ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৫২ পিএম
ফাইল ছবি
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হলে দেশের ভয়াবহ পরিণতি হবে। ফের স্বৈরাচারের জাঁতাকলে পিষ্ট হবে দেশ। তবে ‘পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে জামায়াতে ইসলামীর ইন্ধন দেখা যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে রিজভী এ কথা বলেন।।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের আগ্রহ ও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাওয়া নিয়ে জামায়াতের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। শেখ হাসিনার দেয়া গণহত্যার যে নির্দেশনা সামনে আসছে তাতে ভারতের মদদ ছিল।
তিনি বলেন, অনেকে যারা বলেন, ফ্যাসিস্টদের প্রত্যাবর্তন ঘটানোর জন্য চিন্তা করছেন, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য চিন্তা করছেন তারা কী ইতিহাস থেকে কোনো শিক্ষা নেননি? আমাদের দেশে ইসলামপন্থি একটি রাজনৈতিক দল বরাবরই আমার মনে হয়েছে আওয়ামী লীগকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করছেৃ. তারা এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছেন শহীদ জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে তারা (জামায়াতে ইসলামী) নিষিদ্ধ দল ছিলো, শহীদ জিয়া তাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন।
রিজভী বলেন, ’৮৬ সালে নির্বাচন যাওয়া সেটাও তারা আওয়ামী লীগ নির্বাচনে গেছে.. মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এক আর কাজ করেছে আারেক। ঠিক একইভাবে তারা (জামায়াতে ইসলামী) ও করেছে। এরপরে আমরা দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ যে আন্দোলন করল সেই আন্দোলনেও তারা জ্বালাও-পোড়াও যে আন্দোলন হয়েছিল সেই আন্দোলনেও আওয়ামী লীগের সাথে তারাও করেছে। বিভিন্ন জায়গায় ওই সময়ে তারা হত্যাও করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র টিটোকে শিবির (ইসলামী ছাত্রশিবির) গুলি করে হত্যা করেছিল ১৯৯৫-৯৬ সালে যে আন্দোলন হয়েছিল.. এটা তো কারো ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যাওয়াৃ ম্যাডাম (খালেদা জিয়া)যেতে চাননিৃতাদেরই নেতারা বাধ্য করেছিল, না হলে তারা স্বতন্ত্রভাবে করবে। এখন আবার তারা স্বরূপে বেরিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করছেন।
তিনি বলেন, কখনোই কোনো রক্ত পিপাসু, গণতন্ত্র ধ্বংসকারী এবং নিজের দেশের যে হত্যা করে ক্ষমতাকে চিরতরে আঁখড়ে রাখার যার ভাসনা ছিলো এরকম বাংলাদেশি মডেলে যে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিলেন শেখ হাসিনা সেই ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান বা পুনর্জাগরণের কোনো সুযোগ বাংলাদেশে নাই।
এদেশের মানুষ মধ্যপন্থি, এদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু গণতন্ত্র প্রিয়। তারা কথা বলতে চায় নির্ভয়ে, তারা এক-দুই বেলা কম খেলেও তাদের কণ্ঠের আওয়াজ তীব্র করতে চায়। সেদেশের মানুষকে জোর করে ফ্যাসিবাদের নতুন ধারায় কেউ মনে করে যে নিয়ে আসতে চাইবে এটা জনগণ হতে দেবে না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর টেলি সংলাপ ভয়ংকর উল্লেখ কওে রিজভী বলেন, যে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলির জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন এবং গতকালকে যে আলাতগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে ডকুমেন্ট ও টেলিফোন কথোপকথনের ক্লিফসহ এসব যে কেউ শুনলে শিহরিতো হয়ে উঠবে। আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, আন্দোলন করেছি, রাজনীতি করেছি আমরা প্রত্যেকে মৃত্যুর মুখোমুখি ছিলাম। শেখ হাসিনার বর্বরতা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি, নিজেরা নিপীড়নের শিকার হয়েছি, দিনের পর দিন রিমান্ডে থেকেছি, মাসের পর মাস জেলখানায় থেকেছিৃ তার ভয়াবহতা আমরা দেখেছি। কিন্তু এর গভীরে যে আরও ভয়াবহতা ছিলো.. তারা একটি আন্দোলনকে দমানোর জন্য কী ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছিলো সেটা এখন প্রতিদিনকার যে আলামতগুলো আদালতে জমা হচ্ছে, সেখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে তা থেকে বুঝা যায়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর টেলিফোন কথোপকথনের যে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে তাতেই আমাদের মধ্যে উদ্বেগ-শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। যদি এই ফ্যাসিবাদী শক্তির আবার পুনরুত্থান ঘটে তাহলে ৫ আগস্টের আন্দোলনকামী মানুষ, গণতন্ত্রকামী মানুষের কী ভয়ংকর পরিণতি ভোগ করতে হবে সেটা চিন্তা করে শরীরের লোম শিহরে উঠে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছেন, যত সরকারি ভবনে আগুন জ্বালিয়েছে, মেট্রোরেলের স্টেশনে যে আগুন লাগানো হলো সব শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে সেটা আজ সেই টেলিফোনের কথোপকথনে থেকে বেরিয়ে আসছে, সত্য বেরিয়ে আসছে।
অথচ ওই সমস্ত নাশকতার ঘটনায় তখন আন্দোলনকারী মানুষদের ওপরে চাপানো হয়েছে। আমারকে ওই সময়ে মেট্রোরেল স্টেশনের পুড়ানোর মামলায় আসামি করা হয়েছিল, নজরুল ইসলাম খানসহ আরও অনেকে সময়ে যারা গ্রেফতার হয়েছেন। অথচ এখন আমরা প্রমাণ পাচ্ছি এইসব ঘটনার সব নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা নিজেই। নাশকতার যে অভিযোগ ওই সময় করা হয়েছে সেই নাশকতা তিনি(শেখ হাসিনা) নিজে সৃষ্টি করেছেনৃ.। তিনি (শেখ হাসিনা) এমন এক সর্বনাশা খেলায় মেতেছিলেন যার ফলে দেশ, জাতি এবং মানুষের জানমাল বিপন্ন হয়েছিল ওইসময়ে।
কতিপয় উপদেষ্টা-আমলারা কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন সম্পর্কে রিজভী বলেন, এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের কিছু উপদেষ্টার কর্মকাণ্ডে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে। আজকের গণমাধ্যমে এসেছে, উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া তার নিজ এলাকায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ নিয়েছেনৃ.প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এটা এক ধরনের বৈষম্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ।
তিনি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের এলাকা উন্নয়নের নামে ভবিষ্যতে এমপি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। একজন উপদেষ্টা কিংবা একজন সরকারি উচ্চ পর্যায়ের আমলা কী নিজের এলাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি বরাদ্দ নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে পারেন? সারা দেশকে বঞ্চিত রেখে এটি করা সম্পূর্ণরূপে অনৈতিক এবং নীতিবিরোধী। আমরা শুনেছি, কেবিনেট সচিব একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুগত। তিনি হয়তো অবসরের পরে নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন। এটি দুঃখজনক এবং সরকারি শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতার পরিপন্থি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ