বিএনপি-জামায়াতের ভিন্ন আমেজের ঈদ

বিএনপি-জামায়াতের ভিন্ন আমেজের ঈদ

এম. সাইফুল ইসলাম

প্রকাশ : ৩ দিন আগে

আপডেট : ৩ দিন আগে

বিএনপি-জামায়াতের ভিন্ন আমেজের ঈদ

বিএনপি-জামায়াতের ভিন্ন আমেজের ঈদ

আওয়ামী লীগ সরকারের সীমাহীন রাজনৈতিক নিপীড়নে গত দেড় দশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ঈদ উদযাপন করতে পারেননি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। তবে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবার বেশ ফুরফুরে মেজাজে ভিন্ন আমেজে ঈদ উপভোগ করছেন দল দুটির নেতাকর্মীরা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে দল দুটির জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়েও নেমে পড়েছেন।

বিএনপি ও জামায়াত নেতারা বলছেন, বিগত সরকারের আমলে তারা পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন তো দূরের কথা গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে থাকতে হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ‘ফ্যাসিস্ট’ শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরবে বলেও মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, শেখ হাসিনা দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। কোনো দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম হলে ভিন্নমতের মানুষেরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন না। বাংলাদেশ তার প্রমাণ স্পষ্ট। মামলা-হামলা আর নির্যাতনে আমরা উৎসব অনুষ্ঠানও পালন করতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ায় এখন দেশে মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। যে কারণে গণতন্ত্রকামীদের জন্যে এবারের ঈদটি ভিন্ন আমাজের। প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ পেতে তিনি দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করেন।

জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, কথিত মামলায় শীর্ষ নেতাদের সাজা, নিবন্ধন বাতিল আর দেশব্যাপী ফ্যাসিস্টদের মামলা-হামলায় জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ নির্যাতন করা হয়েছে। কিন্তু দিন শেষে ফ্যাসিস্টের পতন হয়েছে। ছাত্র-জনতার ত্যাগের মাধ্যমে আমরা আবারো ঈদ স্বাভাবিক ভাবে পালন করতে পারছি। যাদের ত্যাগের বিনিময়ে দেশে এখন আমরা সুফল ভোগ করছি তাদের চাওয়া বাস্তবায়নে তিনি জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান।

২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ক্ষমতার শেষ ভাগে বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১/১১’র প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। সেই থেকেই মূলত বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের অনেকেই এলাকা ছাড়া হয়ে যায়। সেই পরিস্থিতির কিছুটা উত্তরণের পর ২০০৮ এর ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে হেরে যায় এই রাজনৈতিক জোটটি। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের শুরুর দিকে সরকার গঠনের পর থেকেই বিএনপি-জামায়াতের ওপর হস্তখড়গ নেমে আসে। দলের শীর্ষ নেতাদের নামে একেরপর এক মামলা দেওয়া শুরু হয়। বিশেষ করে বিএনপি শীর্ষ নেতাদের দমন আর অপরাধী প্রমাণে দুর্নীতি দমন কমিশন বিশেষ অভিযানে নামে। আর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের নামে যুদ্ধাপরাধ মামলা দেওয়া শুরু হয়।

অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগোতে থাকে সরকার। নির্বাচন ব্যবস্থা নিদেজের নিজেদের কব্জায় নেয়ার অংশ হিসেবে ২০১১ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় দেয়। এছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমেও এ সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তির পর বিএনপি জামায়াত আন্দোলন শুরু করে। দল দুটির অভিযোগ ছিল মূলত ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে সরকার আদালতের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলুপ্তি করে। ক্রমেই বিএনপি জামায়াত জোটগতভাবে মাঠের আন্দোলনে সক্রিয় হয়।

এছাড়া এর আগে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট এক রায়ের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ বলে রায় দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ব্যাপক আন্দোলন করে জামায়াত। একদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল অন্যদিকে শীর্ষ নেতাদের নামে যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় আর নিবন্ধন বাতিলের পর অনেকটা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠে জামায়াত। পাশাপাশি একতরফা নির্বাচন প্রতিরোধে মাঠে নামে বিএনপি। তারপরও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি জামায়াতের বয়কটের মাধ্যমে একতরফা ভোট করে ফের সরকোর গঠন করে আওয়ামী লীগ। ব্যাপক মামলা ও হামলার শিকার হতে থাকে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এই ৫ বছর বিএনপি জামায়াতের বেশিরভাগ নেতাকর্মী পালিয়ে এবং অনেকে জেল জীবন পার করেন।

বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা বলছেন, সেই সময়ে পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে ‘আপসহীন’ খেতাবপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কথিত দুর্নীতির মামলায় জেল দেওয়া হয়। এছাড়া ১/১১ পর থেকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। আর জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর করা হচ্ছে একেরপর এক। দল দুটির এ বাজে অবস্থার মধ্যে শেষ পর্যন্ত ড. কামাল হোসেনকে ‘ঈমাম’ মেনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ভোট করে বিএনপি-জামায়াত জোট। কিন্তু এ নির্বাচনেও বেশিরভাগ আসনে দিনের ভোট রাতে করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ফের সরকার গঠন করে। কিছুটা স্থমিত হয়ে পড়ে বিএনপি জামায়াতের রাজনীতি। এ মাঝে করোনা মাহামারি শুরু হয়। সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ২০২২ সালের শেষভাগ থেকে ফের মাঠে নামে বিএনপি জামায়াত। আলাদা প্লাটফর্ম থেকে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি দল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের একতরফা ভোটের পথে হাঁটলে সে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি জামায়াতসহ অন্যরা। নির্বাচনের আগে বেশ বড়সড় আন্দোলন গড়ে তুললেও পুলিশি তৎপরতায় তা পণ্ড হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ফের একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

ক্ষমতায় আসার ৬ মাস পরপরই আন্দোলন শুরু করে দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। কোটা বাতিলের দাবিতে ওই আন্দোলন শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তা সরকার পতন আন্দোলনে গিয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন নিশ্চিত করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। এ দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময়ের যাত্রায় বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা স্বাভাবিকভাবে কোনো জাতীয় বা ধর্মীয় উৎসব পালন করতে পারেনি। কারণ, ওয়ার্ড বা ইউনিট থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নেতাকর্মীদের নামে রয়েছে নানা ইস্যুতে মামলা। পতিত আওয়ামী লীগের পতনের পর এবারই প্রথম ঈদ। আসন্ন এ ঈদে এবার বিএনপি-জামায়াত বা সমমনা দলের নেতাকর্মীরা এবার কীভাবে ঈদ উৎযাপন করছেন তা জানতে কথা হয় দল দুটির তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, গত বছরেও ঈদ উৎযাপন তো দূরের কথা স্বাভাবিক জীবনে ছিলাম না। কারণ আমি একাধিক মামলার আসামি ছিলাম। এছাড়া আসামি না হলেও পুলিশ যে কাউকে ধরে আসামি করতো। এবারের প্রেক্ষাপট একবাবে ভিন্ন। অসম্প্রাদায়িক বাংলাদেশে আমরা ব্যতিক্রমভাবে এবার ঈদ করতে যাচ্ছি। এটি গণতান্ত্রিক সুবাতাসের ঘ্রাণ। আমি যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সেখানেই নেতাকর্মীদের নিয়ে এখন আমার সময় কাটছে।

এ বিষয়ে যশোর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি গোলাম কুদ্দুস দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, দীর্ঘ দেড় দশক আমরা ঈদের সময় এলাকায় যেতে পারেনি। কারণ, আমাদের নেতাকর্মীদের সবারই নামেই ছিল মিথ্যা মামলা। গত বছরের ঈদের সময়ও আমরা নামে ১২টি মামলা ছিল। শুধুমাত্র গত বছরই নয়, গত ১৬ বছরেও চিত্র একই। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শেখ হাসি সরকারের পতনের পর দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরছে। যার সুফল আমাদের নেতাকর্মীরা পেতে যাচ্ছেন। জেলার সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে নানা মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শুরু করেছেন বলেও জানান গোলাম কুদ্দুস।

সাতক্ষীরার কলারোয়ার ৬ নং সোনাবাড়ীয়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও সাবেক দুইবারের চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম বলেন, গত বছর ঈদের সময় ১০ মামলার আসামি হয়ে ফেরারি ছিলাম। ঈদ কেমন কেটেছে সেটি বলে বোঝাতে পারবো না। এবার সুন্দরভাবে এলাকায় থেকে রোজা পালনের পর ঈদ করতে যাচ্ছি। গত ১৫-১৬ বছরের ঈদের থেকে এবারের ঈদ আসলেই আলাদা

  • শেয়ার করুন-

সংশ্লিষ্ট

সংস্কার সংস্কারের মতো, নির্বাচন নির্বাচনের মতো চলবে: মির্জা ফখরুল

সংস্কার সংস্কারের মতো, নির্বাচন নির্বাচনের মতো চলবে: মির্জা ফখরুল

ফ্যাসিস্টদের আমলের থেকে এবারের ঈদ আনন্দময় পরিবেশে হচ্ছে: মির্জা ফখরুল

ফ্যাসিস্টদের আমলের থেকে এবারের ঈদ আনন্দময় পরিবেশে হচ্ছে: মির্জা ফখরুল

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় খালেদা জিয়ার

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় খালেদা জিয়ার

৮ বছর পর পরিবারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ঈদ উদযাপন

৮ বছর পর পরিবারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ঈদ উদযাপন

মন্তব্য করুন