্থাপন করেন — সংক্ষেপে সেগুলো হলো:
1. রাখাইনে যুক্তিসংগত স্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের একটি বাস্তব রোডম্যাপ তৈরি করা;
2. রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ ও তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমার ও আরাকান সেনাবাহিনীর ওপর কার্যকর আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করা — বিশেষভাবে যারা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত বা সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ নেওয়া;
3. রাখাইন অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সমর্থন একত্রিত করা এবং পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি স্থাপন করা;
4. রাখাইনের সামাজিক ও শাসনব্যবস্থায় রোহিঙ্গাদের টেকসই একীকরণ নিশ্চিত করার জন্য আস্থা নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা;
5. যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার পূর্ণ অর্থায়নের জন্য দাতারা একসঙ্গে এসে অনুদান যোগানো;
6. জবাবদিহিতা ও পুনরুদ্ধারমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা;
7. মাদক-অর্থনীতি ভাঙ্গা এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
উল্লেখ্য, ড. ইউনূসের ভাষণটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রোহিঙ্গা সমস্যার ন্যূনতম খরচে টিকশা এবং দ্রুত সমাধানের প্রয়োজনীয়তা উপর জোর দেয়। বাংলাদেশের পক্ষে তিনি বৈশ্বিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধানে জোর দিয়েছেন।
ভোরের আকাশ।।হ.র