× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে আরও সংশয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫ ০২:০১ পিএম

নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে আরও সংশয়

নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে আরও সংশয়

নিখিল মানখিন : ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে জনমনে বাড়ছে সংশয়। ঘনীভূত হচ্ছে সন্দেহ। নির্বাচনের সম্ভাব্য রোডম্যাপ নিয়ে খোদ অন্তর্বর্তী সরকারের একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের মাস ও বছর  উল্লেখ করতে গিয়ে সরকার ‘২০২৬ সালের জুনের মধ্যে’ মন্তব্যের পর ‘২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে’ বলে আশ্বাস দিয়েছিল। গত এক মাসে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বক্তব্য অনুযায়ী আবার তা পরিবর্তিত হয়ে ২০২৬ সালের মার্চে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির গণপরিষদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য লেগেই আছে। শেখ  হাসিনার ফাঁসির পর জাতীয় নির্বাচন-এমন মন্তব্য করে রেখেছেন এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা। সব মিলিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ রয়েই যাচ্ছে এমন শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। 
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। কিন্তু এই সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে, নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। সরকার গঠিত হওয়ার পর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই নির্বাচনি রোডম্যাপের দাবি ওঠে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি দেশের জনগণও অধির অপেক্ষায় কখন অনুষ্ঠিত হবে প্রতিক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রায় প্রতিদিনই রোডম্যাপের দাবি উত্থাপিত হয় বিএনপি নেতাদের মুখে। এই দাবি এক পর্যায়ে দেশবাসীর দাবিতে রূপ নেয়। আওয়ামী লীগসহ প্রায় সব রাজানৈতিক দলই একই দাবিতে মুখ খুলতে শুরু করে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি। বিভিন্ন সময়ে প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে নির্বাচনি রোডম্যাপের বিষয়ে ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’ ও ‘ জনগণ সিদ্ধান্ত দেবে’ এমন মন্তব্য করেছেন। এক পর্যায়ে ‘সরকারের মেয়াদ কতদিন তা সরকারই জানাবে’ বলে ইতিমধ্যে মন্তব্য করে রেখেছেন প্রধান উপদেষ্টা। সর্বশেষ আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে মানুষ আশা করতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন। 
এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে মাঝখানে জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাপানের সরকারি টেলিভিশন এনএইচকে-তে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব, এ বছরের শেষ দিকে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে।’
গত এক মাসের ব্যবধানেই নির্বাচনি মাস ডিসেম্বর থেকে মার্চে চলে গেছে। গত চলতি বছরের গত ৬ মার্চ বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে একই সুরে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। কত দ্রুত সংস্কার হয় তার ওপর নির্বাচনের এই সময়সীমা নির্ভর করছে। কারণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এসব সংস্কার প্রয়োজন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
চলতি বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা একটা ঘোষণা দিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে পারেন। দেশে সংস্কার জরুরি, সংস্কার যদি শেষ না হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে সর্বশেষ ২০২৬ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে, এর বাইরে যাবে না।’
বিএনপির সংশয় : গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষতাই হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় পুঁজি। কিন্তু সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতিমধ্যেই জনমনে সন্দেহ-সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আরও সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, বিভিন্ন সময়ে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করলেও এ নিয়ে কোনো কোনো উপদেষ্টার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য-মন্তব্য স্বাধীনতাপ্রিয়, গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য হতাশার কারণ হয়ে উঠছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সমর্থন থাকলেও সরকার এখনো নিজেদের কর্মপরিকল্পনার অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবেন। নির্বাচন অবশ্যই এ দেশে হবে। নির্বাচন হতে হবে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। আমরা চাইব অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে এই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।
নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারে থেকে দল গঠন করলে বিএনপি তা মেনে নেবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ফার্মগেটে সদস্য নবায়ন ও আলোচনা সভায় একথা জানান তিনি।
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দেয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদেরও সমালোচনা করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা। তিনি বলেন, ‘উপদেষ্টা যে কথা বলছে তা কেউ মানবে না।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে নানা প্রস্তাব জুড়ে দেওয়া ফ্যাসিবাদী চরিত্রের মতো। সরকার দ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে দেশের মানুষ এটাই প্রত্যাশা করে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) : দেশে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র (সেকেন্ড রিপাবলিক) কায়েম করার ঘোষণা দিয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’। পাশাপাশি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে ‘গণপরিষদ নির্বাচন’ এবং ‘নতুন সংবিধান’ প্রণয়নেরও। নতুন দলের নেতৃবৃন্দের এমন ঘোষণা রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গণপরিষদ নির্বাচন নাকি জাতীয় সংসদ, কোনটা অগ্রাধিকার পাবে এমন প্রশ্ন দেশবাসীর। তবে এই ইস্যুতে সামনের দিনগুলোতে দেশের রাজনীতি কোন পথে যাবে, জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করছেন  রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। গত ২ মার্চ ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেওয়া এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বক্তৃতায় বার বার উঠে এসেছে একটি ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ বা ‘দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার বিষয়।
রয়টার্সকে সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গত সাত মাসে আমরা সবাই আশা করেছিলাম, স্বল্পমেয়াদি সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশিং ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে। এটা একটা মাত্রায় ঘটেছে, কিন্তু আমাদের প্রত্যাশামতো হয়নি।
বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশিং ব্যবস্থায় আমি মনে করি না, একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা যদি এক মাসের মধ্যে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারি, তাহলে আমরা দ্রুত নির্বাচনের আহ্বান জানাতে পারব। কিন্তু এর জন্য যদি আরও সময় লাগে, তাহলে নির্বাচন বিলম্বিত হবে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আগামী নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করে সমালোচনায় এসেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তার এমন বক্তব্যেও জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত মঙ্গলবার সার্জিস আলম বলেন, ‘যতদিন না পর্যন্ত খুনি হাসিনার ফাঁসি দেখছি, ততদিন যেন কেউ ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে। খুনি হাসিনা লাশ কই ফেলেছে, তা জানা যায়নি। মায়েরা লাশ খুঁজতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। খুনির বিচার না হওয়া পর্যন্ত কীভাবে এই বাংলাদেশে অন্যকিছু চিন্তা করব।’
এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতারা। তাদের এমন দাবির কারণে জাতীয় নির্বাচনে পিছিয়ে  যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা। অন্যদিকে, সরকার ও এনসিপির সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে যেনতেনভাবে নির্বাচন হতে দেওয়া যাবে না। নির্বাচনের মতো নির্বাচন চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তবে নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে। ভুয়া ভোটার বাদ দিতে হবে। আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, পরে অবাধ সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হতে হবে।

 

  • শেয়ার করুন-
 নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প

নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প

 বোর্ডসেরা শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে ১০ ও ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার

বোর্ডসেরা শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে ১০ ও ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার

 মশার উৎপাতে দিশাহারা রাজধানীবাসী

মশার উৎপাতে দিশাহারা রাজধানীবাসী

 অবৈধ ভারতীয়দের নিয়ম মেনে ফেরত পাঠানো হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

অবৈধ ভারতীয়দের নিয়ম মেনে ফেরত পাঠানো হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

 ৫৩ বছরেও নির্মাণ হয়নি ফুলবাড়ী বাইপাস সড়ক, ঘটছে দুর্ঘটনা

৫৩ বছরেও নির্মাণ হয়নি ফুলবাড়ী বাইপাস সড়ক, ঘটছে দুর্ঘটনা

সংশ্লিষ্ট

অবৈধ ভারতীয়দের নিয়ম মেনে ফেরত পাঠানো হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

অবৈধ ভারতীয়দের নিয়ম মেনে ফেরত পাঠানো হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংকের জন্য আলাদা আইন করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

মাইক্রোক্রেডিট ব্যাংকের জন্য আলাদা আইন করতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ভারতের পুশইন চাপে বাংলাদেশ

ভারতের পুশইন চাপে বাংলাদেশ

শনিবার খোলা থাকবে সব সরকারি অফিস

শনিবার খোলা থাকবে সব সরকারি অফিস