× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাসুলুল্লাহ সা:-এর বিদায় হজের ভাষণের বহুমাত্রিক তাৎপর্য রয়েছে : আইন উপদেষ্টা

ভোরের আকাশ ডেস্ক

প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৫ ১২:৪২ পিএম

রাসুলুল্লাহ সা:-এর বিদায় হজের ভাষণের বহুমাত্রিক তাৎপর্য রয়েছে : আইন উপদেষ্টা

রাসুলুল্লাহ সা:-এর বিদায় হজের ভাষণের বহুমাত্রিক তাৎপর্য রয়েছে : আইন উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, মানবসভ্যতার ইতিহাসে রাসুলুল্লাহ সা:-এর বিদায় হজের ভাষণের বহুমাত্রিক তাৎপর্য রয়েছে। রিলিজিয়াস পয়েন্ট অব ভিউ থেকেই নয়, হিউম্যান সিভিলাইজেশনের সামগ্রিক সবকিছুর বিবেচনাতেই এটি তাৎপর্যপূর্ণ।

উপদেষ্ট তার ভেরিফাইড ফেসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, ‘আচ্ছা, বিদায় হজের ভাষণ আমাদের পড়াশোনার ভেতর তেমন চর্চিত হয় কি? মানবসভ্যতার ইতিহাসে যেই ভাষণ বা বক্তৃতাগুলোর কালজয়ী বহুমাত্রিক তাৎপর্য রয়েছে। আমার মূল্যায়নে সেগুলোর ভেতর শীর্ষস্থানীয় একটা হলো বিদায় হজের ভাষণ। আমি কিন্তু শুধু রিলিজিয়াস পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বলছি না, হিউম্যান সিভিলাইজেশনের সামগ্রিক সবকিছুর বিবেচনাতেই কথাটা বলছি।’

উপদেষ্টা বলেছেন, ‘কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো বর্তমান জেনারেশনের বহু মানুষ হয়ত বিদায় হজের এই ভাষণের নামটাও জানে না, আবার স্রেফ নাম জানলেও, এই ভাষণের কনটেন্ট কী ছিল, সে সম্পর্কে হয়তো কোনদিনই জানার চেষ্টা করে না। সাধারণ মানুষের কথা বাদই দিলাম, মুখে মুখে ধর্ম চর্চা করা বহু তথাকথিত ধার্মিকেরাও এই ভাষণের শিক্ষা ধারণ করার চেষ্টা ঠিকঠাক করে বলে মনে হয় না।’

ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘দশম হিজরিতে (৬৩২ খ্রিস্টাব্দ) রাসুলুল্লাহ সা. প্রায় সোয়া লাখ সাহাবিকে সাথে নিয়ে হজ পালন করেন। এই হজই ছিল নবীজি সা:-এর জীবনে পূর্ণাঙ্গ প্রথম হজ এবং এটাই ছিল তার জীবনের শেষ হজ। এর মাত্র দু’মাস কয়েকদিন পর ১২ রবিউল আউয়াল তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই কারণে এই হজ ইতিহাসে ‘বিদায় হজ’ নামে পরিচিত। ওই বছর হজে রাসূল সা: সেখানে সমবেত প্রায় সোয়া লাখ সাহাবির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা বিদায় হজের ভাষণ নামে পরিচিত। এটি ছিল তাঁর জীবনের সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক ভাষণ, যা তিনি দশম হিজরি সনের নবম জিলহজ আরাফার দিনে মসজিদে নামিরাতে ও জাবালে রহমতের ওপরে এবং পরদিন দশম জিলহজ ঈদ ও কোরবানির দিন মিনাতে প্রদান করেছিলেন। রাসূল সা: ভাষণ শুরুই করেছিলেন এভাবে- ‘হে জনতা, আমার কথাগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনো, আমি জানি না, এবারের পর তোমাদের সাথে এই জায়গায় আর একত্র হতে পারব কিনা।’

ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘এই বাক্যটি ভালোমতো বিশ্লেষণ করলেই বুঝবেন, রাসুলুল্লাহ সা: অনেকটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি হয়তো এরপর আর বেশি দিন বাঁচবেন না।’

অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘রাসূল সা:-এর ইতিহাস প্রসিদ্ধ ওই ভাষণ থেকে আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কয়েকটা পয়েন্ট খুবই সংক্ষিপ্তকারে নিচে তুলে ধরছি’-১. হে মানবমণ্ডলী, স্মরণ রাখো, আল্লাহ এক,তাঁর কোনো শরিক নেই। মনে রেখো, একদিন তোমরা আল্লাহর নিকট হাজির হবে, সেদিন তোমাদের কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে।

২. কোনো অনারবের ওপর আরবের কিংবা কোনো আরবের ওপর কোনো অনারবের কোনোই শ্রেষ্ঠত্ব নেই। ঠিক একইভাবে শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের এবং কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।

৩. জাহেলি যুগের সুদ রহিত করা হলো। এখন থেকে সকল ধরনের সুদ হারাম করা হলো।

৪. জাহেলি যুগের যত রক্তের দাবি, তা সব রহিত করা হলো। সর্বপ্রথম আমি রবিয়া ইবনে হারিস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের শিশুপুত্রের রক্তের দাবি রহিত করলাম।

৫. তোমাদের কারো কাছে যদি কোনো আমানত গচ্ছিত থাকে, তা তার প্রাপকের কাছে অবশ্যই পৌঁছে দেবে। কারো কাছে ঋণ থাকলে, সেই ঋণ অবশ্যই পূরণ করবে।

৬. স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা, আল্লাহর আমানতস্বরূপ তোমরা তাদের গ্রহণ করেছ। নিশ্চয়ই তোমাদের স্ত্রীদের ওপর তোমাদের অধিকার রয়েছে এবং তোমাদের ওপরও তাদের অধিকার আছে।

৭. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক প্রাপকের জন্য তার অংশ (উত্তরাধিকার সম্পত্তি) নির্ধারণ করে দিয়েছেন, সেগুলো আদায় কোরো। একজন মুসলিম অন্য একজন মুসলিমের ভাই স্বরূপ। কারো হক নষ্ট করোনা, কারো প্রতি জুলুম করো না।

৮. তোমাদের অধীনস্থদের প্রতি খেয়াল রাখবে, তোমরা যা খাবে, তাদেরকেও তা-ই খাওয়াবে, তোমরা যা পরিধান করবে, তাদেরকেও তা-ই পরাবে।

৯. আমি তোমাদের কাছে এমন দু’টি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যা দৃঢ়ভাবে ধারণ করলে পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব আর অন্যটি হলো আমার সুন্নাহ।

১০. হে মানবজাতি, ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে না। কেননা, অতীতের অনেক জাতি এ বাড়াবাড়ির কারণে ধ্বংস হয়েছে। নিজের ধর্মকে অন্যদের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে না।

আরো কিছু কিছু ব্যাপারে আলোচনা ছিল। আমি সংক্ষিপ্ত আকারে আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০টা মেইন পয়েন্ট আলোচনায় তুলে ধরলাম বলে উল্লেখ করেছেন আসিফ নজরুল।

রাসূল সা: এই আহ্বান জানিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন- ‘উপস্থিত ব্যক্তিদের দায়িত্ব হবে আমার এ কথাগুলো অনুপস্থিত লোকদের কাছে পৌঁছে দেয়া। হয়তো অনেক অনুপস্থিত লোক উপস্থিত এই শ্রোতাবৃন্দ অপেক্ষাও অধিক হেফাজতকারী হবে।’

ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘একটু ভালোমতো লক্ষ্য করে দেখুন, শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই যে এই ভাষণ গুরুত্ববহ ছিল, এমনটা নয়। বর্তমান পৃথিবীর আদর্শিক জায়গা থেকে হিউম্যান রাইটসের কথাই বলুন, সাম্যের কথা বলুন কিংবা পারস্পরিক দায়বদ্ধতা ও সহমর্মিতার কথাই বলুন-প্রতিটা সেক্টরকেই এই ভাষণ কাভার করে। সামাজিক, অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক প্রতিটা পরিমণ্ডলেই তাই এই বিদায় হজের ভাষণের একটা ইউনিক ও চমকপ্রদ তাৎপর্য আছে। একটা পুরো হিউম্যান সিভিলাইজেশন কীভাবে স্মুথলি ফাংশন করতে পারে তার পূর্ণাঙ্গ বেসিক এসেন্স এই ভাষণে অন্তর্নিহিত আছে।’

ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘বিদায় হজের ভাষণের যে মাল্টিডিসিপ্লিনারি তাৎপর্য আছে, সেটা কি সবাই ঠিকমতো অনুধাবন করে কিংবা ঠিকমতো জানার সুযোগ পায়? ইতিহাস এবং ধর্মীয় শিক্ষার বইতে তো বটেই, আমার মনে হয় এই ভাষণের কপি প্রিন্ট করে প্রতিটা মসজিদে টাঙিয়ে রাখা উচিত ছিল। অন্তত আমাদের এই বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে প্রতিটা সেক্টরেই ঘুষখোর, সুদখোর, ভণ্ড, প্রতারক, ধর্মব্যবসায়ী কিংবা বিদ্বেষী আর অন্যের হক মেরে খাওয়া লোকজন দিয়ে ঠাঁসা চারদিক!’

ভোরের আকাশ/জাআ

  • শেয়ার করুন-
আ.লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিগগিরই উঠছে না: আইন উপদেষ্টা

আ.লীগের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিগগিরই উঠছে না: আইন উপদেষ্টা

মানবাধিকার রক্ষায় মাইলফলক স্থাপন করতে চায় সরকার: আইন উপদেষ্টা

মানবাধিকার রক্ষায় মাইলফলক স্থাপন করতে চায় সরকার: আইন উপদেষ্টা

ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের জয়ে আইন উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া

ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের জয়ে আইন উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া

ডাকসু নির্বাচন গণতন্ত্র অভিমুখী বিশাল পদযাত্রা : আসিফ নজরুল

ডাকসু নির্বাচন গণতন্ত্র অভিমুখী বিশাল পদযাত্রা : আসিফ নজরুল

গণঅভ্যুত্থানকালের ৩৪টি মামলার চার্জশিট প্রদান

গণঅভ্যুত্থানকালের ৩৪টি মামলার চার্জশিট প্রদান

 মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য নতুন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা বিসিবির

মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য নতুন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পরিকল্পনা বিসিবির

সংশ্লিষ্ট

দুই বছরে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২৫০ ইমাম নিহত, ৮৩৫ মসজিদ ধ্বংস

দুই বছরে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ২৫০ ইমাম নিহত, ৮৩৫ মসজিদ ধ্বংস

আল্লাহর রহমত লাভের তিন অনন্য আমল

আল্লাহর রহমত লাভের তিন অনন্য আমল

রমজানের সম্ভাব্য তারিখ জানালেন আমিরাতের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা

রমজানের সম্ভাব্য তারিখ জানালেন আমিরাতের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা

পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম আজ

পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম আজ