পাহাড়ে আবার পুরনো খেলা শুরু হয়েছে: হাফিজ
পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার পুরনো খেলা শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, সেখানে ভারতীয় পতাকা উঠতো বহু বছর আগে থেকেই। কেবলমাত্র শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেখানে বাঙালিদেরকে পাহাড়ি এলাকায় পুনর্বাসিত করার পরে জনসংখ্যার মধ্যে একটা ব্যালেন্স এসেছে, যার ফলে এখন আর তারা ভারতের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারছে না।সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের উদ্যোগে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নাই’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমান ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। তিনি বাংলাদেশের অখণ্ডতাকে রক্ষা করেছেন। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সবসময় পতাকাকে উড়িয়ে রেখেছেন।নির্বাচন নিয়ে হাফিজ বলেন, যারা বলছে যে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না, আমরা তাদেরকে বলতে চাই, বিএনপি কোনো দুর্বল দল নয়। কারা নির্বাচন হতে দেবে না, ইনশাল্লাহ আমরা রাজপথে দেখতে চাই। ১৭ বছরের আত্মত্যাগ তো ব্যর্থ হতে পারে না। আজকে আমরা বাংলাদেশের সরকার, অন্যান্য রাজনৈতিক দল, যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, আওয়ামী লীগ—সবাইকে মেসেজ দিতে চাই, জিয়াউর রহমান আজ নেই, কিন্তু তার দল বিএনপি এখনো বেঁচে আছে। ইনশাল্লাহ ফেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচন হবে।হাফিজ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ যে এখনো নির্বাচনী ম্যাপের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছে না, তার একটি কারণ বর্তমান প্রশাসন। এখানে স্বৈরাচারের দোষীরা এখনো বসে আছে, এদেরকে সরানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং এরা থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি জানিয়েছি, আজকে আবারো জানিয়ে দেবো, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থেই বর্তমান প্রশাসন ব্যবস্থাকেও নিরপেক্ষ করতে হবে। আমরা স্বৈরাচারের দোসরদের মাঠে রেখে নির্বাচনে যেতে পারি না।পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে পারে না, এ দেশের জনগণ এ সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। যারা পিআর নিয়ে আন্দোলন করছেন, তাদেরকে বলব, জনগণের কাছে যান। আপনারা ম্যানিফেস্টোতে, ইশতেহারে বলুন যে, আমরা সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চাই। যদি জনগণ আপনাদেরকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেয়, তাহলে আপনি এই ব্যবস্থা চালু করবেন। আমরা মাথা পেতে নেব। কিন্তু এইভাবে জনগণের উপর দুই-তিনটি রাজনৈতিক দল, ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে আগত বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে এই ধরনের সিস্টেম চালু করা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে। আমরা দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি কখনোই এটিকে সহ্য করব না। জনগণের উপর অত্যাচার করে নিজেদের স্বার্থে বা দলীয় স্বার্থে অদ্ভুত নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু হতে দিতে পারি না।হাফিজ আরও বলেন, এনসিপি তাদেরও আওয়ামী লীগের রোগে ধরেছে। আওয়ামী লীগ যেমন দাবি করে, তারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছে। এনসিপির সদ্য সাবালক ছাত্ররাও বলতে চায় যে, শেখ হাসিনা সরকারের নাকি তারা পতন ঘটিয়েছে। বিএনপির ৫৮৮ জন সদস্য ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের দেড় মাসের সংগ্রামে জীবন দিয়েছে। এখন তারা মনে করে, তারা হল রাষ্ট্রের কর্ণধার, তাদের এই দায়িত্ব দেশকে ঠিক করার। কিছুদিন আগে ডাকসু নির্বাচন হলো, এনসিপির যারা ছাত্র, তারা একশো ভোটও পায়নি। তারা এখন বলছে, পিআর না হলে নির্বাচনই হবে না।হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস সাহেবকে আমরা সম্মান করি, তিনি দেশের গৌরব। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি সফলতার মুখ দেখাতে পারেননি। সফলতা পান না, ব্যয় সংকোচন তো করতে হবে। ১০৪ জনকে নিয়ে কেন জাতিসংঘে গেলেন? ১০ মিনিটের ভাষণ দেবেন। আমি জাতিসংঘে দুবার গিয়েছি, এই ধরনের মিটিংয়ে। আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছি।তিনি আরও বলেন, এই ধরনের অধিবেশনে ১০৪ জনকে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সপেয়ারের অর্থের অপচয়। প্রধান উপদেষ্টা প্রেস টিমের পাঁচজন গিয়েছেন, অন্যান্য সাংবাদিকরা তো গিয়েছেন। গত বছর তিনি ৫৪ জন নিয়ে গিয়েছিলেন, এটা গ্রহণযোগ্য ছিল, কিন্তু ১০৪ জন নিয়ে যাত্রা মানানসই নয়। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, তাই এমন হচ্ছে।তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এর চাইতেও বেশি প্রতিনিধি দল নিয়ে জাতিসংঘে বেড়াতে গিয়েছেন, কখনো দিনের পর দিন বাংলাদেশ বিমানের এয়ারক্রাফটে, কখনো ফিনল্যান্ডে, কখনো ইংল্যান্ডে, কখনো যুক্তরাষ্ট্রে। মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ, সিঙ্গাপুরের লিকওয়ান ইউ তারা সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক হলেও এমন করেননি। কিন্তু দরিদ্র দেশে মানুষ বিমান ব্যবহার করে ঘন্টার পর ঘন্টা টাকা ফ্রি দিচ্ছে। বাংলাদেশর মানুষ উদারচেতা হলেও সরকার কি করছে তা জানতেই পারছে না। শেখ হাসিনার পতনের পর কিছুটা প্রেস ফ্রিডম এসেছে, আমরা জানতে পারি, সরকার ও সরকার প্রধানরা কি করছে। আওয়ামী লীগের লুণ্ঠন সীমাহীন, এমন কাহিনী মাঝে মাঝে বের হচ্ছে। একজন প্রতিমন্ত্রীর ৩৬০টি বাড়ি রয়েছে, লন্ডনে ২০০, দুবাই ও আমেরিকায়।জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।ভোরের আকাশ/জাআ